রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২১, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক

ইসলামি বর্ষপঞ্জিতে যে চারটি মাস সম্মানিত তার মধ্যে মহররম অন্যতম। মহরমের ১০ তারিখ মুসলিমদের নিকট আশুরা হিসেবে খুব প্রশিদ্ধ ও পরিচিত। ‘আশুরা’ শব্দটি আরবি ‘আশারা’ থেকে নির্গত যার অর্থ দশ বা দশম। ইসলামিক স্কলারদের মতে আশুরা বা ১০ই মহররম দিনটি মুসলিমদের জন্যে ঐতিহাসিকভাবে নানা কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। হাদিসে বর্ণিত আছে হুজুর (সাঃ) এ দিনে মদিনার পথ ধরে হাটতেছিলেন পথিমধ্যে একদল ইয়াহুদিকে রোজা অবস্থায় দেখতে পেলেন। তিনি এর কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন যে, এ দিনে ফেরআউনের কবল থেকে মূসা (আঃ) মুক্তি পায়; তাই তার সম্মানার্থে রোজা রাখছি। হুজুর (সাঃ) বললেন, এ ক্ষেত্রে মূসা (আঃ) এর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের বেশি অধিকার আমাদেরই। এরপর থেকে তিনি এদিনে রোজা রাখেন এবং সকলকে উৎসাহিত করেন। (বুখারি : ৭০৪)। অন্য এক হাদিস থেকে জানা যায়, যেহেতু ইয়াহুদিরা একটি রোজা রেখেছে আমরা আগে বা পরে মিলিয়ে দুটি রোজা রাখবো। এরপর থেকে দুটি রোজা রাখার প্রচলন শুরু হয়।

হুজুর আকারাম (সাঃ) ঘোষণাও করেছেন, এদিনের রোজার দ্বারা একজন মুসলিম তার পূর্ববর্তী একবছরের গুনাহের কাফ্ফারা করতে পারবে। (মুসলিম : ৮১৮) হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ বলেন, আমি আল্লাহর রাসূলকে আশুরার দিনের মতো গুরুত্ব ও মর্যাদা দিয়ে অন্য কোনো দিনে রোজা রাখতে দেখিনি। (মুসলিম : ১১৩২)

আবু কাতাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহর নিকট আমার আশা হলো- এ আশুরার রোজার বিনিময়ে তিনি বিগত এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। (মুসলিম : ১১৬৩)

আশুরার তাৎপর্যের প্রতি তাকালে গ্রহণযোগ্য বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, এদিনে পৃথিবী সৃষ্টি হয় এবং এদিনেই পৃথিবী ধ্বংস হবে, নবী আদম (আঃ) তাওবা কবুল হয় এদিনে, হযরত নূহ (আঃ) এদিনে জূদী পর্বতে অবতরণ করেন, হযরত ইসা (আঃ) এদিনে জন্মগ্রহণ করেন, হযরত আইয়ুব (আঃ) এদিনে সুস্থতা লাভ করেন, হযরত ইউনূস (আঃ) এ দিনেই মাছের পেট থেকে মুক্তি লাভ করেন, হযরত ইউসুফ (আঃ) দীর্ঘ ৪০ বছর পর বাবা ভাইদের সাথে এদিনেই মিলিত হন, হযরত ইবরাহিম (আঃ) এদিনেই নমরুদের অগ্নিকা- থেকে মুক্তি লাভ করেন এবং এদিনেই হযরত ঈসা (আঃ)কে আল্লাহতায়ালা তাঁর সান্নিধ্যে নিয়ে যান।

১০ই মহররমে আরেকটি ঐতিহাসিক ট্রাজেডিরও সত্যতা রয়েছে, যা মুসলিম মিল্লাতে কারবালার ট্রাজেডি নামে পরিচিত। ইতিহাসে বর্ণিত আছে যে, হুজুর (সাঃ)-এর মৃত্যুর প্রায় ৫০ বৎসর পর ৬১ হিজরিতে ১০ই মহররমে চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রাঃ) ও নবিকন্যা হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর পুত্র হযরত হুসাইন (রাঃ) ফুরাত তীরের কারবালা প্রান্তরে নির্মম ও নির্দয়ভাবে এজিদ বাহিনীর হাতে শহিদ হন। ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, যদিও এজিদের উদ্যেশ্য ছিলো হুসাইনকে বধ করা নয় বরং একটি বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এড়াতে তাকে রোধ করা। কিন্তু এজিদের চাটুকার ও তোষামদী সৈন্য সীমারের উচ্চপদ লোভে পরোচিত হয়ে উবাইদুল্লাহ ইবনে জিয়াদ নবিদৌহিত্র হোসাইন (রাঃ)কে শহিদ করে। যা কিয়ামত তক শাসক ও ক্ষমতার মসনদীদেরকে অন্যায় ও অপব্যহারের, চাটুকারিতা ও তোষামদীর পরিণাম ও পরিণতির শিক্ষার্জনের সুযোগ করে দেয়।

কাকতালীয়ভাবে এদিনে কারবালার ঘটনা ঘটলেও ১০ই মহররম বা আশুরার দিন কেবল শোক ও মাতমের দিন হিসেবে তাৎপর্যময় নয়। তাই এদিনে মুসলিম মিল্লাতের উচিত আল্লাহর অলৌকিক কুদরতকে স্মরণ করে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা পোষণ করা ও রাসূল (সাঃ)-এর পরিবারের প্রতি ইসালে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে সাদাকাখায়রাত করে মহব্বত প্রদর্শন করা।

লেখক : খতিব, রেলওয়ে কাঁচা কলোনী জামে মসজিদ, চাঁদপুর।

লেখক ও সম্পাদক, আল ফাতাহ পাবলিকেশন্স, ঢাকা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়