প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২৩, ০০:০০
তারাবীহের নামায রামাযান সম্পৃক্ত একটি মহা-বরকতপূর্ণ ইবাদত। নবী কারীম (সাঃ) এই তারাবীহর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই নবী (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানদারির সাথে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জন এবং সওয়াব লাভের আশায় রামাযানের কিয়াম (তারাবীহ আদায়) করবে; এতে তার বিগত জীবনের পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (আস সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, খ. ২, পৃ. ৪৯১, সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
বরকতময় মাস শা’বান-এর শেষে; নবী কারীম (সাঃ) পবিত্র জুমু'আর নামাযে রামাযানের আগমন বার্তা জানিয়ে যে বক্তব্য প্রদান করেছিলেন তাতে কিয়ামুল-লাইল তথা তারাবীহর অধিক পরিমাণে গুরুত্ব সৃষ্টি হয়েছে।
হযরত আমর ইবন মূসা আস-সামী বলেন, আমার নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন কাসিম ইবন ফাযল, তিনি বলেন আমার নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন নযর ইবন শাইবান, তিনি তাঁর পিতা আবূ সালমা ইব্ন আব্দুর রহমানকে বললেন, আপনি আমার নিকট এমন একটি হাদীস বর্ণনা করুন যা আপনি আপনার পিতা থেকে শ্রবণ করেছেন এবং তাঁর পিতা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে বর্ণনা করতে শুনেছেন, তখন তিনি এই হাদীসখানা উল্লেখ করলেন, তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি। নবী (সাঃ) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা'আলা তোমাদের ওপরে রামাযানের রোযা ফরয করেছেন; আর আমি তোমাদের জন্য রোযার তারাবীহকে সুন্নাত ঘোষণা করলাম। যে ব্যক্তি ঈমানদারীর সাথে এবং সওয়াব লাভের মহান। উদ্দেশ্যে রোযা পালন করবে, এতে তার পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (আল বাহরুর যিখার, .৩, পৃ. ২৭০, হাদসি নং ৯৩৯; মুসনাদে বাযযার, খ. ১, পৃ. ১৮৯।)
সাধারণত নফল এবং সুন্নাতের কোনো জামা'আত হয় না। কিন্তু আমরা জানি যে, তারাবীহর গুরুত্ব এতই বেশি যে, সুন্নাত হওয়া সত্ত্বেও তা ফরয নামাযের মতোই জামা'আতের সাথে এর আদায় বিধিবদ্ধ হয়ে আছে। আর নবী (সাঃ) জামা'আতের আয়োজন এ কারণে করেননি, যাতে উম্মতের ওপরে ফরয হয়ে না যায়। (ফাহুল মুলহিম, খ. ২, পৃ. ৩২২)
এতে বুঝা যায়, তারাবীহর মাকাম বা মর্যাদা অনেক ঊর্ধে। যারা তারাবীহকে সাধারণ নফলের মতো মনে করেন; তারা প্ররোচনার জগতে বাস করছেন। তাদের থেকে সাবধান থাকতে হবে।
পবিত্র মক্কা আল-মুকাররামায় মসজিদে হারামে এবং মদীনা- মুনাওয়ারায় মসজিদে নববীসহ সারা বিশ্বে মোট মুসলিম নামাযির জনসংখ্যার ৮০ ভাগই ২০ রাকা'আত তারাবীহের নামায আদায় করে থাকেন। হারামাইন-শরীফাইনের উভয় মসজিদে চৌদ্দশ বছরের দীর্ঘ সময় ধরে এ আমল অব্যাহত ছিল এবং বর্তমানে অব্যাহিত আছে। বর্তমানে মসজিদে হারাম এবং মসজিদে নববী থেকে স্যাটালাইটের মাধ্যমে প্রচারিত লাইভ অনুষ্ঠানগুলোতে ২০ রাকা'আত তারাবীহের নামায পড়ার দৃশ্য সকলের চোখের সামনে বিদ্যমান।
এই ২০ রাকা'আত তারাবীহ যে “সুন্নাতে কাদীমা” (প্রাচীন সুন্নাত) এতে কোনো সন্দেহ নেই। সাহাবাযুগ থেকে লা মাযহাবী, আহলে হাদীস এবং সালাফীদের পক্ষ থেকে ইজমাবিরোধী মতের উদ্ভাবনের আগ পর্যন্ত দীর্ঘ সাড়ে বারশ বছর পর্যন্ত সকল শতাব্দীতে পৃথিবীর কোথাও বিশ রাকা'আত তারাবীহর বিরোধিতা ছিল না। সর্বপ্রথম তারাবীহর নামায আট রাকা'আত আবিষ্কার করেন শায়খ নসীব রেফায়ী। এই লোকটিই মূলত তারাবীহর রাকা'আত হরণকারী বিদ'আতী।
শাইখ নাসিরুদ্দীন আলবানী ১৩৭৭ হিজরী সনের ওই নসীব রেফায়ী এর পক্ষ নিয়ে ইমাম মালেক রহ.-এর ওপরে মিথ্যারোপ করেছিলেন যে, ইমাম মালেক রহ. বলেছেন তারাবীহের নামায আট রাকা'আত। অথচ ইমাম মালেক রহ. থেকে এমন কোন প্রমাণ কোথাও নেই; বরং মালেকী মাযহাবে আহলে মদীনার আমল অনুযায়ী তারাবীহর রাকা'আত সংখ্যা হলো বিতরসহ ৩৯ (৩৬+৩=৩৯)।
শায়খ আলবানী ‘জুরী' নামক ব্যক্তির বরাতে ওই মতটি উল্লেখ করেছেন। অথচ 'জুরী' একজন অজানা ও অপরিচিত ব্যক্তি। ইমাম মালেকের সাথে তার দূরতম সম্পর্ক নেই। (আল-মুদাউওয়ানাতুল কুবরা, খ. ১, পৃ. ১৯৩; আল-ইসতিযকার, খ. ৫, পৃ. ১৫৭)
আর তিরমিযী শরীফে বর্ণিত হযরত উবাই ইবন কা'ব (রাঃ)-এর হাদীসের রিওয়ায়েত অনুযায়ী হযরত ইসহাক রহ.-এর মতে তারাবীহ নামাযের রাকা'আত সংখ্যা হলো- ৪১।
মা আয়েশা (রাঃ)-এর হাদীস: "নবী কারীম (সাঃ) রামাযান এবং রামাযান ব্যতীত অন্য মাসে ১৩ রাকা'আতের বেশি পড়েননি।” (মুসনাদুর রবীয়, খ. ১, পৃ. ৯০)
অথবা মা আয়েশা (রাঃ)-এর অন্য হাদীস : "নবী কারীম (সাঃ) রামাযান এবং রামাযান ব্যতীত, অন্য মাসে এগার রাকা'আতের বেশি পড়েননি। (মুসনাদে আব আওয়ানাহ, খ. ২, পৃ. ২৫৩; মুসনাদুল মুয়াত্তা, খ. ১, পৃ. ১১৪)
মা আয়েশা (রাঃ)-এর অন্য হাদীসে এসেছে, “নবী কারীম (সাঃ) রামাযান এবং তার বাইরে অন্য মাসে তের রাকা'আতের বেশি পড়েননি। তন্মধ্যে দু' রাকা'আত ফজরের সুন্নাত ছিল। ” (আস সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, খ. ৩, পৃ. ৮, হাদীস নং ৪৮৬৮; মুসনাদে আবী আওয়ানাহ, খ,২ পৃ. ২৫২: ইত্তেহাফুল খাইরিল মুহরাহ, খ. ২, পৃ. ২৮৩)
মা আয়েশা (রাঃ) থেকে অপর আরেকটি হাদীস বুখারী শরীফে এসেছে, “হযরত আবূ সালমা ইব্ন আব্দির রহমান থেকে বর্ণিত। তিনি হযরত আয়েশা (রাঃ)-কে এই বলে প্রশ্ন করেছেন, রামাযানে নবী কারীম (সাঃ)-এর নামায কেমন ছিলো? মা আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) রামাযান এবং তার বাইরে (সব সময়) এগার রাকা’আতের বেশি নামায পড়েননি তিনি চার রাকা’আত পড়তেন। নামাযের সৌন্দর্য এবং দৈর্ঘ্য সম্বন্ধে প্রশ্ন করো না। অতঃপর তিনি আরও চার রাকা’আত পড়তেন; সেই নামায যে কত সুন্দর ছিল এবং কত দীর্ঘ ছিল, এ সম্বন্ধে তুমি আমার নিকট প্রশ্ন করো না। তারপর তিনি তিন রাকা’আত (বিতর নামায) আদায় করতেন। অতঃপর মা আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি বিতর নামাযের পূর্বে শুয়ে পড়েন? নবী (সাঃ) বললেন, হে আয়েশা! আমার দু চক্ষু ঘুমায় কিন্তু আমার কালব ঘুমায় না।” (সহীহ বুখারী, খ. ২, পৃ. ৫৩, হাদীস নং ১১৪৭। সহীহ বুখারী, খ. ১, পৃ. ১৫৪)
উপরোক্ত ২টি হাদীস দ্বারা যারা বেশি বাড়াবাড়ি করে বলেন যে, নবী (সাঃ) তারাবীহ ১২ রাকা’আত বা আট রাকা’আত পড়েছেন। তাদের নিকট আমাদের প্রশ্নঃ উল্লিখিত দুটি হাদীসের রেখা চিহ্নিত অংশে “নবী কারীম (সাঃ) রামাযান এবং রামাযান ব্যতীত সব সময় তিনি তের অথবা এগার রাকাআত নামায পড়তেন। রামাযান ব্যতীত বছরের অন্য কোনো মাসে। বা কোনো রাতে তো তারাবীহ নেই। তা হলে রামাযান ছাড়া এগার বা ১৩ রাকা'আতের হিসাব কীভাবে মিলাবেন? রামাযানের পরে কি কোন মাসে তারাবীহ আছে? আট রাকা'আতী এবং বার রাকা'আতীদের কাছে প্রশ্ন। বরং রামাযান এবং রামাযান ছাড়া, বসরের প্রতি রাতে রয়েছে তাহাজ্জুদের নামায। আলোচ্য হাদীস দুটির মূল বক্তব্য হলো তাহাজ্জুদ সম্পর্কে, তাহাজ্জুদ সম্পর্কে নয়। আলোচ্য দুটি হাদীসের বর্ণনানুযায়ী তিন রাকা'আত বিতর বাদ দিলে তাহাজ্জুদের রাকা'আতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১০ (দশ) এবং ৮ (আট) রাকা'আত। আর তাহাজ্জুদের নামায রামাযান এবং রামাযান ছাড়া বাকি এগার মাসের বিতর ছাড়া প্রতিটি রাতে ৮, ১০, ১২ রাকা'আত পড়ার বর্ণনা পাওয়া যায়। তা ছাড়া হাদীসের বাচনভঙ্গির প্রতি তাকালে এ কথা স্পষ্ট যে, তারাবীহ যদি সর্বমোট আট রাকা'আতই হতো, তাণ্ডহলে মা আয়েশা (রাঃ) কখনো বলতেন না, রামাযান ছাড়াও পড়তেন।
আহলে হাদীস নেতা ইমাম তাইমিয়া নিজেও আলোচ্য দুটি হাদীস সম্পর্কে ইযতিরাব (সিদ্ধান্তহীনতা)-এর কথা এভাবে উল্লেখ করেছেন : "এক দল বলেছেন, সহীহ বুখারীতে হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে এসেছে।
নবী (সাঃ) রামাযান এবং রামাযান ছাড়া অন্য মাসে তের রাকা'আতের বেশি নামায পড়েন নাই।” এই হাদীসের মূল বিষয়টি নিয়ে একটি দলের সিদ্ধান্তহীনতা আছে। কেননা এটি সহীহ হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক এ কারণে যে, খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত এবং মুসলমানদের অব্যাহত আমল ২০ রাকা আত তারাবীহ এখনো চালু আেেছ।(ফাতাওয়া ইবন তাইমিয়াহ, খ, ২৩, পৃ. ১১৩, মাজমুয়ূল ফাতাওয়া, প্রাগুক্ত;আল ফাতওয়া আল কুবরা খ. ২,পৃ:২৫০)
মা আয়েশা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত ওই হাদীসের মূল আলোচনা তো “তারাবীহ নামায' সম্পর্কে নয় এটি তাহাজ্জুদ নামায সম্পর্কে।
ইবন তাইমিয়ার বক্তব্য এই যে, “মুহাদ্দিসদের এক বিশাল দল সিন্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। কারণ ওই হাদীসের মূল বক্তব্য, উম্মতে মুসলিমার আমল এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের সর্বজন স্বীকৃত আদর্শের বিপরীত।”(ইবন তাইমিয়া, মাজমুআতুল ফাতাওয়া, খ.২৩,পৃ: ১১২) বিধায় একথাটি এটাই প্রমাণ করে যে, মা আয়েশা কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটির প্রয়োগ তাহাজ্জুদ নামাযের ক্ষেত্রে; তারাবীহর ক্ষেত্রে আদৌ প্রযোজ্য নয়।
ইমাম ইবন তাইমিয়া আরও বলেছেন, ২০ রাকা'আত তারাবীহর নামায পড়া উত্তম।
এ ছাড়া মা আয়েশা (রাঃ) নবী (সাঃ)-কে জিজ্ঞাস করেছিলেন যে, “আপনি কি বিতরের পূর্বে ঘুমান?” এর দ্বারা তাহাজ্জুদকে বোঝানো হয়েছে। কেননা, নবী (সাঃ) রামাযানে বিতরের না পরে ঘুমাতেন। না।
বিষয়টি আরও সহজভাবে বলতে গেলে সকলের জ্ঞাতার্থে বলা যায়। যে, খোদ ইমাম বুখারী র. এ হাদীসটিকে তাহাজ্জুদের অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন। (সহীহ বুখারী, খ. ১, পৃ. ১৫৪)
‘কিয়ামুল লাইল' বলতে তারাবীহ্কে বোঝানো হলে, ইমাম বুখারী রহ. এই হাদীসখানাকে তাহাজ্জুদের অধ্যায়ে উল্লেখ করে এ ভুলটি কখনো করতেন না। এ ছাড়া উল্লিখিত দুটি হাদীসের বর্ণনাকারী কেউই বলেননি যে, হাদীসের মূল বক্তব্য তারাবীহ সম্পর্কে। অতএব, এ কথা নিখুঁতভাবে সাব্যস্ত হলো যে, তারাবীহর নামায বার বা আট রাকা’আত নয় বরং ২০ রাকা’আত। ইমাম শাফেয়ী রহ. এবং ইমাম আহমদ রহ. এর অভিমতও অনূরুপ যে তারাবীহের নামায ২০ রাকা'আত। কাযী আয়ায (রাঃ) বলেছেন, বিশ রাকা'আত তারাবীহ এটি জামহুর ওলামা-ই- কিরামের মাযহাব। (তানযীমুল আশতাত খ. ১,পৃ:৪৩০.
নি¤েœ ২০ রাকা'আত তারাবীহর সপক্ষে দলিল প্রমাণাদি পেশ করা গেল :
দলিল নং-১
হযরত সায়েব ইব্ন ইয়াযীদের হাদীস:
হযরত সায়েব ইবন ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাহাবা-ই- কিরাম (রাঃ) এবং সাধারণ লোকেরা হযরত উমর (রাঃ)-এর যুগে রামাযান মাসে “বিশ রাকা'আত তারাবীহ” পড়তেন। তিনি আরও বলেন, তাঁরা নামাযের মধ্যে দশ আয়াত তিলাওয়াত করতেন। আর হযরত ওসমান (রাঃ)-এর যুগে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার কষ্টের কারণে তাঁরা (কেউ কেউ) লাঠির ওপরে ভর করে নামাযে কিয়াম করতেন। (
৩২১, বায়হাকী, আসসুনানুল কুবরা, খ. ২, পৃ. ৪৯৬, হাদীস নং ৪৩৯৩; মুসনাদে ইবনুল জা'দ, খ. ১, পৃ. ৪১৩, হাদীস নং ২৮০৫)
দলিল নং-২
হযরত সায়েব ইব্ন ইয়াযীদ (রাঃ)-এর অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে: তিনি বলেন, আমরা হযরত উমর (রাঃ)-এর যামানায় বিশ রাকা'আত তারাবীহ এবং তৎসঙ্গে বিতর নামাযও পড়তাম। (৩২২ বায়হাকী, আসসুনানুল কুবরা, খ. ১, পৃ. ২৬৭-২৬৮; নাসবুর রায়াহ, খ. ২, পৃ. ১৫৪)
উপরোক্ত সবক'টি হাদীসই প্রখ্যাত মুহাদ্দিসীন এবং ফিকহের ইমামগণের নিকট সহীহ। ইমাম নববী রহ., ইমাম তকীউদ্দীন সুবকী রহ., ইমাম বদরুদ্দীন আইনী রহ. এবং ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহ প্রমুখ হাদীস বিশারদগণ তারাবীহ সংক্রান্ত হাদীসের এ সংক্রান্ত সনদগুলোকে সহীহ বলে মন্তব্য করেছেন।” (৩২৩, আল-মাজম, খ. ৩, পৃ. ৫২৭: ওমদাতুল কারী, খ. ৭, পৃ. ১৭৮; ইরশাদুস সারী, খ. ৪, পৃ. ৫৭৮ নাসরুর বায়াহ, খ. ২, পৃ. ১৫৪)
দলিল নং-৩
হযরত হারিস (রাঃ)-এর হাদীস: “হযরত হারিছ থেকে বর্ণিত। তিনি রামাযান মাসে রাত্র বেলায় ২০ রাকা'আত তারাবীহ নামাযের ইমামতী করতেন অতঃপর তিন রাকা'আত বিতর পড়াতেন এবং রুকূর পূর্বে কুনূত পড়তেন।”।” (মুসান্নাফে ইব্ন আবী শায়বা, খ. ২, পৃ.৩৯৩)
দলিল নং-৪
হযরত ইয়াযীদ ইব্ন রুমান রহ. বলেন, "হযরত উমর (রাঃ)-এর শাসনামলে রামাযান মাসে লোকেরা (বিতরসহ)। ২৩ রাকা'আত নামায পড়তেন। ইমাম বায়হাকী রহ. বলেন, এর মধ্যে ত রাকা'আত হলো 'বিতর’।( মুয়াত্তা, খ. ১, পৃ. ১১০; সুনানে আবূ দাউদ, খ. ১, পৃ. ৬৯৯; আইনী-ওমদাতুল কারী, পৃ. ৮০৪)
দলিল নং-৫
ইমাম বায়হাকী রহ.-এর বর্ণনা: “ইমাম বায়হাকী বর্ণনা করেছেন, নিশ্চয়ই হযরত উমর (রাঃ) লোকদেরকে বিতরসহ ২৩ রাকা'আত নামাযের জন্য একত্রিত করেছিলেন। অতঃপর তারাবীহর নামায ২০ রাকা'আতে এসে স্থির হয়। ইবন আব্দুল বার রহ এই মতটির কথাই উল্লেখ করেছেন।" ( মুয়াত্তা, খ. ১, পৃ. ৩৫৫)
দলিল নং-৬
তাবেয়ী হযরত আবদুল্লাহ আযীয ইব্ন রুফাই রহ. বলেন- "হযরত উবাই ইবন কা'ব (রাঃ) রামাযান মাসে মদীনার লোকদের নিয়ে ২০ রাকা'আত তারাবীহ এবং তিন রাকা'আত বিতর পড়তেন। (মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা, খ. ২, পৃ. ২৮৫)
দলিল নং-৭
তাবেয়ী হযরত ইয়াহ-ইয়া ইব্ন আনসারী রহ. বলেন, “নিশ্চয় হযরত উমর (রাঃ) এক ব্যক্তিকে এই মর্মে আদেশ প্রদান করেন।
যে, তিনি যেন লোকদের নিয়ে ২০ রাকা'আত তারাবীহ্ পড়েন।”(.মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা, খ. ২, পৃ. ২৮৫।)
এ ধরনের অসংখ্য হাদীসের বক্তব্য মুতুয়াতির পর্যায়ে পৌছার ফলে ২০ রাকা'আত তারাবীহর প্রমাণের জন্য উপস্থাপিত হাদীসগুলোই আমলের জন্য যথেষ্ট।
দলিল নং-৮
হযরত হাসান (রাঃ) বলেন, "হযরত উমর (রাঃ) হযরত উবাই ইবন কা'ব (রাঃ)-এর পেছনে তারাবীহর নামায আদায়ের জন্য লোকদেরকে একত্রিত করতেন। হযরত উবাই ইবন কা'ব (রাঃ) তাদেরকে ২০ রাকা'আত তারাবীহর নামায পড়াতেন। (আবু দাউদ শরীফ, খ. ২, পৃ. ৬৫)
হাদীস নং-৯
হযরত ইব্ন আব্বাস (রাঃ) বলেন, “নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) রামাযানে ২০ রাকা'আত (তারাবীহ) নামায পড়তেন এবং বিতরও পড়তেন। ” (আল মুহামল কাবীর, খ. ১১, পৃ. ৩৯৩, আল-মুনতাখাব মিন মুসনাদী আবদি ইবন হুমাইন, পৃ. ২১৮ বাইহাকী আস সুনানুল কুবরা, খ. ২, পৃ. ৬৯৮, আল-মুসান্নাফি ফিল হাদীস, খ. ২, পৃ. ১৬৪)
হযরত আতা (রাঃ)- এর, “হযরত আতা (রাঃ) বলেন, আমি লোকজনকে বিতরসহ ২৩ রাকা আত তারাবীহের নামায পড়া অবস্থায় পেয়েছি।”বজলুল মাজহুদ, খ. ২, পৃ. ৩০৪)
উপরোক্ত সকল হাদীস ২০ রাকাত তারাবীহ নামাযের পক্ষে অকাট্যভাবে প্রমাণ দিচ্ছে।(মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা, খ. ২, পৃ. ৩৯৩)
২০ রাকা'আত তারাবীহর সপক্ষে একই ধারার অসংখ্য হাদীস দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণ করছে যে, হযরত উমর ফারুক (রাঃ)-এর যুগে এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগে অসংখ্য সাহাবা-তাবেয়ীনের কেউ তারাবীহর নামায ২০ রাকা'আত হওয়ার ব্যাপারে কোন প্রকার আপত্তি তুলেননি। মুহাজির এবং আনসার সাহাবীদের মধ্যে এ ব্যাপারে ইজমা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তারা সকলেই ২০ রাকা'আত তারাবীহ পড়েছেন। ২০। রাকা'আত তারাবীহ 'সুন্নাতে মুয়াক্কাদা' মারফু হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত।। কাজেই ফিতনাবাজ আহলে হাদীস সম্প্রদায়, সাহাবীদের অনুকরণ না।। করে মহা-বরকতময় তারাবীহর নামাযকে ৮ রাকা'আতে সংকুচিত করে জঘন্য অপরাধ করে চলেছেন। এরা ইবাদতের নাপিত; এদেরকে সার্বিকভাবে বর্জন করা উচিত। মাহে রামাযানের মতো একটি দুর্লভ এবং মহিমান্বিত মাসে, নিজের ভাগ্য থেকে প্রতিরাতে বাকি ১২ রাকা'আত তারাবীহের নামায থেকে নিজেকে বঞ্চিত করা ইবাদতলোভী মানুষের জন্য কখনো উচিত হবে না।
বিশ রাকা'আত তারাবীহর মধ্যে হিকমত : “আল্লামাহ হালাভী রহ. বলেন, নীতি কথা হলো এই যে, সুন্নাত হলো ফরয সমূহের সম্পূরক বা পরিপূরক। বিতর সহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের ফরয গুলো হিসেব করলে সর্ব মোট ২০ রাকা'আত দাঁড়ায়। যথা: ফজর-২+যোহর-৪+আসর-৪+মাগরিব-৩+এশা-৪+বিতর-৩=২০ রাকা'আত। এ কারণে তারাবীহকেই ২০ রাকা'আত ধার্য করা হয়েছে ইবাদাতে যাতে পরিপূর্ণতা আসে। এটিই আল্লাহর বিশাল হিকমত।
হযরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ রহ. বলেছেন, মহান আল্লাহ সারা বছর “মুখবিতীন” (তাহাজ্জুদগুজার) বান্দাহদের জন্য রাতের নামায ১১ রাকা'আত করে দিয়েছেন এতে সাধারন মুসলমান যেন এই বিশাল ইবাদতের বরকত থেকে বঞ্চিত না হয়। এ কারণে রামাযান মাসে এই ইবাদতটিকে দ্বিগুন করে দিয়েছেন। সাধারণত মানব সমাজে ভাংগা সংখ্যার হিসাব ধরা হয় না বিধায় তাকাবীহের নামায সর্বমোট ১০+১০=২০ রাকা'আত।”(ফাতহুল মুলহিম খ.২,পৃ:৩২০:আত্তালীকুস সাবীহ, খ.২,পৃ:১০৫)
লেখক : বিষ্ণুপুর মনোহরখাদী মদিনা বাজার বাইতুল আমিন জামে মসজিদ, চাঁদপুর সদর,চাঁদপুর।