বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ১৩ মে ২০২৩, ০০:০০

বিশ্বাসে বিস্ময় : এমন যদি হতো
অনলাইন ডেস্ক

বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, মূল গল্পটি ভিয়েতনামের। শুক্রবার। বাংলাদেশে সরকারি ছুটির দিন। ছুটির দিন হওয়ায় বন্ধুমহল পুলকিত মনে ঘোরাঘুরি। আমি আমার কর্মস্থল বাবুরহাট ভূঁইয়া সুপার মার্কেটে বসে আছি। শুভ সন্ধ্যার পরক্ষণে একঝাঁক নতুন-পুরোনো বন্ধু হাজির। কথার পসরা সাজিয়ে চুকিয়ে আড্ডা। আড্ডায় ১৬/১৮ বছরের তারুণ্যের কথামালা ভেসে বেড়ালেও প্রসঙ্গক্রমে জীবন বাস্তবতা, রাজনীতি, অর্থনীতির কড়চা ফুটে উঠে। বিশেষ করে বর্তমান শিক্ষানীতি ও ভাবনায় উৎফুল্ল উৎকণ্ঠায় আগামী প্রজন্ম নিয়ে বিশ্লেষণ। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বন্ধু ইকবাল সরকারি সফরে ভিয়েতনাম শিক্ষা বিষয়ক ভ্রমণ করে। ভ্রমণের স্মৃতি রোমন্থন গল্প শুনে আমরা উপস্থিত বন্ধুমহল বিশ্বাসে বিস্ময় হয়ে যাই! এই প্রসঙ্গে পরের ধাপে বলবো।

আমাদের দেশে চারদিকে উন্নয়ন দৃশ্যমান। এখানে দ্বি-মতই পোষণকারী হবে অন্ধের বন্ধু। সাথে সাথে নৈতিক শৃঙ্খলাহানী হচ্ছে মহামারি পর্যায়ে। ঔষধ দিয়ে নিরাময় করিতে সক্ষম হলে প্রতিটি ঘরে ভূষিত হতো হাসপাতাল বিছানা! এটা আমার একান্ত অভিমত। দ্বি-মত পোষণ করাও অস্বাভাবিক নহে। সরকারি অফিস আদালতে প্রশাসনিক কার্যক্রম সুশৃঙ্খলিত স্পষ্ট হয়েছে। সাথে অসহনীয় উপঢোকনের মাত্রাও সয়লাব হয়েছে। তথাপিও প্রত্যেক সেক্টরে মাইক্রোস্কোপ দিয়ে শনাক্তকরণে অতিনগণ্য কয়েক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর কর্মফলে সাধারণ সেবা গ্রহীতা সরকারি কাজে আস্থা ও ভরসায় কাজকর্ম সম্পাদন করেন। জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধনের জন্য ইউনিয়ন কার্যক্রমের পরবর্তী চাঁদপুর সদর উপজেলা কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা- সানন্দে অফিসিয়াল কাজটি সম্পাদন করে দেন। সরকারি অফিসে প্রায় ৩০/৩৫ বছর বিভিন্ন প্রয়োজনে আসা-যাওয়া। অনেকে সাথে সুসম্পর্ক। কিন্তু ঐ কর্মকর্তার ন্যায় স্বতঃস্ফূর্ত দায়িত্বজ্ঞানে কাজ সম্পাদন করে দেয়া বিরল। আমার মতো অনেকে এ সময়ে সরকারি চাকুরীজীবীর এমন রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় আচরণে বিশ্বাসে বিস্ময় প্রকাশ করেন। এমনটি প্রত্যেক ক্ষেত্রে হলে ভিয়েতনামের বাস্তব গল্পের সাথে আমাদের জীবনযাপন রচিত হতো।

দুই.

ভিয়েতনাম একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। বৌদ্ধ ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ। বন্ধু ইকবালের মুখ থেকে শোনা গল্প (সংক্ষিপ্ত), সরকারি-প্রোগ্রামে যাওয়া হয়। সাথে টিমলিডার ছিলেন সরকারি এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। চোখজুড়ানো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বিমানবন্দর থেকে নেমে সরাসরি আবাসিক হোটেলে। দীর্ঘ পথচলায় একটি গাড়ির হর্নের শব্দ শোনা যায় না! একদিন রাস্তায় একটি গাড়ি বন্ধ হয়ে আছে। ঠিক বন্ধ হয়ে থাকা গাড়ির পেছনে এসে ড্রাইভার বন্ধ করে দিল আমাদের গাড়িটি। ২/১ মিনিট গাড়ির ভেতরে বসে আছি। ড্রাইভার নির্ভার হয়ে বসে আছেন। দোভাষীকে বললাম, হর্নও দিচ্ছে না, গাড়ি বন্ধ করে রাখছে কেন? সামনে এগোবে না? দোভাষীর প্রশ্নের জবাবে ড্রাইভার বললেন, আমি হর্ন দিলে তার গাড়ির সমস্যা সমাধানে বিঘ্ন হবে। আরো কিছু সময় অযথা ব্যয় হবে। এতে আমাদেরও সময় অপচয় হবে!

আরেকদিন এক ভদ্রলোক রাস্তার পাশে মোটরসাইকেল রেখে পাশের দোকানে বিকিকিনি করছেন। একটি চলন্ত গাড়ির ধাক্কায় মোটরসাইকেলটি পড়ে যায়। পাশের দোকানে থাকা মোটরসাইকেল মালিক ও ধাক্কা দেয়া ড্রাইভার দুজনেই পড়ে যাওয়া গাড়িটি উঠালো। তারপর দুজনেই কিছু বাক্যবিনিময় করে হাতে হাতে কর্মোদন করে হাসি মুখে বিদায় নিলো। দোভাষীর মাধ্যমে জানলাম, মোটরসাইকেল আরোহী বলছেন, আমার এখানে রাখা ভুল হয়েছে। আর ধাক্কা দেয়া গাড়ির ড্রাইভার বলছেন, না না আমার ভুলে গাড়ি পড়ে গেছে। দুজনেই পরস্পরের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী হয়ে হাসিমুখে বিদায় নিলেন! কারোরই মুখে শরীরে ক্রোধ-ভয়-জেদ কিছুই স্পষ্টতার লেসমাত্র পরিলক্ষিত হয় দেখি না! বন্বুর কাছে শুনে মনে হলো, কিশোর বয়সে খেলা চলাকালীন ফুটবল পাশের ডোবায় পড়ে গেলে সবাই মিলে কুড়িয়ে হাসিমুখে পুনরায় খেলায় মেতে উঠার ন্যায়।

আমরা হাঁটতেছি। পথিমধ্যে কিছু টাকা (ভিয়েতনাম মুদ্রা) পড়ে আছে। এক আগন্তুককে ইশারায় দেখিয়ে সামনের দিকে হাঁটছি। টাকাগুলো কুড়িয়ে দৌড়ে আমার কাছে নিয়ে আসলো। আকার-ইঙ্গিতে বললাম, এগুলো আমার না। স্থানীয় লোকটি আবার পেছনে দৌড়ে পাশে থাকা ব্যক্তিকে দিতে চেষ্টা করলো। সে-ও অনীহা প্রকাশ করলো। কৌতূহলবশত পরখ করলাম। দেখলাম, ঐ স্থানে একটি পাথর খণ্ডে চাপা দিয়ে টাকাগুলো রেখে সে-ও চলে গেছে। দোভাষীর মাধ্যমে জানতে পারলাম, যার টাকা সে খুঁজতে খুঁজতে ঠিক এখান থেকে এসে নিয়ে যাবে!

ভিয়েতনামে নারীর সৌন্দর্য রূপ দেখে বয়স অনুমান করা কঠিন। ষাটোর্ধ্ব এক মহিলা খালি বোতল কুড়াচ্ছেন। আমার মায়া হলো। বাংলাদেশের টোকাইদের কথা মনে পড়লো। যদিও তার বেস-বুশা পরিচ্ছন্ন মার্জিত। ভাবলাম, অবশ্যই অসহায়। আমাদের মুদ্রা আর ভিয়েতনাম মুদ্রার মান অনেক পার্থক্য। মহিলাকে প্রথমে বিশ টাকার একটি নোট হাত বাড়িয়ে দিলাম। সে গ্রহণ করলো না। ভাবছি, কম বলে নেয় না। এভাবে পর্যায়ক্রমে দুই লাখ (ভিয়েতনাম মুদ্রা) পর্যন্ত তার সামনে দিলাম। মহিলা গ্রহণ তো করেই না, বরং দৌড়ে আমাদের কাছ থেকে সটকে পড়লো। দোভাষীর মাধ্যমে পড়ে জানতে পারলাম, মহিলার নাগরিক সুযোগ-সুবিধা সমেত আর্থিকভাবে সচ্ছল। এটা তাঁর এখন পেশা! বিনিময় ছাড়া কোন অর্থ নেয়া তাদের কল্পনাতেও নাই!

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিজ চোখে না দেখিলে বিশ্বাস করানো যাবে কি-না আমি সন্দিহান (বন্ধুর মুখের ভাষায়)। রাস্তাঘাট-অফিস-আদালত-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ধূলোবালি চোখের দৃষ্টিতে অস্তিত্বহীন।

ভিয়েতনামের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা সম্পূর্ণ ইতিবাচক। ভিয়েতনামের মানুষের অস্থি মজ্জায় ক্রোধ-হিংসা-বিদ্যেষ নেই বললেই চলে। তাঁরা আমাদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা চিত্ত-বিত্ত-বিনোদনের মানুষ! তারপরও তাঁরা বহিঃশত্রুর মোকাবিলায় প্রত্যেক নারী-পুরুষ প্রাথমিক সামরিক শারীরিক কসরত ও মার্শাল আর্টে রপ্ত। স্কুলের ছোট ছোট কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বইয়ের বোঝা কাঁধে বহন করতে হয় না। স্কুলে পড়ালেখা দুপুরের ঘুম এবং খেলাধুলা। খাবার পর্যাপ্ত। প্রাথমিক স্কুলের অবকাঠামো আমাদের দেশের ইউনিভার্সিটির ন্যায়! এবং বিশাল এরিয়া নিয়ে! স্কুলের প্রধান শিক্ষকের অফিসকক্ষ আমাদের দেশের মন্ত্রী, সচিব, কর্পোরেট প্রধানদের হার মানাবে। অর্থাৎ শিক্ষকদের সর্বোচ্চ সম্মান দিয়ে থাকেন। আশার বাণী হচ্ছে, বাংলাদেশ সরকার ভিয়েতনামের প্রাথমিক শিক্ষাদান পদ্ধতি/মডেল প্রবর্তনের জোর প্রচেষ্টা শুরু করছে। সময়ের বিবর্তনে হয়ত পর্যায়ক্রমে দৃশ্যমান হবে। আর্চায্য হলেও সত্য, আমার কাছে মনে হচ্ছে, ভিয়েতনাম থেকে শিক্ষা নিয়ে চাঁদপুর উপজেলা পরিষদের ঐ কর্মকর্তা নিষ্ঠার সাথে পবিত্র কর্তব্য পালনে ব্রত হয়েছেন। গল্পের ইতি বেলায় বন্ধুরা সবাই বললো, বাংলাদেশের বাস্তবতায় ভিয়েতনামের শিক্ষা কারিকুলাম প্রাত্যহিক জীবনাচরণে আমরা কি দেখবো? আমাদের একান্ত স্বপ্ন সুন্দর একটা জীবনযাপন। আমি বলছি, দীর্ঘ সময় পাড়ি দিতে হবে, ‘আমারও পারব’ সর্বাস্থায় চর্চা করতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়