বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৩ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

আল আকসার ইতিহাস
মুফতি মুহাঃ আবু বকর বিন ফারুক

আল আকসা মুসলমানদের নিকট তৃতীয় পবিত্রতম স্থান। মুসলমানদের প্রথম কিবলা। রাসূল (সাঃ)-এর মেরাজের রজনীতে মসজিদুল আকসায় অবস্থান। সমস্ত নবী - রাসূলদের ইমাম হয়ে ইমামতি করার স্হান। বিভিন্ন নবী-রাসূলদের স্মৃতি বিজড়িত স্থান।

পৃথিবীর সর্বপ্রথম মসজিদ মসজিদুল হারাম । দ্বিতীয় মসজিদ আল আকসা। এই দুই মসজিদের মধ্যে ৪০ বছরের ব্যবধান রয়েছে। হযরত আদম (আঃ) সর্বপ্রথম এই মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেন মর্মে ও মত রয়েছে। যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন নবী-রাসূল, সাহাবী ও ইসলামের বীরগন এ মসজিদ নির্মাণ করেন।তম্মধ্যে ইয়াকুব (আঃ) এর নাম ও রয়েছে।

হযরত ইব্রাহীম (আঃ) সিরিয়া হিজরত করেন এবং কাবাঘর নির্মাণের ৪০ বছর পর এই মসজিদ নির্মাণ করেন। ইয়াকুব (আঃ) ও এ মসজিদ পুনঃনির্মাণ করেন।

আবু জর গিফারি (রাঃ) বলেন, ‘আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! সর্বপ্রথম কোন মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি বললেন, মসজিদুল হারাম। বললাম, অতঃপর কোনটি? বললেন, মসজিদুল আকসা। বললাম, এ দুইয়ের নির্মাণের মাঝখানে কত পার্থক্য? বললেন, ৪০ বছর।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৪২৫)

হযরত দাউদ আলাইহিস সাল্লাম এ মসজিদ নির্মাণ শুরু করেন।অতঃপর হযরত সুলাইমান (আঃ) এই মসজিদের কাজ সমাপ্ত করেন। তিনি জীনদের দ্বারা এ মসজিদের কাজ করান। এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে- তিনি লাঠি ভর দিয়ে দাঁড়ানো অবস্থায় জীনদের আদেশ করে মসজিদ নির্মাণ করেন। একদিন দাঁড়ানো অবস্থায় তাঁর মৃত্যু এসে যায় এবং তিনি সে অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকেন সুলাইমান (আঃ) দাঁড়ানো অবস্থায় লাঠিতে ভর দেয়া থাকেন। জীনরা মনে করেন সুলাইমান (আঃ) দাঁড়ানো আছেন। এজন্য তারা দ্রুতগতিতে মসজিদুল আকসা নির্মাণ শেষ করেন। অবশেষে সুলাইমান (আঃ)এর লাঠিতে ওই ফোকা ধরে লাঠি ভেঙ্গে যায়। সুলাইমান (আঃ) ও পড়ে যায়। জীনরা বুঝতে পারে সুলাইমান (আঃ) এর ইন্তেকাল হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে কুরআনে বর্ণিত হয়েছে - ‘অতঃপর যখন আমি (আল্লাহ) সুলায়মানের মৃত্যু ঘটালাম, তখন তার মৃত্যুর খবর জিনদের কেউ জানায়নি ঘুণপোকা ছাড়া—যারা সুলায়মানের লাঠি খেয়ে যাচ্ছিল। অতঃপর যখন সে মাটিতে পড়ে গেল, তখন জিনরা বুঝতে পারল যে, যদি তারা অদৃশ্যের জ্ঞান রাখত, তাহলে তারা (বায়তুল মুকাদ্দাস নির্মাণের) লাঞ্ছনাকর শাস্তির মধ্যে আবদ্ধ থাকত না।’ (সুরা সাবা, আয়াত : ১৪)

মহান আল্লাহ হযরত দাউদ (আঃ)-এর নিকট এ মর্মে অহী প্রেরণ করলেন যে, হে দাউদ! আমার খলীল হযরত ইব্রাহীম যখন পুত্র কুরবানীর নির্দেশকে মান্য করে বিরাট ধৈর্যের পরিচয় দেন তখন আমি তাঁর সাথে ওয়াদা করেছি যে, হে আমার খলীল! আমি আপনার বংশীয় লোকের সংখ্যা আকাশের অসংখ্য তারকারাজির ন্যায় বৃদ্ধি করে দিব। আর আমি একথাও শপথ করে বলেছি যে, আমি তাদেরকে এমন কঠিন বিপদে নিপতিত করবো যদ্বরুন তাদের জনসংখ্যা কমে যাবে। তাহলো এই যে, আমি কোন সময় তাদেরকে লাগাতর তিন বছর পর্যন্ত দুর্ভিক্ষের মধ্যে নিপতিত করবো, কোন সময় লাগাতার তিনমাস পর্যন্ত তাদের উপর তাদের শত্রু পক্ষকে প্রাধান্য ও প্রতিপত্তি প্রদান করবো এবং কোন সময় তিনদিন পর্যন্ত মহামারিতে লিপ্ত করবো। হযরত দাউদ (আঃ) আল্লাহ পাকের সংবাদ সম্পর্কে তাঁর বংশের লোকজনকে অবহিত করলেন। মুকাবিলা করা আমাদের পক্ষে তারা বললো, দুর্ভিক্ষ ও শত্রুদলের সম্ভব নয়। সুতরাং মহামারির শিকার হওয়ার বিষয়টিই আমাদের জন্য অবধারিত। অতঃপর হযরত দাউদ (আঃ) তাদেরকে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের আদেশ দিলেন। সুতরাং তারা গোসল করতঃ কাফন পরিধান করলো। বর্ণিত আছে যে, একদিন ও একরাতে তাদের মধ্য হতে তেত্রিশ হাজার লোক মৃত্যুবরণ করে । দ্বিতীয় দিন হযরত দাউদ (আঃ) মহান আল্লাহর দরবারে খুবই কান্নাকাটি করে বলতে লাগলেন, হে মাবুদ! বনু ইসরাঈল বহু অপরাধ ও গুনাহের কাজ করেছে। আর আমার অপরাধ হলো বনু ইসরাঈলের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় আমি কেন আশ্চর্যান্বিত ও গর্বিত হলাম। যাহোক আল্লাহ পাকের প্রিয় নবীর মিনতি ও ক্রন্দনে মহান আল্লাহ তাদের থেকে মহামারি উঠায়ে নিলেন। শোকরিয়া স্বরূপ হযরত দাউদ (আঃ) ইবাদতের জন্য সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণের আদেশ দিলেন। এ উদ্দেশ্যে সকলের সাথে হযরত দাউদ (আঃ) নিজেও পীঠে করে মসজিদ নির্মাণের কাজে পাথর বহন করতেন। এ সময় মহান আল্লাহ হযরত দাউদ (আঃ) এর নিকট অহী পাঠালেন যে, এ মসজিদ ঘরটি বাইতুল মুকাদ্দাস হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করবে, যার নির্মাণ কাজ আপনার পুত্র হযরত সুলায়মান (আঃ)-এর দ্বারা পরিপূর্ণ হবে। হযরত দাউদ (আঃ)-এর ইন্তেকালের পর তদীয় পুত্র হযরত সুলায়মান (জগৎবিখ্যাত বাদশাহ) আলাইহিচ্ছালাম উক্ত মসজিদ নির্মাণ কাজে হাত দিলেন। জ্বিনেরা পাহাড় হতে পাথর কেটে ছেটে ও মূল্যবান মনি মুক্তা সংগ্রহ করে দিতেন। হযরত সুলায়মান (আঃ) যখন বাইতুল মুকাদ্দাস নির্মাণ কাজ হতে অবসর হলেন, মহান আল্লাহ তাঁর জন্য দু'টি বৃক্ষ উৎপন্ন করে দিলেন যার একটি হতে স্বর্ণ বের হতো এবং অন্যটি হতে রৌপ্য উৎপাদিত হতো। প্রত্যহ তিনি দু'শত রিতল স্বর্ণ ও দু'শত রিতল রৌপ্য লাভ করতেন। (এক রিতলের পরিমাণ ৪০ তোলা) ঐ স্বর্ণ ও রৌপ্য মসজিদে আকসার মেঝ (ফ্লোর) তৈরীর কাজে ব্যবহার করা হতো। (নুযহাতুল মাজালিস ২/১১৮পৃঃ)

বায়তুল আকসার ফজীলত : জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামণ্ডকে বলতে শুনেছেন, যখন কুরাইশরা আমাকে অস্বীকার করল, তখন আমি কা‘বার হিজর অংশে দাঁড়ালাম। আল্লাহ্ তা‘আলা তখন আমার সামনে বায়তুল মুকাদ্দাসকে তুলে ধরলেন, যার কারণে আমি দেখে দেখে বাইতুল মুকাদ্দাসের নিদর্শনগুলো তাদের কাছে ব্যক্ত করছিলাম। সহীহ বুখারী:খণ্ড ৫, বই ৫৮ ,হাদিস নংঃ ২২৬

একজন লোক ঘরে নামাজ পড়লে একটি নেকি পান, তিনি ওয়াক্তিয়া মসজিদে পড়লে ২৫ গুণ, জুমা মসজিদে পড়লে ৫০০ গুণ, মসজিদে আকসায় পড়লে ৫০ হাজার গুণ, আমার মসজিদে অর্থাৎ মসজিদে নববীতে পড়লে ৫০ হাজার গুণ এবং মসজিদুল হারাম বা কাবার ঘরে পড়লে এক লাখ গুণ সওয়াব পাবেন। (ইবনে মাজা, মিশকাত)

হযরত মাকহুল (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, যে নামাযের উদ্দেশ্যে বায়তুল মুকাদ্দাসে প্রবেশ করবে এবং তথায় পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামায আদায় করবে সে তার মায়ের উদর হতে ভূমিষ্ঠ হওয়ার দিন যেরূপ নিস্পাপ ছিল। তদ্রুপ সে কৃত যাবতীয় গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি মহব্বতের সাথে বাইতুল মুকাদ্দাস যিয়ারত করবে জান্নাতে সকল নবী আলাইহিমুচ্ছালাম তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করবেন। হযরত কা'ব আল্-আহবার (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি বাইতুল মুকাদ্দাসে মৃত্যুবরণ করবে সে কাল কিয়ামতে তেজদ্বীপ্ত বিজলীর ন্যায় পুলসিরাত পার হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তিনি আরো বলেছেন, মহান আল্লাহর একটি দরজা আছে যা প্রথম আসমান হতে বাইতুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত মুক্ত। সেখান দিয়ে দৈনিক সত্তর হাজার ফেরেশতা অবতীর্ণ হন যারা ঐ সব বান্দার জন্য মহান আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করেন যারা বাইতুল মুকাদ্দাস যিয়ারতে আসে এবং তথায় নামায আদায় করে।হযরত রাসূল পাক বলেন, যে ব্যক্তি সওয়াবের আশায় বাইতুল মুকাদ্দাস যিয়ারত করবে মহান আল্লাহ তাকে এক হাজার শহীদের সওয়াব দান করবেন। আল্লামা মুকাতিল বলেন, যে ব্যক্তি তাঁর ভাইকে বলবে, চল আমরা বাইতুল মুকাদ্দাস যিয়ারতে যাই আল্লাহ পাক উভয়ের গুনাহসমূহ মাফ করে দিবেন। হযরত কা'ব আল আহবার (রাঃ) বলেন, বাইতুল মুকাদ্দাসে এক দিনের অবস্থান হাজার মাসের ন্যায়, এক মাস অবস্থান হাজার বছর অবস্থানের ন্যায় এবং এক বছর অবস্থান দু'হাজার বছর অবস্থান করার ন্যায় মর্যাদা ও সওয়াব লাভ হয়। একটি সৎকাজ সমান এবং একহাজার সৎকাজের মর্যাদার একটি অন্যায় কাজ এক হাজার অন্যায় কাজের গুনাহের সমান। যে ব্যক্তি বাইতুল মুকাদ্দাসে মৃত্যুবরণ করল সে যেন আসমানে মৃত্যুবরণ করল, আর যে ব্যক্তি বাইতুল মুকাদ্দাসের আশে পাশে থেকে মৃত্যু বরণ করল সে যেন বাইতুল মুকাদ্দাসে মৃত্যুবরণ করল। হযরত আতা খোরাসানী (রহঃ) বলেন, বাইতুল মুকাদ্দাসের সখরা গম্বুজের গম্বুজের শীর্ষদেশে স্বর্ণ নির্মিত একটি হরিণ আছে যার উভয় চক্ষে মহামূল্যবান জওহার (মনি মুক্তা) খচিত এবং রাতের বেলায় উহার আলোতে বাল্কা সিরিয়ার মহিলাগণ সূতা কাটে। সুবহানাল্লাহ

বায়তুল মুকাদ্দাসের চতুর্দিকের বরকত সমূহ : আল্লাহ পাকের বাণী- “আমি বাইতুল মুকাদ্দাসের চতুর্দিক বরকত মণ্ডিত করেছি- অর্থাৎ উহার চারপাশ নদ-নদী ও রকমারি বৃক্ষ দ্বারা সমৃদ্ধ ও সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছি। কেহ বলেন, বাইতুল মুকাদ্দাসের চতুর্দিক মুবারক করেছি যেহেতু সেখানে নবী ও রাসূলগণের মাঝারগুলো বিদ্যমান, অহী অবতীর্ণের স্থল এবং আখেরী নবী হযরত রাসূল পাক এর আবির্ভাবের পূর্বে উহা ছিল সমস্ত নবী-রাসূলগণের কেবলা। এছাড়া পরকালে বাইতুল মুকাদ্দাসকে কেন্দ্র করে ইহা সমস্ত মখলুকের হাশরের ময়দান হবে। আল্লামা ওহাব (রহঃ) বলেন, আল্লাহ পাক সখরায়ে বাইতুল মুকাদ্দাসের প্রতি এ মর্মে অহী প্রেরণ করেন, কিয়ামতের দিন তোমার উপর আমার আরশ স্থাপন করবো, তোমার নিকটে আমার সকল সৃষ্টি জীব একত্রিত করবো এবং আমার জান্নাত ও জাহান্নাম তোমার মধ্যে নিহিত। পরকালে আমি তোমার নদী-নালা গুলো দুধ, মধু ও শরাব দ্বারা পূর্ণ করে প্রবাহিত করবো। সৌভাগ্য ও সুসংবাদ ঐ সব লোকের জন্য যারা তোমার যিয়ারত করেছে। জনৈক আলেম বলেন, মহান আল্লাহ বাইতুল মুকাদ্দাসের পাথরকে পরকালে শ্বেত মারজান পাথরে রূপান্তরিত করবেন যার বিস্তৃত হবে সপ্তাকাশের প্রস্থ পরিমাণ। মহান আল্লাহ তাঁর আরশ ও মীযান উহার উপর স্থাপন করবেন। বাইতুল মুকাদ্দাসের ঐ পবিত্র সখরা (পাথরটি) জান্নাতের একটি খেজুর বৃক্ষের উপর প্রতিষ্ঠিত। আর ঐ বৃক্ষটি জান্নাতের নদী- সমূহের মধ্য হতে একটি নদীর উপর প্রতিষ্ঠিত। সেই নদীর পাশে বসে বিবি আছিয়া বিনতে মুজাহিম ও বিবি মরিয়ম বিনতে ইমরান জান্নাতবাসীদের জন্য অলংকারাদি সূতায় গ্রথিত করতেছেন যা কিয়ামত পর্যন্ত চলবে।

হযরত ওমর শায়বানী (রাঃ) হতে বর্ণিত, যতক্ষণ পর্যন্ত বাইতুল মুকাদ্দাসে সাতটি দেয়াল নির্মাণ করা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে না। উক্ত সাতটি দেয়াল হলো যথাক্রমে স্বর্ণ, রৌপ্য, ইয়াকুত, যমরদ, মুক্তা, নূর ও মেঘের। তিনি বলেন, সুসংবাদ ঐ ব্যক্তির জন্য যে তোমার মধ্যে চেহারা রেখে সেজদা করেছে তথা নামায আদায় করেছে।

বর্ণিত আছে, হযরত সুলায়মান (আঃ) বাইতুল মুকাদ্দাসে একখানি ঘর নির্মাণ করেন এবং উহার দেয়াল চুনামাটি দ্বারা প্রলেপ দিয়ে সুসজ্জিত করেন। যখন কোন নেককার লোক ঐ ঘরে প্রবেশ করতেন তখন তার শরীরের ছায়া ঐ দেয়ালে শ্বেত বর্ণের দেখা যেতো। পক্ষান্তরে কোন গুনাহগার লোক তথায় প্রবেশ করলে দেয়ালে তাঁর শরীরের ছায়া কৃষ্ণবর্ণের দেখা যেতো। ফলে, বহু বদকার লোক ঐ ভয়ে নেককার হয়ে যায়।

আল্লামা ওহাব (রহঃ) বলেন, বাইতুল মুকাদ্দাসের বাবে শামীর নিকট মর্মর তথা একটি মসৃন শ্বেত পাথর রয়েছে। উহা মূলতঃ জান্নাতের একটি দরজার উপর অবস্থিত। উহাতে বসে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়ে যায়। উক্ত দরজা বাবুল জান্নাত নামে পরিচিত।

হযরত আতিয়া ইবনে কায়স (রাঃ) হতে বর্ণিত, হযরত রাসূল মকবুল বলেন, অবশ্যই আমার উম্মতের এক ব্যক্তি জীবিতাবস্থায় পদব্ৰজে জান্নাতে প্রবেশ করবে। হযরত ওমর (রাঃ) এর খেলাফতের সময় তমীম গোত্রের জনৈক ব্যক্তি তাঁর সাথীদের নিয়ে বাইতুল মুকাদ্দাস আগমন করে। অতঃপর সে পানি পান করার জন্য একটি কূপে বালতি নিক্ষেপ করে। ঘটনা ক্রমে বালতি রশি ছিড়ে কূপে পড়ে যায়। লোকটি বালতির জন্য কূপে অবতরণ করল। সেখানে সে দেখতে পায় যে, একটি দরজা বেহেশতের দিকে খোলা । লোকটি ঐ দরজা দিয়ে বেহেশতে প্রবেশ করে এবং বেহেশতের একটি বৃক্ষের একটি পাতা ছিড়ে হাতে লয়। অতঃপর সে উহা পরে কূপের দিকে বের হয়ে আসে কিন্তু সে ওখানে কোন দরজা দেখতে পায়নি। লোকজন হযরত ওমর (রাঃ) কে এ ঘটনা অবহিত করল। তখন হযরত উমর (রাঃ) তাদেরকে উক্ত হাদীছ সম্পর্কে অবহিত করেন। অতঃপর তিনি বললেন, তোমরা ঐ পাতার দিকে লক্ষ্য কর। যদি উহা পরিবর্তন হয়ে যায় বুঝতে হবে যে, উহা বেহেশতী বৃক্ষের পাতা নয়। তখন তারা দেখতে পায় যে, উহা পরিবর্তন হয়নি। বর্তমানে ঐ কুপটি বাবুল ওরাকা নামে পরিচিত। এ সব ফজীলত ব্যতীত বাইতুল মুকাদ্দাসের সবচাইতে বড় ফজীলত হলো বিশ্বনবী হযরত রাসূল মকবুল এর সেখান হতে আসমানের দিকে গমন করা।

বাইতুল মুকাদ্দাসের সখার ইতিহাস : অর্থাৎ ইমাম আবু বকর ইবনুল আরাবী মুয়াত্তায়ে মালেক নামক হাদীছ গ্রন্থের ব্যাখ্যায় বলেন, মহান আল্লাহর বিস্ময়কর বস্তু সমূহের মধ্যে বাইতুল মুকাদ্দাসের সখরা (পাথর) হলো বস্তু। অন্যতম বিস্ময়কর সখরা হলো মসজিদে আকসার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত একটি ঝুলন্ত পাথর যা সব দিক হতে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন, যে মহান আল্লাহ আসমানকে ধারণ করে আছেন, তাঁর অনুমতি ব্যতীত উহা যমীনে পড়তে পারেনা সেই মহান স্বত্ত্বা উক্ত সখরাকে শূন্যে ঝুলন্ত অবস্থায় ধারণ করে আছেন- মাটিতে পড়ছেনা। বুরাকে আরোহণ কালে হযরত রাসূল মকবুল (সা:) এর কদম মুবারক ছিল উক্ত সখরার উপরিভাগের দক্ষিণ পার্শ্বে। এ সময় বিশ্বনবীর ভয়ে ভীত হয়ে সখরার ঐ পাশ ঝুঁকে পড়ে। সখরার উপরস্থ অন্য দিকের (উত্তর পার্শ্বের) উপর ছিল ফেরেশতাদের অংগুলি যা সুখরাকে ঝুঁকে পড়া থেকে হেফাজত করে। সখরার নীচে রয়েছে বিরাট গর্ত বা শূন্যতা যদ্ধরুন সখরা সর্ব দিক হতে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। অর্থাৎ সখরা হলো সর্বদিক হতে মুক্ত তথা আসমান ও যমীনের মধ্যবর্তী স্থানে ঝুলন্ত অবস্থায় বিদ্যমান। আমি উহার (সখরার) ভয়ে উহার নীচে প্রবেশ করা হতে বিরত রইলাম, না জানি আমার গুনাহ সমূহের কারণে আমার উপর ধসে পড়ে।

ইবনুল আরাবী বলেন, বুরাকে আরোহণ কালে, সখরার উপর হযরত রাসূল মকবুল এর কদম মুবারকের পদচিহ্ন পড়ে যায় এবং ঐ সময় সখরার রাখেন। এক পাশ ঝুঁকে পড়ায় ফেরেশতাগণ উহাকে বহাল রাখেন।

মি’রাজ সম্পর্কে হাফেজ নাসির উদ্দীন দামেশকী অনুরূপ আলোচনা করতে গিয়ে তার কৃত কিতাব মিরাজুল মুসাজ্জায় বলেন, অতঃপর তিনি বাইতুল মুকাদ্দাসের সখরার নিকট আগমন করেন এবং উহার পূর্ব দিক দিয়ে উহার উপর আরোহণ করেন। এমতাবস্থায় তাঁর কদম মুবারকের তলদেশ কেঁপে উঠে এবং বিনম্র হয়ে যায়। এ দেখে ফেরেশতাগণ উহাকে কম্পন ও ঝুঁকে পড়া থেকে রক্ষা করেন। (সীরতে হলবিয়া ১/৪১১ পৃঃ)

৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে ইয়ারমুক যুদ্ধে ওমর (রাঃ)-এর শাসনামলে বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয় করে মুসলমানরা।

১০৯৯ সালের ১৫ জুলাই খ্রিষ্টান সেনাপতি গডফ্রে ডিবো ইউনের নেতৃত্বে খ্রিষ্টান ক্রুসেডাররা ফিলিস্তিন দখল করে এবং মসজিদুল আকসার ব্যাপক পরিবর্তন করে।

১১৮৭ সালে হিত্তিনের সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবি জেরুজালেম শহর মুসলমানদের অধিকারে নিয়ে আসেন এবং আল-আকসা মসজিদের পুনর্র্নিমাণ করেন।

১৯৪৮ সালের ১৫ মে ফিলিস্তিনে ইসরাইল নামক অবৈধ রাষ্ট্রের জন্ম হয়। ১৯৬৭ সালের জুন মাসে মাত্র ছয় দিনের যুদ্ধে ইরাক, মিসর, সিরিয়া ও জর্ডান পরিজিত করে ইসরাইল পূর্ব আল কুদস, পশ্চিম তীর, গাজা ও গোলান মালভূমি দখল করে নেয়। ১৯৬৯ সালে তারা একবার আল-আকসা মসজিদে অগ্নিসংযোগও করেছিল। বর্তমানে আল আকসা মসজিদ ইহুদীরা দখল করে রেখেছে।

উইকিপিডিয়ার তথ্যানুযায়ী মসজিদ আল আকসার স্হাপত্য, গম্বুজ ও মিনারের তথ্য নি¤েœ তুলে ধরা হলো- স্থাপত্য : আয়াতাকার আল-আকসা মসজিদ ও এর পরিপার্শ্ব মিলিয়ে আকার ১,৪৪,০০০ বর্গমিটার (১৫,৫০,০০০ ফু২), তবে শুধু মসজিদের আকার প্রায় ৩৫,০০০ বর্গমিটার (৩,৮০,০০০ ফু২) এবং ৫,০০০ মুসল্লি ধারণ করতে পারে। মসজিদ ৮৩ মি (২৭২ ফু) দীর্ঘ, ৫৬ মি (১৮৪ ফু) প্রশস্ত সম্মুখবর্তী কুব্বাত আস সাখরায় ধ্রুপদি বাইজেন্টাইন স্থাপত্য দেখা গেলেও মসজিদুল আকসায় প্রথম দিককার ইসলামি স্থাপত্য দেখা যায়।

গম্বুজ : আবদুল মালিকের নির্মিত গম্বুজ বর্তমানে নেই। বর্তমান গম্বুজটি আজ-জাহির নির্মাণ করেছিলেন এবং এটি সীসার এনামেলওয়ার্ক আচ্ছাদিত কাঠ দ্বারা নির্মিত। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে কংক্রিটে গম্বুজ পুনর্গঠিত হয় এবং সীসার এনামেলওয়ার্কের পরিবর্তে এনোডাইজড অ্যালুমিনিয়াম দ্বারা আচ্ছাদিত হয়। ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে আজ-জাহিরের সময়কারমূল নকশা ফিরিয়ে আনার জন্য এলুমিনিয়ামের কভারের বদলে পুনরায় সীসা স্থাপন করা হয়।

উমাইয়া ও আব্বাসীয় আমলে মিহরাবের সম্মুখে নির্মিত গম্বুজগুলোর মধ্যে টিকে রয়েছে এমন কয়েকটি গম্বুজের মধ্যে আল-আকসার গম্বুজ অন্যতম। অন্যগুলো হল দামেস্কের উমাইয়া মসজিদ (৭১৫) এবং সুসার জামে মসজিদ (৮৫০)। গম্বুজের ভেতরে ১৪শ শতাব্দীর অলংকরণ রয়েছে। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের অগ্নিকাণ্ডের সময় এসকল অলংকরণ চিরতরে হারিয়ে গেছে বলে ধারণা করা হয়েছিল কিন্তু ট্রাটেজিও প্রক্রিয়ায় তা ফিরিয়ে আনা হয়।

মিনার : ১২৭৮ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত আল-ফাখারিয়া মিনার আল-আকসা মসজিদের চারটি মিনারের মধ্যে প্রথম নির্মিত হয়।

দক্ষিণ, উত্তর ও পশ্চিম পাশে মোট চারটি মিনার রয়েছে। প্রথম মিনারটি আল-ফাখারিয়া মিনার নামে পরিচিত যা ১২৭৮ খ্রিষ্টাব্দে দক্ষিণপশ্চিম অংশে নির্মিত হয়। মামলুক সুলতান লাজিন এটি নির্মাণের আদেশ দিয়েছিলেন। এটি নির্মাণের তত্ত্বাবধায়ক আল-দিন আবদুর রহমানের বাবা ফখরউদ্দিন আল-খলিলির নামে নামকরণ করা হয়েছে। প্রথাগত সিরিয়ান শৈলীতে এটি নির্মিত হয়। এর ভিত্তি ও উলম্ব অংশ বর্গাকার এবং এটি তিনতলা বিশিষ্ট। মুয়াজ্জিনের বারান্দা দুই লাইন বিশিষ্ট মুকারনাস দ্বারা অলঙ্কৃত করা হয়েছে। কুলুংগি ঘিরে রয়েছে একটি বর্গাকার অংশ যা একটি সিসা আচ্ছাদিত পাথরের গম্বুজে শেষ হয়।

পরিশেষে বলব, মসজিদ আল আকসা মুসলমানদের পূর্ণ্যভূমি। এ পূর্ণ্যভূমি রক্ষাকরা ঈমানদের কর্তব্য। ইনশা আল্লাহ! শত সহস্র প্রতিকুলতার পরেও ইকদিন আল আকসা মুসলমানদের অধীনেই হবে।

লেখক : মুফতি মুহা.আবু বকর বিন ফারুক, ইমাম, বিষ্ণুপুর মনোহরখাদী মদিনা বাজার বাইতুল আমিন জামে মসজিদ, চাঁদপুর সদর, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়