প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২৩, ০০:০০
“হে ঈমানদার বান্দাগণ! তোমাদের উপর রমজানের রোযা ফরয করা (অপরিহার্য) করা হয়েছে, যেমনি ভাবে ফরয ছিলো তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর যাতে করে তোমরা তাকওয়ার গুণ অর্জন করতে পারো”। (সূরা বাকারা-১৮৩)
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালার ঘোষণা থেকে বুঝা যায় যুগে যুগে যে সকল আসমানি কিতাব অবতীর্ণ হয়েছিল, সেসব নবী এবং তার অনুসারীদের উপর ও রোযা ফরয ছিলো। যাতে করে মানুষ তাকওয়াবান তথা আল্লাহর আদেশ নিষেধ পালন করতে শিখে। হাদীস শরীফে রয়েছে রাসূল (সাঃ) বলেন “আল্লাহর নিকট (নফল সিয়ামের মধ্যে) সর্বোৎকৃষ্ট রোযা হচ্ছে- হযরত দাউদ (আ:) এর রোযা। তিনি একদিন রোযা পালন করতেন, আর একদিন রোযা ভঙ্গ করতেন (মুসলিমণ্ড১১৫৯)।
অন্য হাদীসে পাওয়া যায় রাসূল (সা:) এক ব্যক্তিকে ৩ দিন রোযা রাখার উপদেশ দিলে সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমি এর চেয়েও বেশী রোযা পালনে সক্ষম, জবাবে রাসূল (সা:) বললেন, তাহলে একদিন পরপর রোযা পালন কর। আমার নবুয়তি ভাই হযরত দাউদ (আঃ) এভাবে রোযা পালন করতেন (বোখারী ও মুসলিম)।
অতীতের বহুজাতিই রোযা পালন করতেন পারস্য রোমান, হিন্দু গ্রীক ব্যাবিলনীয় ও প্রাচীন মিশরীয়রা রোযা পালন করেছেন।
৪র্থ খ্রিস্টাব্দে খৃস্টানদের উপর মারাত্মক বিপদ নেমে আসে। এ বিপদ থেকে মুক্তির জন্য তারা ৪০ দিন ব্যাপী রোযা পালন করেছেন। প্রাচীন রোমান গীর্জা দিনে একবেলা আহারের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আংশিক রোযা পালন করতেন।
প্রাচীন হিব্রুগণ বিপদ মসিবতের সময় রোযা রেখেছেন। গ্রীক দর্শন তত্ত্বে বছরে একাধারে কয়েকদিন রোযা রাখার প্রমাণ পাওয়া যায়। ৪০ দিন রোযা পালন করেছেন দার্শনিক পিথাগোথ। তার মতে রোযা মানুষের চিন্তা ও বিশ্লেষণ শক্তিকে আরো শানিত করে। বিজ্ঞানী সক্রেটিস ও আফলাতুন বছরে ১০ দিন রোযা রাখতেন।
হিন্দু-বৌদ্ধ-তারকা পূজারীগণ নির্দিষ্ট সময়ে উপবাস সাধনের মাধ্যমে তা পালন করতেন। তারা কিছু খাবার পরিহার করে আত্মাকে শুদ্ধ ও পরিচ্ছন্ন করার চেষ্টা করছেন। দেহকে দুর্বল করার মাধ্যমে আত্মার বিকাশ ঘটে- এই ধারনাই ছিল তাদের উপবাস পালনে।
ইসলাম ধর্মে সুবহে সাদেক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাওয়া-দাওয়াত, যৌন চাহিদা থেকে বিরত থেকে আল্লার সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টার নামই হচ্ছে সিয়াম বা রোযা। এর সামাজিক, শারীরিক ও মানবিক গুরুত্ব খুবই তাৎপর্য বহন করে। রোযার মাধ্যমে পেটের যাবতীয় অসুখ এবং ডায়াবেটিস সহ বহু শারীরিক রোগের চিকিৎসা ও আরোগ্য লাভ করা যায়। রমজান তওবার মাস খাঁটিভাবে তাওবার মাধ্যমে সামাজিক অপরাধ থেকে বিরত থাকা যায়। রোযার উপবাসের মাধ্যমে পিপাসায় কাতর হয়ে অভাবী ও অনাথ মানুষের প্রতি সহানুভূতি ও মমত্ববোধ বৃদ্ধি পায়।
শরীর স্বাস্থ্য ঠিক রাখা এবং দৈনন্দিন জীবন সুন্দর ও সুস্থ্য রাখার জন্য জাপানের বিজ্ঞানী ইউশিনোরী ওমলোমী আবিষ্কার করেছেন “অটোফেজি’ বা আত্বভক্ষণ। যে আবিষ্কারের জন্য তিনি ২০১৬ সালে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন।
গ্রীক শব্দ অটোও ফাইজেন। অর্থাৎ নিজকে খাইয়ে ফেলা। শরীরের আভ্যন্তরিন অংশ পরিষ্কার করা। (eat self) নিজকে খেয়ে ফেলা। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের দেহে ৩৭.২ ট্রিলিয়ন সেল থাকে। মানুষের আহার্য ৩০% প্রোটিন শরীর হতে বের হওয়া কিংবা দেহে সংশ্লেষ হতে পারে না। ফলে এরা রোগ-জীবানু সৃষ্টি করে। কিন্তু রোযা বা সিয়াম জীবদেহের অতিরিক্ত প্রোটিন বা ত্রুটিপূর্ণ সেল গুলোকে ধ্বংস করে।
দেহকে সুরক্ষা করে অটোফেজি দেহের আবর্জনা দেহেই পরিষ্কার করে, শরীরকে কার্যকর করে, দুর্বল অঙ্গগুলোকে সতেজ রাখে। ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এবং যৌবন শক্তি ধরে রাখে। তাই অটোফেজি বা আত্মভক্ষণ শুধু রোযার মাধ্যমেই সম্ভব। কেননা রোযায় ১৩-১৭ ঘন্টা পর্যন্ত উপবাস থাকতে হয়। গ্রিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক ডাঃ হিপোক্রেটিস বলেছেন সবচেয়ে ভালো ঔষধ হলো-‘উপবাস’।
তাই আসুন সিয়াম ভীতি নয়, সিয়াম প্রীতির মাধ্যমে আমরা দুনিয়াও আখিরাতের কল্যাণ অর্জন করি। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন। আমিন!