রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ১০ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

মুসলিম ভ্রাতৃত্ব ও খতমে নবুয়ত
অনলাইন ডেস্ক

মহান আল্লাহ্ পবিত্র কোরআনুল কারীমে ঘোষণা করেন- ‎মুহাম্মদ তোমাদের কোন পুরুষের পিতা ছিলেন না। তবে তিনি আল্লাহর রাসূল এবং সর্বশেষ নবী। সূরা আহযাব, আয়াত নং-৪০। নবী করিম (সাঃ) বলেন- আমার উম্মতের মধ্য থেকে ত্রিশজন মিথ্যাবাদী আসবে প্রত্যেকেই নিজেকে নবী বলে দাবী করবে। অথচ আমি হলাম শেষ নবী; আমার পরে কোন নবী নেই। সুনানে তিরমিযী ২/৪৫; মুসনাদে আহমদ ৬/৩৭৩ হা: ২১৮৮৯, তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩য় খন্ড, পৃ- ৪৯৩। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল (সাঃ বলেছেন-আমি এবং পূর্ববর্তী অন্যান্য নবীদের উদাহরণ হল, এক লোক একটি দালান অত্যন্ত সুন্দর করে তৈরী করল। কিন্তু দালানটির এক কোনে একটা ইট ফাঁকা রেখে দিল। লোকজন চর্তুদিকে ঘুরে ঘরে তার সৌন্দর্য্য দেখে বিমোহিত হচ্ছে কিন্তু বলছে, এ ফাঁকা জায়গায় একটি ইট বসালে কতই না সুন্দর হত! তিনি আরো বলেন, ‘আমি হলাম সেই ইট এবং আমি হলাম সর্বশেষ নবী। সহীহ বুখারী ১/৫০১; সহীহ মুসলিম ২/২৪৮ উক্ত হাদিস অনুযায়ী, দালানটির সর্বশেষ ইটটি লাগালেই দালানের কাজ পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। ঠিক তেমুনি, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর আগমনের ফলে নবুয়তের দায়িত্ব সমাপ্ত হলো। কাজ পরিপূর্ণ হওয়ায় দালানটিতে যেমন আর নতুন করে ইট লাগানোর প্রয়োজন নেই, ঠিক তেমুনি নবুয়তের দায়িত্ব সমাপ্ত হওয়ায় নতুন কোনো নবি বা রাসূলের আগমনেরও প্রয়োজন নেই। কারণ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মাধ্যমেই নবুয়তের দায়িত্ব সমাপ্ত হয়েছে। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হযরত আলী (রাঃ)কে বললেন, ‘‘মুসার পক্ষ থেকে হারুন যে (দায়িত্ব, মর্যাদা, আর সম্পর্কের) স্থানে ছিলেন আমার পক্ষ থেকে তুমি হলে সেই স্থানে, তবে (অর্থাৎ এই যে) আমার পরে কোন নবী নেই।’’ সহীহ বুখারী ২/৬৩৩; সহীহ মুসলিম ২/২৭৮; সুনানে তিরমিযী ২/২১৩ হযরত যুবায়ের ইবনে মুতয়িম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘‘আমি মুহাম্মাদ, আমি আহমদ, আমি মাহী, অর্থাৎ আমার মাধ্যমে কুফরী বিমোচিত হবে, আমি হাশির, আমার (যুগের) পরই মানুষকে হাশরের মাঠে একত্রিত করা হবে এবং আমি হলাম আ‘কিব(অর্থাৎ যার পরে আর কোনো নবী নেই)।’ সহীহ বুখারী ১/৫০০, ২/৭২৭; সহীহ মুসলিম ২/২৬১; সুনানে তিরমিযী ২/১১১

বুখারী এবং মুসলিম তাবুক যুদ্ধের বর্ণনা প্রসঙ্গেও এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। মুসনাদে আহমাদে এই বিষয়বস্তু সম্বলিত দু’টি হাদীস হযরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস থেকে বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে একটি বর্ণনার শেষাংশ হলো, ‘কিন্তু আমার পরে আর কোন নবুওয়াত নেই।’ আবু দাউদ তিয়ালাসি, ইমাম আহমাদ এবং মুহাম্মাদ ইসহাক এ সম্পর্কে যে বিস্তারিত বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন তা থেকে জানা যায় যে, তাবুক যুদ্ধে রওয়ানা হবার পূর্বে রসূলুল্লাহ (সাঃ) হযরত আলীকে (রাঃ) মদীনা তাইয়্যেবার তত্ত্বাবধান এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রেখে যাবার ফয়সালা করেন। এ ব্যাপারটি নিয়ে মুনাফিকরা বিভিন্ন ধরনের কথা বলতে থাকে। হযরত আলী (রাঃ) রসূলুল্লাহকে (সাঃ)বলেন, হে আল্লাহর রসূল, আপনি কি আমাকে শিশু এবং নারীদের মধ্যে ছেড়ে যাচ্ছেন? রসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে সান্তনা দিয়ে বলেছিলেন-আমার সাথে তোমার সম্পর্কতো মূসার সাথে হারুনের সম্পর্কের মতো। অর্থাৎ তুর পর্বতে যাবার সময় হযরত মূসা (আঃ) যেমন বনী ইসরাঈলদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য হযরত হারুনকে পেছনে রেখে গিয়েছিলেন অনুরুপভাবে মদীনার হেফাজতের জন্য আমি তোমাকে পেছনে রেখে যাচ্ছি। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে রসূলুল্লাহ (সাঃ) মনে এই সন্দেহও জাগে যে, হযরত হারুনের সঙ্গে এভাবে তুলনা করার ফলে হয়তো পরে এ থেকে কোন বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। কাজেই পরমুহুর্তেই তিনি কথাটা স্পষ্ট করে দেন এই বলে যে, “আমার পর আরকোন ব্যক্তি নবী হবে না।”

রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ আমি শেষ নবী এবং আমার মসজিদ (অর্থাৎ মসজিদে নববী) শেষ মসজিদ। রসূলুল্লাহর (সাঃ) নিকট থেকে বহু সাহাবী হাদীসগুলো বর্ণনা করেছেন এবং বহু মুহাদ্দিস অত্যন্ত শক্তিশালী এবং নির্ভরযোগ্য সনদসহ এগুলো উদ্ধৃত করেছেন। এগুলো অধ্যয়ন করার পর স্পষ্ট জানা যায় যে, রসূলুল্লাহ (সাঃ) বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন শব্দের ব্যবহার করে একথা পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে, তিনি শেষ নবী। তার পর কোন নবী আসবে না। নবুওয়াতের সিলসিলা তার ওপর খতম হয়ে গেছে এবং তার পরে যে ব্যক্তি রসূল অথবা নবী হবার দাবী করবে, সে হবে দাজ্জাল (প্রতারক) এবং কাজ্জাব ও মিথ্যুক। ২ কুরআনের “খাতামুন নাবিয়্যীন” শব্দের এর চাইতে বেশী শক্তিশালী, নির্ভরযোগ্যএবং প্রামান্য ব্যাখ্যা আর কি হতে পারে! রসূলুল্লাহর বাণীই এখানে চরম সনদ এবং প্রমাণ। উপরন্তু যখন তা কুরআনের একটি আয়াতের ব্যাখ্যা করে তখন আরো অধিক শক্তিশালী প্রমাণে পরিণত হয়। এখন প্রশ্ন হলো এই যে, মুহাম্মাদের (সাঃ) চেয়ে বেশী কে কুরআনকে বুঝেছে এবং তার চাইতে বেশী এর ব্যাখ্যার অধিকার কার আছে? এমন কে আছে যে খতমে নবুওয়াতের অন্য কোন অর্থ বর্ণনা করবে এবং তা মেনে নেয়া তো দূরের কথা, সে দিকে ভ্রƒক্ষেপ করতেও আমরা প্রস্তুত হবো?

খতমে নবুওয়াত অস্বীকারীরা এ হাদীস থেকে প্রমাণ করে যে, রসূলুল্লাহ (সাঃ) যেমন তাঁর মসজিদকে শেষ মসজিদ বলেছেন, অথচ এটি শেষ মসজিদ নয়; এরপরও দুনিয়ার বেশুমার মসজিদ নির্মিত হয়েছে অনুরূপভাবে তিনি বলেছেন যে, তিনি শেষ নবী। এর অর্থ হলো এই যে, তাঁর পরেও নবী আসবেন। অবশ্য শ্রেষ্ঠত্বের দিক দিয়ে তিনি হলেন শেষ নবী এবং তাঁর মসজিদ শেষ মসজিদ। কিন্তু আসলে এ ধরনের বিকৃত অর্থই একথা প্রমাণ করে যে, এ লোকগুলো আল্লাহ এবং রসূলের কালামের অর্থ অনুধাবন করার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে। মুসলিম শরীফের যে স্থানে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে সেখানে এ বিষয়ের সমস্ত হাদীস সম্মুখে রাখলেই একথা পরিষ্ফুট হবে যে, রসূল্লাহ (সাঃ) তাঁর মসজিদকে শেষ মসজিদ কোন্ অর্থে বলেছেন। এখানে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ), হযরত আবদুল্লাহইবনে উমর (রাঃ) এবং হযরত মায়মুনার (রাঃ) যে বর্ণনা ইমাম মুসলিম উদ্ধৃত করেছেন, তাতে বলা হয়েছে, দুনিয়ার মাত্র তিনটি মসজিদ এমন রয়েছে যেগুলো সাধারণ মসজিদগুলোর ওপর শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার। সেখানে নামায পড়লে অন্যান্য মসজিদের চেয়ে হাজার গুণ বেশী সওয়াব হাসিল হয় এবং এ জন্য একমাত্র এ তিনটি মসজিদে নামায পড়ার জন্য সফর করা জায়েয। দুনিয়ার অবশিষ্ঠ মসজিদগুলোর মধ্যে সমস্ত মসজিদকে বাদ দিয়ে বিশেষ করে একটি সমজিদে নামায পড়বার জন্য সেদিকে সফর করা জায়েয নয়। এর মধ্যে মসজিদুল হারাম হলো প্রথম মসজিদ। হযরত ইবরাহীম (আঃ) এটি বানিয়েছিলেন। দ্বিতীয়টি মদীনা তাইয়েবার মসজিদে নববী। এটি নির্মাণ করেন রসূলুল্লাহ (সাঃ)। রসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদের অর্থ হলো এই যে, এখন যেহেতু আমার পর আর কোন নবী আসবে না, সেহেতু আমার মসজিদের পর দুনিয়ার আর চতুর্থ এমন কোন মসজিদ নির্মিত হবে না, যেখানে নামায পড়ার সওয়াব অন্যান্য মসজিদের তুলনায় বেশী হবে এবং সেখানে নামায পড়ার উদ্দেশ্যে সেদিকে সফর করা জায়েয হবে। শেষ নবুওয়াতে অবিশ্বাসীরা নবী করিমের (সাঃ) হাদীসের বিপরীতে হযরত আয়েশার (রাঃ) বলে কথিত নি¤েœাক্ত বর্ণনার উদ্ধৃতি দেয়: “বল নিশ্চয়ই তিনি খাতামুন নাবিয়্যীন, একথা বলো না যে তার পর নবী নেই।” প্রথমত নবী করিমের (সা;) সুস্পষ্ট আদেশকে অস্বীকার করার জন্য হযরত আয়েশার (রাঃ) উদ্ধৃতি দেয়া একটা ধৃস্টতা। অধিকন্তু হযরত আয়েশার (রাঃ) বলে কথিত উপরোক্ত উদ্ধৃতি মোটেই নির্ভরযোগ্য নয়। হাদীস শাস্ত্রের কোন প্রমাণিক গ্রন্থেই হযরত আয়েশার (রাঃ) উপরোক্ত উক্তির উল্লেখ নেই। কোন বিখ্যাত হাদীস লিপিবদ্ধকারী এ হাদীসটি লিপিবদ্ধ বা উল্লেখ করেনি। উপরোক্ত হাদীসটি ‘দুররি মানসূর’ নামক তাফসীর এবং ‘তাকমিলাহ মাজমা-উল-বিহার’ নামক অপরিচিত হাদীস সংকলন থেকে নেয়া হয়েছে; কিন্তু এর উৎপত্তি বা বিশ্বস্ততা সম্বন্ধে কিছুই জানা নেই। রসূল (সা.)-এর সুস্পষ্ট হাদীস বর্ণনাকারীরা খুবই নির্ভরযোগ্য সূত্র ধেকে বর্ণনা করেছেন, তাকে অস্বীকার করার জন্য হযরত আয়েশার (রাঃ) উক্তির, যা দুর্বলতম সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। উল্লেখ চূড়ান্ত ধৃষ্টতা মাত্র।

আলেম সমাজের ইজমা : শরীয়তে সাহাবীদের ইজমার পর সবচাইতে শক্তিশালী দলিল হলো আলেম সমাজের ইজমা। এদিক দিয়ে বিচার করলে দেখা যায়, হিজরীর প্রথম শতাব্দী থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত প্রত্যেক যুগের এবং সমগ্র মুসলিমজাহানের প্রত্যেক এলাকার আলেম সমাজ হামেশাই এ ব্যাপারে একমত রয়েছেন যে, “মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরে কোন ব্যক্তি নবী হতে পারে না এবং তার পর যে ব্যক্তি নবুওয়াতের দাবী করবে এবং যে ব্যক্তি এই মিথ্যা দাবীকে মেনে নেবে, সে কাফের এবং মিল্লাতে ইসলামের মধ্যে তার স্থান নেই।”

খতমে নবুয়তের ব্যাপারে আমি কতিপয় প্রমাণ পেশ করছি :

১) ইমাম আবু হানীফার যুগে (৮০-১৫০ হি) এক ব্যক্তি নবুওয়াতের দাবী করে এবং বলেঃ “আমাকে সুযোগ দাও, আমি নবুওয়াতের সংকেত চিহ্ন পেশ করব।”একথা শুনে ইমাম সাহেব বলেনঃ যে ব্যক্তি এর কাছ থেকে নবুওয়াতের কোন সংকেত চিহ্ন তলব করবে সেও কাফের হয়ে যাবে। কেননা রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “আমার পর আর কোন নবী নেই।”২) আল্লামা ইবনে জারীর তাবারী (২২৪-৩১০ হি) তাঁর বিখ্যাত কুরআনের সূরা আহযাবের ৪০ নং আয়াতটির বর্ণনা প্রসঙ্গে লিখেছেনঃ“যে নবুওয়াতকে খতম করে দিয়েছে এবং তার ওপর মোহর লাগিয়ে দিয়েছে কিয়ামত পর্যন্ত এর দরজা আর কারো জন্য খুলবে না।” (তাফসীরে ইবনে জারীর ২২ খন্ড ১২ পৃষ্ঠা। ৩) ইমাম তাহাবী (হি ২৩৯-৩২১) তার আকীদাতুস সালাফীয়া গ্রন্থে সালাফেসালেহীন (প্রথম যুগের শ্রেষ্ঠ সৎকর্মশীলগণ) এবং বিশেষ করে ইমাম আবু হানীফা, ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ রাহেমাহুমুল্লাহর আকিদা বিশ্বাস বর্ণনা প্রসঙ্গে নবুওয়াত সম্পর্কিত এ বিশ্বাস লিপিবদ্ধ করেছেন যে, “আর মুহাম্মাদ (সাঃ) হচ্ছেন আল্লাহর প্রিয়তম বান্দা, নির্বাচিত নবী ও পছন্দনীয় রসূল এবং শেষ নবী, মুত্তাকীদের উম্মাত, রসূলদের সরদার ও রব্বুল আলামীনের বন্ধু। আর তার পর নবুওয়াতের প্রত্যেকটি দাবী পথভ্রষ্টতা এবং প্রবৃত্তির লালসার বন্দেগী ছাড়া আর কিছুই নয়।”(শারহুত তাহাবীয়া ফিল আকীদাতিস সালাফিয়া, দারুল মাআরিফ মিসর, ১৫, ৮৭, ৯৬, ৯৭, ১০০ ও ১০২ পৃষ্ঠা। ৪) আল্লামা ইবনে হাজাম আন্দালুস (৩৮৪-৪৫৬) হি) লিখেছেনঃ নিশ্চয়ই রসূলুল্লাহ ইন্তেকালের পর অহীর সিলসিলা খতম হয়ে গেছে। এর সপক্ষে যুক্তি এই যে, অহী আসে একমাত্র নবীর কাছে এবং মহান আল্লাহ বলেছেন, মুহাম্মাদ তোমাদের পুরুষদের মধ্যে কারো পিতা নয়। কিন্তু সে আল্লাহ রসূল এবং সর্বশেষ নবী (আল মুহাল্লা, প্রথম খন্ড ২৬ পৃষ্ঠা) ৫) ইমাম গাযযালী বলেন-(৪৫০-৫০৫ হি) “যদি এ দরোজাটি (অর্থাৎ ইজমাকে প্রমাণ হিসেবে মানতে অস্বীকার করার দরোজা) খুলে দেয়া হয় তাহলে বড়ই ন্যক্কারজনক ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। যেমন যদি কেউ বলে, আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরে অন্য কোন নবীর আগমন অসম্ভব নয়, তাহলে তাকে কাফের বলার ব্যাপারে ইতস্তত করা যেতে পারে না। মুসলিম উম্মাহ ঐকমত্যের ভিত্তিতে এ শব্দ (অর্থাৎ আমার পরে আর কোন নবী নেই) থেকে এবং নবী সা. এর ঘটনাবলীর প্রমাণাদি থেকে এ কথাই বুঝেছে যে, নবী করীম সা. এর উদ্দেশ্য ছিলো একথা বুঝানো যে, তাঁর পরে আর কখনা কোন নবী আসবে না এবং রসূলও আসবে না। এছাড়া মুসলিম উম্মাহ এ ব্যাপারেও একমত যে, এর মধ্যে কোন তাবীল, ব্যাখ্যা ও বিশেষিত করারও কোন অবকাশ নেই। ৬. মুহীউস সুন্নাহ বাগাবী র. (মৃত্যু: ৫১০ হি. তার তাফসীরে মা’আলিমুত তানযীল - এ লিখেছেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা নবুওয়াতের সিলসিলা খতম করেছেন। কাজেই তিনি সর্বশেষ নবী এবং ইবনে আব্বাস বলেন, আল্লাহ তায়ালা এ আয়াতে ফায়সালা করে দিয়েছেন যে, মুহাম্মদ (সাঃ) এর পর কোন নবী নেই (তৃতীয় খন্ড, ১৫৮ পৃ:)৭. আল্লামা যামাখশরী র. (৪৬৭-৫৩৮ হি.) তাফসীরে কাশশাফে লিখেছেন, যদি তোমরা বলো, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) শেষ নবী কমেন করে হলেন, কেননা হযরত ঈমা আ: শেষ যুগে নাযিল হবেন, তাহলে আমি বলবো, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর শেষ নবী হবার অর্থ এই যে, তাঁর পরে আর কাউকে নবীর পদে অধিষ্ঠিত করা হবে না। হযরত ঈসা আ: কে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর পূর্বে নবী বানানো হয়েছে। নাযিল হবার পর তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর অনুসারী হবেন এবং তাঁর কেবলার দিকে মুখ করে নামায পড়বেন। অর্থাৎ তিনি হবেন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর উম্মাতের মধ্যে শামিল (দ্বিতীয় খন্ড ১১৫ পৃষ্ঠা।) ৮. কাযী ইয়ায রা: (মৃত্যু ৫৪৪ হ.) লিখেছেন, যে ব্যক্তি নিজে নবুওয়াতের দাবি করে অথবা একথাকে বৈধ মনে করে যে, যে কোন ব্যক্তি নিজের প্রচেষ্টায় নবুওয়াত হাসিল করতে পারে এবং অন্তত পরিশদ্ধির মাধ্যমে নবীর পর্যায়ে উন্নীত হতে পারে ( যেমন কোন দার্শনিক এবং বিকৃতমানা সূফী মনে করেন) এবং এভাবে যে ব্যক্তি নবুওয়াতেহর দাবি করে না কিন্তু একথার দাবি জানায় যে, তার ওপর ওহী নাযিল হয়। এ ধণের সমস্ত লোক কাফের এবং তারা নবী (সাঃ) এর নবুওয়াতকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করছে। কেনোনা তিনি খবর দিয়েছেন যে, তিনি শেষ নবী এবং তাঁর পরে আর কোন নবী আসবে না এবং তিনি আল্লাহ তায়ালার তরফ থেকে এ সংবাদ পৌঠিয়েছেন যে, তিনি নবুওয়াতের পরিসমপ্তি ঘটিয়েছেন এবং সমগ্র মানবজিাতির জন্য তাঁকে পাঠনো হয়েছে। সমগ্র মুসলিম সমাজ এ ব্যাপারে একমত যে, এখানে কথাটির বাহ্যিক অর্থটিই গ্রহণীয এবং এর দ্বিতীয় কোন অর্থ গ্রহণ করার সুযোগই এখানে নেই। কাজেই উল্লেখিত দলগুলোর কাফের হওয়া সম্পর্কে কুরআন, হাদীস ও ইজমা’র দৃষ্টিতে কোন সন্দেহ নেই। (শিফা দ্বিতীয় খন্ড ২৭০-২৭১ পৃষ্ঠা) ৯. আল্লামা শাহারাস্তানী র: (মৃত্যু: ৫৪৮ হি:) তাঁর মশহুর কিতাব আল মিলাল ওয়ান নিহালে লিখেছেন, এবং যে ব্যক্তি এভাবেই বলে মুহাম্মদ (সাঃ) এর পরও কোন নবী আসবে (হযরত ঈসা আ: ছাড়া) তার কাফের হওয়া সম্পর্কে যে কোন দু’জন ব্যক্তির মধ্যেও কোন মতবিরোধ থাকতে পারে না । (তৃতীয় খন্ড ২৪৯ পৃষ্ঠা) ১০. ইমাম রাযী র. (৫৪৩-৬০৬ হি.) তাঁর তাফসীরে কবীরে “খাতামুন নাবিয়্যীন” শব্দের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেন, এ বর্ণনায় খাতামুন নাবিয়্যীন শব্দ এজন্য বলা হয়েছে যে, যে নবীর পর অন্য কোন নবী আসবেন তিনি যদি উপদেশ এবং নির্দেশাবলীর ব্যাখ্যার ব্যাপারে কিছু অতৃপ্তি রেখে যান, তাহলে তাঁর পর আগমনকারী নবী তা পূর্ণ করতে পারেন। কিন্তু যার পর আর কোন নবী আসবে না, তিনি নিজের উম্মতের ওপর খুব বেশী স্নেহশীল হন এবং তাদেরকে সুষ্পষ্ট নেতৃত্ব দান করেন। কেননা তাঁর দৃষ্টান্ত এমন এক পিতার ন্যায় যিনি জানেন যে, তাঁর মৃত্যুর পর পুত্রের দ্বিতীয় কোন অভিভাবক এবং পৃষ্ঠপোষক থাকবে না। (ষষ্ঠ খন্ড, ৫৮১ পৃষ্ঠা) ১১. আল্লামা বায়যাবী র: (মৃত: ৬৮৫হি:) তাঁর তাফসীর আনওয়ারুত তানযীল-এ লিখেছেন অর্থাৎ তিনিই শেষ নবী। তিনি নবীদের সিলসিলা খতম করে দিয়েছেন। অথবা তাঁর কারণেই নবীদের সিলসিলার ওপর মোহর লাগানো হয়েছে এবং তাঁর পর হযরত ঈসা আ: এর নাযিল হবার করণে কতমে নবুওয়াতের যপর কোন দোষ আসছে না। কেনোনা তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর দীনের মধ্যেই নাযিল হবে। (চতুর্থ খন্ড, ১৬৪ পৃষ্ঠা) । ১২. আল্লামা হাফিয উদ্দীন নাসাফী রহ:(মৃত্যু ৮১০ হি:) তাঁর তাফসীরে মাদারেকুত তানযীল-এ লিখেছেন এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃ) খাতামুন নাবিয়ি্যুন । অর্থাৎ তিনিই সর্বশেষ নবী। তাঁর পর আর কোন ব্যক্তিকে নবী করা হবে না। হযরত ঈসা আ: এর ব্যাপার এই যে, তাঁকে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর পূর্বের নবীর পদে অধিষ্ঠিত করা হয়েছিলো এবং পরে যখন তিনি নাযিল হবেন, তখন তিনি হবেন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর শরীয়তের অনুসারী। অর্থাৎ, তিনি হবেন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর উম্মত (৪৭১ পৃষ্ঠা)। ১৩. আল্লামা আলাউদ্দীন বাগদাদী রাহ: (মৃত্যু ৭২৬ হি) তাঁর তাফসীরে “খাজিন”-এ লিখেছেন, খাতামুন নাবিয়ি্যুন অর্থাৎ ওয়াও বর্ণটি আল্লাহ তায়ালা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নবুওেয়াত সমাপ্ত করে দিয়েছেন। কাজেই তাঁর পরে আর কোন নবুওয়াত নেই এবং এ ব্যাপারে কেউ তাঁর অংশীদারও নয়। ১৪. আল্লামা ইবনে কাসীর র: (মৃত্যু ৭৭৪ হি:) তাঁর মশহুর তাফসীরে লিখেছেন, অত:পর আলোচ্য আয়াত থেকে একথা ষ্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, যখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর পর কোন নবী নেই, তখন অপর কোন রাসূলেরও প্রশ্ন উঠতে পারে না। কেননা রিসালাত একটা বিশেষ পদমর্যাদা এবং নবুওয়াতের পদমর্যাদা ব্যাপকধর্মী। প্রত্যেক রাসূল নবী হন, কিন্তু প্রত্যেক নবী রাসূল হন না। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর পর যে ব্যক্তিই এই পদমর্যাদার দাবি করবে, সেই হবে মিথ্যাবাদী, প্রতারক, দাজ্জাল এবং পথভ্রষ্ট। যতোই সে অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন হোক না কেন, তার দাবী মানবার নয় কিয়ামত পর্যন্ত যেসব ব্যক্তি এই পদমর্যাদার দাবি করবে, তাদের প্রত্যেকেরই অবস্থা হবে এই ধরণের। (তৃতীয় খন্ড- ৪৯৩-৪৯৪ পৃষ্ঠা) ১৫. আল্লামা জালালুদ্দীন সূয়ুতী রহ: (মৃত্যু:৯১১ হি:) তাঁর তাফসীরে জালালাইন - এ লিখেছেন, অর্থাৎ আল্লাহ তাৎআলা জানেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) (সাঃ) এর পর আর কোন নবী নেই এবং হযরত ঈসা আ: নাযিল হবার পর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর শরীয়ত মোতাবেকই আমল করবেন (৭৬৮ পৃষ্ঠা)। ১৬. আল্লামা ইবনে নুজাইম রাহ: (মৃত্যু ৯৭০ হি:) উসূরে ফিকহের বিখ্যাত গ্রন্থ আল ইশবাহ ওয়ান নাযায়েরে “কিতাবুস সিয়ারের” ”বাবুর রুইয়ায়” লিখেছেন, যদি কেউ একথা মনে না করে যে, মুহাম্মদ (সাঃ) শেষ নবী তাহলে সে মুসলমান নয়। কেননা কথাগুলো জানা এবং স্বীকার করে নেয়া দীনের অপরিহার্য আকীদা-বিশ্বাসের শামিল (১৭৯ পৃষ্ঠা) । ১৭. মোল্লা আলী আল কারী রাহ:( মৃত্যু-১০১৬) হি: “শারহু ফিকহে আকবার” - এ লিখেছেন, আমাদের রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর পর অন্য কোন ব্যক্তির পর অন্য কোন ব্যক্তির নবুওয়াত দাবী করা সর্ববাদীসম্মতভাবে কুফর (২০২ পৃষ্ঠা)। ১৮. শায়খ ইসমাঈল হাক্কী রহ: (মৃত্যু: ১১৩৭ হি:) তাফসীরে রূহুর বায়ন এ উল্লেখিত ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে লিখেছেন, আলেম সমাজ খাতাম’ শব্দটির “তা” - এর ওপর জবর লাগিয়ে পড়েছেন, এর অর্থ হয় খতম করবার যন্ত্র, যার সাহায্যে মোহর লাগানো হয়। অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সকল নবীর শেষে এসেছেন এবং তাঁর মাধ্যমে নবীদের সিলসিলার ওপর মোহর লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। ফারসীতে আমরা একে বলবো “মোহরে পয়গম্বর” অর্থাৎ, তাঁর সাহায্যে নবুওয়াতের দরজা মোহর লাগিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং পয়গাম্বরদের সিলসিলা খতম করে দেয়া হয়েছে। অন্য বিশেষজ্ঞরা “তা”-এর নীচে জের লাগিয়ে পড়েছেন “খাতিমুন নাবিয়্যিন”। অর্থাৎ, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ছিলেন মোহর দানকারী। অন্য কথায় বলা যাবে, পয়গম্বরদের যপর মোহরকারী। এভাবে এ শব্দার্থা “খাতাম” এর সমার্থ হয়ে দাঁড়াবে। তাহলে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এরপর তাঁর উম্মতের আলেম সমাজ তাঁর কাছে থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাবেন একমাত্র তাঁর প্রতিনিধিত্ব। তাঁরি ইন্তেকালের সাথে সাথেই নবুওয়াতের উত্তরাধিকারেরও পরিসমাপ্তি ঘটেছে এবং তাঁর পরে হযরত ঈসা আ: এর নাযিল হবার ব্যাপারটি তাঁর নবওয়াতকে ত্রুটিযুক্ত করবে না। কেননা খাতামুন নাবিয়্যীন হবার অর্থ হলো, তাঁর পর আর কাউকে নবী বানানো হবে না এবং হযরত ঈসা আ: কে তাঁদের পূরেবই নবী বানানো হয়েছে। কাজেই তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর অনুসারীর মধ্যে শামিল হবেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কিবলার দিকে মুখ করে নামায পড়বেন এবং তাঁরই উম্মাতের অন্তরভূক্ত হবেন। তখন হযরত ঈসা আ: এর নিকট ওহী নাযিল হবে না এবং তিনি কোন নতুন বিধানও জারি করবেন না, বরং তিনি হবেন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর প্রতিনিধি। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত এ ব্যাপারে একমত যে, আমাদের নবীর পর আর কোন নবী নেই। কেননা আল্লাহ বলেছেন, মুহাম্মদ (সাঃ) শেষ নবী এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আমার পরে কোন নবী নেই। কাজেই এখন যে বলবে, মুহাম্মদ (সাঃ) এর পর নবী আছে তাকে কাফের বলা হবে। কেননা সে কুরআনকে অস্বীকার করেছে এবং অনুরূপভাবে সে ব্রক্তিকেও কাফের বলা হবে যে এ ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করবে। কেননা সুষ্পষ্ট যুক্তি প্রমাণের পর হক বাতিল থেকে পৃথক হয়ে গেছে এবং যে ব্যক্তি মুহাম্মদ (সাঃ) এর নবুওয়াতের দাবী করবে, তার দাবী বাতিল হয়ে যাবে (২২ খন্ড, ১৮৮ পৃষ্ঠা)। ১৯. শাহানশাহ আওরঙ্গযেব আলমগীরের নির্দেশে বারো’শ হিজরীতে পাক-ভারতের বিশিষ্ট আলেমগণ সম্মিলিতভাবে “ফতোয়ায়ে আলমগিরী” নামে যে কিতাবটি লিপিবদ্ধ করেন তাতে উল্লেখিত হয়েছে যদি কেউ মনে করে যে, মুহাম্মদ (সাঃ) শেষ নবী নন, তাহলে সে মুসলমান নয় এবং যদি সে বলে, আমি আল্লাহর রাসুল বা পয়গাম্বর, তাহলে তার ওপর কুফরীর ফতোয়া দেয়া হবে (দ্বিতীয় খন্ড ২৬৩ পৃষ্ঠা)। ২০. আল্লামা শাওকানী রাহ: (মৃত্যু ১২৫৫ হি:) তাঁর তাফসীর ফাতহুল কাদীরে লিখেছেন, সমগ্র মুসলিম সমাজ “খাতিম” এর “তা” এর নীচে জের লাগিয়ে পঢ়েছেন এবং একমাত্র আসেম জবরের সাথে পড়েছেন। প্রথমটার অর্থ হলো, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সমস্ত পয়গাম্রকে খতম করেছেন অর্থাৎ তিনি সবার শেষে এসেছেন এবং দ্বিতীয়টির অর্থ হলো, তিনি সমস্ত পয়গাম্বরের জন্য মোহরস্বরূপ এবং এর সাহায্যে নবীদের সিলসিলা মোহর এঁটে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে তাঁদের দলটি সর্বাঙ্গ সুন্দর হয়েছে (চতুর্থ খন্ড, ২৭৫ পৃষ্ঠা)। ২১. আল্লামা আলূসী রাহ: (মৃত্যু ১২৮০ হি:) তাফসীরে রূহুল মা’আনীতে লিখেছেন, নবী শব্দটি রাসূলের চাইতে বেশী ব্যাপক অর্থব্যঞ্জক । কাজেই রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর খাতিমুন নাবিয়্যীন হবার অর্থ হলো, তিনি খাতামুল মুরসালীনও। তিনি শেষ নবী এবং শেষ রাসূল একথার অর্থ এই যে, এ দুনিয়া তাঁর নবুওয়াতের গুণে গুণান্বিত হবার পরেই মানুষ এবং জিনের মধ্য থেকে এ গুণটি চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে গেছে (২২ খন্ড, ৩২ পৃষ্ঠা)।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর পর যে ব্যক্তি নবুওয়াতের ওহীর দাবি করবে, তাকে কাফের বলে গণ্য করা হবে। এ ব্যাপারে মুসলমানদের মধ্যে দ্মিতের অবকাশ নেই। (২২ খন্ড, ৩৮ পৃষ্ঠা)। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) শেষ নবী - একথাটি কুরআন দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেছে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সুন্নাত এটিকে সুষ্পষ্টরূপে ব্যাখ্যা করেছে এবং সমগ্র মুসলিম সমাজ এর ওপর আমল করেছে। কাজেই যে ব্যক্তি এর বিরোধী কোন দাবি করবে, তাকে কাফের গণ্য করা হবে” (২২ খন্ড, ৩৯ পৃষ্ঠা)। বাংলা-পাক-ভারত উপমহাদেশ থেকে মরক্কো ও স্পেন এবং তুর্কী থেকে ইয়েমেন পর্যন্ত মুসলিম জাহানের শ্রেষ্ঠ আলেম, ফকীহ, মুহাদ্দির ও তাফসীরকারণের ব্যাখ্যা ও মতামত আমি এখানে উল্লেখ করলাম। তাঁদের নামের সাথে সাথে তাঁদের জন্ম ও মৃত্যূ তারিখও উল্লেখ করেছি। এ থেকেই ধারণা করা যাবে যে, হিজরী প্রথম শতাব্দী থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দী পর্যন্ত ইসলামের ইতিহারেস শেষ্ঠ আলেমগণ এর মধ্যে শামিল আছেন। হিজরী চতুর্দশ শতাব্দীর আলেম সমাজের মতামতও আমি এখানে উল্লেখ করতে পারতাম, কিন্তু ইচ্ছা করেই তাঁদেরকে বাদ দিয়েছি। কেননা তাঁরা মীর্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর সমসাময়িক এবং হয়তো অনেকে বলতে পারেন যে, মীর্জা সাহেবের বিরোধিতার মনোভাব নিয়েই তাঁরা খতমে নবুওয়াতের এই অর্থ বিবৃত করেছেন। এজন্য মীর্জা সাহেবের পূর্ববর্তী যুগের আলেম সমাজের মতামতের উদ্ধৃতিই এখানে পেশ করেছি - যেহেতু মীর্জা সাহেবের সাথে তাঁদের বিরোধের প্রশ্নই উঠতে পারেনা।

এসব মতামত থেকে একথা চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, হিজরী প্রথম শতাব্দী থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত সমগ্র মুসলিম জাহান একযোগে খাতামুন নাবিয়্যীন শব্দের অর্থ নিয়েছে “শেষ নবী”। প্রত্যেক যুগের মুসলমানরাই এ একই আকীদা পোষণ করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর পর নবুওয়াতের দরজা চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে। একথা তাঁরা একযোগে স্বীকার করে নিয়েছেন যে, যে ব্যক্তি মুহাম্মদ (সাঃ) এর পর নবী অথবা রাসূল হবার দাবী করলো এবং কোনো ব্যক্তি তার দাবি মেনে নিলে, সে কাফের হয়ে যায়, এ ব্যাপারে মুসলমানদের মধ্যে কোনো যুগে সামান্যতম মতবিরোধও সৃষ্টি হয়নি।

অতএব এ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রত্যেক বিবেক বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তিই ফায়সালা করতে পারেন যে, “খাতামুন নাবিয়্যীন” শব্দের যে অর্থ আরবী অভিধান থেকে প্রমাণিত হয়, কুরআনের আয়াতের পূর্বাপর বর্ণনা থেকে যে অর্থ প্রতীয়মান হয়, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নিজেই যা ব্যাখ্যা করেছেন, সাহাবায়ে কেরাম যে সম্পর্কে মতৈক্য পোষণ করেছেন এবং সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকে আজ পর্যন্ত সমগ্র মুসলিম সমাজ একযোগে দ্ব্যর্থহীনভবে যা স্বীার করে আসছেন, তার বিপক্ষে দ্বিতীয় কোন অর্থ গ্রহণ অর্থাৎ কোনো নতুন দাবিদারের জন্য নবুওয়াতের দরজা উন্মুক্ত করার অবকাশ ও সুযোগ থাকে কি ? এবং এ ধরণের লোকদেরকে কেমন করে মুসলমান বলে স্বীকার করা যায়, যারা নবুওয়াতের দরজা উন্মুক্ত করার নিছক ধারণাই প্রকাশ করেনি, বরং ঐ দরজা দিয়ে এক ব্যক্তি নবুওয়াতের দালানে প্রবেশ করেছে এবং তারা তার নবুওয়াতের ওপর ঈমান পর্যন্ত এনেছে ?

যৌক্তিক প্রমাণ - যুক্তি থেকে বিচার করলে দেখা যায় নবীগণ আসতেন তিনটি কারণে: ১। পূর্ববর্তী নবির প্রচারিত শিক্ষা বিলুপ্ত বা বিকৃত হয়ে গেলে। ২। পূর্ববর্তী নবি কোনো নির্দিষ্ট কাল বা স্থানের জন্য প্রেরিত হলে। ৩। পূর্ববর্তী নবির প্রচারিত শিক্ষা অসম্পূর্ণ অথবা তাতে কোনো সংযোজন বা বিয়োজন প্রয়োজন হলে কিন্তু মুহাম্মদের জন্য এদের একটিরও প্রয়োজন নেই। তাই আর নবী আসার প্রয়োজন নেই। কারণ- ১। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর শিক্ষা ও আদর্শ এখনো বিদ্যমান। ২। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সর্বকালের জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন। তার প্রচারিত শিক্ষা ও আদর্শ কিয়ামত পর্যন্ত বিদ্যমান থাকবে। ৩। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রচারিত শিক্ষা ও আদর্শ পরিপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ। এতে বিন্দুমাত্র অসম্পূর্ণতা নেই। কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, আজ আমি (আল্লাহ) তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্মকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের উপর আমার নিয়ামতকে সম্পূর্ণ করলাম ও ইসলামকে তোমাদের ধর্ম হিসাবে মনোনীত করলাম। সূরা মায়েদা, আয়াত নং-৩। সূতরাং কেউ যদি নিজেকে নবী দাবী করে মত প্রকাশ করে এবং তার অনুসারী হওয়ার জন্য সাধারণ মুসলিমদের আহবান করে তাহলে অবশ্যই তাকে কাফের বলতে হবে না হয় ঈমান হারা হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে এধরনের গোমারাহী মত থেকে ঈমানকে হেফাজত করুন।

লেখক : প্রভাষক (আরবি), মান্দারী ফাযিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা, খতীব, কালেক্টরেট জামে মসজিদ, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়