শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

ভাবনাগুলো সাজাই সাধের পঙ্ক্তিমালায়
নজরুল ইসলাম শাকিল

রবীন্দ্রনাথের একটি প্রবন্ধে পড়েছিলাম ‘আহা কে জানিতো শব্দকেও নিঃশব্দের মাঝে বাঁধা যায়?’ তেমনি আমি কবিতা লিখি নিষ্প্রাণ কাগজে, নির্বাক কলমে। আমার সকল ব্যথা, আনন্দ, উৎকণ্ঠা, আকুতি কিংবা আর্তনাদ। সবকিছুই নির্দ্বিধায় এই মৃতপ্রায় কলমণ্ডকাগজে গেয়ে উঠে আমার হয়ে, আমাদের হয়ে এবং সমাজের হয়ে। ভাবনায় ডুবে যা পাই তাই দিয়ে সাজানোর চেষ্টা করি সাধের পঙ্ক্তিমালা। দুরন্ত শৈশবে কিংবা উড়ন্ত কৈশোরে কিংবা উড়তি যৌবনে আমার বন্ধু বা প্রেমিকা যাই বলি, সবই এই কবিতা। আমার কবিতারা পাখিদের সাথে উড়ে বেড়ায়, মাছের সাথে ডুবে ভাসে। করুণ চোখে জল হয়ে নামে, রুখে দাঁড়ায় ত্রাসে।

প্রেম

প্রেম; তুমি ধরা দিলে পড়ন্ত বিকেলে!

মহাবিশ্ব খুঁজে না পেয়ে তোমায়;

কয়েকশো আলোকবর্ষ দূরে আমি তখন,

বাঁধা পড়ছি জ্বলন্ত শিকলে।

প্রেম; তুমি চিরচেনা রূপে খুঁজেছো আমায়!

দিগি¦দিক; সফল মানুষের ভিড়ে,

রঙিন ফুলের লোভে দলে দলে উড়তে থাকা পালে,

অথচ আমি দূর্বাঘাসের শিশিরের ডানায়।

প্রেম; তুমি চেয়েছো আমায় ঘনশ্বাসে!

অহমিকায়, অনাদরে ভাসিয়েছো দীর্ঘশ্বাসে;

দীর্ঘশ্বাস আর ঘনশ্বাসকে আমি আলাদা ভাবিনি,

আমি চেয়েছি তোমায় প্রতিটি নিঃশ্বাসে।

প্রেম; তুমি এসেছো র‌্যাপিং করা রঙিন কাফনে,

নোনাজলে নুন ছিটিয়ে দিতে!

অবহেলা করে অবেলায় মরা শালিকের পালকে,

এক চিলতে শেষ হাসি নিয়ে শেষ বিদায়ের দাফনে।

অথচ আমি কেবল ভালোবাসি

জাপানি অসুরের সাথে পাল্লা দিয়ে,

ভালোবাসাগুলো ঝরে যাচ্ছে প্রাতরাশের কুয়াশায়,

প্রতিনিয়তই পুবাকাশে; লোকচক্ষুর অন্তরালে।

অথচ আমি কেবল ভালোবাসি।

ইটকলের বিষাক্ত ধোঁয়ায়,

তুলশী পাতার দেবতা যক্ষ্মা বাধায় রোজ।

ডানা মেলে উড়তে গিয়ে হুড়মুড় করে হোঁচট খায়;

পেখম ধুতে গিয়ে দেখে, কেউ নেই অপেক্ষায়।

অথচ আমি পথের মাঝে পদচিহ্ন খুঁজে শিহরিত হই।

বিদ্যুৎগতিতে মন ছুঁতে গিয়ে,

বার বার কচ্ছপ দুঃখ পায়; চিতপটাং হয়ে পড়ে শক খায় তৃতীয় ছাগল,

তখনও পরগাছা কোকিলের কণ্ঠে অট্টহাসি।

অথচ আমি কেবল ভালোবাসি।

মসুর ডালে বিষ মিশিয়ে ছিটিয়ে দেয় বাবুইর প্লেটে,

সন্তুষ্টচিত্তে তৃপ্তি ভরে ভালোবাসা গিলে ঘুঘু;

ছানার ঠোঁটে গুঁজে দেয় একরাশ ভরসা।

পুরো বাগান মৃতে ভরা; ইন্না লিল্লাহ পড়ার কেউই নেই।

অথচ আমি কেবল ভালোবাসি।

আমি আর কবি নই

বাতাসে জাল বিছিয়ে ছিলাম কবিতা ধরতে,

শুনেছি কবিতারা বাতাসে উড়ে বেড়ায়।

বেরসিক জালে দুঃখ, কষ্ট, ঘৃণা আর বেকারত্বের গ্লানি ধরা দেয়;

ফসকে যায় কবিতা।

তাই আমি আর কবি হয়ে উঠিনি।

আকাশে ফাঁদ পেতেছিলাম শব্দ শিকার করতে,

শুনেছি বিশালতার শূন্যে বাগযন্ত্রের প্রিয় অনুবাদকেরা ভেসে বেড়ায়।

অথচ আমার ফাঁদে অপমান, অসহায়ত্ব আর অন্ধকার শিকার বনে।

তাই আমার আর কবি হয়ে উঠা হয়নি।

সাগরে বহুবার ঢেউ কিংবা নীলতিমি পোষ মানাতে চেয়েছি,

চেয়েছি হৃৎপিণ্ড খাইয়ে তাদের হৃদয়ে ঠাঁই নিতে।

মধ্যস্থতা হওয়ার পর ঢেউয়ের বদলে তুফান আর তিমির বদলে হাঙর জোটে।

সুন্দর বন, অ্যামাজনসহ সব বনেই অক্সিজেন খুঁজেছি ছেড়া পলিথিন সাথে নিয়ে।

দরিদ্র সমুদ্রে গেলে সমুদ্রও শুকিয়ে যায়,

বারবার, শতবার, সহস্রবার প্রমাণিত হয়।

কার্বন-ডাই-অক্সাইড, হাঙর, অসহায়ত্ব আর বেকারত্বের গ্লানি যার নিত্যসঙ্গী;

সে কি আর কবি হয়?

চাওয়া

কেউ আমারে বিছানায় ভাগ বসাবে;

সেই আশায় কখনোই ভালোবাসিনি।

বর্ষায় এক ছাতায় দুজন,

কিংবা হুড নামানো রিকশায় পাশাপাশি বসে অজানায় হারানোর জন্য ভালোবেসেছি বহুকাল।

কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে জড়সড় হয়ে ঘুমানোর অভ্যাস রপ্ত করেছি বহু আগেই।

পূর্ণিমা রাতে আমার কাঁধে মাথা রেখে,

আমার বেসুরো গলায় গান শুনবে;

কিংবা কুয়াশা-মাখা ভোরে হাত ধরে হাঁটার জন্যে একজন প্রেমিকা খুঁজেছি বহুবার।

আমার কাছে দীর্ঘশ্বাস আর ঘনশ্বাসে কোনো তফাত নেই,

তাই আমাবস্যায় নোংরা স্বপ্নে দূষিত না হয়ে;

একটি ভরসামাখা মুখ আঁকতে চেয়ে ব্যর্থ হয়েছি বারবার।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়