বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ১০ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

ইসলামে প্রযুক্তির ব্যবহার
অনলাইন ডেস্ক

সব নবী-রাসুলই তাদের যুগে তৎকালীন প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়েছেন। তারা মহান সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা আল্লাহতায়ালার বিধান প্রচার-প্রসারে প্রযুক্তির আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। উম্মতকে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার শিখিয়েছেন। মহান আল্লাহর বাণী মানুষের কাছে পৌঁছিয়েছেন। মুসা (আঃ)-এর সময় জাদুর প্রভাব ছিল অধিক। তিনি সে যুগের প্রেক্ষাপটে আল্লাহ প্রদত্ত মুজেজা ব্যবহার করে ফেরাউন ও তার সম্প্রদায়ের নিকট দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন। ফলে অসংখ্য জাদুকর আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছিল। ঈসা (আঃ)-এর সময়ে চিকিৎসাবিদ্যার প্রচলন ছিল বেশি। তিনি তাই আল্লাহ প্রদত্ত চিকিৎসাবিদ্যার ব্যবহারের মাধ্যমে দাওয়াত দিয়েছেন। মৃতকে আল্লাহর হুকুমে জীবিত করে দেখানোর প্রযুক্তির মাধ্যমে দাওয়াতি কাজ করেছেন (সুরা মায়েদা, আয়াত ১১০)

সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে আল্লাহতায়ালা সারাজাহানের জন্যে রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছিলেন। তিনি এ ধরণীতে এসে মুশরিক, ইহুদি সবাইকে দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন। দাওয়াতদানে তিনি তৎকালীন প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন। সাফা পাহাড়ে উঠে তিনি মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন। সে যুগে সাহিত্যের প্রভাব ছিল বেশি। তিনি উচ্চাঙ্গের আরবি সাহিত্যের ব্যবহার করেই মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন।

ইসলাম চির আধুনিক। প্রলয়কাল পর্যন্ত পৃথিবীতে যত আধুনিকতার সয়লাব ঘটবে, তার সবকিছুর ইঙ্গিত ইসলামে রয়েছে। বিজ্ঞানের উন্নতির এই যুগে ইসলাম প্রচারের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অল্প সময়ে, অল্প কষ্টে অসংখ্য মানুষের কাছে দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া যায়। একথা বলা অত্যুক্তি হবে না যে, আধুনিক মাধ্যমগুলোতে ইসলামের সহিহ আকিদার মানুষ কম আসায় এক্ষেত্রে সুযোগ নিচ্ছে বিভিন্ন ভ্রান্ত দল ও গোষ্ঠী। তাদের থেকে তরুণ প্রজন্মকে বাঁচাতে আধুনিক মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে সঠিক ইসলামকে মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তির বিভিন্ন মাধ্যমকে কিভাবে সঠিক পথে পরিচালনা করা যায় এবং কিভাবে ইসলাম প্রচারে ব্যবহার করে ধর্মীয় মূল্যবোধকে বেগবান করা যায়। এ ব্যাপারে গবেষক, চিন্তাবিদ ও ইসলামিক স্কলারগণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।

১. টেলিভিশন : ইসলামি সমাজব্যবস্থার একক হলো পরিবার। সেই পরিবারের অন্যতম বিনোদন মাধ্যম হলো টেলিভিশন। এ মাধ্যমে ইসলাম প্রচারের গুরুত্ব অপরিসীম। এ মাধ্যমের অপব্যবহারগুলো সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করার পাশাপাশি একে ইসলাম প্রচারের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করতে সত্যিকার নবী-রাসুলপ্রেমিক, গবেষক, চিন্তাবিদ ও নেতৃবৃন্দ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। ইসলামি বিভিন্ন অনুষ্ঠান তথা হারামাইন শারিফাইনের বিশুদ্ধ ইসলামি প্রোগ্রাম, কোরআন তেলাওয়াত, পবিত্র হজের কার্যাদি, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলত সম্পর্কীয় স্থানসমূহ বিশেষ করে মসজিদুল হারাম, মসজিদে নববি, মসজিদুল আকসাসহ তামাম পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও উদযাপিত বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান প্রচারে বেসরকারি টিভি চ্যানেলসমূহ অনবদ্য কার্যকরি ভূমিকা পালন করতে পারে।

২. রেডিও : হাতের কাছে সর্বক্ষণ সহজলভ্য মোবাইলের কল্যাণে অধুনা এ মাধ্যমের ব্যাপ্তি বেড়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এটি এমন একটি মাধ্যম যেটাতে ইসলামি কোনো চ্যানেল নেই। অথচ অন্যান্য মিডিয়ার তুলনায় এটার খরচ কম হলেও এর ব্যাপ্তি বা প্রভাব অনেক বেশি। অত্যন্ত কম খরচে অল্প সীমানায় (ৎধহমব) সম্প্রচার করতে চাইলে এফএম রেডিও তথা কমিউনিটি রেডিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এ ব্যাপারে মুসলিমদের ব্যক্তিগত বা সামষ্টিক উদ্যোগই পারে এ মাধ্যম ব্যবহার করে ইসলাম সারা বিশ্বে প্রচার করতে।

৩. প্রিন্ট মিডিয়া : প্রিন্ট মিডিয়া দ্বীন প্রচারের গুরুত্বপূর্ণ অবলম্বন। সমাজের পরিবর্তনে ও সমাজে ভালো কিছু প্রচলনের ক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা স্থায়ী ভূমিকা রাখতে পারে প্রিন্ট মিডিয়া। ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রেখে এবং ইসলামের প্রতি সহানুভূতিশীল দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক প্রকাশনা নেই বললেই চলে। এ সুযোগে দেশের অসংখ্য বাতিল সম্প্রদায়ের ভ্রষ্ট আকিদা ও ঈমান বিধ্বংসী মতবাদ মানুষের মন-মগজে সহজেই প্রবেশ করছে। আমাদের মুসলিম শিশুদের মাঝেও এ চিন্তাভাবনা প্রবেশ করেছে। এর ফলে আমরা শঙ্কিত যে, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম সত্যিকার মুসলিম থাকবে কি-না! তাই মিডিয়ায় এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে ইসলামের কাজে লাগাতে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। বিত্তবান মুসলিমদের এগিয়ে আসার পাশাপাশি মেধাবীদেরও এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে ইসলামের কাজে লাগাতে হবে। সেই সাথে শিশুদের ইসলামমুখী করতে শিশুতোষ পত্রিকা প্রকাশ করতে হবে এবং তা সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে।

৪. কম্পিউটার : ইসলাম প্রচারের অন্যতম মাধ্যম হলো কম্পিউটার। বর্তমান বিশ্বে কম্পিউটার এমন এক প্রযুক্তির নাম পৃথিবীর সবকিছুতেই যার ছোঁয়া অপরিহার্য। এর অবদান অনস্বীকার্য। পৃথিবীর সব যন্ত্রই বর্তমানে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত তথা কম্পিউটারের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সাহায্যে পরিচালিত। লেখাপড়া, সাহিত্যচর্চা, সাহিত্যকলা সবকিছুতেই কম্পিউটার প্রসারিত করেছে তার সাহায্যের হাত। উন্নত বিশ্বে কৃষি, বাণিজ্য, চাকরি থেকে নিয়ে হেন কোনো পেশা নেই, যাতে কম্পিউটারের সাহায্য নেওয়া হয় না। এ মাধ্যমকে ইসলামের প্রচার ও প্রসারে অনেক সহজে ও সফলতার সাহায্যে ব্যবহার করা যেতে পারে। কম্পিউটারের মাধ্যমে আজ কোরআন, হাদিস, বিভিন্ন ইসলামি রেফারেন্স গ্রন্থ পড়া ও সংরক্ষণ করা, ভিডিও দেখা, অডিও শোনা প্রভৃতি অনেক সহজতর হয়েছে। আগে কোরআনের আয়াত বা হাদিসের ইবারত সংগ্রহ করা অনেক কঠিন ছিল। আজ তা অনেক সহজতর হয়েছে। কোরআন-হাদিস অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সফটওয়্যার রয়েছে। এগুলোতে সহজেই একটি সুরা থেকে অন্য সুরাতে গমন করা যায়। বিভিন্ন আয়াত বের করা যায়, বিভিন্ন শব্দ দিয়েও আয়াত বের করা যায়। হাদিসের ক্ষেত্রেও এরকম সফটওয়্যার বিদ্যমান। বাংলা ভাষায়ও কোরআন-হাদিসের অনেক ওয়েব, সফটওয়্যার, অ্যাপ বিদ্যমান। এগুলোর যথাযথ প্রচার ও সহযোগিতায় এগিয়ে আসা আমাদের কর্তব্য। কোরআন, হাদিস ও ইসলামি রেফারেন্স-এর ক্ষেত্রে ‘মাকতাবা শামেলা’ সফটওয়্যার অসাধারণ। এতে বিভিন্ন বিষয়ের হাজার হাজার গ্রন্থ ও পত্র-পত্রিকা মওজুদ রয়েছে। আধুনিক যুগে ইসলামি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এর ব্যবহার জানা আবশ্যক।

৫. ওয়েব মিডিয়া : ওয়েব মিডিয়ায় মুসলমানদের অবস্থান খুব দুর্বল। বিশেষ করে নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধের চর্চা এখানে খুবই নগণ্য। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা যায়, অমুসলিম ও ইহুদিদের সাইট মুসলমানদের সাইটের তুলনায় ১২০০ গুণ বেশি। অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার সয়লাব এতই বেশি যে, অল্প কিছু মুসলিম সাইটের অবস্থান সে তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। বাংলা ভাষায়ও ইসলামের ওপর ওয়েবসাইটের সংখ্যা অতি নগণ্য। যেগুলো রয়েছে তার মানও অনেক কম। অনেক ওয়েবসাইট নিয়মিত আপডেট হয় না। ওয়েব মিডিয়ার অন্যতম উপাদান অনলাইন নিউজ-এর ক্ষেত্রে ইসলামি ভাবধারাসম্পন্ন পোর্টাল-এর অত্যধিক অভাব পরিলক্ষিত হয়। এছাড়া ইসলাম বিষয়ে বিভিন্ন ব্লগ, ওয়েবসাইট প্রভৃতিরও সংখ্যা অনেক কম। এগুলোর প্রচার-প্রসারে আরও অনেক ওয়েবসাইট, ব্লগ গঠনে এগিয়ে আসার পাশাপাশি নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে।

অনলাইন মিডিয়ায় বিভিন্ন বইয়ের পিডিএফ, মোবি, বই প্রভৃতি প্রকাশ করার প্রয়োজনীয়তা ক্রমাগত বাড়ছে। যেহেতু অনৈসলামি শক্তি বিভিন্ন সময়ে ওয়েবে ইসলাম প্রচারকারী সাইটকে বন্ধ করে দেওয়ার অপপ্রয়াস চালায়, সেক্ষেত্রে সবসময় এগুলোর ব্যাকআপ রেখে কাজ করা আবশ্যক। ওয়েবে শুধু আর্টিকেল প্রকাশই নয়, ইসলামি নীতিমালার বিষয়গুলোর ওপর অডিও, ভিডিও, প্রেজেন্টেশন প্রভৃতি প্রকাশ ইসলামের মূলধারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আদর্শ ও তাসাউফ তথা আধ্যাত্মিক ফলপ্রসূ প্রচার-প্রসারের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনতে পারে। বিভিন্ন বিষয়ের ওপর উইকিপিডিয়া একটি মুক্ত গ্রন্থাগার। ইসলামি বিষয়ের ওপর আর্টিকেলগুলো এই সাইটে সবচেয়ে অবহেলিত। তরুণ সমাজের উচিত এটিকে সমৃদ্ধকরণে এগিয়ে আসা।

৬. ই-মেইল : ই-মেইলের মাধ্যমে অসংখ্য মানুষের কাছে ইসলামের বাণী মুহূর্তেই পৌঁছানো যায়। যত বড় লেখাই হোক না কেন তা লিখে মানুষকে সত্যিকারে দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া যায়। ই-মেইল-এ গ্রুপ সৃষ্টি করার মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে গ্রুপ মেসেজ আদান-প্রদান করা যায়। জিমেইলের ফাইল হোস্টিং সার্ভিস গুগল ড্রাইভের মাধ্যমে ফাইল সংরক্ষণ করা যায়। এমনকি বিভিন্ন ডকুমেন্টকে ড়িৎফ ফরম্যাটে রূপ দেওয়া যায়।

৭. ফেসবুক : ফেসবুকের জনপ্রিয়তা এখন আকাশচুম্বী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো সামাজিক যোগাযোগের চেয়ে নারী-পুরুষের অবৈধ যোগাযোগ, নারী-পুরুষের অর্ধনগ্ন ছবি বা ভিডিও প্রকাশের মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। যা আমাদের সামাজিক অবক্ষয়কে ত্বরান্বিত করছে। অথচ অশ্লীলতা সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, নিশ্চয়ই তাদের জন্য ইহকালে ও পরকালে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ (সুরা নূর, আয়াত ১৯) স্যোশাল মিডিয়াগুলো যদিও ওয়েব মিডিয়ার অন্তর্ভুক্ত, তবুও এর গুরুত্ব ও পরিব্যাপ্তি অনেক হওয়ায় তার আলাদা আলোচনা গুরুত্বের দাবি রাখে। বর্তমানে শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত এ মিডিয়ায় আসক্ত। এ মিডিয়ার মাধ্যমে ইসলাম প্রচার অনেক সহজ এবং অনেক দ্রুত গতিতে তা ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এ মিডিয়ার সঠিক ব্যবহারের উদাহরণ অপব্যবহারের তুলনায় অনেক কম। ফেসবুকে লেখা, ছবি, ভিডিও, নোট (বড় লেখা) প্রকাশ করে দ্বীনে হকের দাওয়াতের কাজ করা যায়। এক্ষেত্রে দাওয়াতের পাশাপাশি অনৈসলামি মতবাদকে খণ্ডনও করা যায়। তবে ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে সৌজন্য, শালীনতা, মাধুর্যতা বজায় রাখা আবশ্যক। সবসময় বিরোধিতামূলক বা খণ্ডনমূলক প্রচার নয়; বরং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দাওয়াত দেওয়া অনেক বেশি কার্যকর। দাওয়াতের ক্ষেত্রে ইসলামি মূলনীতি অনুসরণ করে সঠিক তথ্য-প্রমাণসহ আলোচনা দাওয়াতকে বেগবান করবে বলে আশা করা যায়। এছাড়াও অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া যেমন টুইটার, বেশতো, উম্মাহল্যান্ড, লিংকডইন, গুগল প্লাস, ইন্সট্রাগ্রামেও ইসলাম বিষয়ক লেখা, ছবি পোস্ট করা সময়ের দাবি।

৮. ইউটিউব : ইউটিউব এখন বিশ্বজনীন মাধ্যম। মানব মনে দাগ কাটার ও রেখাপাত করার ক্ষেত্রে দেখা ও শোনার প্রভাব অত্যধিক বেশি। এজন্যই মাল্টিমিডিয়ার প্রয়োগ অনেক বেশি প্রয়োজন। ভিডিও প্রকাশ করে তা প্রচার করলে দাওয়াতের প্রসার অনেক বৃদ্ধি পায়। কোরআনের বিভিন্ন আয়াত, তাফসির, বিষয়ভিত্তিক আলোচনা, ইসলামি হামদ, না’ত প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। এসব রেকর্ড করে ইউটিউব, ডেইলিমোশন, ভিডিও প্রভৃতি সাইটে আপলোড করে প্রচার করা যেতে পারে। বড় বড় ভিডিওর তুলনায় ছোট ছোট প্রশ্নোত্তর বা ভিডিওর প্রভাব অনেক বেশি। শিশুদের আকর্ষণ বৃদ্ধির জন্য অনুমোদনযোগ্য কার্টুনও প্রকাশ করা যেতে পারে। এছাড়া শিশুদের জন্য ছড়া, বিভিন্ন ইসলামি গল্প তথা কোরআন, সুন্নাহ, ভিত্তিক তাজকিরাতুল আম্বিয়া, তাজকিরাতুল আউলিয়া, নীতি গল্পসমূহ বিদগ্ধ ইসলামি পণ্ডিত ও গবেষকের মাধ্যমে ভিডিও করে প্রকাশ করলে তা শিশুদের মনোজগতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

৯. মোবাইল : আধুনিক প্রযুক্তির অন্যতম উপাদান হলো মোবাইল। যা মানুষের মাঝে যোগাযোগের ক্ষেত্রে দূরত্বকে জয় করেছে। কিন্তু মোবাইলের মাধ্যমে এখন কথা বলার চেয়ে অপসংস্কৃতির প্রচার, নগ্নতাকে উসকে দেয়া, ব্লাকমেইলিং, অশ্লীল কার্যকলাপ যেন নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে যে স্মার্ট ফোন ব্যক্তিকে স্মার্ট করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারত, তা আজ হয়ে দাঁড়িয়েছে পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার অন্যতম উপকরণ।

মোবাইল সিম কোম্পানিগুলোর লোভনীয় অফার ও এসবের অপব্যবহার তরুণ সমাজকে ভয়াবহ বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তারা ভুলেই যাচ্ছে পরকালে এসব কথা ও কাজের হিসাব হবে এবং এসবের রেকর্ড থাকবে। আল্লাহ বলেন, ‘মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে, তার জন্য তৎপর প্রহরী তার নিকটেই রয়েছে।’ (সুরা কাফ, আয়াত ১৮)

আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের এক নব আবিষ্কার হলো মোবাইল ফোন। ধনী-দরিদ্র, নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতি, শিশু-কিশোর সকলের হাতেই এখন মোবাইল। মোবাইল ফোন যেন আজকাল জীবনের একটি আবশ্যিক অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এটি মানুষের জীবনকে করেছে গতিময়। আগের জমানায় যে কাজে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হতো, বর্তমানে তা মুহূর্তের মধ্যেই পরিসম্পন্ন হয়। এদিকে লক্ষ্য করলে মোবাইল অত্যন্ত জরুরি বৈজ্ঞানিক যন্ত্র বিশেষ। কিন্তু এর অপব্যবহারও কম নয়! মোবাইল এখন শুধু দূরালাপনি যন্ত্রই নয়, এটি এখন মিনি কম্পিউটারের রূপ ধারণ করেছে। ফলে এর বহুমুখী ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। মোবাইল সঠিকভাবে ব্যবহার করে এটিকে দাওয়াতের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করা যায়। বিশেষ করে স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে ইসলামের অনেক বিষয় জানা, মেনে চলা সুবিধাজনক।

বর্তমানে অনেক সহজেই কোরআন-হাদিসের বাণীগুলো পড়া ও সার্চ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কোরআন ও হাদিসের এ সংকলনগুলো বাংলায় সহজলভ্য। এখন সহজেই সালাতের সময়সূচি, সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত প্রভৃতি জানা যায়। স্মার্টফোনের মাধ্যমে ইসলামি লেকচার, গজল, টিউটোরিয়াল-এর অডিও-ভিডিও শোনা ও দেখা যায়। একটি মাত্র ছোট্ট মেমোরীতে অসংখ্য বক্তব্য ধারণ করা যায়। সেই সাথে অতি সহজেই তা অন্যের কাছে পৌঁছিয়ে প্রচার করা যায়।

অ্যান্ড্রয়েড ফোনের অ্যাপগুলোর মাধ্যমে ইসলাম চর্চা অনেক সহজ হয়েছে। ইসলাম বিষয়ক অ্যাপগুলোতে কোরআনের বিভিন্ন অনুবাদ, হাদিসের গ্রন্থ, ফাতাওয়ার কিতাব, দৈনন্দিন জীবনের দোয়া, তাফসির, বিশুদ্ধ হাদিস গ্রন্থসমূহ নবী-রাসুল ও আউলিয়ায়ে কেরাামের জীবনী, মাসয়ালা-মাসায়েল প্রভৃতি বিষয় রয়েছে। এগুলোর মধ্যে বাংলা ভাষায় হিসনুল মুসলিম অ্যাপ, হাদিস বিডি অ্যাপ, আই হাদিস, বাংলা কোরআন প্রো প্রভৃতি অন্যতম। এসবের মাধ্যমে ইসলামি জ্ঞানার্জন করা সহজ হয়েছে। বিভিন্ন কাজের ফাঁকে, ভ্রমণে ও অবসর সময়ে এক ক্লিকেই এসব পড়া যায়। শুধু পড়াই নয়, অডিও ডাউনলোডের মাধ্যমে বিখ্যাত ক্বারিদের তেলাওয়াত শোনা এখন অনেক সহজ হয়েছে।

অ্যান্ড্রয়েড ফোনের মাধ্যমে পিডিএফ, ইপাব, মোবি প্রভৃতি বিভিন্ন ফরম্যাটের পিডিএফ পড়া যায়। ইসলামের অসংখ্য বিষয়ে বর্তমানে পিডিএফ বিদ্যমান। হাতের কাছেই এসব রয়েছে। অথচ এসব উপকারী বিষয়কে পরিত্যাগ করে আমরা শয়তানি ওয়াসওয়াসায় পড়ে অনৈসলামিক বিষয়ে আগ্রহী হচ্ছি। ইসলামি বিষয়গুলো অন্যের মাঝে প্রচলনের জন্যে আমাদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত।

১০. ইন্টারনেট : এটা বিশ্বকে একই নেটওয়ার্কের মধ্যে এনেছে। এটাও অপব্যবহারের শিকার। ফলে এই প্রযুক্তির কুফলও অধিক। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে কিশোররাও সহজেই পর্ণোগ্রাফীতে নিমজ্জিত হচ্ছে। এর খারাপ প্রভাব পড়ছে কিশোরদের মন-মগজে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন অশ্লীল অডিও, ভিডিও প্রচারের ফলে অশ্লীলতার ব্যাপক ছড়াছড়ি হচ্ছে। ফলে নারীর শ্লীলতাহানি, ধর্ষণ, ইভটিজিং, এসিড সন্ত্রাস, হত্যা-গুম ইত্যাদি বৃদ্ধি পেয়েছে।

তাই প্রযুক্তির অবদানকে খুব কম মানুষই সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারছে। আগে এসব ঈমান বিধ্বংসী বিষয়গুলো বিরল ছিল। কিন্তু ইন্টারনেটের কল্যাণে তা হাতের মুঠোয় এসেছে। কিছুদিন আগের এক জরিপে জানা যায়, বিপুল সংখ্যক স্কুল শিক্ষার্থীরা পর্ণোগ্রাফীর সাথে জড়িত। এছাড়া স্মার্টফোনের ওয়াইফাই শেয়ারিং (shareit, aûshare etc) ও ব্লু-টুথের (Bluetooth) মাধ্যমে এক মোবাইল থেকে অন্য মোবাইলে সহজেই তা ছড়িয়ে যাচ্ছে। পরিবারের প্রধানদের যথাযথ মনিটরিং-এর অভাবে এগুলো আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ইসলাম প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান চর্চাকে গুরুত্ব দিয়েছে। প্রয়োজনে বিদেশ থেকে প্রযুক্তি শিক্ষালাভ করা যেতে পারে। কিন্তু স্বনির্ভর হওয়ার শক্তি অর্জন না করে পরজাতির মুখাপেক্ষী থাকা গ্রহণযোগ্য নয়। উন্নয়নের একমাত্র সোপান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে স্বনির্ভর হওয়া প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য আবশ্যক।

লেখক : আলোচক, বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন; বিভাগীয় প্রধান (হাদিস), আল ফাতাহ পাবলিকেশন্স

০১৭১১ ৩৩৩৯৯৬

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়