বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

প্রিয় নবির (সাঃ) আগমনে খুশি উদযাপন
মুফতি মাওলানা মোঃ জাফর আলী

আমরা কোন বিশেষ সুযোগ অথবা নেয়ামত লাভ করলে মহা খুশি হই। খুশির আতিশয্যে নিজেদের পরিচিতজনের কাছে বিষয়টি গর্বের সাথে আলোচনা করি। আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদেরকে দাওয়াত দিয়ে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করি। এমনকি খুশি হয়ে অনেক সম্পদ ব্যয় করতেও কুণ্ঠাবোধ করি না।

প্রিয় আকা ও মাওলা রাসূলে কারীম (সাঃ)-এর আগমনে খুশি উদযাপন করা মুমিনের হৃদয়ে আনন্দের জোয়ার বয়ে আনে। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) হিসেবে রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে উদযাপন হয়। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এ দিনে পৃথিবীতে আগমন করেছেন। মুমিনগণ স্বেচ্ছায় প্রিয় নবির (সাঃ) আগমনের দিনে খুশি ও আনন্দ উৎসব করে থাকে। এ ব্যাপারে কিছু লোক বিরূপ মন্তব্য করে নিজেদের অসুস্থ মানসিকতার পরিচয় দেয়। অত্র নিবন্ধে বিষয়টির মূল হাকিকত উপস্থাপনের চেষ্টা করবো।

রাসূল (সাঃ) জগদ্বাসীর জন্য রহমত : রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল। তিনি আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে সমগ্র জাহানের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরিত হয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, (হে নবী!) আমি আপনাকে সমগ্র পৃথিবীবাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি। (সূরা আম্বিয়া, আয়াত: ১০৭) অত্র আয়াতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে রহমত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

আল্লাহ তা‘আলা প্রিয় নবি (সাঃ) কে প্রেরণের মাধ্যমে মুমিনদের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ করেছেন। তাঁর মাধ্যমে কুফর ও শিরক থেকে মানুষকে মুক্তি দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের উপর বড়ই অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদেরই মধ্য থেকে একজন মহান রাসূল প্রেরণ করেছেন। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৫১)

অপর একটি আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তিনিই (আল্লাহ) যিনি উম্মিদের মধ্য থেকে একজন মহান রাসূল প্রেরণ করেছেন। যিনি তাদের নিকট পাঠ করেন তাঁর আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং শিক্ষা দেন কিতাব ও হেকমত। ইতিপূর্বে তারা ছিল ঘোর পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত। (সূরা জুমুআ, আয়াত: ২) প্রতীয়মান হলো যে, নবী করীম (সাঃ)-এর মাধ্যমে মানুষ সঠিক পথের দিশা লাভ করেছে। আর এটা আল্লাহ তা‘আলার বিরাট অনুগ্রহ যে, তিনি সঠিক পথের সন্ধান দিয়ে তাঁর আযাব ও গজব থেকে বাঁচার সুযোগ তৈরি করেছেন।

রাসূল (সাঃ) উম্মতের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু : মুমিনদের জন্য সর্বাধিক কল্যাণকামী ও দয়ালু হিসেবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে আল্লাহ তা‘আলা প্রেরণ করেছেন। তিনি মুমিনদের সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায় সবচেয়ে বেশি চিন্তাশীল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট তোমাদের মধ্য থেকে একজন মহান রাসূল আগমন করেছেন। তোমাদের দুঃখ কষ্ট তাঁর কাছে দুঃসহ। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, দয়াময়। (সূরা তাওবা, আয়াত: ১২৮)

উপর্যুক্ত আয়াতগুলোতে রাসূলে কারীম (সাঃ) কে আমাদের জন্য রহমত, নেয়ামত, মঙ্গলকামী ও স্নেহশীল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

অনুগ্রহ পেয়ে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা : রহমত ও অনুগ্রহ পাওয়ার পর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন, কুরআনুল কারিমে ঘোষিত হয়েছে, (হে নবী!) বলুন, (এসব কিছু) আল্লাহর দয়া ও রহমতের কারণে হয়েছে। সুতরাং তাদের উচিত (এর কারণে) যেন খুশি উদযাপন করে। এটি তারা যা অর্জন করেছে (জমা করেছে) তার চেয়ে অনেক উত্তম। (সূরা ইউনুস, আয়াত: ৫৮)

এ কথা অকপটে স্বীকার করতে হবে যে, রাসূলে কারিম (সাঃ) আমাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার সবচেয়ে বড় রহমত। তাঁকে নবি হিসেবে পাওয়ার পর আমাদের দায়িত্ব হলো, খুশি উদযাপন করা। এছাড়া তাঁর ব্যাপারে অন্যদের মাঝে আলোচনা করার মাধ্যমে আল্লাহর নেয়ামত প্রচার করাও আমাদের কর্তব্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তোমাদের উপর অবতীর্ণ আল্লাহর নেয়ামতের আলোচনা কর। যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে তখন তিনিই তোমাদের অন্তরে মহব্বত ও ভালোবাসা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। অতঃপর তোমরা তাঁর প্রদত্ত নেয়ামতের বদৌলতে পরস্পর ভাই হয়ে গিয়েছ। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০৩)

অপর এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, আপনার প্রভু যে সকল নেয়ামত দান করেছেন সেগুলো আলোচনা করুন। (সূরা দোহা, আয়াত: ১১)

সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সাঃ)কে নেয়ামতস্বরূপ পাওয়ার পর তাঁর ব্যাপারে আলোচনা করা একান্ত কর্তব্য। তাঁর পবিত্র জীবনী ও পুতঃপবিত্র চরিত্র সম্পর্কে সবাইকে অবগত করানো আমাদের অন্যতম দায়িত্ব।

নেয়ামত প্রকাশ করা : আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ পেয়ে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা মুমিনের অন্যতম কর্তব্য। অপরদিকে নেয়ামত গোপন রাখা অকৃতজ্ঞতার শামিল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, আল্লাহর অনুগ্রহের আলোচনা করা কৃতজ্ঞতা এবং এর আলোচনা না করা অকৃতজ্ঞতা। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ন. ১৮৪৪৯)

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যেহেতু আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় নেয়ামত, তাই তাঁর আগমন উপলক্ষে আলোচনা ও সংশ্লিষ্ট কাজ করার মাধ্যমে নেয়ামতের শোকরিয়া আদায় করা উচিত।

রাসূল (সাঃ) নিজেই বিলাদাত দিবস উদযাপন করেছেন : রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজেই নিজের বিলাদাতের শোকরিয়া আদায় করেছেন। যেমন, হাদীস শরীফে এসেছে, আবু কাতাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে সোমবার রোজা রাখার কারণ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলো। উত্তরে তিনি ইরশাদ করলেন, এ দিন আমার মিলাদ তথা জন্ম তারিখ এবং এ দিন আমার প্রতি ওহী অবতীর্ণ হয়। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ন. ১১৬১)

রাসূল (সাঃ) বকরি জবেহ করে নিজেই নিজের মিলাদ উদযাপন করেছেন। যেমন, হাদীস শরীফে হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী করিম (সাঃ) নবুওয়াত প্রকাশের পর নিজেই নিজের আকিকা করেছেন। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, খ. ৪, পৃ. ৩২৯, হাদীস ন. ৭৯৬০; আস-সুনানুল কুবরা, খ. ৯, পৃ. ৩০০)

অত্র হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম সুয়ুতী (রহ.) বলেন, রাসূল (সাঃ)-এর দাদা আবদুল মুত্তালিব তাঁর শুভাগমনের সপ্তম দিনে তাঁর আকিকা করেন। আকিকা দু‘বার হয় না। সুতরাং রাসূল (সাঃ) কর্তৃক বকরি জবেহ করাটা তাঁর বিলাদাতের খুশি প্রকাশ করা, আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে সমগ্র পৃথিবীবাসীর জন্য রহমত হিসেবে প্রেরণ করা এবং উম্মতের মর্যাদার কারণের উদ্দেশ্যে ছিল, যেভাবে তিনি নিজের উপর দুরুদ পাঠ করতেন। এমনিভাবে আমাদের উপর মুস্তাহাব হলো, আমরাও তাঁর বিলাদাতের দিন খুশি উদযাপন করি; আত্মীয়-স্বজন একত্র করে পানাহার করাই এবং অন্যান্য নেক কাজের মাধ্যমে খুশি প্রকাশ করি। (আল-হাভী লিল-ফাতাওয়া, খ. ১, পৃ. ১৯৬; হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, পৃ. ২৩৭)

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যেহেতু নিজেই বিলাদাত দিবস পালন করেছেন, সুতরাং আমাদের জন্য এটা পালন করা অবশ্যই বরকতের কাজ।

নবীজির বিলাদাতে খুশি উদযাপনের কারণে বিধর্মীর প্রতি অনুগ্রহ : রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর আগমনের কারণে খুশি উদযাপন করার দ্বারা মুমিনগণ যেভাবে নেয়ামত লাভ করে, তেমনিভাবে কাফির-মুশরিকগণও অনুগ্রহ লাভ করে থাকে। তার জ্বলন্ত প্রমাণ হলো, ইসলাম ও মুসলমানের প্রকাশ্য শত্রু কাট্টা কাফির আবু লাহাব। যেমন, আবু লাহাব মারা যাওয়ার পর তার পরিবারের একজন তাকে স্বপ্নে দেখল যে, সে ভীষণ কষ্টের মধ্যে নিপতিত আছে। তাকে জিজ্ঞাসা করল, তোমার সাথে কীরূপ ব্যবহার করা হয়েছে? আবু লাহাব বলল, যখন থেকে তোমাদের দূরে চলে এসেছি তখন থেকেই ভীষণ কষ্টে আছি। কিন্তু দাসী সুয়াইবাকে আযাদ করার কারণে কিছু পানি পান করতে পারছি। (সহীহ বুখারী, হাদীস ন. ৪৭৩৪)

আবদুল হক মোহাদ্দেসে দেহলভী (রহ.) বলেন, এ হাদীসটি মিলাদুন্নবী উদযাপন উপলক্ষে খুশি প্রকাশকারী ও মাল সাদকাকারীদের জন্য বড় দলিল। যে আবু লাহাবের বিরুদ্ধে কুরআনে সূরা নাযিল হয়েছে, সে যখন রাসূল (সাঃ)-এর বিলাদাতের খুশিতে দাসী আযাদ করার কারণে আযাবে কিছুটা হ্রাস পেতে পারে, তবে ঐসব মুসলমানের স্থান কত বড় হবে যাদের অন্তর রাসূলের ভালোবাসায় পূর্ণ এবং তারা মিলাদ উপলক্ষে খুশি উদযাপন করে এবং মাল খরচ করে। তবে এসব খুশি উদযাপনে এমন বিদআত যা অজ্ঞ লোকেরা করে থাকে যেমন, নাচ, গান, বাদ্য-বাজনা ইত্যাদি নিষিদ্ধ কাজ থেকে মুক্ত হওয়া আবশ্যক। কেননা এর দ্বারা মিলাদের বরকত থেকে মানুষ বঞ্চিত হয়ে যায়। (মাদারিজুন নবুওয়াত, খ. ২, পৃ. ১৯)

বিভিন্ন মনীষীর দৃষ্টিতে মিলাদুন্নবী (সাঃ) উদযাপন : প্রিয় নবি (সাঃ)-এর আগমনের কারণে খুশি উদযাপন করা মুক্তির উপায় হতে পারে। ওলামায়ে কেরামের মতে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বিলাদাতে আনন্দ উদযাপন করার কারণে জান্নাত লাভের আশা করা যেতে পারে। যেমন, ইমামুল কুবরা হাফিয শামসুদ্দিন ইবনে জযরী (রহ.) বলেন, কাফির আবু লাহাব যার বিরুদ্ধে কুরআন নাযিল হয়েছে, নবির মিলাদের রাতে আনন্দিত হওয়ার কারণে যদি আযাব হালকা করে দেওয়া হয়। তবে ঐ মুসলমান যে রাসূলের (সাঃ) প্রিয়ভাজন সে যদি মিলাদে খুশি উদযাপন করে সে কতটুকু বিনিময় পাবে? খোদার শপথ, আমার মতে পরম করুণাময় আল্লাহ এমন মুসলমানকে স্বীয় মাহবুব (সাঃ)-এর মিলাদে খুশি উদযাপনের কারণে জান্নাতুন নাঈম দান করবেন। (হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, পৃ. ২৩৭-২৩৮; আল-হাভী লিল-ফাতাওয়া, খ. ১, পৃ. ১৯৬)

ইমাম শামসুদ্দিন সাখাবী (রহ.) বলেন, মিলাদুন্নবী প্রথম তিন যুগ পরে সৎ উদ্দেশ্যে আরম্ভ হয়েছে এবং এর উদযাপন কেবল বিশুদ্ধ ও একনিষ্ঠ নিয়তের উপর ভিত্তি করেই হয়ে আসছে। অতঃপর সর্বদা পৃথিবীর সকল দেশে সব মুসলমান কর্তৃক বড় বড় শহরে রাসূল (সাঃ)-এর বিলাদাতের মাসে মাহফিল মিলাদ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এ উপলক্ষে যিয়াফত ও গরিব মিসকিনদেরকে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। এখনো মিলাদের রাতে বিভিন্নভাবে দান খয়রাত, সাদাকা এবং খুশি উদযাপন করে আর বেশি বেশি ভালো কাজ করে। এমনকি মিলাদুন্নবীর মাস ঘনিয়ে আসলে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে মিলাদুন্নবী পালনের ব্যবস্থা করে থাকে। ফলে ঐ পবিত্র মাসের বরকত আল্লাহ তাআলার এক বিরাট রহমত ও ইহসান হিসেবে তাদের উপর প্রকাশিত হয়। এটি পরীক্ষিত সত্য। যেমন হযরত শামসুদ্দিন ইবনে জযরী (রহ.) বর্ণনা করেন যে, মিলাদুন্নবীর পুরো বছর পরিপূর্ণভাবে আমান ও নিরাপত্তা বিদ্যমান থাকে এবং আশা-আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হওয়ার সুসংবাদ দ্রুত পাওয়া যায়। (সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ, খ. ১, পৃ. ৩৬২)

রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর আগমনের দিনে খুশি উদযাপন করার পাশাপাশি তাবারুকের ব্যবস্থা করা অত্যন্ত বরকতের কাজ। এর মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার নেয়ামত এবং রাসূলে কারিম (সাঃ)-এর যিয়ারত লাভের আশা করা যেতে পারে। যেমন, শাহ আবদুর রহিম (রহ.) বলেন, আমি প্রতি বছর মিলাদুন্নবী উপলক্ষে খাবারের ব্যবস্থা করতাম। কিন্তু একবছর (অর্থাভাবে) খাবারের ব্যবস্থা করতে পারিনি। তবে আমি কিছু ভুনা চনা (ছোলা) নিয়ে মিলাদুন্নবীর খুশিতে লোকের মধ্যে বণ্টন করে দিলাম। রাতে আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, রাসূল (সাঃ)-এর সামনে সেই চনা (ছোলা) বিদ্যমান এবং তিনি অত্যন্ত খুশি মনে রয়েছেন। (আদণ্ডদুররুছ ছামিন, পৃ. ৪০)

হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী (রহ.) বলেন, মওলুদ শরীফ হারামাইন শরিফাইনের (মক্কা ও মদিনা) সকল অধিবাসী করেন। এটিই আমাদের জন্য দলিল হিসেবে যথেষ্ট। রাসূল (সাঃ)-এর আলোচনা কীভাবে মন্দ হতে পারে? তবে যেসব অতিরঞ্জিত কাজ লোকেরা করেছে তা না হওয়া বাঞ্ছনীয়। (শামায়েলে এমদাদিয়া, পৃ. ৮৭-৮৮)

আবদুল হাই লক্ষেèৗভী বলেন, যে কোন কালে মুস্তাহাব পদ্ধতিতে মাহফিলে মিলাদ উদযাপন করা সাওয়াবের কাজ। পবিত্র মক্কা, পবিত্র মদিনা, বসরা, শাম, ইয়েমেন এবং অন্যান্য দেশের লোকেরাও রবিউল আউয়াল মাসের চাঁদ দেখে খুশি হয়ে মাহফিলে মিলাদ উপলক্ষে নেক কাজ করে এবং ওয়াজ-নসিহতের ব্যবস্থা করে। রবিউল আউয়াল মাস ছাড়াও অন্যান্য মাসে ঐ সব দেশে মাহফিলে মিলাদ অনুষ্ঠিত হয়। এ বিশ্বাস না রাখা উচিত যে, মাহফিলে মিলাদ কেবল রবিউল আউয়াল মাসেই করলে সাওয়াব পাওয়া যায় অন্য মাসে করলে সাওয়াব পাওয়া যাবে না (বরং সর্বদা সাওয়াব পাওয়া যাবে)। (ফাতাওয়ায়ে আবদুল হাই, খ. ২, পৃ. ২৮৩)

বর্তমানেও আরব বিশ্বসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর আগমন উপলক্ষে খুশি উদযাপনের লক্ষে নানা কর্মসূচী গ্রহণ করছে। তন্মধ্যে রয়েছে আলোচনা, জশনে জুলুছ (আনন্দ র‌্যালি), মিলাদ, দোয়া ও তাবারুকের ব্যবস্থা। বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করার নির্দেশনা জারি করেছে।

বাংলাদেশ সরকার রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর বিলাদাতের দিবসটির মর্যাদার প্রতি খেয়াল করে রাষ্ট্রীয় ছুটি ঘোষণার পাশাপাশি তাৎপর্যপূর্ণভাবে উদযাপনের মহতি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ কারণে আমরা সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তা‘আলা আমাদেরকে প্রিয় নবি (সাঃ)-এর আগমন উপলক্ষে মহব্বতের সাথে খুশি উদযাপন করা ও নফল ইবাদত (রোযা, মিলাদণ্ডকিয়াম, দান-সাদাকা, গরিব-মিসকিনকে খাবার খাওয়ানো) পালনের মাধ্যমে ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তি লাভের তাওফিক দান করুন। আমীন, বিহুরমাতি সায়্যিদিল মুরসালীন।

লেখক : প্রভাষক (আরবি), রামপুর আদর্শ আলিম মাদরাসা, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়