রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০

আয়াতুল কুরসীর ফজিলত
অনলাইন ডেস্ক

আয়াতুল কুরসী : পবিত্র কুরআনুল কারীমের ২য় সূরা বাকারার একটি ২৫৫ নং আয়াত আয়াতুল কুরসী। এ আয়াতে ১০ টি বাক্য রয়েছে। প্রত্যেকটিতে আল্লাহর ক্ষমতার কথা রয়েছে।আয়াতুল কুরসী পাঠ করলে অনেক বিপদ আপদ দূর হয় ও কল্যাণ সাধিত হয়।

আবূ হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লা-হু ‘আনহু) বলেছেন, রাসূলে কারীম (সা ঃ ) ইরশাদ করেছেন, সূরা আল বাক্বারায় এমন একটি আয়াত রয়েছে যা কুরআনের অন্য সব আয়াতের সর্দার বা নেতা। সে আয়াতটি যে ঘরে পড়া হয়, তা থেকে শয়তান বেরিয়ে যায়। [তাফসীর মা’ আরেফুল কুরআন-১ম খণ্ড, পৃ : ৬৭৬]

আবূ উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : আল্লাহর রাসূল (সা ঃ ) বলেছেন : যে ব্যক্তি প্রতি ফরজ নামায শেষে আয়াতুল কুরসী পড়ে, তার জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ছাড়া কোন কিছু বাধা হবে না। [সহীহ আল্ জামে : ৬৪৬৪]

হজরত আলী (রা : ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা ঃ )কে বলতে শুনেছি- যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ সালাতের পর আয়াতুল কুরসী নিয়মিত পড়ে, তার জান্নাতে প্রবেশে কেবল মৃত্যুই অন্তরায় হয়ে আছে। যে ব্যক্তি এ আয়াতটি বিছানায় শয়নের সময় পড়বে আল্লাহ তার ঘরে, প্রতিবেশীর ঘরে এবং আশপাশের সব ঘরে শান্তি বজায় রাখবেন। [সুনানে বাইহাকী]

শয়নকালে পাঠ করলে সকাল পর্যন্ত তার হেফাজতের জন্য একজন ফেরেশতা পাহারায় নিযুক্ত থাকে। যাতে শয়তান তার নিকটবর্তী হতে না পারে। (বুখারি) হযরত আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত : রাসুল (সা ঃ ) বলেছেন : সুরা বাকারায় একটি শ্রেষ্ঠ আয়াত রয়েছে, যে ঘরে আয়াতুল কুরসী পাঠ করা হবে সেখান থেকে শয়তান পালাতে থাকে। [মুস্তাদরাকে হাকিম : ২১০৩]

উবাই বিন কাব থেকে বর্ণিত, নবী কারীম (সা ঃ ) বলেছেন : আল্লাহর কসম! যার হাতে আমার প্রাণ আয়াতুল কুরসীর একটি জিহবা ও দুটি ঠোট রয়েছে এটি আরশের পায়ার কাছে আল্লাহর প্রশংসা করতে থাকবে। [মুসনাদে আহমদ : ২১৬০২]

আয়াতুল কুরসী : উচ্চারণ ও অনুবাদ :

আল্লা-হু লাইলা-হা ইল্লা-হুওয়া আল হাইয়ুল কাইয়ূমু লা-তা’খুযুহূ ছিনাতুওঁ ওয়ালা-নাওম লাহূ মা-ফিছ ছামা-ওয়া-তি ওয়ামা-ফিল আরদি মান যাল্লাযী ইয়াশফা‘উ ‘ইনদাহূ ইল্লা-বিইযনিহী ইয়া‘লামুমা-বাইনা আইদীহিম ওয়ামা-খলফাহুম ওয়ালা-ইউহীতূনা বিশাইইম মিন ‘ইলমিহীইল্লা-বিমা-শাআ ওয়াছি‘আ কুরছিইয়ুহুছ ছামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ, ওয়ালা-ইয়াঊদুহু হিফজু হুমা-ওয়া হুওয়াল ‘আলীইয়ূল ‘আজীম।

অনুবাদ : মহান আল্লাহ্, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সর্বদা রক্ষণাবেক্ষণকারী। তাঁকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করে না। আকাশম-লে ও ভূম-লে যা কিছু আছে, তাঁরই। কে সেই ব্যক্তি যে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর নিকট সুপারিশ করে? তিনি লোকদের সমুদয় প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অবস্থা জানেন। পক্ষান্তরে মানুষ তাঁর জ্ঞানের কোনকিছুই আয়ত্ত করতে সক্ষম নয়, তিনি যে পরিমাণ ইচ্ছা করেন সেটুকু ছাড়া। তাঁর কুরসী আকাশ ও পৃথিবী পরিবেষ্টন করে আছে এবং এ দু’য়ের রক্ষণাবেক্ষণ তাঁকে ক্লান্ত করে না। তিনি উচ্চ মর্যাদাশীল, মহান। (সূরা বাকরা - ২৫৫)

আয়াতুল কুরসীর মর্যাদা

এই আয়াতটি আয়াতুল কুরসী। এটি অত্যন্ত মর্যাদা বিশিষ্ট আয়াত। উবাই ইবনু কা‘ব (রা ঃ ) -কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করেন ঃ ‘মহান আল্লাহ্র কিতাবে সর্বাপেক্ষা মর্যাদা বিশিষ্ট আয়াত কোনটি?’ তিনি উত্তরে বলেন ঃ ‘মহান আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সবচেয়ে ভালো জানেন।’ তিনি পুনরায় এটাই জিজ্ঞেস করেন। বারবার প্রশ্ন করায় তিনি বলেন ঃ ‘আয়াতুল কুরসী।’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন তাঁকে বলেন ঃ

‘হে আবুল মুনযির! মহান আল্লাহ্ তোমার জ্ঞানে বরকত দান করুন! যে মহান আল্লাহ্র হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ করে আমি বলছি যে, এর জিহ্বা হবে, ওষ্ঠ হবে এবং এটি বাদাশাহর পবিত্রতা বর্ণনা করবে ও ‘আরশের পায়ায় লেগে থাকবে। (মুসনাদ আহমাদ -৫/১৪, সহীহ মুসলিম-১/২৫৮/৫৫৬, মুসনাদআবূদাউদআত-ত্বায়ালিসী-১/২৪) ইমাম মুসলিম (রহ ঃ ) -ও এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি ‘যার হাতে আমার প্রাণ’ এ কথাটুকু উল্লেখ করেন নি। (সহীহ মুসলিম- ১/২৫৮/৫৫৬)

আবূ আইউব আনসারী (রা ঃ ) বলেন ঃ ‘আমার ধনাগার হতে জিনেরা খেজুর চুরি করে নিয়ে যেতো। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এজন্য অভিযোগ পেশ করি। তিনি বলেন, যখন তুমি তাকে দেখবে তখন "বিছমিল্লাহি জিব্রাঈল রসূলুল্লাহ "পাঠ করবে। যখন সে এলো তখন আমি এটি পাঠ করে তাকে ধরে ফেললাম। সে বললো ঃ আমি আর আসবো না। সুতরাং আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে উপস্থিত হলে তিনি আমাকে বললেন ঃ ‘তোমার বন্দী কি করেছিলো? আমি বললাম ঃ তাকে আমি ধরে ফেলেছিলাম, সে আর না আসার অঙ্গীকার করায় তাকে ছেড়ে দিয়েছি। তিনি বললেন ঃ সে আবার আসবে। আমি তাকে এভাবে দু’তিন বার ধরে ফেলে অঙ্গীকার নিয়ে নিয়ে ছেড়ে দেই। আমি তা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট বর্ণনা করি। তিনি বারবারই বলেন, সে আবার আসবে। শেষবার আমি তাকে বলি ঃ এবার আমি তোমাকে ছাড়বো না। সে বললো ঃ ‘আমাকে ছেড়ে দিন, আমি আপনাকে এমন একটি জিনিস শিখিয়ে দিচ্ছি যে, কোন জ্বিন ও শায়তান আপনার কাছে আসতেই পারবে না। আমি বললাম ঃ আচ্ছা, বলে দাও। সে বললো, এটা ‘আয়াতুল কুরসী।’ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এটা বর্ণনা করি। তিনি বললেন, সে মিথ্যাবাদী হলেও এটা সে সত্যই বলেছে।’ (হাদীসটি সহীহ। মুসতাদরাক হাকিম-১/৫৬২, মুসনাদ আহমাদ -৫/৪২২, সহীহ ইবনু হিব্বান-২/৭৯/৭৮১, আল মাজমা‘উযযাওয়ায়িদ-১০/১১৭, ১১৮) ইমাম তিরমিযী (রহ ঃ ) -ও হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং একে হাসান গারীব বলেছেন। (জামি‘তিরমিযী – হাদীস নং ৮/১৮৩) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুহাজিরদের নিকট গেলে এক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞেস করে, হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুর’আনুল কারীমের খুব বড় আয়াত কোনটি? তিনি এই আয়াতুল কুরসী পাঠ করে শুনান। (তাবারানী, আল মাজমা‘উযযাওয়ায়িদ-৬/৩২১, উসদুলগাবাহ-১/৮৯) একবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীগণের মধ্যে এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি বিয়ে করেছো? তিনি বলেন ঃ হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! আমার নিকট মাল-ধন নেই বলে বিয়ে করিনি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন ঃ তোমার কি কুলহু অল্লাহু মুখস্থ নেই? তিনি বলেন, এটা তো মুখস্থ আছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, এটা তো কুর’আনুল কারীমের এক চতুর্থাংশ হয়ে গেলো। "কুলইয়া আইউহাল কাফিরুন "

কি মুখস্থ নেই? তিনি বলেন ঃ হ্যাঁ এটাও আছে। তিনি বলেন এটা হলো কুর’আন পাকের এক চতুর্থাংশ। আবার জিজ্ঞেস করেন " ইযা যুলযিলাতিল"

কি মুখস্থ আছে? তিনি বলেন ঃ হ্যাঁ। তিনি বলেন, এটা হলো এক চতুর্থাংশ। "ইযা জায়া নাসরুল্লাহি "মুখস্থ আছে কি? তিনি বলেন ঃ হ্যাঁ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন ঃ এটা এক চতুর্থাংশ। আয়াতুল কুরসী কি মুখস্থ আছে? তিনি বলেন, হ্যাঁ আছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন ঃ এটা হলো এক চতুর্থাংশ কুর’আন। (মুসনাদ আহমাদ )

আবূ যার (রা : ) বলেন,আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে দেখি যে, তিনি মাসজিদে অবস্থান করছেন। আমিও বসে পড়ি। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি সালাত আদায় করেছো? আমি বলি, না। তিনি বলেন ঃ উঠো, সালাত আদায় করে নাও। আমি সালাত আদায় করে আবার বসে পড়ি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন আমাকে বলেন, হে আবূ যার! মানুষ শায়তান, জ্বিন শায়তান হতে আশ্রয় প্রার্থনা করো। আমি বলি, হে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! মানুষ শায়তানও হয় নাকি? তিনি বলেন ঃ হ্যাঁ, আমি বলি, হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! সালাত সম্বন্ধে আপনি কি বলেন, তিনি বলেন ঃ এটার সবই ভালো। যার ইচ্ছে হবে কম অংশ নিবে এবং যার ইচ্ছে হবে বেশি অংশ নিবে। আমি বলি, হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! আর সাওম? তিনি বলেন ঃ এটা এমন ফরয যা যথেষ্ট হয়ে থাকে এবং মহান আল্লাহ্র নিকট অতিরিক্ত থাকে। আমি বলি, আর দান-খয়রাত? তিনি বলেন, বহুগুণ বিনিময় আদায়কারী। আমি বলি ঃ সবচেয়ে উত্তম দান কোনটি? তিনি বলেন, যে ব্যক্তির মাল অল্প রয়েছে তার সাহস করা কিংবা গোপনে অভাবগ্রস্তের অভাব দূর করা। আমি জিজ্ঞেস করি, সর্বপ্রথম নবী কে? তিনি বলেন ঃ আদম (আ ঃ ) আমি বলি, তিনি কি নবী ছিলেন? তিনি বলেন ঃ তিনি নবী ছিলেন এবং মহান আল্লাহ্র সাথে কথা বলেছিলেন। আমি জিজ্ঞেস করি, রাসূলগণের সংখ্যা কতো? তিনি বলেন ঃ তিনশ’ এবং দশের কিছু বড় দল। একটি বর্ণনায় তিনশ’ পনের জন শব্দ (সংখ্যা) রয়েছে। আমি বলি ঃ হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনার ওপর সবচেয়ে মর্যাদা সম্পন্ন কোন আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে? তিনি বলেন, আয়াতুল কুরসী "আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহু "

সহীহুল বুখারীতে এই হাদীসটি আবূ হুরায়রাহ্ (রা ঃ ) থেকে বর্ণিত আছে। তাতে রয়েছে যে, আবূ হুরাইহরা (রা ঃ ) বলেন ঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে রামাযানের যাকাতের ওপর প্রহরী নিযুক্ত করেছেন। আমার নিকট একজন আগমনকারী আসে এবং ঐ মাল হতে কিছু কিছু উঠিয়ে সে তার চাদরে জমা করতে থাকে। আমি তাকে ধরে ফেললাম এবং বললাম ঃ ‘তোমাকে আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট নিয়ে যাবো। সে বলে ঃ আমাকে ছেড়ে দিন। আমি অত্যন্ত অভাবী, আমার অনেক পোষ্য রয়েছে। আমি তখন তাকে ছেড়ে দেই। সকালে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে জিজ্ঞেস করেন ঃ ‘তোমার রাতের বন্দী কি করেছিলো?’ আমি বললাম ঃ ‘হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! সে তার ভীষণ অভাবের অভিযোগ করে এবং বলে তার অনেক পোষ্য আছে। তার প্রতি আমার করুণার উদ্রেক হয়। কাজেই আমি তাকে ছেড়ে দেই। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন ঃ ‘সে তোমাকে মিথ্যা কথা বলেছে। সে আবার আসবে। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কথায় বুঝলাম যে, সে সত্যিই আবার আসবে। আমি পাহারা দিতে থাকলাম। সে এলো এবং খাদ্য উঠাতে লাগলো। আবার আমি তাকে ধরে ফেলে বললাম ঃ ‘তোমাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে নিয়ে যাবো। ‘সে আবার ঐ কথাই বললো। আমাকে ছেড়ে দিন। কেননা আমি অত্যন্ত অভাবগ্রস্ত ব্যক্তি, আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে, আমি আর চুরি করতে আসবো না।’ তার প্রতি আমার দয়া হলো। সুতরাং তাকে ছেড়ে দিলাম। সকালে আমাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন ঃ হে আবূ হুরায়রাহ্! তোমার রাতের বন্দিটি কি করেছে? আমি বললাম ঃ ‘হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! সে অভাবের অভিযোগ করায় আমি তাকে দয়া করে ছেড়ে দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন ঃ ‘সে তোমাকে মিথ্যা কথা বলেছে। সে আবার আসবে।’ আবার আমি তৃতীয় রাতে পাহারা দেই। অত ঃ পর সে এসে খাদ্য উঠাতে লাগলো। আমি তাকে বললাম ঃ ‘এটাই তৃতীয় বার এবং এবারই শেষ। তুমি বার বার বলেছো যে, আর আসবে না, অথচ আবার এসেছো। সুতরাং আমি তোমাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে নিয়ে যাবোই।’ তখন সে বললো ঃ আমাকে ছেড়ে দিন, আমি আপনাকে এমন কতোগুলো কথা শিখিয়ে দিচ্ছি যার মাধ্যমে মহান আল্লাহ্ আপনার উপকার সাধন করবেন।’ আমি বললাম ঃ ঐগুলো কি? সে বললো ঃ ‘যখন আপনি বিছানায় শয়ন করবেন তখন আয়াতুল কুরসী পড়ে নিবেন।’ তাহলে মহান আল্লাহ্ আপনার জন্য একজন প্রহরী নিযুক্ত করবেন এবং সকাল পর্যন্ত শায়তান আপনার নিকটবর্তী হতে পারবে না। সুতরাং তাকে আমি ছেড়ে দিলাম। পরদিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন ঃ গতরাতে তোমার বন্দী কি করেছে? আমি উত্তরে বললাম ঃ হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! সে আমাকে কিছু কথা বলেছে যা বললে আমি মহান আল্লাহ্র পক্ষ থেকে সাহায্যপ্রাপ্ত হবো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন ঃ তা কি? আমি বললাম ঃ সে আমাকে বলেছে যে, যখন তুমি বিছানায় ঘুমাতে যাবে তখন আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে। তাহলে মহান আল্লাহ্ তোমার জন্য একজন প্রহরী নিযুক্ত করবেন যে তোমার কাছে অবস্থান করবে, ফলে ভোর পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন ঃ ‘সে চরম মিথ্যাবাদী হলেও এ ব্যাপারে সে সত্য কথাই বলেছে। হে আবূ হুরায়রাহ্ (রা ঃ ) ! তিন রাত তুমি কার সাথে কথা বলেছো তা জানো কি? আমি বললাম ঃ না। তিনি বললেন ঃ সে শায়তান। (ফাতহুল বারী ৮/৬৭২, ৪/৫৬৮, ৬/৩৮৬) ইমাম নাসাঈ (রহ ঃ ) তার ‘আল ইয়াওম ওয়াল লাইলাহ’ গ্রন্থে এই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। (দারিমী ৫৩২)

আয়াতুল কুরসীতে রয়েছে মহান আল্লাহ্র ইস্মে ‘আযম রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তিনটি আয়াতের মধ্যে মহান আল্লাহ্র ইসমে ‘আযম রয়েছে। একটিতো হচ্ছে আয়াতুল কুরসী।

"আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহু, আলহাই উল কইয়ূম "

‘মহান আল্লাহ্! তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনি স্বাধীন ও নিত্য নতুন ধারক, সবকিছুর ধারক।’ (২নং সূরাহ বাকারাহ, আয়াত নং ২৫৫)

দ্বিতীয়টি হচ্ছে : "আলীফ লাম মিম,আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহু, আলহাই উল কইয়ূম "

‘আলীফ, লাম, মীম। মহান আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ বা উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব ও নিত্য বিরাজমান।’ (৩ নং সূরাহ্ আলী ‘ইমরান, আয়াত নং ১-২) এবং তৃতীয়টি হচ্ছে ঃ

"অ-আনাতিল উজুহু লিল হাই ইল কইয়্যুম, অ ক্বদ খ বা মান হামালা জুলমা "

‘স্বাধীন, স্বধিষ্ঠ পালনকর্তার নিকট সকলেরই হবে অধোবদন এবং সেই ব্যর্থ হবে যে যুলমের ভার বহন করবে।’ (২০ নং সূরাহ্ তা-হা, আয়াত নং ১১১। মুসনাদ আহমাদ ৬/৪৬১) ইমাম আবূ দাঊদ (রহ ঃ ) , তিরমিযী (রহ ঃ ) এবং ইবনু মাজাহও (রহ ঃ ) এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। (সুনান ইবনু মাজাহ-২/১২৬৭/৩৮৫৬, হাদীস নং২/১৬৮, ৯/৪৪৭, ২/১২৬৭) তিরমিযী (রহ ঃ ) এ হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন।

এ ছাড়া ইবনু মারওদুয়াই (রহ ঃ ) আবূ উমামাহ (রা ঃ ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন ঃ যদি কেউ মহান আল্লাহ্র ইসমে ‘আযমসহ তাঁর কাছে প্রার্থনা করে তাহলে তিনি সেই প্রার্থনা কবূল করেন। তা রয়েছে এই তিনটি সূরায়। সূরাহ্ বাকারাহ, সূরাহ্ আলী ‘ইমরান ও সূরাহ্ তা-হা। (তাবারানী ৮/২৮২)

অন্য হাদীসে রয়েছে যে, ইসমে ‘আযম তিনটি সূরায় রয়েছে। এই নামের বরকতে যে প্রার্থনা মহান আল্লাহ্র নিকট করা হবে তা গৃহীত হয়ে থাকে। ঐ সূরাহ্ তিনটি হচ্ছে, সূরাহ্ বাকারাহ, সূরাহ্ আলী ‘ইমরান ও সূরাহ্ তা-হা। (তাফসীর ইবনু মিরদুওয়াই)

দামেস্কের খাতিব হিশাম ইবনু ‘আম্মার (রহ ঃ ) বলেন যে, সূরাহ্ বাক্বারার ইসমে ‘আযমের আয়াত হচ্ছে আয়াতুল কুরসী, সূরাহ্ আলী ‘ইমরানের প্রথম আয়াত ৩টি এবং সূরাহ্ ত্বা-হার

এই আয়াতটি " অ আনাতিল উজুহু লিল হাইউল কাইয়্যুম "

আয়াতুল কুরসীতে রয়েছে ১০টি পূর্ণাঙ্গ বাক্য এই আয়াতে পৃথক পৃথক অর্থ সম্বলিত দশটি বাক্য রয়েছে।

১। প্রথম বাক্যে মহান আল্লাহ্র একাত্মবাদের বর্ণনা রয়েছে যে, "আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহু " সৃষ্টজীবের তিনিই একমাত্র মহান আল্লাহ্।

২। দ্বিতীয় বাক্যে রয়েছে যে,আলহাই উল ক্বইয়্যুম " তিনি চিরঞ্জীব, তাঁর ওপর কখনো মৃত্যু আসবেনা। তিনি চির বিরাজমান। কাইউমুন শব্দটির দ্বিতীয় পঠন কাইয়্যামুনও রয়েছে। সুতরাং সমস্ত সৃষ্টজীব তাঁর মুখাপেক্ষী এবং তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। তাঁর অনুমতি ব্যতীত কোন লোকই কোন জিনিস প্রতিষ্ঠিত রাখতে পারে না। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছে ঃ "অ মিন আয়াতিহি আন্ তাকুমাছ ছামায়ু অল আরদু বি আমরিহী " তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তাঁরই আদেশে আকাশ ও পৃথিবীর স্থিতি। (৩০নংসূরা রুম, আয়াত নং ২৫)

৩। তৃতীয় বাক্যটিতে বলা হচ্ছে ঃ "লা তা'খুজুহু ছিনাতুও অ ললা নাউম "

‘না কোন ক্ষয়-ক্ষতি তাঁকে স্পর্শ করে না, না কোন সময় তিনি স্বীয় জীব হতে উদাসীন থাকেন। বরং প্রত্যেকের কাজের ওপর তাঁর সজাগ দৃষ্টি রয়েছে। প্রত্যেকের অবস্থা তিনি দেখছেন। সৃষ্টজীবের কোন অণু-পরমাণুও তাঁর হিফাযত ও জ্ঞানের বাইরে নেই। তন্দ্রা ও নিদ্রা কখনো তাঁকে স্পর্শ করে না।’ সুতরাং তিনি ক্ষনিকের জন্যও সৃষ্টজীব হতে উদাসীন থাকেন না।

বিশুদ্ধ হাদীসে রয়েছে ঃ একবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে সাহাবীগণকে চারটি কথার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন ঃ

(১) মহান আল্লাহ্ কখনো ঘুমাননা আর পবিত্র সত্ত্বার জন্য নিদ্রা আদৌ শোভনীয় নয়।

(২) তিনি দাঁড়ি-পাল্লার রক্ষক। যার জন্য চান ঝুঁকিয়ে দেন এবং যার জন্য চান উঁচু করে দেন।

(৩) সমস্ত দিনের কার্যাবলী রাতের পূর্বে এবং রাতের ‘আমল দিনের পূর্বে তাঁর নিকট উঠিয়ে নেয়া হয়।

(৪) তাঁর সামনে রয়েছে আলো বা আগুনের পর্দা। সেই পর্দা সরে গেলে যতোদূর পর্যন্ত তাঁর দৃষ্টি পৌঁছে ততোদূর পর্যন্ত সমস্ত জিনিস তাঁর চেহারার ঔজ্জ্বল্যে পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। (সহীহ মুসলিম ১/১৬১)

৪। চতুর্থ বাক্যটিতে মহান আল্লাহ্ বলেন ঃ

"লা হুমা ফিছ ছামাঅতি অ মা ফিল আরদি "

নভোমন্ডল ও ভূমণ্ডলে যা কিছু রয়েছে সবই তাঁর। মহান আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন অন্যত্র বলেন ঃ

আকাশসমূহ ও পৃথিবীতে এমন কেউ নেই যে দয়াময়ের নিকট উপস্থিত হবে না বান্দা রূপে। তিনি তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রেখেছেন এবং তিনি তাদেরকে বিশেষভাবে গণনা করে রেখেছেন এবং কিয়ামতের দিন তাদের সকলেই তাঁর নিকট আসবে একাকী অবস্থায়। (১৯ নং সূরাহ্ মারইয়াম, আয়াত নং ৯৩-৯৫)

৫। পঞ্চম বাক্যে মহান আল্লাহ্ বলেন ঃ

"মাং যাল্লাযি ইয়াশ ফায়্যু ইংদাহু ইল্লা বি ইযনিহ "

কে আছে এমন যে, তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর নিকট সুপারিশ করতে পারে?’ এ ধরনের অন্য একটি আয়াতে বলা হয়েছে ঃ

আকাশে কতো ফিরিশতা রয়েছে, তাদের কোন সুপারিশ ফলপ্রসু হবে না যতোক্ষণ মহান আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা এবং যার প্রতি সন্তুষ্ট তাকে অনুমতি না দেন। (৫৩ নং সূরাহ্ আন নাজম, আয়াত নং ২৬)

অপর আয়াতে মহান আল্লাহ্ আরো বলেন ঃ তারা সুপারিশ করে শুধু তাদের জন্য যাদের প্রতি তিনি সন্তুষ্ট। (২১নং সূরাহ্ আম্বিয়া, আয়াত নং ২৮)

কিন্ত তাদের সুপারিশ কোন কাজে আসবেনা। তবে মহান আল্লাহ্র ইচ্ছা ও সন্তুষ্টি হিসেবে যদি কারো জন্য অনুমতি দেয়া হয় সেটা ভিন্ন কথা। এখানেও মহান আল্লাহ্র শ্রেষ্ঠত্ব ও মহা-মর্যাদার কথা বর্ণিত হচ্ছে। তাঁর অনুমতি ও সম্মতি ছাড়া কারো সাহস নেই যে, সে কারো সুপারিশের জন্য মুখ খোলে। হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন ঃ

‘আমি মহান আল্লাহ্র ‘আরশের নীচে গিয়ে সাজদায় পড়ে যাবো। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা যতোক্ষণ চাইবেন আমাকে এই অবস্থায় রাখবেন। অত ঃ পর বলবেন ঃ ‘মাথা উত্তোলন করো। তুমি বলো, তোমার কথা শোনা হবে, সুপারিশ করো, তা গৃহীত হবে।’ তিনি বলেন ঃ ‘আমাকে সংখ্যা নির্ধারণ করে দেয়া হবে এবং তাদেরকে আমি জান্নাতে নিয়ে যাবো। (সহীহ মুসলিম ১/১৮০)

৬। ষষ্ঠ বাক্যে রয়েছে ঃ

"ইয়ালামু মা বাইনা আইদিহীম অমা খলফাহুম "

সম্মুখের অথবা পশ্চাতের সবই তিনি অবগত আছেন। অর্থাৎ মহান আল্লাহ্ অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত সম্বন্ধে জ্ঞাত। তাঁর জ্ঞান সমস্ত সৃষ্টজীবকে ঘিরে।’ যেমন অন্য জায়গায় ফিরিশতার উক্তি নকল করা হয়েছে ঃ

আমরা আপনার রবের আদেশ ব্যতীত অবতরণ করি না; যা আমাদের অগ্রে ও পশ্চাতে আছে এবং যা এই দু’য়ের অন্তবর্তী তা তাঁরই এবং আপনার রব কোন কিছু ভুলেননা। (১৯নং সূরাহ্ মারইয়াম, আয়াত নং ৬৪)

৭। সপ্তম বাক্যে মহান আল্লাহ্ বলেন ঃ

"অলা ইউ হিতুনা বিশাইয়্যিম মিন ইলমিহী ইল্লা বিমা শাআ "

একমাত্র তিনি যতোটুকু ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত, তাঁর অন্তর জ্ঞানের কোন বিষয়েই কেউ ধারণা করতে পারে না। মহান আল্লাহ্ যে অসীম জ্ঞানের মালিক তা থেকে তিনি যদি কাউকে জানানোর ইচ্ছা করেন তাহলে তিনি তাকে তা জানান। মহান আল্লাহ্ যাকে যে জ্ঞান বা প্রজ্ঞা দান করেন তার অধিক জ্ঞাত হওয়ার ক্ষমতা কারো নেই। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, মহান আল্লাহ্ বলেন ঃ

কিন্তু তারা জ্ঞান দ্বারা তাঁকে আয়ত্ত করতে পারে না। (২০ নং সূরাহ্ তা-হা, আয়াত নং ১১০)

৮। অষ্টম বাক্যে মহান আল্লাহ্ বলেন ঃ

"অ ছিয়া কুরসীই উ হুস সামাঅতি অল আরদ"

তাঁর আসন আসমান ও যমীনকে পরিব্যাপ্ত।

ওয়াকী‘ (রহ ঃ ) তার তাফসীরে ইবনু ‘আব্বাস (রা ঃ ) থেকে বর্ণনা করেন ঃ কুরসী হলো মহান আল্লাহ্র পা রাখার স্থান এবং তাঁর সিংহাসন কি ধরনের তা চিন্তা করাও কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। (তাবারানী ১২/৩৯) ইমাম হাকিম (রহ ঃ ) তার মুসতাদরাক গ্রন্থেও ইবনু ‘আব্বাস (রা ঃ ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (২/২৮২) ইমাম হাকিম (রহ ঃ ) বলেন যে, এ হাদীসটি সহীহাইনের শর্তে সঠিক। যাহহাক (রহ ঃ ) বর্ণনা করেছেন যে, ইবনু ‘আব্বাস (রা ঃ ) বলেন, ‘আকাশসমূহ ও পৃথিবীতে যদি ছড়িয়ে দেয়া হয় এবং সবাইকে মিলিত করে এক করে দেয়া হয় তাহলে তা কুরসীর তুলনায় ঐরূপ যেরূপ জনশূন্য মরু প্রান্তরে একটি বৃত্ত।’ (তাফসীর ইবনু আবী হাতিম ৩/৯৮১)

৯। নবম বাক্যে বলা হয়েছে ঃ

"অলা ইয়া উ দুহু হিফজুহুমা "

এতদুভয়ের সংরক্ষণে তাঁকে বিব্রত হতে হয় না।

বরং এগুলো সংরক্ষণ তার নিকট অতীব সহজ। তিনি সমস্ত সৃষ্টজীবের কার্যাবলী সম্বন্ধে সম্যক অবগত। সবকিছুর ওপর তিনি রক্ষকরূপে রয়েছেন। কোন কিছুই তাঁর দৃষ্টির অন্তরালে নেই। সমস্ত সৃষ্টজীব তাঁর সামনে অতীব তুচ্ছ। সবাই তাঁর মুখাপেক্ষী এবং সবাই তাঁর নিকট অতি দরিদ্র। তিনি ঐশ্বর্যশালী এবং অতীব প্রশংসিত। তিনি যা চান তাই করে থাকেন। তাঁকে হুকুমদাতা কেউ নেই এবং তাঁর কাজে হিসাবগ্রহণকারীও কেউ নেই।

১০। দশম বাক্যে মহান আল্লাহ্ বলেন ঃ

"অহুঅল আলীয়্যুল আজিম "

তিনিই সর্বোচ্চ, মহীয়ান প্রত্যেক জিনিসের ওপর ব্যাপক ক্ষমতাবান। সবকিছুরই মালিকানা তাঁর হাতে রয়েছে। এ জন্যই তিনি বলেন ঃ "আল কাবিরুল মুতা আল"

তিনি সমুন্নত ও মহীয়ান। (১৩নং সূরাহ্ রা‘দ, আয়াত নং ৯) এই আয়াতটিতে এবং এই প্রকারের বহু আয়াতে ও সহীহ হাদীসমূহ মহান আল্লাহ্র গুণাবলী সম্বন্ধে যা কিছু বলা হয়েছে এগুলোর অবস্থান জানার চেষ্টা না করে এবং অন্য কিছুর সাথে তুলনা না করে এবং ঐগুলোর ওপর বিশ্বাস রাখাই আমাদের অবশ্য কর্তব্য। আমাদের পূর্ববর্তী মহা মনীষীগণ এই পন্থাই অবলম্বন করেছিলেন।

লেখক : ইমাম ও খতিব, বিষ্ণুপুর মদিনা বাজার বাইতুল আমিন জামে মসজিদ।

ও শিক্ষক, বিষ্ণুপুর সিদ্দীকীয়া দ্বীনিয়া মাদরাসা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়