প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
কেয়ামতের আলামত সমূহের মধ্যে একটি হলো হঠাৎ মৃত্যুর পরিমাণ বেড়ে যাওয়া
মনটা বড় বিষন্ন হয়ে আছে। নিকট ও দূরের পরিচিতজনদের অনবরত মৃত্যুর সংবাদ আসছেই। এরমধ্যে পীড়াদায়ক বিষয় হলো তাদের কাফন-জানাজা-দাফনেও অংশগ্রহণ করতে পারছি না। লাশের মিছিলে নতুন আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে হঠাৎ মৃত্যু। মূলত মৃত্যু তার নির্ধারিত সময়েই হাজির হয়, কিন্তু পার্থিব দৃষ্টিতে কিছু মানুষের আকস্মিক প্রস্থান মেনে নিতে কষ্ট হয়।
জন্মিলে মরিতে হবে,
এ জগতে কেবা রবে?
এটাই মহাসত্য। পৃথিবীর রাজা-বাদশাহ থেকে শুরু করে রাস্তার ফকীর কেউই তা অতিক্রম করতে পারেন নি।
মহাগ্রন্থ কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, অতঃপর যখন তাদের অন্তিম সময় এসে যাবে, তখন তারা না একমুহুর্ত পিছে যেতে পারবে, আর না এগিয়ে আসতে পারবে। [সূরা আ’রাফ-৩৪]
মাত্র ২১ বছরের ডাক্তারী পড়ুয়া এক তরুণ-তাগড়া যুবকের করোণাক্রান্ত হয়ে অসহায় মৃত্যুতে শোকাহত মা ফেসবুকে হৃদয়বিদারক স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেছেন, ‘সবসময় আমি ওর সাথে ছিলাম। ওর কোনো ঠাণ্ডা, গলা ব্যথা, কাশি, বুক ব্যথা, পেট ব্যথা এসবের কিছুই ছিল না। ডাক্তাররা মনে করছেন মেনিনজাইটিস-ই হয়েছে। নিউরোসার্জন এসে দেখে গেলেন এবং সিটি স্ক্যান করা হলো নিশ্চিত হতে আমার ছেলের অন্য কোনো সমস্যা নেই। এ সময় লক্ষ করলাম ওর একটা চোখের কিছু অংশ ফোলা। বুকের এক্সরে করে দেখা যায় ছোট একটা দাগ। এরই মধ্যে কভিডের রেজাল্ট আসে। আমার ছেলে করোনায় আক্রান্ত। পরের ৮-১০ ঘণ্টা ছিল জীবনের দুঃসহ যন্ত্রণার দিন। ওর হার্ট রেট, রেসপাইরেটরি রেট বাড়ছেই, অক্সিজেন লেভেল ড্রপ করছে। প্রতি মুহূর্তে মুহূর্তে ছেলে আমাদের চোখের সামনে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা কেউ কিছুই করতে পারছি না। কিছু বুঝে ওঠার আগে ছেলে চোখ বন্ধ করে। আমাদের ছেড়ে চলে যায়।’
এভাবে কত স্বপ্ন বিলীন হয়ে গেছে!
কত আশা-আকাঙ্ক্ষার শেষ হয়েছে!
কত পরিকল্পনা-প্ল্যানের নিরব সমাপ্তি হয়েছে মৃত্যুর হিমশীতল ছোবলে?
জীবনের স্বাদণ্ডআহ্লাদ বিস্বাদণ্ডবিষাদের তিক্ততায় ভরে গেছে। কিছুক্ষণ আগে যে মুখগুলোতে হাঁসি শোভা পাচ্ছিল, মৃত্যু মুহুর্তেই তা ঢুকরে উঠা কান্নায় পরিবর্তন করে দেয়। সুখের ফাগুনে দুলতে থাকা জীবন ক্ষণিকেই দুঃখ-দুর্দশায় ডুবে যায় মৃত্যুস্পর্শে।
দুনিয়ায় আসার সিরিয়াল আছে, যাওয়ার সিরিয়াল নাই। প্রথমে দাদা, পরে বাবা, এরপর নাতি। কিন্তু যাওয়ার ক্ষেত্রে এ ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয় না। বাবার কাঁধে ছেলের কিংবা দাদার কাঁধে নাতির লাশ তো হামেশাই দেখা যায়। প্রিয়জনের বুকফাটা আর্তনাদ, করুণ অনুনয়-বিনয় কোনকিছুই মৃত্যুর অমোঘ সত্য আটকাতে পারে না।
আমাদের অনেকের মনে হয়তো একটা প্রশ্ন জাগে, আচ্ছা! মৃত্যু তো হবেই, তাহলে কখন কার মরণ হবে সেটা আল্লাহ আগে থেকে জানিয়ে দিলে কি হতো?
উত্তর : আগে থেকে জানিয়ে দিলে মানুষ বেপরোয়া হয়ে যেত। যেহেতু সে আগে থেকেই জানে তার কখন মৃত্যু হবে, সে চরম গাফলতি ও গুনাহের যিন্দেগীতে ডুবে যেত এই আশায় মৃত্যুর আগে তওবা করে নিবে। জালিমণ্ডনিপীড়করা মজলুমের উপর আরও বেশি অত্যাচার করে নিত এই আশায় মরণের আগে তওবা করে মাজলুমের কাছ থেকে কোন রকমে ক্ষমা চেয়ে নিবে।
মানুষ সুযোগ সন্ধানী, আগে থেকে মৃত্যুর দিনক্ষণ জানা থাকলে সে হয়তো গোটা জীবন অন্যায়-অসৎকর্মে কাটিয়ে দিত। মৃত্যুর আগে আগে সূফী-দরবেশ সেজে ভালো হওয়ার চেষ্টা করতো। অর্থাৎ দুনিয়ায় গুনাহ ও অনাচারের পরিমাণ বেড়ে যেত। মৃত্যুর চিন্তায় পাপাচার থেকে বিরত না থেকে অনাচারে ডুবে থাকতো। দয়াময় আল্লাহ চান বান্দা তার অন্তরে সবসময় মৃত্যুচিন্তা জাগ্রত রাখুক যে চিন্তা তাকে সৎকর্মে অগ্রসর হতে এবং দুনিয়া নিয়ে বেশি আশা-আকাংখা না করতে সাহায্য করবে।
তাছাড়া মৃত্যুর সুনির্ধারিত সময় জানা থাকলে দিন যত অতিক্রম হতো মৃত্যু আতঙ্কে মানুষ ততো দুশ্চিন্তায় নিপতিত হতো, কর্মস্পৃহা হারিয়ে ফেলতো। মৃত্যুর সঠিক সময় অজানা থাকায় সৎকর্মচ্ছুকরা তাদের কর্মে আরও অগ্রসর হয় আর অসৎরা তাড়াতাড়ি অন্যায়কাজ ত্যাগ করার দিকে এগিয়ে যায়। কারণ যে কোন মুহুর্তে মৃত্যুদূত হাজির হতে পারে। সুতরাং যতবেশি সম্ভব ভালো কাজ করা যায় ততই উত্তম, যতবেশি গুনাহ-পাপাচার-জুলুম না করা যায় ততই কল্যাণ। সবকিছুর ঊর্ধ্বে এর হাকিকত একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন। যা আমাদের সাধ্যাতীত তা নিয়ে বেশি মাথা ঘামানো অনুচিত।
করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের সামনে আজ মৃত্যুর বিভীষিকা অনেকটা স্পষ্ট। কত আশা-আকাংখার যবনিকাপাত হয়েছে, কত স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ হয়েছে অতিক্ষুদ্র চক্ষুসীমার ঊর্ধ্বে একটি ভাইরাসের থাবায়! এর উপর এখন নতুন আতঙ্কের নাম ‘হঠাৎ মৃত্যু’। বলা নেই, কওয়া নেই সুস্থ-সবল মানুষ, হঠাৎ শুনা যায় তিনি ইহধাম ত্যাগ করেছেন। পার্থিব দুনিয়া নিয়ে আশার ডালি সাজানো জীবন মুহুর্তেই হতাশার কালো আঁধারে হারিয়ে যায়, সুখসাগরে ভাসতে থাকা কেউ দুঃখের অকুল পাথারে ডুবে যায়। রং-রূপ আর ঐশ্বর্যভরা যিন্দেগী বিবর্ণ-কদাকার, নিঃস্ব-রিক্ত হয়ে যায়। বন্ধু শত্রু হয়ে যায়, যারা একসময় জ্বি হুজুর জ্বি হুজুর করতো তারাই মনিব হয়ে হুকুম দেয়া শুরু করে। আপন পর হয়ে যায়, স্বার্থবাজরা নিজ আখের গুছিয়ে চম্পট দেয়।
কোথায় কার কাছে কত পাওনা-দেনা আছে তাও বলার অবকাশ থাকে না। কোন ব্যাংকে কত জমা আছে তার হিসাব নিকাশের ফুরসৎ পাওয়া যায় না। কথা-কর্ম কিংবা আচরণে কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকলে ক্ষমা চাওয়ারও সুযোগ হয় না। এই তো জীবন! গতকালের কর্মব্যস্ত মানুষ আজ শতমণ মাটির নিচে নিথর নিরব একাকী পড়ে আছে! কোথায় অফিসের তাড়া? কোথায় দোকান-পাট? জমিদারি-বাহাদুরী -ক্ষমতার দাপটই বা আজ কোথায়? প্রতিমুহুর্তে আমাদের কাছে কত মৃত্যুর সংবাদ আসে! মুখে একবার ইন্নালিল্লাহ, একটু দীর্ঘশ্বাস কিংবা শোক জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়া বা মিলাদণ্ডদোয়া মাহফিল করেই আমরা আবার নিজ নিজ ধান্দায় ডুবে যাই। প্রিয়তম রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেন-মৃত্যুই উপদেশ হিসেবে যথেষ্ট। [শোয়াবুল ঈমান-বায়হাকী] ভাবার বিষয় আমরা কি উপদেশ নিচ্ছি? এখানে উপদেশ নেয়ার অর্থ সৎকর্ম করা ও অসৎকর্ম পরিত্যাগের মাধ্যমে মৃত্যুর প্রস্তুতি নেয়া। মৃত্যু আসবেই, আজ বা কাল পৃথিবী ছেড়ে যেতে হবেই। সেটা হতে পারে আকস্মিক মৃত্যু, যার কোন আগাম সংকেত নেই। তাছাড়া প্রিয়নবী (সাঃ) হাদিসে মোবারাকায় রয়েছে- কেয়ামতের আলামত সমূহের মধ্যে একটি হলো- হঠাৎমৃত্যুর পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। [মু’জামুস সগীর/ইমাম তাবারাণী]
এক্ষেত্রে আপনার করণীয় কি?
১। আপনার কর্তব্য হলো পাওনা-দেনার হিসাব ক্লিয়ার রাখা। দ্রুত দেনা পরিশোধ করা। কোথায় কার কাছে কত পাওনা আছেন, কিংবা আপনি কার কাছে কত ঋণগ্রস্ত আছেন সেটা কাগজে লিখে সুবিধাজনক স্থানে রেখে দেয়া। এবং এ ব্যাপারে ওয়ারিসদের আগেই জানিয়ে যাওয়া। প্রিয়নবী (সাঃ) এরশাদ করেন- একজন মুসলমান যে অসীয়ত করতে চায় সে যেন কখনো এমন না করে যে (পৃথিবীতে) দুইরাত অতিবাহিত হয়েছে অথচ সে লিখিত আকারে অসীয়ত প্রস্তুত করেনি। [বুখারী-মুসলিম]
২। জীবনে চলার পথে কাছে কিংবা দূরের কারও সাথে দূর্ব্যবহার করে থাকলে যতদ্রুত সম্ভব ক্ষমা চেয়ে নেয়া। এক্ষেত্রে আমরা বেশি গাফেল। নিজের অহমিকার কারণে হোক অথবা গুরুত্ব না দেয়ার কারণে হোক এটা আমরা সময়মত করতে চাই না। অপরের সাথে অন্যায় আচরণ করা মানে তার উপর জুলুম করা। সে ক্ষমা না করলে আপনি আল্লাহর আদালতে ছাড় পাবেন না। মৃত্যুদূত হঠাৎ হাজির হতে পারে। এমন যেন না হয় আপনি যাদের প্রতি অন্যায় করেছেন তারা আপনাকে এখনও ক্ষমা করেনি।
৩। সর্বদা অজু অবস্থায় থাকা এমনকি ঘুমানোর পূর্বেও অজু করে নেয়া। সর্বদা অজু অবস্থায় থাকলে যে কোন মুহুর্তে আপনার মৃত্যু হোক সেটা শাহাদাতের মৃত্যু বলে বিবেচিত হবে। হযরত আনাস বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহুকে প্রিয়নবী (সাঃ) এরশাদ করেন, “বৎস! সম্ভব হলে সবসময় অযু অবস্থায় থাকো। কেননা, ‘মালাকুল মওত’ অযু অবস্থায় যাঁর রূহ কবজ করেন তাঁর শাহাদাতের মর্যাদা নসীব হবে।” [শোয়াবুল ঈমান/ইমাম বায়হাকী] এছাড়া সর্বদা অজু অবস্থায় থাকলে অনবরত সওয়াব লিপিবদ্ধ করা হয়ে থাকে। হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লহু আনহুকে প্রিয়নবী (সাঃ) এরশাদ করেন, ‘হে আবু হুরায়রা! যখন তুমি অযু করো তখন বলো। যতক্ষণ পর্যন্ত তোমার অযু অবশিষ্ট থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমার ফেরেস্তা অর্থাৎ (কিরামান কাতেবীন) তোমার জন্য নেকী লিখতে থাকবে।’ (আল মু’জামুস সগীর লিত তাবারানী) ঘুমানোর পূর্বে অজু করে নিলে পাশে একজন ফেরেশতা নিয়োজিত থাকেন যিনি বান্দার জন্য এই বলে দোয়া করতে থাকেন- হে আল্লাহ! আপনার অমুক বান্দাকে ক্ষমা করুন, কারণ সে পবিত্র অবস্থায় রাত্রিযাপন করছে। [সহিহ ইবনে হিব্বান]
৪। চাকুরী, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি যে কাজেই থাকুন না কেন সর্বদা অন্তরে, ফাঁকে ফাঁকে মুখে আল্লাহর যিকির, ইস্তেগফার, দরুদ শরীফ পড়তে থাকুন। কারণ আপনার শেষ আমল ভালো কিছু হলে পরকালে নাজাতের আশা করা যায়। হুজুরে আকরাম (সাঃ) এরশাদ করেন- ‘শেষ আমলই নির্ভরযোগ্য’। [বুখারী-মুসলিম] যে আমলটা আপনি নিয়মিত করবেন আল্লাহ সহায় হলে সে আমল করা অবস্থায়ই ইন্তেকাল হতে পারে।
৫। পাপাচার বিশেষত: গোপনে বরং সর্বাবস্থায় কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। কারণ অনবরত গুনাহ আল্লাহর ক্রোধের কারণ হয়। যে আল্লাহর ক্রোধে পতিত হয় এবং এ অবস্থায় তার মৃত্যু এসে যায় তার জন্য শাস্তি অবধারিত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হযরত মুআজ বিন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে কতক নসীহত করেন এর মধ্যে একটা ছিল- তোমার উপর কর্তব্য হলো গুনাহ থেকে দূরে থাকবে। কেননা গুনাহ আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লার ক্রোধকে তরান্বিত করে। [মসনদে আহমাদ]
হাফেজ ইবনে কাছির রহ. বলেন- পাপাচার ও প্রবৃত্তির অনুসরণ তা করনেওয়ালাকে মৃত্যুকালীন অপমানিত হওয়ার কারণ হয়, সাথে থাকে শয়তানের চক্রান্ত। তার সাথে যোগ হয় দূর্বল ঈমান। এর ফলে সে খারাপ মৃত্যুর মাঝে পতিত হয়।
৬। হৃদয়ে সংকীর্ণতা না রেখে সবসময় অন্যের উপকার করার চেষ্টা করা। গরীব-দুঃখি-অসহায়-মজলুমণ্ডঅসুস্থদের সেবা করা, সাহায্য-সহযোগীতা করা। সৃষ্টির সেবা এমন একটি ইবাদত যা দ্বারা সহজে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়। মানুষের দোয়া এমন মূল্যবান বিষয় যা আপনাকে মৃত্যুকালীন আপদ থেকে বাঁচাতে পারে। প্রিয়নবী (সাঃ) এরশাদ করেন- মানুষের উপকারে কল্যাণমূলক কাজ আমলকারীকে মন্দ পরিণতি, বিপদ ও ধ্বংস থেকে রক্ষা করে। [শোয়াবুল ঈমান]
মানুষের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলা, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো, একজন পথহারাকে পথ দেখিয়ে দেয়া, রাস্তাঘাটের অভুক্ত কুকুর-বিড়ালকে খাদ্য দেয়া থেকে শুরু করে এ ধরণের যাবতীয় কর্ম কল্যাণমূলক কাজের অন্তর্ভূক্ত। প্রিয়নবী রাসূলে আকরাম (সাঃ) এরশাদ করেন- ভালো কাজ দ্বারাই কেবল হায়াত বৃদ্ধি পায় (বরকত হয়)। [সুনানে ইবনে মাজাহ]
৭। আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা। জীবনে সফল হতে চাইলে, আকস্মিক বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পেতে চাইলে, মৃত্যুকালীন উত্তম পরিণতি কামনা করলে এটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বলাবাহুল্য এক্ষেত্রে আপন মা-বাবা সবচেয়ে বেশি হকদার। মা-বাবার খেদমত করে তাদের দোয়া নিতে পারলে ইহকাল-পরকাল উভয়কাল সফল। এরপরে ভাই-বোন অন্যান্য আপনজন ও আত্মীয়-স্বজনের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের সেবা করা, বিপদাপদে পাশে দাঁড়ানো। এসব মহৎকর্ম যিন্দেগীতে বরকত লাভের মাধ্যম। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন- যে চায় তার রিজিক প্রশস্ত হোক, তার হায়াত প্রলম্বিত হোক সে যেন আল্লাহকে ভয় করে (চলে) এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে। [মসনদে আহমাদ]
৮। অতীত গুনাহের জন্য বারবার তওবা করা। গুনাহ হয়ে গেলেই দিনে বা রাতে যখনই সুযোগ হবে তওবা করে নিতে হবে। বেশিবেশি তওবা করলে গুনাহ পরিত্যাগ করার তওফীক নসীব হয়। এক্ষেত্রে একজন মুরশিদে কামিল এর হাতে বায়াতের মাধ্যমে তওবা করা বেশি উপকারী এবং কার্যকর।
৯। আল্লাহ তায়ালার কাছে উত্তম মৃত্যু কামনা করে দোয়া করা। দোয়ায় মানুষের তাকদীর পরিবর্তন হয়। এজন্য কায়মনোবাক্যে আল্লাহর কাছে হুসনুল খিতাম বা মৃত্যুকালীন উত্তম অবস্থার তাওফীক বারবার চাইতে হবে। কয়েকটি মাসনূন দোয়া লক্ষ্য করি-
* হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত, নবীজী (সাঃ) আল্লাহর কাছে এই দোয়া করতেন- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে তোমার দেয়া নেয়ামত দূরীভূত হওয়া, তোমার ক্ষমা না পাওয়া, তোমার আকস্মিক প্রতিশোধ এবং তোমার যাবতীয় ক্রোধ থেকে আশ্রয় চাই। [সহিহ মুসলিম]
* হযরত আবুল ইয়াসার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, প্রিয়নবী (সাঃ) নি¤েœর কিছু বিষয় থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতেন-হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে হঠাৎ ধ্বসে যাওয়া, উপর থেকে পড়ে যাওয়া, পানিতে ডুবে যাওয়া, আগুনে পুড়ে যাওয়া, মৃত্যুর সময় শয়তানের পাকড়াও থেকে, তোমার পথে পৃষ্ঠপ্রদর্শণ করে মৃত্যু হওয়া এবং সাপের দংশনে মৃত্যু থেকে পানাহ চাই। [সুনানে আবি দাউদ]
এই দোয়াটিও করা যায়- হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে গাফেল অবস্থায় আকস্মিক মৃত্যু থেকে পানাহ চাই, হে আল্লাহ আমাকে এই দুনিয়া থেকে ততক্ষণ পর্যন্ত পাকড়াও করিয়েন না, যতক্ষণ না আমার উপর আপনি সন্তুষ্ট হন।