রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০

ইসলামে পবিত্রতা
অনলাইন ডেস্ক

‘ত্বাহারাত’ আরবী শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ পবিত্রতা। শরীয়আতের পরিভাষায় শরীর নাপাক হলে নাপাক স্থানসমূহ বিশেষ পদ্ধতিতে ধৌত করাকে “ত্বাহারাত’ বলা হয়। ভিন্ন মতে, নাপাকী ও হদস্ দূর করাকে ‘ত্বাহারাত’ বলা হয়। ইসলামে ত্বাহারাতের গুরুত্ব অপরিসীম। স্বামী-স্ত্রীর মিলনের পর উভয়ে যতক্ষণ পর্যন্ত গোসল না করবে ততক্ষণ পর্যস্ত পবিত্র হবে না এবং নামাজও আদায় করতে পারবে না। ইরশাদ হয়েছে;

যদি তোমরা অপবিত্র হয়ে যাও তবে বিশেষভাবে পবিত্র হবে। (সূরা মায়িদা-৬)

নামাজ আদায়ের জন্যে পরিধেয় বস্ত্রও পাক হওয়া আবশ্যক। ইসলামী শরীয়াত এই পবিত্রতাকে অপরিহার্য করেছে। যদি পানি পাওয়া না যায় অথবা কোন রোগের কারণে পানি ব্যবহার ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, তোমরা যদি পীড়িত হও অথবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ শৌচস্থান থেকে আগমন করে অথবা তোমরা স্ত্রীর সাথে সঙ্গত হও এবং পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটিদ্বারা তায়াম্মুম করবে এবং তা তোমাদের মুখে ও হাতে মাসেহ করবে। (সূরা মায়িদা - ৬)

অনুরূপ জুমু’আর দিন নামাজ আদায়ের পূর্বে গোসলের হুকুম দেওয়া হয়েছে, যেন মানুষ গোসলের মাধ্যমে পাক-সাফ এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে জুমু’আর জামাতে শরীক হতে পারে এবং অপরিচ্ছন্নতা ও দেহের দুর্গন্ধের কারণে যেন কোন নামাজীর কষ্ট না হয়। পেশাব-পায়খানার পর ইসতিন্জা করা এবং নির্দিষ্ট অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হতে ময়লা দূর করা অপরিহার্য করা হয়েছে।

মহান প্রভূ আরো এরশাদ করেছেন- তোমার পোশাক পরিচ্ছদ পবিত্র রাখো। (সূরা: মুদদাসসির - ৪)

পবিত্রতা ব্যতীত কুরআন মজীদ স্পর্শ করা যাবেনা। কুরআন মজীদ স্পর্শ করার জন্য পবিত্রতা অর্জন শর্ত। পবিত্রতা অবলম্বন ব্যতিরেকে কুরআন মাজীদ স্পর্শ করা জায়েজ নহে।

পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে - নিশ্চয় এটি এক অতীব মর্যাদাপূর্ণ কুরআন এটি এক সুরক্ষিত গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে। পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া এটা কেউ স্পর্শ করতে পারে না। (সূরা: ওয়াক্বিয়া: ৭৭-৭৯)

এই নির্দেশাবলীর দ্বারা জানা যায় যে, ইসলামে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতাকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। এমনকি একে ঈমানের অর্ধেক বলা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) ইরশাদ করেন:

পবিত্রতা ঈমানের অংশ। এছাড়া আল্লাহ তা’য়ালা বলেন ঃ আল্লাহ্ তাওবাকারীকে ভালবাসেন এবং যারা পবিত্র থাকেন তাদেরকেও। (সূরা বাকারা-২২২)

মুসলমান যেন পবিত্র ও পরিচ্ছন্নতার পাবন্দী করে এবং সকল প্রকার অপবিত্রতা ও কলুষতা থেকে মুক্ত থাকে, এ লক্ষ্যে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) স্বীয় উম্মাতের জন্য কিছু বিধি-বিধান জারী করেছেন, যা সকলের জন্য অবশ্য পালনীয়।

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : তোমাদের কেউ নিন্দ্রা থেকে জাগ্রত হওয়ার পর তিনবার হাত না ধোয়া পর্যন্ত পানির পাত্রে হাত ঢুকাবে না। কেননা, নিদ্রা অবস্থায় তার হাত কোথায় ছিল তা , তা জানা নেই। এই হাদীস দ্বারা এ কথা প্রতীয়মান হয় যে, জাগ্রত অবস্থায় এবং নিদ্রিত অবস্থায় তথা সর্বদাই পাক-পবিত্রতার দিকে লক্ষ্য রাখা আবশ্যক। নিদ্রাবস্থায় কোন স্বপ্নের কারণে যদি শরীর নাপাক হয়ে যায় তবে গোসল করা অপরিহার্য। হাতের পবিত্রতার প্রতি এ জন্য জোর তাকীদ করা হয়েছে যাতে নাপাক হাত পানিতে ভিজে পাক পানিকে নাপাক না করে দেয়। কাজেই ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর নাপাক হাত কোনক্রমেই পানির পাত্রে ঢুকাবে না।

দাঁতে জমে থাকা ময়লার কারণে নানা রকমের পীড়া সৃষ্টি হয়। এজন্য দাত পরিষ্কার করাকে শরী“আতে সুন্নাত সাব্যস্ত করা হয়েছে। নবী কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেছেন : যদি আমার উম্মাতের উপর কঠিন ও কষ্টকর না হতো তাহলে আমি তাদেরকে প্রত্যেক নামাযের সময় মিস্ওয়াক করার হুকুম করতাম।

একবার কিছু সংখ্যক মুসলমান রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর দরবারে হাজির হলেন। তাদের দাঁত অপরিষ্কার হওয়ার দরুণ লাল দেখাচ্ছিলো। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন : তোমাদের দাঁত লাল দেখছি কেন ? তোমরা মিস্ওয়াক করো না?

রাস্তায় চলাচলকারী লোকদের এবং বৃক্ষের নিচে আশ্রয়গ্রহণকারী পথিকদের যেন ময়লা আবর্জনা দুর্গন্ধ কষ্ট না হয় এ উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : তিনটি লানতযোগ্য কাজ থেকে বেঁচে থাকবে। অর্থাৎ পানির ঘাট, চলার পথ এবং গাছের ছায়ায় প্রশ্রাব-পায়খানা করা থেকে বেঁচে থাকবে।

স্থির পানিতে প্রশ্রাব করে পুনরায় তাতে গোসল করা ইসলামী বিধানমতে বৈধ নয়। হাদীসে এ সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। দাড়িয়ে প্রশ্রাব করা ইসলামে নিষিদ্ধ, কেননা এভাবে প্রশাব করলে প্রশ্রাবের ছিটাফোটা শরীরে লাগার আশংকা রয়েছে।

এমনকি শক্ত মাটিতে প্রশ্রাব না করে নরম মাটিতে প্রশ্রাব করার হুকুম করা হয়েছে। কেননা শক্ত ও কঠিন যমীনে প্রশ্রাব করলে এর ছিটাফোটা শরীরে ফিরে আসার আশংকা থাকে। কাজেই প্রশ্রাবের স্থানের মাটি যেন নরম ও ঢালু হয় এ দিকে খেয়াল রাখা আবশ্যক। গোসলখানায় প্রশ্রাব করাও শরীয়তে নিষিদ্ধ।

প্রশ্রাব-পায়খানা করার পর ইস্তিন্জা করার বিধান শরীয়তে রয়েছে। মাটির ঢেলা অথবা অন্য কোন এমন পবিত্র জিনিস যা মানুষ ও জিনের খাদ্যদ্রব্য নয়, তবে নাজাসাতকে পরিচ্ছন্ন করতে পারে। এছাড়া পরিষ্কার করার পর পানি দ্বারা তা ধুয়ে নেওয়া উত্তম। এ কাজে বাম হাত ব্যবহার করার হুকুম দেওয়া হয়েছে। ডান হাত ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে।

উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে ইসলামে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা যে কত গুরুতপূর্ণ, তা সহজেই অনুমান করা যায়। গোসল করা, কাপড় ধোয়া, আতর ব্যবহার করা এবং তৈল মাখা খুবই উত্তম কাজ। ‘

সালাত সঠিক ও বিশুদ্ধ হওয়ার পূর্ব শর্ত হলো- ত্বাহারাত বা পবিত্রতা অর্জন। সালাতের চাবিকাঠি হলো- পবিত্রতা। হাদীছে বর্ণিত রয়েছে, রাছূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:- পবিত্রতা হলো নামাযের চাবি।

অপবিত্রতা হলো নামাযের পথে অন্তরায়। এটি অপবিত্র ব্যক্তির উপর ঝুলন্ত একটি তালার ন্যায়। যখন সে অযূ করে নেয়, তখন সেই তালা খুলে যায়। মোট কথা, পবিত্রতা অর্জন করা হলো সালাতের অপরিহার্য শর্ত। তাই পবিত্রতা অর্জন ব্যতীত সালাতই হবে না।

বাহ্যিক বা দৃশ্যমান নাপাকী দূর করার উপায় হলো- পবিত্রতা অর্জনের নিয়্যাত বা দৃঢ় সংকল্প নিয়ে পানি ব্যবহার করা। যদি বড় ধরনের অপবিত্রতা বা নাপাকী হয়ে থাকে, তাহলে এ থেকে পবিত্রতা অর্জনের উপায় হলো- সমস্ত শরীর পানি দিয়ে শারীয়ত নির্দেশিত নিয়মে ধৌত করা অর্থাৎ গোছল করা। আর ছোট রকমের নাপাকী হয়ে থাকলে শারীয়ত নির্ধারিত শরীরের চারটি অঙ্গ শারীয়ত নির্দেশিত নিয়মানুযায়ী ধৌত করা অর্থাৎ অযূ করা। কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেছেন:-

অর্থাৎ- হে মু’মিনগণ! যখন তোমরা নামাযের জন্য দাঁড়াতে যাবে, তখন তোমাদের মুখমন্ডল এবং কনুই পর্যন্ত হাতগুলি ধৌত করো আর তোমাদের মাথা মোছেহ করো এবং টাখনু পর্যন্ত (গিট বা টাখনু সহ) তোমাদের পা গুলো ধৌত করো।(সূরা মায়েদা -৬)

এ আয়াতে আল্লাহ তা’য়ালা ওযূর ফরযগুলো বর্ণনা করে দিলেন।

অন্য আয়াতে আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেছেন:-

অর্থাৎ- এবং তিনি তোমাদের উপর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, তদ্বারা তোমাদেরকে পবিত্র করার জন্যে।(সূরা আনফাল -১১)

জুমু’আর দিন গোসল করার ব্যপারে ইসলামে জোর তাকীদ রয়েছে।

হযরত আবদুন্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, আরবের লোকেরা চামড়া জাতীয় ভারী পোশাক পরিধানে অভ্যস্ত ছিলেন। তারা ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী। মেহনত ও মজদুরীর উপর তারা জীবিকা নির্বাহ করতেন। তাছাড়া মসজিদ ছিল খুবই সংকীর্ণ এবং ছাদ ছিল খুবই নিচু। আর মসজিদের ছাদ নির্মিত হতো নানা প্রকার পত্র-পল্পব দ্বারা। একবার গরমের দিন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) জুমু’আর নামাজ আদায় করার জন্য মসজিদে আগমন করলেন। তখন চামড়ার পোশাক পরিধানের কারণে উপস্থিত লোকজন ঘর্মাসিক্ত হয়ে গেলেন এবং তাদের দেহের দুর্গন্ধ মসজিদের ভিতর ছড়িয়ে পড়েছিল। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এই দ্র্গুন্ধ অনুভব করলেন এবং বললেন : হে লোক সকল! শুক্রবার আসলে তোমরা গোসল করবে এবং প্রত্যেক ব্যক্তি সাধ্যানুযায়ী উত্তম তৈল ও খুশবু ব্যবহার করবে।

জুমু’আর দিন ছাড়া অন্যান্য, সময়ও দুর্গন্ধযুক্ত জিনিস ব্যবহার করে বা আহার করে মসজিদে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন পিয়াজ, রসুন ইত্যাদি। কেননা এতে উপস্থিত মুসল্লীদের কষ্ট হয় এবং স্বাস্থ্য নষ্ট হওয়ার আশংকা দেখা দিতে পারে।

দৈহিক ও পোশাক-পরিচ্ছদের পরিচ্ছন্নতা জুমুয়ার দিনের সাথেই কেবল সম্পৃক্ত নয় বরং পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্নতার এ হুকুম জীবনের সকল অবস্থার সাথেই সম্পর্কিত! একবার রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এক ব্যক্তিকে দেখলেন যে, তার মাথার চুলগুলো বিক্ষিপ্ত ও অপরিচ্ছন্ন। তখন তিনি বললেন : তার মাথার চুল পরিপাটি করার কোন কিছু নেই কি.? আরেকবার তিনি অপর এক ব্যক্তিকে ময়লা ও অপরিচ্ছন্ন কাপড় পরিহিত অবস্থায় দেখে বললেন, এ ব্যক্তিটি কি কাপড় ধোয়ার মত কোন পানি পায় না?

মোটকথা, ইসলাম পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে।

ইমাম গাযালী (রঃ)-এর মতে ত্বাহারাত-এর চারটি স্তর রয়েছে :

১.বাহ্যিক পবিত্রতা।

২.শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গ সমূহ পাপাচার থেকে মুক্ত রাখা

৩. অন্তরকে অসৎ চিন্তা থেকে মুক্ত রাখা।

৪. মন-মন্তিষ্ককে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য সবকিছু থেকে মুক্ত ও পবিত্র রাখা।

উপরোক্ত স্তর চতুষ্টয়ের একটি অপরটির সাথে পর্যায়ক্রমে সম্পর্কযুক্ত।

প্রথমে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে বাহ্যিক নাপাকী থেকে পবিত্র করা। তারপর এগুলোকে পাপাচার হতে মুক্ত রাখা। তারপর অন্তর পাক-পবিত্র রাখা। অবশেষে মন-মস্তিষ্ক আল্লাহ্ ব্যতীত সবকিছু থেকে পবিত্র রাখার সাধনায় আত্মনিয়োগ করা।

পবিত্রতার গুরুত্ব সম্পর্কে অসংখ্য হাদীস শরীফ বর্ণিত হয়েছে নিম্নে কয়েকটি হাদীস শরীফ উপস্থাপন করা হলো-

হযরত আবদুল্লাহ বিন সানাবিহী (রাঃ) হতে বর্ণিত, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন “যখন কোন মুমীন বান্দা অজু করে প্রথমে কুলি করে তখন তার মুখ হতে গুনাহ সমূহ বেরিয়ে যায়। যখন নাকে পানি দেয় তখন নাক হতে গুনাহসমূহ বেরিয়ে য়ায়। যখন মুখম-ল ধৌত করে তখন মুখমন্ডল হতে গুনাহসমূহ বেরিয়ে যায়। এমনকি তার দু’চোখের পাতার নীচ হতে গুনাহ সমূহ বেরিয়ে যায়। যখন দু হাত ধৌত করে তখন দু হাতের নখ সমূহের নীচ হতেও গুনাহ সমূহ বের হয়ে যায়। যখন মাথা মাসেহ করে তখন মাথা হতে গুনাহসমূহ বেরিয়ে যায়। এমনকি তার দু’কান হতেও তা বেরিয়ে যায়। যখন সে তার দু’পা ধৌত করে তখন দু’পা হতে গুনাহ সমূহ বেরিয়ে যায়। অত:পর মসজিদের দিকে গমন করা ও নামাজ আদায় করা তার জন্য অধিক সওয়াবের কারণ হয়। (মুয়াত্তা শরীফ ও নাসায়ী শরীফ)

নবীজি সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, পবিত্রতা ব্যাতিরেকে নামাজ কবুল করা হয় না। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, পবিত্রতা ব্যতীত নামাজ কবুল করা হয় না। হারাম পন্থায় উপার্জিত দান সাদকা কবুল হয় না। (মুসলিম শরীফ ১ম খন্ড হাদীস নং ২২৪)

হযরত জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, বেহেস্তের চাবি হচ্ছে নামাজ, আর নামাযের চাবি হলো পবিত্রতা। (মুসনাদে আহমদ পৃ: ৩৯)

পবিত্রতা ঈমানের অংঙ্গ সমূহের একটি। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, পবিত্রতা হলো ঈমানের অর্ধেক। (মুসলিম শরীফ ১ম খন্ড, পৃ: ২০৩)

আমাদের উচিত, ভেতরে বাইরে পবিত্রতা অর্জন করা। তাহলে আমরা শারীরিক ও মানসিক রোগব্যাধি থেকে মুক্তি পাবো। ইসলাম মানব জাতিকে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ, খাদ্য জাতীয় পানীয়, পোশাক-পরিচ্ছদ, ঘর-বাড়ি, যাতায়াতের সড়ক পথ ইত্যাদি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়েছে।

প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, “তোমরা তোমাদের বাড়ির আঙ্গিনা সর্বদিক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখবে। তোমরা ইয়াহুদীদের অনুকরণ করোনা। তারা তাদের বাড়িতে ময়লা আবর্জনা জমা করে রাখে। (তিরমিযী শরীফ ৫ম খন্ড, পৃ: ১১১)

পরিশেষে বলব, অপবিত্র হলে পবিত্রতা অর্জন করতে হবে, পবিত্রতা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম হলো - পানি দিয়ে পুরো শরীর ভালোভালো ধৌত করা। পোশাকে নাপাকী লাগলে নির্দিষ্ট স্থান বা পুরো কাপড়টি ভালোভাবে ধৌত করে নিবে, যাতে নাপাকীর কোন চিহ্ন ও গন্ধ না থাকে। ইসলামে ওযূর বিধান রয়েছে, নামাজে, কুরআন তিলাওয়াতে। ওযূর সহিত সর্বদা থাকার প্রতি গুরুত্বারূপ করা হয়েছে। একান্তভাবে পানি না পেলে বা এমন স্থানে গিয়ে পৌছলে যেখানে পানির সন্ধান নেই সেখানে তায়াম্মুম করতে পারবে। এছাড়া পানি ব্যবহারে অসুস্থতা একেবারেই বেঁড়ে গেলে তায়াম্মুল করতে পারবে।

অতএব, একজন মুসলমানের জন্য পবিত্রতা অর্জনকে ভালোবাসতে হবে এবং পবিত্রতা অর্জন ও ওযূর সহিত সদা থাকতে হবে।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে পবিত্রতাকারী হিসেবে কবুল করুক।আমিন।

লেখক : ইমাম ও খতিব, বিষ্ণুপুর মদিনা বাজার বাইতুল আমিন জামে মসজিদ, চাঁদপুর সদর, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়