প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০
বায়হাকী এবং আবু নাঈম বর্ণনা করেছেন , হাসসান ইবনে ছাবেত (রাঃ) বলেন , আমি তখন সাত - আট বছরের বুঝমান বালক ছিলাম । ঐ সময় একদা এক ইয়াহুদী একটি টিলার উপর উঠে মদীনার ইয়াহুদী সম্প্রদায়কে আওয়াজ দিয়ে ডাকল । তাতে তারা ছুটে এসে তার কাছে জিজ্ঞেস করল , কি ব্যাপার ? ইয়াহুদী বলল , আজ রাতে আহমদ ভূমিষ্ঠ হয়েছেন । তাঁর লক্ষণযুক্ত তারকা আসমানে উদিত হয়েছে । বায়হাকী , তিবরানী , আবু নাঈম এবং ইবনে আসাকির হযরত উসমান ইবনে আবুল আছ ( রাঃ ) থেকে বর্ণনা করেছেন । আমার মাতা আমাকে বলেছেন , আমেনার গৃহে নবী করীম ( সঃ ) -এর ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম । আমেনার গৃহে চারদিক নূরের আলোকে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছিল । আসমানের নক্ষত্ররাজি এভাবে নীচের দিকে ঝুঁকে পড়েছিল , মনে হচ্ছিল যেন তারকাগুলো আমার উপরই পতিত হবে । তাছাড়া নবী করীম ( সাঃ ) -এর জন্মগ্রহণকালে আমেনার দেহ থেকে একটি নূর বের হয়ে সারা ঘর আলোকময় হয়ে গিয়েছিল ।
আহমদ বাযযার , তিবরানী , হাকেম , বায়হাকী এবং আবু নাঈম ইরবায় ইবনে সারিয়া ( রাঃ ) থেকে বর্ণনা করেছেন , নবী করীম ( সাঃ ) বলেছেন , আমি আল্লাহর বান্দা । আমি সে সময় থেকেই শেষ নবী , যখন হযরত আদম (আঃ) -এর সত্তা মৃত্তিকার মধ্যে নিহিত ছিল । আমার জন্য হযরত ইব্রাহীম ( আঃ ) দোয়া করেছেন । হযরত ঈসা (আঃ) আমার আগমনের সুসংবাদ দিয়াছেন এবং আমার মাতা স্বপ্ন দেখেছেন । নবীদের মাতাগণ এরূপ স্বপ্ন দেখে থাকেন । নবী করীম ( সাঃ ) -এর মাতা তাঁর পুত্রের জন্মের সময় এমন একটি নূর দেখতে পান যার উজ্জ্বল আলোকে সুদূর সিরিয়ার রাজমহল পর্যন্ত তার চোখে ভেসে উঠে । হাকেম এবং বায়হাকী খালেদ ইবনে মে'দান থেকে বর্ণনা করেছেন , একদা সাহাবাগণ আরজ করলেন , ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাঃ) ! আপনি আপনার নিজের সম্পর্কে আমাদেরকে কিছু কথা শুনান । তখন তিনি বললেন , আমি হযরত ইব্রাহীম (আঃ) -এর দোয়ার ফলশ্রুতি এবং হযরত ঈসা ( আ ) -এর সুসংবাদের বাস্তবায়ন । আমার মাতা আমি তার গর্ভে থাকাকালীন অবস্থায় স্বপ্ন দেখেছেন তার দেহ থেকে একটি নূরের উদয় হয়েছে । যার আলোকে সিরিয়ার বুছরা এলাকা আলোকোজ্জ্বল হয়ে গিয়েছে । খালেদ বলেন , নবী করীম (সাঃ) -এর মাতা আমেনা তার গর্ভাবস্থায় যে নূর দেখেছিলেন , তা ছিল স্বপ্ন । পক্ষান্তরে নবী করীম ( সঃ ) -এর জন্মের সময় যে নূর দেখেছিলেন , তা ছিল তাঁর জাগ্রত অবস্থার বাস্তব ঘটনা । ইবনে ইসহাক বর্ণনা করেছেন , হযরত আমেনা বলেন , গর্ভসঞ্চার হওয়ার পর কেউ তাকে বলল , হে আমেনা ! তোমার গর্ভে মনুষ্যকুলের সরদার স্থান লাভ করেছেন । তার নিদর্শন হল , যখন তিনি জন্মগ্রহণ করবেন তখন একটি নূরের উদয় হবে । যার আলোকে সিরিয়ার বুছরা নগরীর রাজপ্রাসাদ পর্যন্ত চোখের সামনে ভেসে উঠবে । তোমার এ সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে তার নাম মুহাম্মদ রেখো ।
ইবনে সা’দ এবং ইবনে আসাকির হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন , হযরত আমেনা বলেন , নবী করীম (সাঃ) -কে গর্ভে ধারণ করার পর থেকে তার ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত আমার কোনরূপ ক্লেশ পেতে হয়নি । তার ভূমিষ্ঠ হওয়ার সাথে সাথে একটি নূরের উদয় হল । যাতে পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যবর্তী সমস্ত এলাকা আলোকোজ্জ্বল হয়ে গেল । জন্মের সময় তিনি তার হাত দিয়ে মাটিতে ভর দিলেন এবং একমুষ্টি মাটি নিয়ে হাত বন্ধ করে আসমানের দিকে দৃষ্টিপাত করলেন ।
ইবনে সা'দ ছাওরর ইবনে ইয়াযিদ থেকে , তিনি আল আজফা থেকে বর্ণনা করেছেন , নবী করীম (সাঃ) বলেছেন , আমার জন্মগ্রহণকালে আমার মাতা তার দেহ থেকে একটি নূর উদিত হতে দেখলেন যার জ্যোতির ছটা সিরিয়ার রাজধানী পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ল ।
আবু নাজীম আতা ইবনে ইয়াসার থেকে বর্ণনা করেছেন , হযরত উম্মে সালামাহ (রাঃ) , হযরত আমেনার এ কথা বর্ণনা করেছেন ; যে রাতে নবী করীম ( সঃ ) ভূমিষ্ঠ হলেন , আমি একটি নূর উদিত হতে দেখলাম । যার আলোকে সিরিয়ার রাজপ্রাসাদ পর্যন্ত এভাবে আলোকোদ্ভাাসিত হয়ে উঠল , তা আমিও দেখতে পেলাম ইবনে সা’দ আমর ইবনে আছেম থেকে , তিনি হুমাম ইবনে ইয়াহইয়া থেকে , তিনি ইসহাক ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে নবী করীম (সাঃ) -এর মাতা আমেনার এ বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন , নবী করীম (সাঃ) ভূমিষ্ঠ হলে আমার দেহ থেকে একটি নূর বের হল । যাতে সিরিয়ার রাজপ্রাসাদ পর্যন্ত আলোকোজ্জ্বল হয়ে গেল । তিনি সম্পূর্ণ পাক - পবিত্র অবস্থায় ভূমিষ্ট হলেন । কোনরূপ অপরিচ্ছন্নতা বা অপবিত্রতা ছিল না । ভূমিষ্ঠ হয়েই তিনি মাটিতে তার হাত রাখলেন । ইবনে সা’দ মুআয় আমারী থেকে , তিনি ইবনে আওন থেকে , তিনি ইবনে কিবতিয়া থেকে বর্ণনা করেছেন , হযরত আমেনা নবী করীম (সাঃ) -এর জন্মের ব্যাপারে বলেছেন , আমি আমার দেহ থেকে একটি আলোকপি- উদিত হতে দেখলাম । যাতে সমগ্র জগত আলোময় হয়ে উঠল । ইবনে সা'দ হাসসান ইবনে আতিয়্যাহ থেকে বর্ণনা করেছেন , নবী করীম ( সঃ ) জন্মগ্রহণ করেই নিজ হাতের তালু এবং হাটু দিয়ে মাটিতে ভর দিলেন । ঐ সময় তিনি আসমানের দিকে তাকিয়েছিলেন ।
ইবনে সা'দ মুসা ইবনে ওবায়দাহ থেকে এবং তিনি তার ভাই থেকে বর্ণনা করেছেন , নবী করীম (সাঃ) জন্মগ্রহণ করে হাত দিয়ে মাটিতে ভর দিলেন । মস্তক আসমানের দিকে উত্তোলন করলেন এবং হাতে একমুষ্টি মাটি তুলে নিলেন । বনু লাহাবের এক ব্যক্তি এ কথা শুনে এরূপ মন্তব্য করল , এটা সত্য হলে এ শিশু এককালে সারা জগতকে তার করায়ত্ত করে ফেলবে । আবু নাঈম , আব্দুর রহমান ইবনে আওফ থেকে , তিনি তার মাতা আশশিফা বিনতে আমর ইবনে আওফের এ ধরনের একটি বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন , নবী করীম (সাঃ) -এর জন্ম আমার হাতের উপর হয়েছে । তার মুখম-ল তখনই উজ্জ্বল এবং দীপ্তিময় ছিল । ঐ সময় আমি কাউকে বলতে শুনলাম , তোমার প্রতি আল্লাহর রহমত । তোমার প্রতি তোমার প্রতিপালকের রহমত । এরপর আমার সামনে পূর্ব ও পশ্চিম দিক - দিগন্তু আলোকোজ্জ্বল হয়ে গেল এবং রোমের রাজপ্রাসাদ পর্যন্ত আমার চোখের সামনে ভেসে উঠল । অতঃপর আমি নবজাতককে কাপড়ে ঢেকে শয়ন করিয়ে দিলাম । কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার উপর যেন একটি অন্ধকার এবং ভীতির পর্দা পড়ে গেল । আমি কেঁদে উঠলাম । এ সময় আমি কাউকে বলতে শুনলাম , তুমি একে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো ? বলা হল , পশ্চিম দিকে । তারপরই আমার এ অবস্থা দূর হয়ে গেল ; কিন্তু একটু পরেই আবার ঐ অবস্থা আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলল । আমি আবার ভীতিগ্রস্ত হয়ে পড়লাম এবং কাঁপতে লাগলাম । আর সে অবস্থায় আমি কাউকে বলতে শুনলাম , একে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো ? বলা হল পূর্বদিকে । শিফা বিনতে আমর ইবনে আওফ বলেন , নবী করীম (সাঃ) -এর নবুয়ত লাভ পর্যন্ত আমার মনের মধ্যে এ কথাগুলো শুধু তোলপাড় করছিল । অতঃপর যখন তিনি নবুয়ত প্রাপ্ত হলেন , তখন আমি সর্বপ্রথম দীক্ষিত হলাম । আবু নাঈম আমর ইবনে কুতাইবাহ থেকে , তিনি তার পিতাকে বলতে শুনেছেন , হযরত আমেনার সন্তান প্রসবকাল উপস্থিত হলে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন ফেরেশতাদেরকে আদেশ করলেন , তোমরা সমস্ত আসমান এবং বেহেশতসমূহের দরজাগুলো খুলে দাও , অতঃপর তোমরা আমার সামনে উপস্থিত হও । তখন ফেরেশতাগণ তাদের একে অপরকে সুখবর বলতে বলতে আল্লাহর দরবারে হাজির হল । দুনিয়ার পাহাড় - পর্বতগুলো তাদের শির উচু করল । সাগরসমূহের জলরাশি স্ফীত হয়ে উঠল । পানিতে ও পর্বতে যারা বসবাস করে তারাও একে অপরকে সুসংবাদ জানাতে লাগল । শয়তানকে সত্তরটি শিকল দিয়ে আবদ্ধ করা হল এবং তাকে কাস্পিয়ান সাগর বক্ষে উপুড় করে ঝুলিয়ে রাখা হল । দুনিয়ার পাপীষ্ঠ ও অবাধ্য প্রাণীসমূহকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হল । সূর্যকে সেদিন এক অপূর্ব ও অসাধারণ আলো প্রদান করা হল এবং তার দরজার সামনে শূন্য জগতে সত্তর হাজার হুরকে দাড় করিয়ে দেয়া হল , যারা নবী করীম (সাঃ) -এর ভূমিষ্ঠ হওয়ার অপেক্ষা করতে লাগল । নবী করীম (সাঃ) -এর সম্মান ও মর্যাদার কারণে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর জন্মের বছর দুনিয়ার সকল নারীর জন্য পুত্র সন্তান নির্ধারণ করে দিলেন এবং দুনিয়ার কোন একটি বৃক্ষকেও সেই বছর ফলবিহীন করে রাখলেন না । আর এটাও নির্ধারণ করে রাখলেন , ঐ বছর দুনিয়ার কোন স্থানেই কোনরূপ অশান্তি এবং ফেতনা - ফাসাদের অস্তিত্ব থাকবে না । এর পর যখন এ সর্বপ্রতিক্ষীত জন্ম ঘটনা সংঘটিত হল , তখন সমগ্র জগত নূরের জ্যোতিতে জ্যোতির্ময় হয়ে গেল । ফেরেশতাগণ পরস্পরকে ধন্যবাদ জানাতে লাগল । প্রতিটি আসমানে মহামূল্যবান চুনি - পান্নার স্তম্ভ নির্মাণ করা হল । যার ফলে আসমানসমূহ আলোময় রূপ ধারণ করল । নবী করীম (সাঃ) যখন মে'রাজ সফর করেছিলেন তখন আসমানে ঐ স্তম্ভসমূহ দেখলে তাকে বলা হয়েছিল , এগুলো আপনার জন্মের সুসংবাদ শুনে নির্মাণ করা যে রাতে নবী করীম (সাঃ) জন্মগ্রহণ করলেন , সে রাতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হাওজে কাওছারের কূলে সত্তর হাজার মেশক আম্বর বৃক্ষ রোপণ করে সেগুলোকে সেরা সুঘ্রাণযুক্ত বৃক্ষে পরিণত করলেন । ঐ রাতে সকল আসমানের অধিবাসীরা আল্লাহর দরবারে তাদের নিরাপত্তার জন্য দোয়া করলেন দুনিয়ার মূর্তি ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল । লাত এবং ওযযার অবস্থানস্থল থেকে স্বর্ণভান্ডার বের হয়ে পড়ল । সর্বত্র এরূপ আওয়াজ উঠল , কুরাইশদের মধ্য থেকে আল আমীনের অভ্যুদয় ঘটেছে । ছিদ্দীক তাশরীফ এনেছেন , অথচ কুরাইশরা কিছুই জানল না যে কি ঘটনা ঘটেছে । খানায়ে কা'বা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত এরূপ আওয়াজ বাতাসে ভেসে বেড়াল , পূর্ণিমার চাঁদ বিকশিত হয়েছে । এখন থেকে আমার প্রিয় যিয়ারাতকারীদের আমার কাছে আনাগুনা শুরু হবে । এখন আমি বর্বরতার আবর্জনা মুক্ত হতে পারব । হে ওযযা তোর ধ্বংস সমাগত । খানায়ে কা'বা যে অপবিত্রতাজনিত কারণে কখনো কখনো কেঁপে উঠত , তার সে কম্পন থেমে গেল । এটা ছিল নবী করীম ( সঃ ) -এর ধরায় আগমনের প্রথম নিদর্শন যা কুরাইশরাও লক্ষ্য করেছিল । আবু নাঈম বর্ণনা করেছেন , হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন , আমেনার গর্ভ ধারণের নিদর্শনসমূহের মধ্যে একটি হল , সে রাতে কুরাইশদের পালিত জীবজন্তুগুলো বলল , খানায়ে কাবার প্রতিপালকের কসম ! সে সত্তা গর্ভে তাশরীফ নিয়েছেন , তিনিই জগতের শান্তি এবং জগদ্বাসীদের জন্য আলো । ঐ রাতে আরবের বিভিন্ন আধ্যাত্মবাদিনী যে সকল মহিলার সঙ্গীনীরূপে জ্বিনেরা তাদের সাথে থাকত , তারা সকলেই গা ঢাকা দিল । জ্যোতির্বিদ্যা বিলুপ্ত হয়ে গেল । দুনিয়ার পরাক্রান্ত রাজা বাদশাহদের আসনসমূহ টলটলায়মান হল । রাজা - বাদশাহরা নির্বাক হয়ে গেল । পূর্বাঞ্চলের জীব - জন্তুরা পশ্চিমাঞ্চলের জীব - জন্তুদেরকে মহামানবের সংবাদ জানিয়ে দিল । একইভাবে সমুদ্রের প্রাণীরা একে অপরকে খোশ - খবর শুনাতে লাগল । হযরত আমেনার গর্ভের প্রতিটি মাস অতিবাহিত হওয়ার পর জমিনে ও আসমানে ঘোষণা করা হত , খোশ আমদেদ ! এখন আবুল কাসেম ( সঃ ) সার্বিক কল্যাণ এবং বরকতসহ দুনিয়ায় শুভাগমন করেছেন । নবী করীম ( সঃ ) তার মাতার উদরে পূর্ণ নয় মাস অবস্থান করলেন ; কিন্তু তিনি তার উদরে কোনরূপ ব্যথা - বেদনা অথবা অস্বস্তি , অস্থিরতা অনুভব করলেন না । এমন কি গর্ভবতী নারীদের মধ্যে যে সকল স্বাভাবিক অবস্থা ও নিদর্শনাদি দেখা যায় হযরত আমেনার মধ্যে তাও দেখা গেল না । নবী করীম (সাঃ) -এর মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায়ই পিতা আব্দুল্লাহ ইন্তেকাল করলেন । তাতে ফেরেশতাগণ বলে উঠল , হে আমাদের পালনকর্তা ! আপনার নবী যে এতিম হয়ে পড়লেন ? তখন পালনকর্তা জবাব দিলেন , তাতে কি ? স্বয়ং আমিই তার অভিভাবক এবং সাহায্যকারী । তোমরা তার জন্ম থেকে বরকত অর্জন কর । তার জন্ম সকলের জন্যই বরকতময় এবং কল্যাণকর । আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার জন্মের সময় আসমান এবং বেহেশতের দরজাসমূহ খুলে দিলেন । হযরত আমেনা তার সম্পর্কে এরূপ বলতেন , আমার গর্ভধারণের ছয় মাস অতিবাহিত হওয়ার পর আমার কাছে জনৈক আগন্তুক এসে নিদ্রার মধ্যে আমার পদযুগলে টোকা দিয়ে বলল , হে আমেনা ! তুমি সমগ্র জগতের মনোনীত ব্যক্তিকে গর্ভে ধারণ করেছে । সে ভূমিষ্ঠ হলে তার নাম মুহাম্মদ রেখো । হযরত আমেনা তার নেফাস সম্পর্কে বলেছেন , অন্যান্য নারীদের যা হয়ে থাকে আমার ক্ষেত্রেও তা দেখা গিয়েছে ; কিন্তু কোন লোকই তা জানতে পারেনি । এক সময় আমি একটি ভীতিকর গড়গড় আওয়াজ শুনতে পেয়ে খুবই ভীত হয়ে পড়লাম । তারপর হঠাৎ দেখলাম , যেন একটি সাদা পাখীর ডানা আমাকে স্পর্শ করেছে । তাতে আমার সে ভীতি দূর হয়ে গেল । পরক্ষণেই দেখলাম , একটি দুগ্ধপূর্ণ পেয়ালা আমার পার্শ্বে রাখা হয়েছে । আমি তখন দারুণ তৃষ্ণার্ত ছিলাম বলে ঐ দুগ্ধ তুলে পান করলাম । অতঃপর আমার দেহ থেকে একটি নূর উদিত হল । তাতে আমি কয়েকজন মহিলাকে দেখতে পেলাম । তারা প্রত্যেকেই খর্জুর বৃক্ষ সদৃশ দীর্ঘদেহী ছিলেন । তাদেরকে আবদে মানাফ পরিবারের কন্যা বলে মনে হল । তারা আমাকে গভীর দৃষ্টিতে দেখতে লাগলেন । আমি নির্বাকভাবে তা অনুভব করছিলাম । ঠিক এমন সময় একটি জরিদার রেশমী বস্ত্র আসমান ও যমিনের মধ্যস্থলে ছড়িয়ে পড়ল । তাদের কেউ কেউ বলল , একে মানুষের দৃষ্টির আড়ালে নিয়ে যাও । এর পর আমি দেখতে পেলাম , কতিপয় ব্যক্তি শূন্যে রৌপ্যের লোটা হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে । এর পর একঝাক পাখী এসে আমাকে যেন আবৃত করে ফেলল । পাখীগুলোর ঠোট পান্না নির্মিত এবং পাখা চুনির তৈরী ছিল । অতঃপর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমার সামনে পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চল খুলে দিলেন । তখন আমি শূন্যে তিনটি ঝা-া উড়তে দেখলাম । একটি পূর্বে , একটি পশ্চিমে এবং একটি খানায়ে কা'বার ছাদে । এর পর আমার প্রসব বেদনা আরম্ভ হল এবং নবী করীম (সাঃ) ভূমিষ্ঠ হলেন । ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরই আমি তাকে সিজদায় পতিত দেখতে পেলাম । তিনি তখন যেন অনুনয় - বিনয় রত অবস্থায় তার অঙ্গুলি উপরে তুলে রেখেছিলেন । এরপর আসমানে একটি সাদা মেঘ এসে সমগ্র আকাশ ঢেকে ফেলল । তারপর আবার তা অদৃশ্য হয়ে গেল । এ সময় কেউ বলে উঠল , মুহাম্মদকে পূর্বাঞ্চলে ও পশ্চিমাঞ্চলে নিয়ে যাও এবং তাকে সমুদ্রেও বিচরণ করাও , যেন মানুষ তার নাম , আকৃতি এবং গুণাবলি সম্পর্কে জেনে নিতে পারে এবং তারা এটাও জানতে পারে , তার এক নাম মাহী । তার আগমনে শিরক ও কুফরী নির্মল হয়ে যাবে এর পরক্ষণেই আমি তাকে একটি শ্বেতবর্ণের পশমী কাপড়ে জড়ানো অবস্থায় দেখলাম এবং তার দেহের নীচে ছিল সবুজ রেশম । তার হাতের মুঠায় ছিল মূল্যবান ধাতু নির্মিত তিনটি চাবি । এ সময় অদৃশ্য আওয়াজ এল , মুহাম্মদ নবুয়তের চাবি গ্রহণ করেছেন । এর পরই একটি মেঘখ-ের আবির্ভাব ঘটল । আর তার মধ্য থেকে অশ্বের আওয়াজ এবং পাখীর পাখা নাড়ানোর শব্দ শুনা যেতে লাগল । শেষ পর্যন্ত মেঘ অদৃশ্য হয়ে গেল এবং উক্তরূপ আওয়াজও থেমে গেল । এর পর কেউ যেন বলে উঠল , মুহাম্মদকে পূর্ব এবং পশ্চিমে নিয়ে যাও । পয়গম্বরদের জন্মভূমিসমূহে ঘুরিয়ে আন । জ্বিন , মানব , পশু - পাখী এবং হিংস্র প্রাণীদের কাছে নিয়ে যাও । তাকে হযরত আদম ( আঃ ) -এর পরিস্কার - পরিচ্ছন্নতা , নূহ ( আঃ ) -এর বিনয় , ইব্রাহীম ( আঃ ) -এর বন্ধুত্ব , ইসমাইল ( আঃ ) -এর বাক্য , ইয়াকুব ( আঃ ) -এর চেহারা , ইউসুফ ( আঃ ) -এর সৌন্দর্য , দাউদ ( আঃ ) -এর কণ্ঠস্বর , আইয়ুব ( আঃ ) -এর ধৈর্য , ইয়াহইয়া ( আঃ ) -এর ত্যাগ এবং ঈসা ( আঃ ) -এর মমতা প্রদান কর । তাকে সকল পয়গাম্বরের চরিত্রের সমাবেশকারী বানিয়ে দাও । এর পর এই অবস্থাও দূর হয়ে গেল । এর পর আমি আমার সন্তানের হাতে একটি সবুজ রেশমী কাপড় জড়ানো দেখলাম , কে যেন এই সময় বলে উঠল , মুহাম্মদ সারাজগত হস্তগত করেছে । সৃষ্টিজগতের সকল বস্তু তার মুঠায় এসে গেছে । এর পর তিনটি লোকের আগমন ঘটল । তাদের একজনের হাতে রৌপ্যের লোটা , দ্বিতীয়জনের হাতে সবুজ পান্নার ছোট বাসন এবং তৃতীয় জনের হাতে সাদাবর্ণের রেশম । তা খুলে সে একটি অপূর্ব সুন্দর আংটি বের করল । তারপর উক্ত লোটার পানি দিয়ে আংটিটি সাতবার ধৌত করে ওটা দিয়ে নবী করীম ( সাঃ ) -এর দু'কাঁধের মধ্যস্থলে মোহর করে দিল । আবু নাঈম এক দুর্বল সনদে বর্ণনা করেছেন যে , হযরত আব্বাস ( রাঃ ) বলেন , আমাদের সর্বকনিষ্ঠ ভাই আব্দুল্লাহ জন্মগ্রহণ করলে দেখলাম , তার মুখমণ্ডলে একটি জ্যোতি সূর্যের ন্যায় ঝলমল করত । আমাদের পিতা বললেন , আমার এই সন্তানের অবস্থা অদ্ভূত আমি স্বপ্নে দেখলাম , তার নাকের ছিদ্র থেকে একটি সাদা বর্ণের পাখী বের হয়ে উড়ে গেল । আমি এই ঘটনা বনি মাখযুমের এক আধ্যাত্মবাদিনীর কাছে গিয়ে ব্যক্ত করলে সে বলল , তোমার এই স্বপ্ন সত্য হলে তোমার ঔরস থেকে এক পুত্র জন্মগ্রহণ করবে । পূর্ব ও পশ্চিমের লোকগণ তার অনুসরণ করবে । এর পর আমেনা যখন সন্তান প্রসব করল , আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম , তুমি কি কোনকিছু দেখেছ ? সে বলল , আমার প্রসব বেদনা আরম্ভ হলে আমি একরূপ গড়গড় শব্দ এবং কিছু মানুষের কথা বলার আওয়াজ শুনতে পেলাম । তারপর আমি একটি ইয়াকুতের তৈরি স্তম্ভের সাথে রেশমী কাপড়ের ঝাণ্ডা দেখতে পেলাম । তাছাড়া আমি শিশুর মাথা থেকে একটি নূর উদিত হতে দেখলাম । যা সুউচ্চ আসমান পর্যন্ত বিচ্ছুরিত হল । যার আলোকে আমি সিরিয়ার রাজপ্রাসাদকে যেন প্রজ্বলিত অবস্থায় দেখতে পেলাম । এর পর আমি কাছেই এক ঝাক পাখীকে পাখা বিস্তার করে আমার শিশুকে সিজদাহ করতে দেখলাম । আমি সাঈরা আসাদীদ জিনকে বলতে শুনলাম , তোমার এ পুত্রের জন্মের উছিলায় মূর্তি - প্রতিমা ও জ্যোতির্বিদ্যার বিলুপ্তি ঘটেছে । এর পর আমি একজন দীর্ঘকায় সুন্দর যুবককে দেখলাম । সে আমার শিশুকে আমার কোল থেকে নিয়ে গেল এবং তার মুখে নিজ মুখের লালা লাগিয়ে দিল । তার নিকট একটি স্বর্ণের থালা ছিল । সে আমার শিশুর বক্ষ বিদীর্ণ করে হৃদপিণ্ড বের করে আনল । তারপর হৃদপিণ্ডটি চিরে তার মধ্য হতে একটি ক্ষুদ্রাণুক্ষুদ্র কালবিন্দু বের করে দূরে নিক্ষপ করল । ঐ থালায় সাদা বর্ণের সুগন্ধি ছিল । তা হৃদপিণ্ডে লাগিয়ে দেয়া হল । এর পর একটি সাদা রেশমী থলে থেকে একটি আংটি বের করে তার দ্বারা নবী করীম ( সাঃ ) -এর দু’স্কন্ধের মধ্যস্থলে মোহর অংকিত করা হল । তারপর সে তাকে কাপড় দ্বারা ঢেকে দিল।
হাফেজ আবু যাকারিয়া ইয়াহইয়া ইবনে মায়েজ নবী করীম ( সাঃ ) -এর জন্ম ঘটনা সম্পর্কে হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) থেকে বর্ণনা করেছেন , হযরত আমেনা নবী করীম ( সাঃ ) -এর জন্মদিনের আশ্চর্যজনক ঘটনাসমূহ বলতে গিয়ে বলেন যে , আমি সেদিনকার ঘটনাসমূহে বিস্ময়াভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম । হঠাৎ আমার নিকট তিনব্যক্তি আগমন করল । তাদের চেহারার সৌন্দর্য দেখে মনে হচ্ছিল যে , তাদের মুখম-ল থেকে সূর্য ঠিকরে বের হচ্ছে । তাদের একজনের হাতে একটি লোটা ছিল , যার মধ্য হতে অপূর্ব সুঘ্রাণ বের হচ্ছিল । দ্বিতীয়জনের হাতে ছিল পান্নার তৈরী একটি চতুষ্কোণ থালা । ওটার প্রত্যেক কোণে একটি সাদা মোতি জড়ানো ছিল । কে যেন বলল , এটা সমগ্র জগত ও তার পূর্ব পশ্চিম এবং জল ও স্থল । হে আল্লাহর বন্ধু ! আপনি যেদিক দিয়ে ইচ্ছা এটা ধরুন । তার এরূপ কথা শুনে আমি দেখার জন্য থালাটির দিকে তাকালাম , দেখি তিনি ওটা কোনদিক দিয়ে ধারণ করেন । দেখলাম তিনি ওটার মাঝখান দিয়ে ধরলেন । হঠাৎ আওয়াজ এল , কসম কা'বার ! মুহাম্মদ কা'বা ধারণ করেছেন । আল্লাহ্ পাক তার জন্য কা'বাকে কিবলা এবং বাসস্থান নির্ধারণ করেছেন । তারপর আমি তৃতীয়জনের হাতে উত্তমরূপে ভাজ করা একটি সাদা রেশমী বস্তু দেখলাম । সে ওটা খুলে ওটার ভিতর থেকে একটি মনোরম আংটি বের করল । তারপর তার নিকট হতে থালাধারী ব্যক্তি আংটিটি নিয়ে সাতবার উল্লিখিত লোটার পানি দিয়ে ধৌত করল । অতঃপর সেই আংটি দিয়ে নবী করীম ( সাঃ ) -এর দু ' স্কন্ধের মধ্যস্থলে মোহর এটে দিল । তারপর তা রেশমী বস্ত্রে ঢুকিয়ে রেখে তাতে মেশকের সুতা বেঁধে দিল । অতঃপর তা কিছু সময় নিজ মাথায় রেখে দিল । ( ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেন ) এ ব্যক্তি ছিল বেহেশতের তত্ত্বাবধায়ক ফিরেশতা রেজওয়ান । সে তখন নবী করীম ( সাঃ ) -এর কানের নিকট মুখ নিয়ে যেন চুপে চুপে কি বলল , যা আমি বুঝতে পারলাম না । তারপর সে স্পষ্টভাবে বলল , হে মুহাম্মদ ! আপনাকে সুসংবাদ । প্রত্যেক নবীর জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা আমি আপনাকে দান করেছি । আপনি তাদের মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞানী এবং ধীর। আপনার হাতে সাফল্যের চাবি দেয়া হয়েছে । আপনাকে সর্বাধিক ব্যক্তিত্ব দান করা হয়েছে । হে আল্লাহর খলীফা ! যে কেউই আপনার নাম শুনবে , আপনাকে না দেখেই তার অন্তর কেঁপে উঠবে । ইবনে ওয়াহেদ তানভীর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে , এই হাদীছটি অপরিজ্ঞাত । ইবনে সা'দ হাকেম , বায়হাকী এবং আবু নাঈম হযরত আয়েশা ( রাঃ ) থেকে বর্ণনা করেছেন , তিনি বলেন , জনৈক ইয়াহুদী মক্কায় অবস্থান করে ব্যবসা - বাণিজ্য করত । নবী করীম ( সাঃ ) -এর জন্মের রাতে সে কুরাইশদের মজলিসে গিয়ে বলল , হে কুরাইশগণ ! আজ রাতে তোমাদের মধ্যে কোন শিশু ভূমিষ্ঠ হয়েছে কি ? তারা বলল , তাতো বলতে পারি না । সে বলল , জেনে রাখ এই রাতে শেষ যমানার নবী ভূমিষ্ঠ হয়েছেন । তাঁর স্কন্ধের মাঝখানে চিহ্ন অঙ্কিত আছে , যাতে কিছু চুল রয়েছে । এই শিশু দু'দিন দুধ পানে বিরত থাকবে । কোন জিন তার মুখে অঙ্গুলি রেখেছে । একথা শুনে কুরাইশরা সবিস্ময়ে মজলিস ত্যাগ করল । অতঃপর প্রত্যেকে নিজ নিজ গৃহে পৌছে পরিবারের অন্যান্য লোকদেরকেও একথা বলল । তারা বলল , আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুতালিবের আজ একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করেছে । তার নাম রাখা হয়েছে মুহাম্মদ । এই সংবাদ শুনে উক্ত মজলিসে উপস্থিত থাকা কুরাইশ একথা উক্ত ইয়াহুদীর কাছে বলল । ইয়াহুদী বলল , তোমরা আমাকে নিয়ে চল , আমি শিশুটিকে দেখব । তখন কুরাইশরা উক্ত ইয়াহুদীকে নিয়ে হযরত আমেনার নিকট উপস্থিত হল এবং তার শিশুটিকে দেখতে চাইল । হযরত আমেনা তার শিশুকে দেখালেন । ইয়াহুদী শিশুর পিঠ বস্ত্রমুক্ত করে একটি তিলের মত চিহ্ন দেখে বেহুঁশ হয়ে পড়ল । কিছুক্ষণ পর তার হুঁশ ফিরে এলে কুরাইশরা তাকে জিজ্ঞেস করল , তুমি হঠাৎ ঐরূপ বেহুঁশ হয়ে পড়লে কেন ? সে বলল , আমাদের বনী ইস্রাইলদের মধ্য হতে নবুয়তের অবসান ঘটেছে । অবশ্য তোমাদের এতে খুশী হওয়ার কথা । আল্লাহর কসম , এই শিশু সকলের উপর এমন বিজয় লাভ করবে যে , তার পরিচয় মাশরেক - মাগরেব তথা সমগ্র জগতে ছড়িয়ে পড়বে ।
বায়হাকী এবং ইবনে আসাকির আবুল হাকাম তানুখী থেকে বর্ণনা করেছেন , কুরাইশদের কোন সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে তাকে একটি হাঁড়ি দিয়ে ঢেকে রাখার জন্য মহিলাদের নিকট সমর্পণ করা হত । নবী করীম ( সাঃ ) ভূমিষ্ঠ হলে আরবের ঐ প্রচলন অনুযায়ী আব্দুল মুতালিবও তাকে মহিলাদের নিকট সোপর্দ করলেন । তারা তাকে ঐভাবে রাখার পর প্রত্যুষে গিয়ে দেখল যে , হাঁড়িটি ফেটে গিয়েছে এবং শিশু মুহাম্মদ দু চক্ষু মেলে আসমানের দিকে তাকিয়ে আছেন । তখন মহিলারা আব্দুল মুতালিবের নিকট গিয়ে বলল , আমরা এমন ব্যাপার আর কখনো দেখিনি । শিশুর উপরে যে হাঁড়ি রেখেছিলাম তা দ্বিখণ্ডিত হয়ে গিয়েছে এবং তিনি আসমানের দিকে তাকিয়ে আছেন । একথা শুনে আব্দুল মুতালিব বললেন , তোমরা তার প্রতি তীক্ষ দৃষ্টি রেখ । অবশ্য আমি এ ঘটনাকে সুলক্ষণই মনে করি । শিশুর জন্মের সপ্তম দিনে আবদুল মুত্তালিব কতগুলো পশু যবেহ করে কুরাইশদেরকে আহারের দাওয়াত করলেন । তারা এসে আহারান্তে জিজ্ঞেস করলেন যে , হে আব্দুল মুতালিব । আপনার নাতীর নাম কি রাখলেন ? তিনি বললেন , নাম রেখেছি মুহাম্মদ । তারা বলল , পারিবারিক প্রচলিত নাম রাখলেন না কেন ? তিনি বললেন , আমার বাসনা যে , ' আসমানে আল্লাহ এবং দুনিয়ায় মানবকুল তার প্রশংসা করুক । ( সে সকলের প্রশংসাভাজন হোক)
আবু নাঈম এবং ইবনে আসাকির মুসাইয়্যিব ইবনে শরীফ থেকে , তিনি মুহাম্মদ ইবনে শরীফ থেকে , তিনি আমর ইবনে শরীফ থেকে , তিনি নিজ পিতা থেকে , তিনি নিজ দাদা থেকে রেওয়ায়েত করেছেন , মাররুয যাহরানে ঈসা নামক এক সিরীয় রাহেব বাস করত । সে বিজ্ঞ আলিম ছিল । বেশীরভাগ সময়ে সে গির্জার মধ্যেই কাটিয়ে দিত । কখনো কখনো মক্কায় এলে লোকগণ তার সাথে সাক্ষাত করতে যেত ! তখন সে বলত যে , তোমাদের মধ্যে এক শিশু ভূমিষ্ঠ হবে , তার সামনে গোটা আরব দেশ শির নত করবে এবং অনারবরাও তার বশ্যতা স্বীকার করবে । এখনই তার আগমনের সময় । যে তার যমানা পাবে এবং তার অনুসরণ করবে সে সফলতা লাভ করবে । আর যে তার অবাধ্যতা প্রদর্শন করবে , ব্যর্থকাম হবে । আল্লাহর কসম , আমি সুখ - সাচ্ছন্দ্য ও শাস্তির দেশ ত্যাগ করে এই অভাবানটন ও দুর্যোগপূর্ণ দেশে শুধু তারই তালাসে এসেছি ।
উক্ত রাহেব মক্কার প্রতিটি নবজাতক সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে এবং জিজ্ঞেসবাদ করে বলত যে , সে এখনো আসেনি । নবী করীম ( সাঃ ) -এর জন্মের দিন সকালে আব্দুল মুতালিব ঐ রাহেবের গৃহ দরজায় গিয়ে তাকে ডাক দিলেন । সে জিজ্ঞেস করল , কে ডাকছে ? আব্দুল মুত্তালিব বললেন , আমি । রাহেব বাইরে এসে বলল , মনে হচ্ছে , তুমিই সেই জাতকের পিতা , আজ যে শিশু জন্মগ্রহণ করেছে । যার সম্পর্কে আমি তোমাকে বলেছিলাম যে , সে সোমবারে জন্মগ্রহণ করবে । নবুয়ত লাভ করবে এবং সোমবারেই ইন্তেকাল করবে তার জন্মলক্ষণযুক্ত তারকা সন্ধ্যায় আসমানে উদিত হয়েছে । তবে তুমি এই সম্পর্কে কাউকে কিছু বলবে না । কেননা এত বেশী হিংসা কেউ কারো প্রতি করেনি , এর সাথে করা হবে । এবং এত বেশী শত্রুতাও কেউ কারো সাথে করেনি , এর সাথে করা হবে ।
আব্দুল মুতালিব জিজ্ঞেস করলেন , সে কি পরিমাণ বয়স প্রাপ্ত হবে ? রাহেব বলল , তার বয়স সত্তর বছরের কোঠায় পৌঁছবে না ; বরং এর নীচে কোন বেজোড় সংখ্যায় পৌছবে । সম্ভবতঃ একষট্টি বা তেষট্টি বছর হতে পারে । তার উম্মতের বয়সও সাধারণতঃ এরূপ হবে ।
আবু নাঈম হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) থেকে বর্ণনা করেছেন , বর্বর যুগে রাতের বেলায় কোন শিশু ভূমিষ্ঠ হলে তাকে একটি হাড়ির নীচে রেখে দেয়া হত এবং ভোর পর্যন্ত কেউ তাকে দেখত না। নবী করীম ( সাঃ ) -এর ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তাকেও ঐরূপ হাড়ির নীচে রেখে দেয়া হল । ভোর বেলা দেখা গেল যে হাড়িটি দ্বিখ-িত হয়ে গিয়েছে এবং শিশু দু'চক্ষু মেলে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে । এ দৃশ্য দেখে সকলেই অবাক হয়ে গেল । এর পর তাকে দুধপান করার জন্য বনু বকরের এক মহিলার নিকট সমর্পণ করা হল । সে তাকে দুধপান করাতে শুরু করলে তার পরিবারে নানাবিধ বরকত এবং কল্যাণ আসতে লাগল । তার কয়েকটি বকরী ছিল । আল্লাহ প্রদত্ত বরকতে তার বকরীর সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেল ।
আবু নাঈম , দাউদ ইবনে আবী হিন্দ থেকে বর্ণনা করেছেন , নবী করীম ( সাঃ ) জন্মগ্রহণ করলে তার নবুয়তের নূরের আলোকে টিলাসমূহ উজ্জ্বল হল । জন্মগ্রহণ করেই তিনি মাটির উপর হাত রেখে ভর দিলেন এবং চক্ষুদ্বয় মেলে আকাশের দিকে তাকালেন । তাকে যে হাড়ির নীচে রাখা হল , তা দ্বিখ-িত হয়ে গেল ।
ইবনে সা'দ হযরত ইকরিমাহ ( রাঃ ) থেকে বর্ণনা করেছেন , নবী করীম ( সাঃ ) জন্মগ্রহণ করলে তাঁর মাতা তার উপর হাড়ি রেখে দিলেন , যা ভেঙ্গে দু ' টুকরা হয়ে গেল । তাঁর মাতা বলেন যে , হাড়ি রাখার পর যখন আমি তাকে দেখতে গেলাম , তখন দেখলাম যে , সে চক্ষু মেলে উর্ধ্বে আসমানের দিকে তাকিয়ে আছে ।
ইবনে আবী হাতেম হযরত ইকরিমাহ ( রাঃ ) থেকে বর্ণনা করেছেন , নবী করীম ( সাঃ ) -এর জন্মের সময় সমগ্র জগত নূরের আলোকে উজ্জ্বল হয়ে গেল । ইবলীস বলল যে , আজ পৃথিবীতে এমন এক শিশু ভূমিষ্ঠ হয়েছে , যে আমাদের কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বরবাদ করে দিবে । তখন তার এক সহচর তাকে বলল যে , তুমি এখনই গিয়া তার জ্ঞান - বুদ্ধি নষ্ট করে দিবার চেষ্টা কর । সুতরাং ইবলীস নবী করীম ( সাঃ ) -এর নিকট রওয়ানা করল । যখন সে তার নিকট পৌঁছল , ফিরেশতা জিব্রাইল ( আঃ ) ইবলীসকে সজোরে পদাঘাত করলেন , যাতে সে আদনে গিয়ে পতিত হল ।
জোবায়ের ইবনে বাক্কার এবং ইবনে আসাকির মা'রুফ ইবনে খরবুস থেকে বর্ণনা করেছেন , ইবলীস সপ্ত আকাশ ঘুরে বেড়াত ; কিন্তু যখন হযরত ঈসা ( আঃ ) জন্মগ্রহণ করলেন , তখন তার তিন আকাশের প্রবেশাধিকার রহিত করা হল । তারপর যখন নবী করীম ( সাঃ ) জন্মগ্রহণ করলেন , তখন তার জন্য সাত আসমানের প্রত্যেকটির দরজাই বদ্ধ করে দেয়া হল । নবী করীম ( সাঃ ) সোমবার দিন অতি ভোরে জন্মগ্রহণ করলেন ।
বায়হাকী , আবু নাঈম , খারায়েতী এবং ইবনে আসাকির আবু ইয়ালা ইবনে ইমরান বাজালী থেকে , তিনি মাখযুম ইবনে ছানী থেকে এবং তিনি স্বীয় পিতা হতে ( যার বয়স হয়েছিল দেড়শত বছর ) বর্ণনা করেছেন , নবী করীম ( সাঃ ) -এর জন্মের রাতে পারস্য রাজ প্রাসাদে কম্পন শুরু হল । যার ফলে ওর চৌদ্দটি গম্বুজ সব কয়টিই ভূমিসাৎ হল । হাজার হাজার বছর ব্যাপী যে অগ্নিকু- জ্বালিয়ে রাখা হয়েছিল , হঠাৎ তা নির্বাপিত হয়ে গেল । তথাকার শ্বেত বর্ণের হ্রদ শুকিয়ে গেল । তখন আতংকিত পারস্য রাজ মনে মনে ভাবলেন যে , এই ঘটনা ছুপিয়ে রাখা ঠিক হবে না ; বরং একথা নিয়ে উজীরদের সাথে পরামর্শ করা প্রয়োজন ; সুতরাং তিনি তার পারিষদবর্গকে দরবারে ডেকে এ ব্যাপার সম্পর্কে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করতে বসলেন । ঠিক এই মুহূর্তে সংবাদ এল যে , অগ্নিকু- নির্বাপিত হয়ে গিয়েছে । এতে রাজা অত্যধিক সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লেন । তখন দরবারের প্রধান পুরোহিত বলল , ঈশ্বর আমাদের সম্রাটকে নিরাপদ রাখুন । আমিও আজ রাতে এরূপ স্বপ্ন দেখেছি যে , কতকগুলো উট আরবী ঘোড়া গুলোকে টেনে আনছে এবং দজলানদ অতিক্রম করে সারাদেশে ঐগুলো ছড়িয়ে পড়েছে । তখন রাজা পুরোহিতকে জিজ্ঞেস করলেন , বল , এখন আমাদের কি করা উচিত এবং এসব ঘটনা কিসের আলামত ? সে বলল , মনে হচ্ছে আরবের দিক হতে কোন বিরাট ঘটনা ঘটবে।
অতঃপর পরস্যরাজ নো'মান ইবনে মুনযিরকে লিখে জানালেন যে , তুমি কোন বিজ্ঞ ব্যক্তিকে আমার নিকট প্রেরণ কর । আমি তাকে কিছু প্রশ্ন করব । নো'মান আব্দুল মসীহ ইবনে আমর ইবনে হাসসান গাসসানীকে দরবারে পাঠিয়ে দিল । রাজা তাকে জিজ্ঞেস করলেন , তুমি কি বলতে পার , আমি তোমাকে কি জিজ্ঞেস করতে চাই ? সে বলল , জাহাপনা ! আপনি জিজ্ঞেস করুন । যদি আমার সঠিক জবাব জানা থাকে আমি তা বলব । আর জানা না থাকলে যে জানে আপনাকে তার ঠিকানা বলে দিব । তখন পারস্যরাজ তার নিকট সব ঘটনা খুলে বললেন । আবুল মসীহ তা শুনে বলল , হে জাঁহাপনা ! আমার মামা সাতীহ এই সম্পর্কে বিশেষ ওয়াকিফহাল । তিনি সিরিয়া সীমান্ত এলাকায় অবস্থান করছেন । রাজা বললেন , তুমি তাকে আমার নিকট নিয়ে আস । আমি তার কাছেই জিজ্ঞেস করব । তখন আব্দুল মসীহ রওয়ানা হয়ে সাতীহের নিকট পৌঁছল । সে তখন প্রায় মুমূর্মু অবস্থায় পৌঁছেছিল । তার নিকট পৌঁছে আব্দুল মসীহ সালাম করলে সে মাথা তুলে বলল , আব্দুল মসীহ দ্রুতগামী বাহনে চড়ে সেই সাতীহর নিকট উপনীত হয়েছে , যার মৃত্যু সমাগত । তোমাকে পারস্যের রাজা প্রেরণ করেছে । কেননা তার রাজপ্রাসাদ কেঁপে উঠেছে । পারস্যের অগ্নিকুণ্ড হঠাৎ নিভে গিয়েছে । প্রধান পুরোহিত স্বপ্ন দেখেছে যে , কতিপয় উট আরবী ঘোড়াগুলোকে টেনে নিচ্ছে এবং দজলা পাড় হয়ে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে । হে আব্দুল মসীহ । যখন তিলাওয়াত অধিক হতে থাকে লাঠিবাহক আত্মপ্রকাশ করে , সামাদাহ উপত্যকায় পানি উথলে উঠে ।
শ্বেত হ্রদ শুকিয়ে যায় এবং পারস্যের অগ্নিকুণ্ড ঠণ্ডা হয়ে যায় তখন সাতীহের জন্য সিরিয়া নয় জেনে রাখ , পারস্যের রাজপ্রাসাদের গম্বুজের সমসংখ্যক রাজা হবে এবং যা হবার তা অবশ্যই হবে ।
একথা বলার সাথে সাথে সতীহ মৃত্যুবরণ করল আব্দুল মসীহ , পারস্যে প্রত্যাবর্তন করে রাজার নিকট সমস্ত ঘটনা ব্যক্ত করল । শুনে রাজা বললেন , যতদিনে আমাদের চৌদ্দজন রাজা হবে ততদিনে কত কি ঘটবে তা কে বলতে পারে ? কিন্তু চৌদ্দজনের মধ্যে দশজন রাজা মাত্র চার বছরের মধ্যেই অতিক্রান্ত হয়ে গেল । অবশিষ্ট চারজন হযরত ওছমান ( রাঃ ) -এর খেলাফত পর্যন্ত বহাল থাকে । ইবনে আসাকির বলেন , এই হাদীছটি গরীব হাদীছের শ্রেণীভুক্ত । একথা শুধু মাখযুম তার পিতার নিকট হতে রেওয়ায়েত করেছেন । ইবনে আসাকির তার ইতিহাস গ্রন্থে সাতীহের আলোচনায় একথাই উল্লেখ করেছেন । আব্দুল মসীহের আলোচনায় উল্লিখিত সনদে রেওয়ায়েত উল্লেখ করার পর তিনি বলেছেন , একথা মারুফ ইবনে খরবুজ , বিশর ইবনে তাইম মক্কী হতেও বর্ণনা করেছেন । আমি বলি , এই সনদে আবজান ও কিতাবুছ ছাহাবায় বর্ণনা করেছেন । ইবনে হাজার আল ইছাহাবা গ্রন্থে একথাকে মুরসাল বলে উল্লেখ করেছেন ।
খারায়েতী এবং ইবনে আসাকির ওরওয়াহ থেকে বর্ণনা করেছেন , ওয়ারাকা ইবনে নাওফেল , যায়েদ ইবনে আমর ইবনে নুফাইল , ওবায়দুল্লাহ ইবনে জাহশ , ওছমান ইবনে হুয়াইরিছু প্রমুখ কুরাইশ নেতা এক রাতে তাদের এক প্রতিমার নিকট উপস্থিত হয়ে দেখল যে , প্রতিটি উপুড় হয়ে মাটিতে পড়ে আছে । তারা তা দেখে প্রতিমাটিকে দাঁড় করিয়ে দিল ; কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই এটা আবার পড়ে গেল । তখন ওছমান ইবনে হুয়াইরিছ বলল যে , লক্ষণে মনে হচ্ছে যে , নিশ্চয়ই কোনকিছু ঘটেছে । এই ঘটনা ঘটেছিল নবী করীম ( সাঃ ) -এর জন্মের রাতে । ঐ সময় ওছমান এই পংক্তিটি আবৃত্তি করেছিল ; “ হে মূর্তি ! তোমার নিকট দূর - দূরান্ত হতে আগত আরব নেতারা এসে উপস্থিত হয়েছে । আর তুমি কিনা উপুড় হয়ে ভূতলে পড়ে আছ । ব্যাপার কি বল ! তুমি কি আমাদের সাথে কৌতুক করছ ? আমাদের দ্বারা কোন অন্যায় আচরণ হয়ে থাকলে আমরা তা স্বীকার করি , তুমি এভাবে মাথা নীচু করে থেকো না । যদি থাক , তবে নিশ্চয়ই তুমি প্রতিমাদের সরদার নও । ” একথা বলে তারা প্রতিমাটিকে পুনরায় দাঁড় করিয়ে দিল । তখন ওটার মধ্য হতে অদৃশ্য আওয়াজ এল , জেনে রাখ , এই প্রতিমা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে সেই শিশুটির কারণে , যার নূরের আলোকে সমগ্র জগত সমুজ্জ্বল হয়েছে যার আগমনে শুধু এই প্রতিমাই নয় ; বরং সব প্রতিমাই ভূমিসাৎ হয়েছে । রাজা - বাদশাহদের অন্তর তার ভয়ে কেঁপে উঠেছে পারস্যের দীর্ঘস্থায়ী অগ্নিকুণ্ড নির্বাপিত হয়েছে । যার ফলে পারস্য রাজ সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে । অধ্যাত্মবাদিদের নিকট হতে তাদের জ্বিন সহচরেরা পালিয়ে গিয়েছে । এখন আর কেউ তাদেরকে সত্য - মিথ্যা কোন খবরই জানাবে না । হে বনু কুসাই ! তোমরা গোমরাহী বর্জন কর এবং প্রকৃত সত্যের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ কর ।
খারায়েতী হিশাম ইবনে ওর ওয়াহ থেকে , তিনি তার পিতা থেকে , তিনি তার দাদী আসমা বিনতে আবুবকর ( রাঃ ) থেকে বর্ণনা করেছেন , যায়েদ ইবনে আমর ইবনে নুফাইল এবং ওয়ারাকা ইবনে নাওফেল বলেন , আমরা মক্কা থেকে ইয়ামানের বাদশাহ আবরাহার প্রত্যাবর্তনের পর আবিসিনিয়ার বাদশাহ নাজ্জাশীর নিকট গমন করলাম । তিনি বললেন , হে কুরাইশগণ ! সত্য বল , তোমাদের মধ্যে কি এমন কোন শিশু জন্মগ্রহণ করেছে যার পিতা তাকে কুরবানী করার মানত করেছিল ? তারপর কোরার মাধ্যমে উট কুরবানী করে তাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন । আমরা বললাম , হ্যাঁ এরূপ শিশু জন্মগ্রহণ করেছিল । নাজ্জাশী জিজ্ঞেস করলেন , তোমরা জান কি সে পরে কি করেছে ? আমরা বললাম , এর পর সে আমিনা নাম্নী এক মহিলাকে বিবাহ করেছে এবং তাকে গর্ভবতী অবস্থায় রেখে মৃত্যুবরণ করেছে । বাদশাহ আবার জিজ্ঞেস করলেন , তোমরা জান কি , সেই মহিলার গর্ভের শিশু জন্মগ্রহণ করেছে কি - না ?
বাদশাহর এ প্রশ্নের জবাবে ওয়ারাকা বললেন , এক রাতে আমি আমাদের এক প্রতিমার কাছে উপস্থিত ছিলাম । উক্ত প্রতিমার মধ্য হতে আমি এরূপ আওয়াজ শুনেছি যে , নবী জন্মগ্রহণ করেছেন । রাজা - বাদশাহরা লাঞ্ছিত এবং অপদস্থ হয়েছে । গোমরাহীর অবসান ঘটেছে এবং শিরক ও কুফরী বিলুপ্ত হয়েছে । এর পরই ঐ প্রতিমাটি উপুড় হয়ে পড়ে গেল ।
যায়েদ বলল , হে বাদশাহ ! আমার নিকটও এই ধরনের সংবাদ রয়েছে । আমি সেই পবিত্র রাতে স্বপ্নে দেখলাম যে , আমি আবু কুবাইশ পাহাড়ে পৌঁছে গিয়েছি । ঐ সময় এক ব্যক্তি আসমান হতে অবতরণ করল । তার সবুজ বর্ণের দু'টি পাখা ছিল । সে কিছু সময় আবু কুবাইশ পাহাড়ে অবস্থান করে মক্কায় এসে বলল , শয়তান অপদস্থ হয়েছে । মূর্তিপূজা শেষ হয়ে গিয়েছে । আমীন জন্মগ্রহণ করেছেন । একথা বলে সে একটি কাপড়ের ভাঁজ খুলে তা পূর্ব ও পশ্চিমে ছড়িয়ে দিল । আমি দেখলাম যে , কাপড়টি সমগ্র আসমানের নীচে একটি তাবুর আকৃতি ধারণ করল । এর পর একটি নূরের উদয় হল । যার তীক্ষ্ণ কিরণে আমার দু ’ চক্ষু ঝলসে গেল । এসব ঘটনা প্রত্যক্ষ করে আমি ভীত - সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লাম । এর পর আর একটি নূরের উদয় ঘটলে মক্কার ভূখ- উদ্ভাসিত হয়ে গেল । তখন বলা হল যে , বিশ্ব জগত পবিত্র হয়ে গিয়েছে । অতঃপর খানায়ে কা'বায় স্থাপিত প্রতিমাগুলো ভূমিসাৎ হয়ে গেল ।
বাদশাহ নাজ্জাশী বললেন , এবার তোমরা আমার কথা শোন । আমি সেই রাতেই আমার শয্যায় নিদ্রাভিভূত ছিলাম । তখন স্বপ্নে দেখলাম যে , সহসা মৃত্তিকা ভেদ করে একটি ঘাড়সহ মাথা বের হয়ে এল এবং সে বলল , হস্তীবাহিনী ধ্বংস হয়ে গিয়েছে । আবাবীল পাখী তাদেরকে কংকর ছুড়ে বিধ্বস্ত করে ফেলেছে । পাপী অপরাধীদের আস্তানা বিরাণ হয়েছে । মক্কী নবী ভূমিষ্ঠ হয়েছেন । এখন হতে যে তাঁর অনুসরণ করবে , সে কামিয়াবী হাছিল করবে । আর যে তার অবাধ্যতা প্রদর্শন করবে , এই পর্যন্ত বলে সেই মস্তকটি অদৃশ্য হয়ে গেল । আমি তখন চীৎকার করতে চাইলাম ; কিন্তু আমার মুখ থেকে আওয়াজ বের হল না । আমি তথা হতে পালাতে চাইলাম ; কিন্তু দাঁড়াতেই পারলাম না । এর পর আমার গৃহের লোকজন আমার নিকট উপস্থিত হল । আমি বললাম , হাবশী লোকদেরকে আমার নিকট হতে সরিয়ে দাও । তারা আমার আদেশ পালন করল ।
(উস্ওয়ায়ে রাসূল (সা:) ও খাছায়েছুল কুবরা)
লেখক : ইমাম ও খতিব, বিষ্ণুপুর মদিনা বাজার বাইতুল আমিন জামে মসজিদ, চাঁদপুর সদর, চাঁদপুর।