প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৩, ০০:০০
পবিত্র মাহে রমজানের পরবর্তী ও আরবি বছরের ১০ম মাস শাওয়াল। মাহে রমজানে একটি মাস সিয়াম সাধনা করার পর শাওয়াল মাস উপস্থিত হয়। পবিত্র ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখার মাধ্যমে শাওয়াল মাস শুরু। শাওয়ালের প্রথম তারিখেই ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়। মাহে রমজানে শয়তান বন্দি থাকার পরও শাওয়াল মাস আসার সাথে সাথে শয়তান মুক্ত হয়ে যায়। কবরবাসীদের মধ্যে যাদেরকে মাফ করা না হয়, তাদের কবরে আজাব শুরু হয়ে যায়। রমজানে মানুষরা সিয়াম সাধনা করে। দিনে রোজা, পাঁচ ওয়াক্ত নামা, তারাবি, সাদকাতুল ফিতর, লাইলাতুল কদর, কোরআন তেলাওয়াত, দান সদকা, তাসবি তাহলিল, লাইলাতুল কদর তালাশে এতেকাফ সহ নানা রকম আমল করে থাকে। রমজানের পূর্বে যারা নামাজ পড়ে না, রমজান আসলে তারাও মসজিদে নামাজ আদায় করতে আসে। কিন্তু শাওয়াল মাস আসার সাথে সাথে অনেক মুসল্লিদেরকেই মসজিদে দেখা যায়না। মুসল্লিদের সংখ্যা কমে যায়। নামাজীদের সংখ্যা কমে যায়। দ্বীনদারীত্বের সংখ্যা কমে যায়। তখন মানুষরা ঈদের আনন্দে নিজেদের গা ভাসিয়ে দেয়। ছোট বড় অধিকাংশ মানুষই নানা রকম গুনার কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। এতে করে দ্বীন ধর্মের ক্ষেত্রে তারা অনেক দূরে সরে যায়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে না। অনেকে জুমাও পড়ে না। যা সত্যি অতীব দুঃখের বিষয়।
এজন্য আমাদের প্রয়োজন! রমজান আমাদেরকে যে শিক্ষা দিয়েছে, সে শিক্ষা কাজে লাগানো। তাকওয়া অর্জনের শিক্ষা আমাদের মধ্যে প্রবেশ করানো। রমজানের একটি মাস এমনভাবে নেক আমল করা। যাতে রমজানের পরও আমাদের আমল চলতেই থাকে।
রমজানের আমল কে আমাদের মধ্যে চালু রাখতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে ছয়টি রোজার আদেশ করেছেন। যাতে করে রমজানের পরও আমরা দিন ধর্মের সাথেই জীবনকে পরিচালিত করতে পারি।
রমজানের রোজা রাখার পর আমরা যেন এমনটি মনে না করি। আমাদের প্রতি আর কোন ইবাদত নেই, নামাজ রোজা নেই। বরং সূরা ইনশিরাতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নবী (সা:)কে বলে দিলেন। যখনই অবসর পান তখনই আল্লাহর ইবাদতে রত হোন। আপনার প্রতিপালকের প্রতি মনোনিবেশ করুন। এ বিষয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আদেশ করলেন। যে আদেশ হচ্ছে ফরজ ইবাদতের পর নফল ইবাদতের।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআন মাজিদে বলেন-অতএব আপনি যখনই অবসর পান তখনই কঠোর ইবাদাতে রত হোন। আর আপরার প্রতিপালকের প্রতিই মনোনিবেশ কর (৯৪ সূরা ইনশিরা, আয়াত: ৭-৮)।
শাওয়ালের ছয় রোজার গুরুত্ব অপরিসীম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক হাদীসের মধ্যে বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল অতঃপর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখল আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর আমলনামায় পুরো বছর রোজা রাখার সওয়াব লিখে দেন। সুবহানাল্লাহ।
প্রতিটি নেক আমলের সওয়াব আল্লাহ তায়ালা কমপক্ষে ১০ গুণ করে দিয়ে থাকেন।
পবিত্র কুরআনুল কারীমে এসেছে, কেউ সৎকাজ করলে, সে তার দশগুণ (প্রতিদান) পাবে এবং কেউ অসৎকাজ করলে, তাকে শুধু তার সমপরিমাণ প্রতিফলই দেওয়া হবে। আর তারা অত্যাচারিত হবে না। (সুরা-৬ আনআম, আয়াত: ১৬০)।
এ আয়াতে আলোকেই বলা যায় রমজানের রোজা ও শাওয়ালের ৬ রোজা ১০ গুণ হিসেবে পুরো বছর রোজা রাখার ছাওয়াব হয়।
আবু আইয়ুব (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদিসে এসেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল এরপর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখল সে যেন গোটা বছর রোজা রাখল।’ (মুসলিম: ১১৬৪; আবুদাউদ: ২৪৩৩; তিরমিজি, নাসায়ি, ইবনে মাজাহ।
এ হাদিসটি সহীহ হাদিস
উবাইদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন একদিন রাসুল সা: কে জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ আমি কি সারা বছর রোজা রাখতে পারব? তখন রাসুল সা: বললেন,“ তোমার উপর তোমার পরিবারের হক রয়েছে কাজেই তুমি সারাবছর রোজা না রেখে রমজানের ফরজ রেযা রাখ এবং রমজানেরর পরবর্তী মাস শাওয়ালের ছয় রোযা রাখ, তাহলেই তুমি সারা বছর রোযা রাখার সওয়াব পাবে। তিরমিযি শরিফ : ১ম খন্ড, ১৫৭ পৃঃ
পরিশেষে বলব, মাহে রমজানের একটি মাস সিয়াম সাধনার পর শাওয়ালের ছয়টি রোজা রেখে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা অনুযায়ী পুরো বছর রোজা সওয়াব হাসিল করা একান্তই উচিত। এতে করে রমজানের পরও নিজের আমল জারি থাকবে।
শাওয়ালের রোজা ঈদের দিন ব্যাতীত একসাথে ৬ টি রোজা রাখা যাবে। তবে উত্তম হলো একটি রোজা রেখে কয়েকদিন বাদ দিয়ে আবার আরেকটি রোজা রাখা। যাতে করে শাওয়ালের পুরো মাস জুড়ে ৬ টি রোজা রাখা হয়।
লেখক : ইমাম ও খতিব, বিষ্ণুপুর মদিনা বাজার বাইতুল আমিন জামে মসজিদ, চাঁদপুর সদর, চাঁদপুর।