রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

মাইনাস টু ফর্মুলার দিকে চলে যেতে পারে কি দেশ?

ড. আজিজুল আম্বিয়া
মাইনাস টু ফর্মুলার দিকে চলে যেতে পারে কি দেশ?

ইতোমধ্যে সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। অনেক দেরিতে হলেও দেশ ছাড়ার পর প্রথম আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়েছেন শেখ হাসিনা। সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গ্রেফতার হয়েছেন। যদিও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সকল বিতর্কের ঊর্ধ্বে, তবুও অন্তর্র্বতী সরকার ১৫ আগস্টের সরকারি ছুটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে সেটি কার্যকর করেছেন। পুলিশ ও সিআইডির অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে নতুন নিয়োগ, দেশের অনেক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাউকে অবসর প্রদান এবং কেউ কেউ আবার স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করছেন । একজন সম্পাদককেও দেশের বাইরে যেতে চাইলে যেতে দেওয়া হয়নি । তাকে জানানো হয়, দেশের বাইরে যাওয়ায় নিষেধ আছে। দেশ চালানোর ক্ষমতা চলে আসছে সব নতুন কর্মকর্তার হাতে। দেশের অনেক থানার কাগজপত্র আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। অনেক পুলিশ সদস্যের আবার মৃত্যুও হয়েছে।

ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপেক্ষিতে সৃষ্ট অসহযোগ আন্দোলনের ফলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর নতুনভাবে যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশের অন্তর্র্বতীকালীন অস্থায়ী সরকার ব্যবস্থার । ৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন সমন্বয়ক এবং সেনাবাহিনী প্রধান ওয়াকার উজ জামান দ্বারা এই সম্পর্কে নিশ্চিত করা হয় এবং ৮ আগস্ট শপথ গ্রহণের মাধ্যমে ড.মুহাম্মদ ইউনুসকে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠন করা হয়। রাষ্ট্রপতি ৬ আগস্ট সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণার পর অন্তর্র্বতীকালীন সরকার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু আমাদের রাষ্ট্র কোন্ দিকে হাঁটছে বলা মুশকিল হয়ে পড়েছে। কারণ ড. ইউনূস এখনো পরিষ্কার করেননি তিনি কী কী করতে চান । সেনা বাহিনী বলছে, যতক্ষণ না উনারা ভাবছেন ড.ইউনূস সরকার নিরাপদ, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের সাবেক জায়গাতে ফিরে যাবেন না । এছাড়া আমরা দেখলাম, ছাত্র আন্দোলনের পর যখন দেশে একটা অস্থির পরিবেশ বিরাজমান ছিল, তখন অনেকে ভেবেছিলেন যেহেতু ড. ইউনূসের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে তাই তিনি দেশের এই ক্রান্তিকালে খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবেন । কিন্তু ড.ইউনূস সেই সময় সাথে সাথে আসেননি ।হয়তো তাই জনগণকে বলতে শোনা গেছে, আমেরিকার পরামর্শেই তিনি ফ্রান্স হয়ে পরে বাংলাদেশে আসেন । আর শেখ হাসিনাও ভারত থেকে বলছেন, তিনি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পেছনে আমারিকার হাত রয়েছে । শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে অভিযোগ এনেছেন, আমেরিকাকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ব্যবহার করার প্রস্তাবে রাজি না হওয়াতে তাকে তারা ক্ষমতাচ্যুত করেছে। এজন্যে উনাকে ভারতে যেতে হয়েছে । ড. ইউনূসের দেশে ফেরার পর কথিত এক ভারতীয় সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে ড.ইউনূস বাংলাদেশ নিয়ে কেউ মাথা ঘামালে ভারতের সেভেন সিস্টারের শান্তি বিনষ্টের ইঙ্গিত অনেকটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। ড. ইউনূস এতো শক্তি নিয়ে কীভাবে এ রকম বলে দিতে পারলেন! এটা আমেরিকার শক্তি ছাড়া বলা সম্ভব নয়--এ কথা অনেকে মনে করছেন। আর গবেষণাও তাই বলে। যদি এ কথা সঠিক হয়, তবে ভবিষ্যতে হয়তো আমাদের তা-ই দেখতে হবে।

গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, এই সরকারের এক উপদেষ্টা তো বিএনপির সমালোচনা করতে গিয়ে বলেন, লন্ডন থেকে ফোন আসলেই কি আপনি নেতা হয়ে গেলেন নাকি? কিংবা আগামীতে মন্ত্রী হয়ে যাবেন ভাবছেন? এদিকে শেখ হাসিনাও ভারতে আছেন এবং তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে । তার দেশে ফেরার সম্ভাবনা আপাতত সুদূরপরাহত। অপরদিকে বেগম খালেদা জিয়াও অসুস্থ। তাকে হয়তো আগামী নির্বাচনে তার অসুস্থতা দেখিয়ে নির্বাচন থেকে বিরত রাখা হতে পারে । বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করাও বিএনপি বা কোনো নির্দিষ্ট দলের পক্ষেই যে কথা বলছেন, তাও কিন্তু নয়। তাই এখন জনগণের প্রশ্ন, তবে কি সেই পূর্বের সেনা সমর্থিত সরকারের মত মাইনাস টু ফর্মুলার দিকে দেশ এগুচ্ছে ? সঙ্গত কারণে বলা যায়, এই প্রশ্ন একেবারে অবান্তর নয় ।

বিদেশের ঋণ ও সহযোগিতা নিয়ে নিয়ে শেখ হাসিনা সরকার পদ্মা সেতু , মেট্রো রেল, কর্ণফুলী টাওয়ার সহ অনেক উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন করেছেন বিগত দিনে । সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানা যায়, দেশের ভিতরের ও বাইরের রাষ্ট্রের মোট ঋণ রয়েছে প্রায় ১৫ লক্ষ কোটি টাকা । এই বিশাল ঋণ শোধ করার মত আমানত বাংলাদেশের নেই । দেশের সকল জনগণের টাকা একসাথে সরকারকে দিয়ে দিলেও এই ঋণ শেষ করা যাবে না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আওয়ামী লীগের সমর্থক ব্যবসায়ী ও নেতা-কর্মীর টাকা অনেকেরই ফ্রিজ হয়েছে এবং বাকিদের ফ্রিজ হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে । এ কারণে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগ সমর্থিত ব্যবসায়ীদের যে বিনিয়োগ রয়েছে, তাতে অনেক জায়গায় আগুন জ্বলেছে । শিল্প প্রতিষ্ঠানে অনেক ভাংচুর করা হয়েছে । তার ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে ব্যবসায়ী নেতা সালমান এফ রহমান গ্রেফতার হয়েছেন এবং তার ১০ দিনের রিমান্ডও মঞ্জুর হয়েছে । তাহলে এখন বোঝা কঠিন, এই রকম ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ কতটা নিরাপদ থাকবে দেশের ভেতর ।এক সময় তারা পলাতক হলেও তাদের কাছে ব্যাংক যে ঋণ পায় তা কে পরিশোধ করবে? এজন্যে বলছি, প্রতিশোধ পরায়ণ না হয়ে আমাদের ভাবতে হবে দেশের জন্যে । যদি দেশপ্রেম নিয়ে আমরা না চলতে পারি, তবে দেশ অনেক পিছিয়ে যেতে পারে । ড. ইউনূস অর্থনীতি ভালো বুঝেন, তাই হয়তো তিনি কিছুটা পরিবর্তন আনতে পারেন । এছাড়া বিশ্বব্যাংক থেকেও কিছু টাকা ঋণ আনতে পারবেন এটা বিশ্বাস করা যায়। আর তা কি যথেষ্ট হবে? কিন্তু সেই টাকাও তো আমাদের একদিন শোধ করতে হবে ।

ছাত্ররা হলো জাতির ভবিষ্যৎ। কিন্তু তারা যদি ক্ষমতা ও রাজনীতির স্বাদ পেয়ে যায়, আর টাকা-পয়সা খুব সহজে পেয়ে যায়, তবে কি তাদের স্বাভাবিক পড়ালেখা ব্যাহত হবে না? এর নিশ্চয়তা কে দেবে? তাছাড়া তারা আন্দোলন করে একটা সরকারের পতন করেছেন ভালো কথা, এখন তো তারা ঘরে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে গিয়ে পড়ালেখায় মনোনিবেশ করার কথা, কিন্তু তাদের অনেকে এখনো রাস্তায় ট্রাফিকের কাজ করছেন, রাজপথে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন । যুক্তিও আছে আবার। যদি তারা মনে করেন, অন্তর্র্বতী সরকার কোনো অনিয়ম করছে, তখন হয়তো তাদের আবার ভূমিকা রাখার দরকার হবে । দেশে সব কাজ এখন চলতে শুরু করেছে ছাত্রদেরই পছন্দ একটা সরকার দ্বারা। অথচ তারা এখনো তাদের পড়ালেখা নিয়ে পুরোপুরি ভাবছেন না। তাহলে কি এই সময় যে যাচ্ছে, তাতে কি তাদের পড়ালেখার ক্ষতি হচ্ছে না? তাই অনেক সচেতন অভিভাবক ও সুশীলরা চিন্তায় আছেন, আমাদের কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা কি কোনো ব্যক্তি কিংবা কোনো অশুভ শক্তির দ্বারা ব্যবহার হচ্ছে বা হতে পারে? বোধ জাগ্রত হোক দেশের সকল অভিভাবকের। সময় থাকতে যাতে আমরা এ বিষয়ে নিজেদের সচেতন করে তুলতে পারি । পরিশেষে বলবো, এই সরকারকে কাজ করে প্রমাণ করতে হবে, তাঁরা কারো মনের বিশেষ আশা পূরণ করার জন্যে ক্ষমতায় আসেন নি। তবেই হয়তো জনগণ তাঁদেরকে সম্মানের জায়গাতে স্থান দিতে কৃপণতা করবে না।

লেখক : ড. আজিজুল আম্বিয়া, লেখক ও কলামিস্ট।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়