শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে 'আল্লাহু চত্বর'
  •   চাঁদপুর কণ্ঠৈর কলামিস্ট এএসএম শফিকুর রহমানের ইন্তেকাল
  •   নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পেল সেনাবাহিনী
  •   জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে’ প্রধান উপদেষ্টার ১০০ কোটি টাকার অনুদান
  •   মেঘনায় নিখোঁজ দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

ক্ষমা, উদারতা ও আরবদের যুদ্ধ বন্ধে রাসূল (সাঃ)-এর অনন্য উদ্যোগ

অনলাইন ডেস্ক
ক্ষমা, উদারতা ও আরবদের যুদ্ধ বন্ধে রাসূল (সাঃ)-এর অনন্য উদ্যোগ

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুয়ত লাভের আগে থেকেই আরবের অস্থিতিশীল পরিবেশে শান্তি, ভারসাম্য ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছেন। ভালোবাসার সমাজ নির্মাণে তিনি অন্যকে ক্ষমার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বারবার। নবুয়ত প্রাপ্তির আগেই ‘হিলফুল ফুযুল’ কল্যাণ সংস্থা গঠন করে মানবতাকে ফিজার যুদ্ধ পরবর্তী ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেছেন তিনি। তার অনন্য এই গুণের বর্ণনা আম্মাজান খাদিজা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন এভাবে, আল্লাহ কখনোই আপনাকে লাঞ্চিত করবেন না। আপনি তো সম্পর্ক রক্ষাকারী, দুর্বলের বোঝা বহনকারী, অসহায়ের ত্রাতা, অতিথির সেবাকারী এবং মানুষের বিপদের আশ্রয়স্থল।

নির্মম নিপীড়নের পরেও তায়েফবাসীকে ক্ষমা এবং দাউস গোত্রের লোকদের জন্য হেদায়াতের দোয়া করা রহমতের নবী ক্ষমা দিয়ে, দয়া দিয়ে মানুষের হৃদয়ে এমনই আসন জয় করে নিয়েছিলেন যে, বদরে, উহুদে, হুদায়বিয়াতে সাহাবাদের আত্মোৎসর্গের হাজারো ঘটনা পৃথিবীবাসী প্রত্যক্ষ করেছে।

‘আপনার নির্দেশ পালনে আমরা সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়তেও সামান্য দ্বিধা করব না’— ইতিহাসের কিতাবগুলোতে স্বর্ণাক্ষরে লিখিত সা'দ ইবনে উবাদাহ রা.-এর এই ঐতিহাসিক ভাষণটি আত্মোৎসর্গের অতি ক্ষুদ্র একটি উদাহরণ।

আরবের গোত্রগুলোতে শতাব্দীকাল ধরে চলা ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধের অবসান করতে আলোর নবী রহমাতুল লিল আলামীন মানুষের মাঝে ভালবাসার এমনই প্রাণ সঞ্চার করেছেন যে, কোরআন সে ঘটনাকে এভাবে স্মরণ করছে, েেতামরা ছিলে এমনই শতধা বিভক্ত যে, ধ্বংসের কিনারে পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু পরস্পরে ভ্রাতৃত্ব গড়ে দিয়ে তিনি তোমাদেরকে রক্ষা করেছেন।

যাতুর রিকার যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তনকালে খুনের নেশায় মত্ত দুসুর নামের এক বেদুঈনের চরম ধৃষ্টতার জবাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম ক্ষমার যে অনন্য নজির স্থাপন করেছিলেন ইতিহাস তা এভাবে স্মরণ করে, রাসূল যুদ্ধ সফরে দীর্ঘ পথচলার ক্লান্তি এবং অবসাদ ঘোচাতে ছায়া মতন একটি জায়গায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। অদূরে কাঁটাদার একটি গাছে ঝুলিয়ে রাখলেন খাপবদ্ধ তরবারি। এক বেদুঈন-লোকমুখে নিন্দামন্দ শুনে যে নবীজীর প্রতি বিদ্বেষী হয়ে উঠেছে- রাসূলকে নিরুদ্বেগ ঘুমন্ত দেখে বদ-মতলব চরিতার্থ করার মোক্ষম সুযোগ মনে করল।

কোষমুক্ত তরবারি হাতে আক্রমণ উদ্ধত হয়ে বুদ্ধু লোকটি রাসূলকে চ্যালেঞ্জ ছূড়ে দিল, আসো মুহাম্মদ এবার, দেখি, আমার হাত থেকে কে বাঁচায় তোমায়? রাসূল নিরুত্তাপ। সামান্য ভয়হীন, দরাজ গম্ভীর কণ্ঠে তিনি জবাব দিলেন, কেন? আল্লাহ বাঁচাবেন।

খাপমুক্ত তরবারির সামনে অস্ত্রবিহীন এক ব্যক্তিকে নিরুদ্বেগ দাঁড়িয়ে আছে দেখে বেদুঈন ভড়কে গেল। হতাশা এবং ভীতি বিহ্বলতায় তার হাত থেকে তরবারি খসে পড়ে গেল। এবার রাসূল তরবারি উচিয়ে বললেন, বল দেখি, এবার তোমাকে কে বাঁচায়? হত্যা করতে এসে বিধ্বস্ত, ধরাশয়ী বুদ্ধু ব্যক্তি নিরুত্তর। তবে রাসূল তাকে ছেড়ে দিলেন। দৃষ্টতার চূড়ান্ত করা সত্ত্বেও দয়ার নবী বেদুঈনকে ক্ষমা করে দিলেন।

ইতিহাস আমাদেরকে আরও জানায়, রাসূলের দয়া, ক্ষমা এবং মহানুভবতা দেখে দুসুর পরে ইসলাম গ্রহণ করেছিল।

মদীনার পার্শ্ববর্তী ইয়ামার বিশিষ্ট ব্যক্তি সুমামার ইসলাম গ্রহণ পরবর্তী অভিব্যক্তিও সিরাতের কিতাবগুলোতে বিশেষ গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করা হয়।

হে আল্লাহর রাসূল, ইসলাম গ্রহণের আগে ‘মুহাম্মদ’ নামের চেয়ে ঘৃণিত কিছু আমার কাছে ছিল না। কিন্তু -আমার সমগ্র সত্ত্বা উৎসর্গিত হোক- ইসলাম গ্রহণের পরে আপনার নামের চেয়ে মধুর কিংবা আপনার শহরের চেয়ে প্রিয় কিছু এখন আর আমার কাছে নেই। অবশ্য রাসূলের সদাচারের আরও উত্তম নমুনাটি ইতিহাস আমাদেরকে জানাচ্ছে পরবর্তী ঘটনাবলী থেকে।

এককালে শিবে আবি তালিবে রাসূল এবং তার অনুসারীদের বয়কট করে খাদ্যকষ্টে নিপতিত করা পাষাণ প্রাণ কোরায়েশদের থেকে কঠিন প্রতিশোধের হুমকি দিলেন ইয়ামামার গোত্রপতি সুমামাহ বিন আসলাব। রাসূলের অনুমতি ছাড়া ইয়ামামাহ হয়ে একটি খাদ্যকণা বা শস্যদানাও মক্কায় প্রবেশ করবে না বলে হুশিয়ারি জারি করলেন ইসলামে নব দীক্ষাত সুমামাহ। তবে রাসূলের কাছে এ খবর পৌঁছুলে তিনি চিন্তিত এবং দয়াপরবশ হয়ে পড়েন। 'রাহমাতুল লিল আলামীন' যার উপাধি, তিনি তো প্রতিশোধপরায়ন হতে পারেন না। এটা তো তার খুলুকে আযিম ভূষণকে কলঙ্কিত করবে।

সুমামাহকে পত্র লেখে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম তড়িৎ নির্দেশ দিলেন, এ কাজ করতে যেও না সুমামাহ। অবরোধ উঠিয়ে নাও। এরা তো আল্লাহর বান্দা। কাউকে খাদ্যভাবে রাখা শোভন কিছু নয়।

সদাচারের সর্বোত্তম দৃষ্টান্তটি স্থাপিত হয়েছে পৃথিবীর ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা তাৎপর্যপূর্ণ মক্কা বিজয়ের গৌরব অর্জন করার দিন।

‘আজ চূড়ান্তু যুদ্ধের দিন। আজ শত্রুদের দখল থেকে কাবাকে অবমুক্ত করার দিন'-এক আনসারি সাহাবির জবানে এমন ঝাঁঝালো, কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হতে শুনে কোমল প্রাণ, দয়ার নবী ছোট্ট একটি সংশোধন এনে বললেন,

‘আজ দয়া ও ভালবাসার দিন। আজ কুরায়শের সম্মানিত হওয়ার দিন’।

মুক্তির বার্তাবাহক দয়ার নবীকে জন্মভূমিতে থাকতে না দেওয়া পাষাণ দিল কাফেরের দলকে কাবা ঘরের সামনে জড়সড় কম্পিত দণ্ডয়মান দেখে নবীজীর হৃদয়ে ক্ষমা এবং মায়ার জোয়ার উঠল।

আত্মম্ভরিতা এবং শয়তানের প্ররোচনায় এক সময় সত্য দ্বীনের বিরুদ্ধবাদীদের কোমল সম্ভাষণে জিজ্ঞেস করলেন, হে কোরায়শ, তোমাদের কী আশা, আজকের দিনে তোমাদের সাথে কেমন আচরণ করা হবে?

উপস্থিত জনতা মধুবর্ষণে বিমুগ্ধ হয়ে উত্তরে জানালো- আমরা তো ভালো কিছুরই আশা করি। আপনার ব্যক্তিত্ব সম্ভ্রান্ত। আপনি তো সম্মানিত ভাই এবং কূলীন ঘরের সন্তান।

অতঃপর রহমাতুল লিল আলামীন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আজ আমি তাই বলব, ইউসুফ আলাইহিস সালাম যা তার ভাইদের বলেছিলেন, ‘আজকের দিনে তোমাদের প্রতি কোনো অনুযোগ নেই। যাও তোমরা সবাই মুক্ত’।

এর আগেই মক্কায় প্রবেশের সময়ই ঘোষণা করা হয়েছিল, আবু সুফিয়ানের ঘরে যে আশ্রয় নিবে সে নিরাপদ। যে নিজ ঘরে আশ্রয় নিবে তাকেও কিছু করা হবে। হারামে আশ্রয়গহণকারীদেরও দেওয়া হবে পূর্ণ নিরাপত্তা।

এছাড়াও ইকরিমা, হিনদা, ওয়াহশিসহ অল্প যে কয়জনের ব্যাপারে ঘোষণা করা হয়েছিল- তাদের ক্ষমা নাই- তাদেরও সবাই প্রায় ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় লাভ করেছিলেন।

তবে রাসূল কেবল স্থানের জয় করেননি। জগতের জন্য রহমত হিসেবে যাকে পাঠানো হয়েছে আলোর নবী মুহাম্মাদ রাসূল দয়া, মমতা এবং সম্ভমতা দিয়ে সমস্ত মানুষের হৃদয় জয় করলেন।

মক্কা বিজয়ের দিন এক ব্যক্তি কোনো একটা বিষয় নিয়ে নবীজীর সাথে কথা বলতে এসে ভয়ে কাঁপছিল দেখে রাসূল বললেন, কী হলো তোমার! ভয় কিসের? আমি কি কোনো বাদশাহ? আমি তো কুরায়শের এক সাধারণ মায়েরই সন্তান!

এটা ছিল সেই ব্যক্তির উত্তর; নানামুখী অত্যাচারের শিকার হয়ে যিনি একদিন প্রিয় জন্মভূমি মক্কা ছেড়ে হিজরত করতে বাধ্য হয়েছিল।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়