শনিবার, ০২ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুরে রাজনৈতিক মামলায় আসামীদের আটক অভিযান অব্যাহত। যুবলীগ, কৃষকলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৫ নেতা-কর্মী আটক
  •   ছেঁড়া তারে প্রাণ গেল যুবকের
  •   চাঁদপুরে গণঅধিকার পরিষদের ৩য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন
  •   রাজধানীতে কচুয়ার কৃতী সন্তানদের সংবর্ধনা
  •   সম্প্রীতির চমৎকার নিদর্শন আমাদের বাংলাদেশ --------------জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন

প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

স্বাগত মাহে রমজান

মুফতি আহমদ আবদুল্লাহ
স্বাগত মাহে রমজান

রহমত, বরকত ও নাজাতের অফুরান কল্যাণের বার্তা নিয়ে পুণ্য বৈভবে এলো মাহে রমজান। রমজান ত্যাগ ও সংযমের মাস। সহমর্মিতা ও সহযোগিতার মাস। আঁধারে আলো ছড়াবার মাস। অমূল্য রতন তাকওয়া অর্জনের মাস। ক্ষমা-মার্জনা ও অনুকম্পায় বিগলিত হওয়ার মাস। মাহে রমজান বান্দার দৈহিক ও আত্মিক পরিশুদ্ধির প্রশিক্ষণ মাস। সিয়াম সাধনার মাস। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এ মাসের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফজিলতের কথা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বর্ণনা করা হয়েছে। মহান রাব্বুল আলামিন বলেন, 'হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেয়া হলো, যেভাবে দেয়া হয়েছে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পারো। (সুরা বাকারা: ১৮৩)। এই মুত্তাকী বা পরহেজগার শব্দটি অতীব তাৎপর্যপূর্ণ। ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, সত্য-অসত্যের পার্থক্য নিরূপণপূর্বক কেবল ভালো, ন্যায় এবং সত্যের পথে অবিচল থেকে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ একনিষ্ঠভাবে পালন করার মাধ্যেই যথার্থ তাকওয়া বা পরহেজগারী নিহিত, যা মুত্তাকীর মৌলিক বৈশিষ্ট্য। বস্তুত সিয়াম সাধনা মুত্তাকী হওয়ার জন্য অন্যতম শক্তিশালী নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে। এক মাসব্যাপী রোজার মাধ্যমে পবিত্রতা পরিশুদ্ধতার যে কঠোর ও সুশৃঙ্খল প্রশিক্ষণ চলে, তা যদি মানুষ একনিষ্ঠভাবে গ্রহণ, অনুশীলন ও আমল করে, তাহলে মানব মনে, মননে, চরিত্রে, ব্যবহারে এবং কাজকর্মে কুপ্রবৃত্তি, পাশবিকতা ও নেতিবাচকতার কোনো স্থান থাকতে পারে না।

লওহে মাহফুজ থেকে অবতীর্ণ সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ মানব জাতির জন্য আল্লাহর সর্বশেষ চিরন্তন, পূর্ণাঙ্গ জীবন- বিধান আল কুরআন অবতীর্ণের মাস মাহে রমজান। হাজার মাসের চেয়েও অধিকতর মর্যাদা ও ফযীলতের রাত লাইলাতুল কদরের মুবারক মাস মাহে রমজান। মূলত মাহে রমজান মানব জাতির হেদায়াতের ভরা মৌসুম। এ মাসেই মহান রাব্বুল আলামিন মানব জাতির হেদায়াতের উদ্দেশে বড় বড় আসমানী কিতাব নাজিল করেছেন। এ রমজান মাসেই হজরত দাউদ (আঃ)- এর কাছে জবুর, হজরত মুসা (আঃ)-এর কাছে তাওরাত, হজরত ঈসা (আঃ) এর কাছে ইনজিল ও রমজানের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাত সমূহের মধ্যে একটি রাত লাইলাতুল কদরের মুবারক রাতে রাসুলে কারীম (সাঃ)-এর কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ মহাগ্রন্থ কুরআন অবতীর্ণ করা হয়।

প্রকৃত পক্ষে রমজানের শ্রেষ্ঠত্ব, ফজিলত ও মর্যাদা, লাইলাতুল কদরের মর্যাদা ও গৌরব একমাত্র মহাগ্রন্থ আল কুরআনের কারণে। এ মহান মাসে কুরআন যদি নাজিল না হতো, তাহলে কেয়ামত পর্যন্ত মানবজাতি হেদায়াতের সঠিক পথের সন্ধান পেত না। পেত না সিরাতুম মুস্তাকিমের সন্ধান। পেত না আল্লাহ তায়ালার পরিচয় ও আল্লাহর সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক গড়ে তোলার সূত্রের সন্ধান। মানুষের দাম্পত্য জীবনের সুষ্ঠ নীতিমালা, উত্তরাধিকার আইন, মৌলিক ইবাদতের নিয়মাবলী, ক্রয়-বিক্রয়, লেনদেন, যুদ্ধ বিগ্রহ, বিচার, আইন, নৈতিক বিধান, রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবার সকল ক্ষেত্রের মৌলিক বিধান আল কুরআনে লিপিবদ্ধ রয়েছে। আল কুরআন সর্বপ্রথম পবিত্র রমজানুল মুবারক লাইলাতুল কদরে অবতীর্ণের পর মহানবী (সাঃ)-এর উপর মক্কী জিন্দেগীর ১৩ ও মাদানী জিন্দেগীর ১০ বছর মোট ২২ বছর ৫ মাস ১৪ দিনে সর্বশ্রেষ্ঠ ঐশী গ্রন্থ পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ হয়। মানুষের জীবন সমস্যার এমন কোন দিক ও বিভাগ নেই যার সুষ্ঠু ও সুস্পষ্ট সমাধান আল কুরআনে উপস্থাপিত হয়নি। পবিত্র কুরআনই মানব জীবনের একমাত্র জীবনের পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। ধর্ম বিজ্ঞান, সমাজ বিজ্ঞান, নীতি বিজ্ঞান, সৌর বিজ্ঞান, দর্শন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সকল দিকের বিবরণ মানুষের জীবনের সকল বর্ণনা বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন একমাত্র শাশ্বত মহাগ্রন্থ আল কুরআনে নিহিত রয়েছে।

রমজান শব্দের অর্থ জ্বালিয়ে দেয়া, পুড়িয়ে দেয়া। মূলত মহান আল্লাহর মহাব্বতে সিয়াম ব্রতের মাধ্যমে জীবনের সকল অন্যায় আচরণ, পাশবিক প্রবৃত্তি, আল্লাহর নাফরমানী, হিংসা, বিদ্বেষ, ক্রোধ, পাশবিক প্রবণতাকে জ্বালিয়ে, পুড়িয়ে, আত্মসংযম,আত্মনিয়ন্ত্রণ ও মানবিক বৃত্তির বিকাশ ও উন্মেষ সাধনই তাকওয়া। মূলত ইহসান ও তাজকিরার পবিত্র বিশুদ্ধ স্তরে উপনিত হওয়াই সিয়ামের মহান শিক্ষা। মহান রাব্বুল আলামীন বলেন, 'রমজান মাস হচ্ছে এমন মাস, যে মাসে কুরআন নাজিন করা হয়েছে। আল কুরআন হচ্ছে মানব মণ্ডলীর জীবন পথের দিশা ও সুস্পষ্ট প্রামাণ্য, হিদায়াত, হক ও বাতিলের পার্থক্য নির্ণয়কারী মানদ-। তোমাদের মধ্যে যে এ মাসটি পাবে, সে যেন অবশ্যই সিয়াম পালন করে। আর যে অসুস্থ অথবা সফররত থাকবে সে যেন পরবর্তী কোন সময় গুণে গুণে তা আদায় করে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজতর করতে চান, তিনি তোমাদের জন্য কঠিন করতে চান না। তোমারা গণনা করে পূর্ণভাবে সিয়াম আদায় করো, আর আল্লাহ তায়ালার শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত্ব প্রকাশ করো। আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে পরিপূর্ণ জীবনের হেদায়েত দিয়েছেন, যাতে করে তার কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারো।' (সূরা বাকারা: ১৮৫) উল্লেখিত আয়াতে অত্যন্ত দ্ব্যর্থহীন ভাষায় রমজানুল মোবারকে কুরআনে কারীম অবতীর্ণের মাধ্যমে পরিপূর্ণ জীবনের হেদায়েত প্রদানের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও জীবনের সকল ক্ষেত্রে কুরআনের প্রদত্ত জীবন বিধান বাস্তবায়নের মাধ্যমে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব মহত্ত্ব ও সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করত: আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের তাগিদ করা হয়েছে। কুরআনে প্রতিটি সুরায় ও আয়াতে আল্লাহ প্রদত্ত পরিপূর্ণ জীবন বিধানের সুস্পষ্ট প্রমাণ ও যুক্তি রয়েছে।

মহামহিম রাব্বুল আলামিনের প্রদত্ত নিঁখুত নির্ভুল জ্ঞান ও পরিপূর্ণ জীবন পদ্ধতির একমাত্র উৎস কুরআন নাজিলের শুকরিয়া আদায় ও কুরআনের জীবন বিধান জিন্দেগীর সকল স্তরে অনুশীলন, অনুকরণ ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই রমজানে সিয়াম সাধনাকে ফরয করা হয়েছে। রমজানুল মুবারকে নাজিলকৃত মহাগ্রন্থ আল কুরআন মানব জাতির জন্য আল্লাহ প্রদত্ত সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত। আল্লাহর রহমতের চিরন্তন সর্বজনীন উৎস কুরআন নাজিলের শুকরিয়া আদায়ের লক্ষ্যেই সিয়াম ফরজ করা হয়েছে। আর সিয়ামের মাধ্যমে তাকওয়ার গুণাবলী অর্জন এবং কুরআনের জীবন পদ্ধতির বাস্তব অনুশীলনের মাধ্যমে তাযকিয়াহর শীর্ষে উন্নীত হওয়ার জন্যই সিয়াম ফরয করা হয়েছে। তাকওয়াকে আমরা কুরআন ও সুন্নাহর অনুবাদের ক্ষেত্রে শুধু আল্লাহভীতি, পরহেজগারী ও ভয় করা অর্থেই ব্যবহার করে থাকি। আর সিয়ামকে আমরা পানাহার যৌনচার ও পাপাচার বর্জন অর্থেই ব্যবহার করে থাকি। ইসলামী শরীয়ার পরিভাষায় রোযার সংজ্ঞা হচ্ছে, 'সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, কামাচার ও পাপাচার বর্জনের নামই রোযা।' প্রকৃত পক্ষে সওম শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, বিরত থাকা, বিরত করা ও বিরত রাখা।

যে মুসলিম জনগোষ্ঠী সিয়ামের মাধ্যমে শুধু সুনির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত পানাহার, কামাচার হতে বিরত থাকে অথচ পরিপূর্ণ জীবন ধারায় আল্লাহ দ্রোহী জীবনধারা হতে বিরত থাকে না। আল্লাহদ্রোহী কুশিক্ষা, বর্বরতা, মাদকাসক্তি, ব্যভিচার, ধর্ষণ, সন্ত্রাস, খুন-খারাবী, হিংসা-বিদ্বেষ, প্রতিহিংসা, অসভ্যতা, এসিড নিক্ষেপ, পাশবিকতা, মানবাধিকার হরণের ঘৃণ্য পাপাচার হতে বিরত রাখে না, তাদের সিয়াম সাধনা নিছক আনুষ্ঠনিকতা ছাড়া আর কিছুই নয়। যে সিয়াম দ্বারা সিয়াম পালনকারী শুধু একমাস উপবাস ও দিনের বেলায় যৌনচার হতে বিরত থাকে, অথচ সমগ্র জিন্দেগীতে পাপাচারের গড্ডালিকা প্রবাহে ভাসিয়ে ভণ্ড ও বক ধার্মিক সেজে আনুষ্ঠানিকতা মেনে চলে; সালাত ও সিয়াম আদায় করে কিন্তু মিথ্যা বর্জন করে না, তাদের রাত জাগা ও উপবাস থাকা ছাড়া আল্লাহর নিকট কোন প্রতিদানই পাবে না।

আল কুরআন শুধু সিয়ামই ফরজ করেনি, একই সাংবিধানিক ভাষায় লিখিতভাবে ফরজ করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং হত্যা ও সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গঠনের লক্ষ্যে কিসাসের বিধান কায়েম করা ও আল্লাহ তায়ালার পরিপূর্ণ দীন প্রতিষ্ঠা করাকেও ফরজ করা হয়েছে। কুরআনে সিয়ামকে যেমন লিপিবদ্ধভাবে ফরজ করা হয়েছে, তেমনি সালাতকে সুনির্ধারিত সময়ে লিখিতভাবে সাংবিধানিক ভাষায় ফরয করা হয়েছে। কুরআন শরীফে অসংখ্য আয়াতে মানব জাতিকে বিশ্বজনীন কল্যাণকর জীবন আচরণের নির্দেশনা ও নিন্দনীয় কার্যাবলীকে বর্জন করার বিধান দেয়া হয়েছে। এ ধরনের মুনকার ঘোষিত সকল ব্যবস্থাপনা হতে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রকে বিরত হওয়া, বিরত করা ও বিরত থাকার নামই সিয়াম সাধনা। শুধু উপহাস-ব্রত পালনের নামই সিয়ামণ্ডসাধনা নয়। মানবতার জন্য অকল্যাণকর সকল ক্রিয়াকাণ্ড ও আচরণ থেকে বিরত থাকা, বিরত করা, ও বিরত রাখার নাম সিয়াম বা রোজা। রোজা হচ্ছে ইসলামের তৃতীয় রোকন বা স্তম্ভ। শব্দটি আরবী শব্দ সাওম থেকে প্রথম ফার্সী ভাষায় এবং পরে ফার্সী থেকে অপরিবর্তিতভাবে বাংলা ভাষায় এসেছে। মূল আরবী শব্দ সাওমের অর্থ হচ্ছে সংযম, বিরত থাকা বা উপবাস যাপন। আর পরিভাষা হিসেবে এর অর্থ হছে, সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও যৌন সংসর্গ থেকে বিরত থাকা। সাওম বা রোযা শুধু মুসলমানদের উপরই নয়, পূর্ববর্তী জাতিসমূহের উপরও আল্লাহ তায়ালা রোযা ফরজ করে দিয়েছেন।

সওমের তাৎপর্য :

কুরআন অবতীর্ণের মাস রমজানুল মুবারকে আল কুরআনের আদেশ নিষেধ জীবনের সকল ক্ষেত্রে মেনে পানাহার, ব্যভিচার, কামাচার, পাপাচার তথা মহান আল্লাহ তায়ালার মর্জির বিপরীত সকল নিষিদ্ধ কর্ম হতে ব্যক্তি জীবনে বিরত থাকা। নিজের পরিবারের সকল সদস্যকে আল্লাহর তরফ হতে অবতীর্ণ আল কুরআন ও আল কুরআনের জীবন বিধানের পরিপূর্ণ প্রতিষ্ঠাতা কুরআনের জীবন্ত প্রতীক রাসুল (সাঃ) কর্তৃক নিন্দনীয় ও বর্জনীয় সকল ক্রিয়াকাণ্ড থেকে বিরত রাখা। আর মুসলিম বৃহত্তম জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত সমাজ ও রাষ্ট্রকে আল্লাহ ও রাসুল কর্তৃক অশ্লীল ও নিষিদ্ধ সকল কর্মতৎপরতা মানব রচিত আইন ও অপসংস্কৃতি হতে বিরত করার লক্ষ্যে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। মহান রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন, 'হে ইমানদারগণ ! তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরয করা হয়েছিল। যেন তোমরা মুত্তাকি হতে পারো। আর তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করতে পারো; কেননা তিনি তোমাদের হেদায়েত দান করেছেন, যেন তোমরা আল্লাহর শোকর আদায় করতে পারো।(সূরা বাকারা: ১৮৩ ও ১৮৫ )

লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে যে, উপরোক্ত আয়াত দ্বারা আল্লাহ তায়ালা সিয়াম পালনের নির্দেশ দানের সঙ্গে সঙ্গে সিয়ামের উদ্দেশ্য বলে দিয়েছেন। উদ্দেশ্য হচ্ছে তিনটি। ক. মুত্তাকি হওয়া, খ. হেদায়েত প্রদানের জন্য আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা, গ. তার শোকর আদায় করা। উদ্দেশ্য তিনটির মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে মুত্তাকি হওয়া। মুত্তাকি বলতে কি বুঝায়? মুত্তাকী শব্দিটি এসেছে আরবী তাকওয়া থেকে এবং যে ব্যক্তি তাকওয়া অবলম্বন করে তিনি হচ্ছেন মুত্তাকী। তাকওয়া শব্দের অর্থ হচ্ছে সংযম ও আল্লাহভীতি এবং মুত্তাকী শব্দের অর্থ হচ্ছ সংযমী, পুণ্যবান ও আল্লাহভীরু। সিয়াম বা রোজা পালনের দ্বারা মানুষ যদি সংযমী ও খোদাভীরু হতে পারে, তাহলেই সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব। কেননা একজন সংযমী বা আল্লাহভীরু ব্যক্তির দ্বারা সমাজে কোন অন্যায় বা জুলুম হতে পারে না। যেহেতু আল্লাহভীরু ব্যক্তি সর্বদাই আল্লাহর নিকট পরকালে জওয়াব দেওয়ার ভয়ে ভীত থাকে। তার মনে সর্বদাই এ ভয় বিরাজ করবে যে, তিনি যদি অন্যায় করেন দুনিয়াতে রেহাই পেয়েও যান, পরকালে তিনি নিস্তার পাবেন না। সেখানে তাকে শাস্তি পেতেই হবে। আল্লাহর কাছে এই জবাবদিহী ও পরকালে শাস্তির ভয়ই মানুষকে যাবতীয় অন্যায় থেকে বিরত রাখবে। মানুষ যদি এভাবে সংযমী হয়, কেউ কোন অন্যায় অত্যাচার না করে,কারো অধিকার হরণ না করে, কারো ইজ্জত আবরুর উপর হামলা না করে, কাউকে বে আইনিভাবে হত্যা না করে। যার যার অধিকার তাকে যথাযথভাবে প্রদান করে, তাহলেই সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে। রোজার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন করে মুত্তাকী হলেই শুধু এরূপ সংযমী হওয়া সম্ভব। আবার রোজা পালন করতে হয় বছরে এক মাস এবং তা রমজান মাসে, কুরআন নাজিলের মাসে। আল কুরআন হচ্ছে, মানুষের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত শ্রেষ্ঠ নিয়ামত। এ কুরআনের মাধ্যমেই আল্লাহতায়ালা মানুষকে হেদায়েত তথা পার্থিব জীবনের জন্য সঠিক ও কল্যাণকর পথ প্রদর্শন করেছেন। কুরআনে রয়েছে মানব জীবনের সকল ক্ষেত্র যথা তার ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, বিয়ে-তালাক, উত্তরাধিকারিত্ব, উপার্জন ও ব্যয় ব্যবসা-বাণিজ্য, রাষ্ট্র পরিচালনা, বিচার ও প্রশাসন, এক কথায় জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যত কাজ মানুষকে করতে হয় তার প্রতিটির জন্য সর্বোত্তম পথের দিশা।

আল্লাহ তায়ালার প্রদর্শিত পথ সর্বোত্তম কেনো? কারণ, তিনি সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী, কুশলী ও সর্বোপেক্ষা ক্ষমতাবান। তিনি হচ্ছেন অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যত সম্পর্কে সম্যক অবগত। (চলবে)

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়