প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০২৩, ০০:০০
শব-ই-বরা’আত ফারসি ‘শব’ শব্দের অর্থ রাত এবং ‘বরাত’ শব্দের অর্থ সৌভাগ্য। আরবিতে বলে ‘লাইলাতুল বরাত’, অর্থাৎ সৌভাগ্যের রজনী। একটি অভিযোগ শবে বরাত কুরআন ও হাদিসের কোথাও নেই।
এ কথার জবাব হলো, কুরআন ও হাদিসের কোথাও শবে বরাত থাকবে কেনো, শবে বরাত কুরআন ও হাদিসের পরিভাষা নয়। যেমন : নামাজ, রোজা, ফেরেস্তা এগুলো কুরআন ও হাদিসের পরিভাষা নয়। কুরআনে ‘লাইলাতুম মুবারকা’। হাদিসে ‘লাইলাতুন নিসফী মিন শা’বান’।
বরকতময় এই ভাগ্যরজনীর (শব-ই-বরা’আতের) একাধিক নাম রয়েছে : ১. লাইলাতুল মুবারাকাহ ২. লাইলাতুন-নিসফে মিন শা’বান ৩. লাইলাতুর রাহমাহ ৪. লাইনাতুস-চেক ৫. লাইলাতুল-জায়িযা ৬. লাইলাতু ঈ'দিল মালাইকাহ ৭. লাইলাতুত-তাকফীর ৮. লাইনাতুল-ইতকি মিনান্নার ৯. লাইলাতুশ-শাফায়াহ এবং ১০. লাইলাতুৎ-তা'যীম। পবিত্র কুরআন মাজীদেরও এমনিভাবে ৫৬টি নাম আছে। কেবল সূরা ফাতিহার নামের সংখ্যা হলো ২৪টি।
পবিত্র কুরআনুলল কারীমে এসেছে, “হা’মীম ! সুস্পষ্ট কিতাবের শপথ। নিশ্চয়ই আমি এই সুস্পষ্ট কিতাবকে বরকতময় রাতে নাজিল করেছি। নিশ্চয় আমি ভীতি প্রদর্শনকারী। এই মুবারক রাতে প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ-হিকমতপূর্ণ কাজের ফয়সালা হয়ে থাকে। (সূরা দুখান : ১-৪)”
আলোচ্য আয়াতে “লাইলাতুম মুবারাকাহ”-এর ব্যাখ্যায় হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, “হা’মীম” অর্থআল্লাহর ফয়সালা, যা কিয়ামত পর্যন্ত সংঘটিত হবে। “আল কিতাবুল মুবীন” অর্থ : আল কুরআন আর “লাইলাতুম মুবারাকাহ” হলো ‘শা’বান মাসের অর্ধেক রাত'(শা’বান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত)। এ রাতটি হলো লাইলাতুল বারা’ত বা শবে বরা’আত। ২৭টি তাফসীরের কিতাবে আলোচ্য আয়াতে বর্ণিত “লাইলাতুম মুবারাকাহ” এবং “ফীহা ইউফরাকু কুল্লু আমরিন হাকীম” দ্বারা লাইলাতুল বারায়াত বা শবে বরা’আত-কে বুঝানো হয়েছে।
হযরত ইকরামা (রাঃ) এবং হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ)-সহ বহুসংখ্যক সাহাবী হযরত ইবন আব্বাস (রাঃ)-এর সাথে সমমত ব্যক্ত করেছেন।
নি¤েœ তার কিয়দংশ তুলে ধরা গেলো : তাফসীরে কুরতুবীতে এসেছে, “লাইলাতুম মুবারাকাহ” বলতে লাইলাতুল ক্বাদরকে বুঝানো হয়েছে। আর কারো কারো মতে, এর দ্বারা “লাইলাতুন নিসফে মিন শা’বান”কে বুঝানো হয়েছে। আর এই “লাইলাতুম মুবারাকাহ”-এর চারটি নাম আছে। যথা : (১) আল্লাইলাইলাতুল মুবারাকাহ (২) লাইলাতুল বারাআত (৩) লাইলাতুচ্চেক এবং (৪) লাইলাতুল ক্বাদর। এই রাতটিকে এ কারণে “লাইলাতুম মুবারাকাহ” নামে অভিহিত করা হয়েছে। যেহেতু আল্লাহ তা’আলা এই রাতে বান্দাদের উপরে তাঁর বিশেষ রহমত, বরকত, কল্যাণ নাজিল করেন এবং সওয়াব দান করেন।” (তাফসীরে কুরতুবী, খ. ১৬, পৃ. ১২৬)।
তাফসীরে কুরতুবীতে আরো এসেছে, “কিতাবুল আরুসের গ্রন্থকার হযরত আয়েশা (রাঃ)এর হাদিস উল্লেখ করেছেন এবং এ কথা গ্রহণ করেছেন যে, “এই রাতে প্রতিটি বস্তুর হিকমতপূর্ণ ফায়সালা হয়ে থাকে।” ফীহা ইউফরাকু কুল্লু আমরিন হাকীম” এই রাত দ্বারা আয়াতে বলতে শবে বরা’আত-কেই বুঝানো হয়েছে। আর করো মতে, লৌহে মাহফুজ থেকেই লাইলাতুল বরা'তে সিদ্ধান্ত হয় এবং তা বাস্তবায়নের জন্য লাইলাতুল কাদরে ফিরিশতাদের হাতে অর্পণ করা হয়। রিজিকের কপি হযরত মিকাঈলের কাছে দেয়া হয়। যুদ্ধ-বিগ্রহের কপি হযরত জিব্রাঈলের নিকট দেয়া হয়। অনুরূপভাবে ভূমিকম্প, বিদ্যুৎ চমকানো এবং ভূমি ধ্বসের কপি এবং আমলের কপি ইসমাঈল ফিরিশতার হাতে দেয়া হয়। এই ফিরিশতা হলো পৃথিবীর আকাশের দায়িত্বে নিয়োজিত ফিরিশতা। তিনি অনেক বড় মাপের দায়িত্বশীল ফিরিশতা। আর বিপদাপদণ্ডবালা-মুসীবতের কপি মালাকুল মাউত হযরত আজরাঈল (আঃ)-এর নিকট অর্পণ করা হয়।” (আল জামিয় লি আহকামিল কুরআন, খ. ১৬, পৃ. ১২৭, ১২৮; তাফসীরে রাযী, খ. ১, পৃ. ৪০০৯, ৪০১১, ৪৮০১; তাফসীরে ইয্য ইবনুস সালাম, খ. ১, পৃ. ১৩৫৭; তাফসীরে সিরাজুম মুনীর, খ. ৩, পৃ. ৪৫৯; তাফসীরে আলুসী, খ. ১৮, পৃ. ৪২৭; তাফসীরে আবিস সাউদ, খ. ৮. পৃ. ৫৮; তাফসীরে মাফাতীহুল গাইব, খ, ৩২, পৃ. ৩৫. . ২৭, পৃ. ২০৩, ২০৫; তাফসীরে রুহুল মা'আনী, খ. ২৫, পৃ. ৩১২, ১১৩; তাফসীরে রুহুল বায়ান, খ. ৮, পৃ. ৩১১, ৩১৩; তাফসীরে হাক্বী, খ. ১৩, পৃ. ২৪৪; তাফসীরে নাইশাপুরী, খ. ৫, পৃ. ৪৯০; তাফসীরে আল যাওয়ারদী, খ. ৬, পৃ. ৩১৩। )
তাফসীরে কাশশাফে এসেছে, “আর “লাইলাতুম মুবারাকাহ’ বলতে লাইলাতুল ক্বাদরকে বুঝানো হয়েছে। কারো কারো মতে, শা’বান মাসের অর্ধেক তথা পনেরতম রাতকে বুঝানো হয়েছে। আলোচ্য আয়াতে ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ বলতে চারটি নামের কথা বলা হয়েছে।” যথা : ১. আল লাইলাতুল মুবারাকাহ ২. লাইলাতুল বারা’আত ৩. লাইলাতুস চেক এবং ৪. লাইলাতুর রামাহ। লাইলাতুল বারা’আত এবং লাইলাতুল কাদরের মধ্যের সময় হলো চল্লিশ রাতের ব্যবধান। কারো কারো মতে এই রাতের নাম হলো, লাইলাতুল বারা’আত বা লাইলাতুচ্চেক। ব্যক্তি যখন তার কর আদায় করে তখন তার সম্পর্কে সার্টিফিকেট দেয়া হয় যে, সে দায়িত্ব থেকে মুক্ত। অনুরূপভাবে শা’বানের পনেরতম রাতের ইবাদতকারীর জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে বারা’আতের ঘোষণা দেয়া হয় যে, সে যাবতীয় অপরাধ থেকে মুক্ত। মহান আল্লাহ তাঁর মু'মিন বান্দাদের জন্য এই রাতে বারা’আত বা মুক্তির ফায়সালা করে থাকেন। আর কারো কারো মতে এই রাতটি পাঁচটি বৈশিষ্টের সাথে সম্পৃক্ত। যার ভিত্তিতে মহান আল্লাহ বান্দাদের ফায়সালা করে থাকেন এবং এই রাতে ইবাদতকারী বান্দাদের সওয়াব ও ফযীলত দিয়ে থাকেন।
নবী কারীম (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি শবে বরা’আতের রাতে একশত রাকা'আত নামায পড়বে আল্লাহ পাক তার মাগফিরাতের জন্য একশতজন ফিরিশতা নিয়োজিত করবেন।” (আল জামিয় লি আহকামিল কুরআন, খ. ১৬, পৃ. ১২৭, ১২৮; তাফসীরে রায়ী, খ. ১, পৃ. ৪০০৯, ৪০১১, ৪৮০১; তাফসীরে ইযয ইবনুস সালাম, খ. ১. পৃ. ১৩৫৭ : তাফসীরে সিরাজুম মুনীর, খ. ৩, পৃ. ৪৫৯; তাফসীরে আলুসী, খ. ১৮, পৃ. ৪২৭; তাফসীরে আবিস সাউদ, খ. ৮, পৃ. ৫৮; তাফসীরে মাফাতীহুল গাইব, খ, ৩২, পৃ. ৩৫, খ. ২৭, পৃ. ২০৩, ২০৫; তাফসীরে রুহুল মা'আনী, খ. ২৫, পৃ. ৩১২, ১১৩; তাফসীরে রুহুল বায়ান, খ. ৮, পৃ. ৩১১, ৩১৩, তাফসীরে হাক্বী, খ. ১৩, পৃ. ২৪৪; তাফসীরে নাইশাপুরী, খ. ৫, পৃ. ৪৯০; তাফসীরে আল মাওয়ারদী, খ. ৬, পৃ. ৩১৩। )
পবিত্র হাদিস থেকে
দলিল নং-১ : ইমাম তিরমিযী (রহঃ) “লাইলাতুন নিসফে মিন শা’বান” সম্পর্কে স্বতন্ত্রভাবে অধ্যায় উল্লেখ করে এ পর্যায়ে হাদিস এনেছেন, “হযরত মা আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক রাতে আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে হারালাম কোথাও তাঁকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। ঘর থেকে বের হয়ে দেখলাম যে, তিনি জান্নাতুল বাকী'(মদীনায়) কবরস্থানে অবস্থান করছেন। তিনি আমাকে বললেন, হে আয়েশা ! তুমি কি ভয় পাচ্ছ যে, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল; তোমার ওপরে অন্যায় করবেন? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল ! আমি ধারণা করেছিলাম যে, আপনি আপনার কোনো স্ত্রীর ঘরে অবস্থান করছেন। অতঃপর তিনি বললেন, নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাবারক ওয়া তা’আলা অর্ধ শা’বানের রাতে (শবে বরা’আতে) পৃথিবীর আকাশে অবতীর্ণ হন এবং বনু কালবের মেষপালের পশম পরিমাণের চেয়েও অধিক পরিমাণে তাঁর বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দেন।” (তিরমিযী, খ. ১, পৃ. ১৫৬, ইবন মাজাহ, পৃ. ৯৯; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, খ. ১০, পৃ. ৪৩৭, ৪৩৮, হাদিস নং ৯৯০৭; মুসনাদে আহমদ, খ. ৬, পৃ. ২৩৮)
হানাফী ও অন্যান্য আলিমগণের নিকট এই হাদিসখানা “হাসান।” এর প্রত্যেক বর্ণনাকারী নির্ভযোগ্য।”(শবে বরাতের তত্ত্ব কথা, জাষ্টিস মৃতী তকী ওসমানী, পৃ. ২১)
আলোচ্য হাদিসে অবস্থিত “লাইলাতুন নিসফে মিন শা’বান”-এর ব্যাখ্যায় লক্ষ লক্ষ দেওবন্দী আলিমের ওস্তাদ শাইখুল হাদিস আল্লামাহ সাইয়্যেদ আনওয়ার শাহ কাশ্মিরী (রহঃ) তদ্বীয় কিতাব আল আরফুশ-শাজী কিতাবে লিখেছেন, “লাইলাতুন নিসফে মিন শা’বান” অধ্যায়ে বর্ণিত, এই রাতটি হলো “লাইলাতুল বারা’আত (শবে বরা’আত)।” শবে বরা’আত র ফযীলত সম্পর্কিত সমস্ত হাদিস সহীহ। আর বিভিন্ন পুস্তকের লেখকবৃন্দ যারা “বরা’আত”-সংক্রান্ত হাদিসকে যয়ীফ বা মুনকার বলেছেন, এদের কথার কোনো মূল ভিত্তি নেই।”(তিরমিযী, খ. ১, পৃ. ১৫৬, প্র : টীকা নং ২)
দলিল নং-২ : “হযরত আলী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যখন অর্ধ শা’বানের রাত আসবে তখন তোমরা রাত্র জেগে ইবাদত করো এবং দিনের বেলায় রোজা রাখ। কেননা, আল্লাহ তা’আলা এ রাতে সূর্যাস্তের পর পরই পৃথিবীর আসমানে (দুনিয়ার আকাশে) আসেন এবং তিনি আহ্বান জানাতে থাকেন। কোনো ক্ষমাপ্রার্থী নেই কী? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। কোনো অভাবগ্রস্ত নেই কী? আমি তাকে রিযিক দান করব। কোনো বিপদগ্রস্ত নেই কী? আমি তাকে বিপদ থেকে রক্ষা করব। এভাবে বরা’আতের ভোর রাত পর্যন্ত মহান আল্লাহর আহ্বান চলতে থাকবে।” (ইবন মাযাহ, পৃ. ৯৯)।
দলিল নং-৩ : “হযরত আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস থেকে বর্ণিত : রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, অর্ধ শা’বান রাতে আল্লাহ তা’আলা তার বান্দাদের প্রতি রহমতের নজর দান করেন এবং দু'শ্রেণীর লোক ছাড়া সবাইকে তিনি ক্ষমা করে দেন। একশ্রেণী হলো : মুসলমানদের ক্ষতি সাধনকারী শত্রু, আর দ্বিতীয় শ্রেণী হলো : মানব হত্যাকারী।”(মুসনাদি আহমদ)
দলিল নং-৪ : “হযরত আবূ মূসা আল আশ'আরী (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাঃ)-এর বরা’আতে বর্ণনা করেন যে, তিনি (নবী) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ অর্ধ শা’বানের রাতে দুনিয়াবাসীর প্রতি কৃপাদৃষ্টি দান করেন। তিনি মুশরিক এবং মুসলমানদের মধ্যে ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী ব্যক্তি ছাড়া সকল বান্দাহকে মা'ফ করে দেন।”(ইবন মাজাহ, পৃ. ৯৯)
দলিল নং-৫ : “হযরত ইকরামা (রাঃ) বলেন, 'লাইলাতুম মুবারাকা'-এর অর্থ হলো : লাইলাতুন নিসফে মিন শা’বান-শা’বান মাসের পনেরতম রাত। এ রাতে সারা বছরের বাজেট ঘোষণা করা হয়। জীবিতদের মধ্য থেকে মৃতদের তালিকা প্রস্তুত করা হয় এবং ওই রাতে হাজীদের তালিকাও তৈরি হয়। ওই লিষ্ট থেকে একজনও কম বা বেশি হয় না।” (তাফসীরে রুহুল মায়ানী, খ. ২৫, পৃ. ১৭৪, তাফসীর কুরতুবী, খ. ১৬, পৃ. ১২৭)
দলিল নং-৬ : “হযরত আবূ সা'লাবা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ১৫ শা’বানের রাতে মহান আল্লাহ স্বীয় বান্দাহগণের দিকে মনোনিবেশ করেন এবং মু'মিন বান্দাদের ক্ষমা করে দেন। কিš'পরষ্পরে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারীদের ক্ষমা করেন না।”(বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান, খ. ৩, পৃ. ৩৮১, ৩৮২, হাদিস নং ৩৮৩২; কিতাবুস সুন্নাহ, পৃ. ২২৩, ২২৪)। এই হাদিসখানার অসংখ্য সমার্থক হাদিস রয়েছে এবং এই হাদিসখানা “হাসান”। এর বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য। এটি তাকরীব নামক কিতাবের প্রথম খন্ডের ৪৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে।
আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী (রহঃ) তাঁর তাফসীরে দুররে মানসূরের ৬ খণ্ডের ২৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন।
দলিল নং-৭ : হযরত মুয়াজ বিন জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন-অর্ধ শাবানের রাতে [শবে বরাতে] আল্লাহ তাআলা তাঁর সমস্ত মাখলুকের প্রতি মনযোগ আরোপ করেন। এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ ভাবাপন্ন ব্যক্তি ছাড়া সকলকে ক্ষমা করে দেন।
হাদিসখানা অসংখ্য সহীহ হাদিসের কিতাবে বর্ণিত আছে। যেমন : ১. সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং-৫৬৬৫। ২. মুসনাদুল বাজ্জার, হাদিস নং-২৭৫৪। ৩. মুসনাদে ইসহাক বিন রাহওয়াই, হাদিস নং-১৭০২। ৪. আল মুজামুল আওসাত, হাদিস নং-৬৭৭৬। ৫. আল মুজামুল কাবীর, হাদিস নং-২১৫। ৬. সুনানে ইবনে মাজা, হাদিস নং-১৩৯০। ৭. মুসন্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস নং-৩০৪৭৯। ৮. শুয়াবুল ঈমান, হাদিস নং-৬২০৪)। আলোচ্য হাদিস সমূহের আলোকে এ কথা দিবালোকের ন্যায় হলো যে, ১৫ ই শা’বান বলতে শবে বরা’আতকেই বুঝানো হয়েছে। আর ২০৭টি কিতাবে শবে বরাতের হাদিসখানা বর্ণিত হয়েছে।
সারকথা “লাইলাতুন নিসফে মিন শা’বান” বলতে শবে বারা’আত কেই বুঝানো হয়েছে। সনদের দিক থেকে এবং সমর্থনের দিক থেকে এর প্রত্যেকটি হাদিস অতীব মজবুত এবং শক্তিশালী। অতএব, শবে বারা’আত পালন করা বৈধ এবং জায়িয।
ফিকহ থেকে প্রমাণাদি
হানাফী মতে : ফাতাওয়া গ্রন্থ আলমগীরীতে আছে, কবর জিয়ারতের জন্য চারটি দিন উত্তম। যথা : সোমবার, বৃহষ্পতিবার, জুমুয়াবার (শুক্রবার) এবং শনিবার। জুমুয়াবারে নামাযের পরে জিয়ারত করা খুবই ভাল একটি সময়। শনিবারে সূর্যোদয়ের সময় কবর জিয়ারত করা এবং বৃহস্পতিবারে বেলা দশটায় অথবা আসরের পরে জিয়ারত করা উত্তম। অনুরুপভাবে বকতময় রাত সমূহে বিশেষ করে শবে বরা’আতে জিয়ারত করা নেহায়েত উপকারী।” (আল ফাতাওয়া আল হিন্দিয়াহ, খ. ৫. পৃ. ৩৫০। )
দুররে মুখতার কিতাবে আছে, “দু ঈদের রাতে এবং শবে বরাতে জেগে থেকে ইবাদত করা, রামাযানের শেষ দশ রাত পহেলা জিলহাজ্বের রাতইবাদত করা মুস্তাহাব।” (আদ্দুররুল মুখতার, খ. ২, পৃ. ২৫; রদ্দুল মুহতার, খ. ৫. পৃ. ১৮২)
মারাক্বিল ফালাহ কিতাবে আছে, “শা’বানের পনেরতম রাতে জেগে থেকে ইবাদত করা মুস্তাহাব। কেননা এতে পুরো বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। (মারাকিল ফালাহ, খ. ১, পৃ. ১৭৪)
শাইখ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (রহঃ) বলেছেন, “তিনি'মা সাবাতা বিস সুন্নাহ'কিতাবে এই রাতের ফযীলত সম্পর্কে কতিপয় হাদিস উল্লেখ করার পরে কয়েকজন তাবেয়ীর বাণী ও তাদের আমলসমূহ উল্লেখ করেছেন। আর তা হলো যে, পূর্বের হাদিস সমূহের অনুস্বরণে শবে বরা’আতে জাগ্রত থেকে ইবাদত করা মুস্তাহাব। আর ফাযাইলের ক্ষেত্রে এমন হাদিস সমুহ আমলে দোষের কিছুই নেই। ইমাম আওযায়ীও এমন মত পোষণ করেছেন।” (শবে বরাতের তত্ত্ব কথা, জাষ্টিস মুফতী তক্বী ওসমানী, পৃ. ৮৮)
ফিকহে শাফেয়ী : “ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) বলেন, আমাদের নিকট এই মর্মে হাদিস পৌঁছেছে যে, পাঁচটি রাতে দু'আ কবুল করা হয়। (১) জুমু'আর রাত (বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত) (২) ঈদুল আযহার রাত (৩) ঈদুল ফিতরের রাত (৪) রজবের প্রথম রাত এবং পনের শা’বানের রাত (বরা’আতের রাত)। (কিতাবুল উম্ম লিশ শাফেয়ী, খ. ১, পৃ. ২৩১
রাদ্দুল মুহতার কিতাবে আছে, “শাফেয়ী মাযহাবের কেউ কেউ বলেছেন যে, রাত সমূহের মধ্যে সর্বোত্তম রাত হলো নবী কারীম (সাঃ)-এর পবিত্র বেলাদাত (জন্ম) শরীফের রাত অতঃপর লাইলাতুল ক্বদরের রাত, তারপর পর্যায়ক্রমে নবী (সাঃ)-এর উর্ধ্বাকাশ ভ্রমণের পবিত্র মি'রাজের রাত, ‘আরাফাতের রাত, জুমু'আর রাত, শা’বানের পনেরতম রাত এবং ঈদের রাত। (রাদ্দুল মুহতার, খ. ৮. পূ. ২৮৫)
ফিক্বহে হাম্বলী : “শাইখ ইবনুল মুফলিহ হাম্বলী (রহঃ) বলেন, মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে জেগে থেকে নফল ইবাদত করা মুস্তাহাব। এক দল আলেম বলেছেন, আশুরার রাত, পহেলা রজবের রাত এবং শা’বানের পনেরতম রাতে নফল ইবাদত করা মুস্তাহাব।” (আল মাবদা লি ইবনে মুফলিহ আল হাম্বলী , খ. ২, পৃ. ২৭)
আল্লামা মানসূর আল বাহুতী আল হাম্বলী রচিত “কাশশাফুল কিনা মিন মাতনিল ইকনা” কিতাবে বলা আছে- “শা’বানের পনেরতম রাতে জেগে থেকে ইবাদত করা দু'ঈদের রাতের ইবাদতের অনুরুপ।” (শবে বরাতের তত্ত্ব কথা, জাষ্টিস মুফতী ত্বকী ওসমানী, পৃ. ৪৮। )
ফিক্হে মালেকী : “ইমাম মুহাম্মদ ইবনুলহাজ্ব আল মালেকী (রহঃ) “মাদখাল” গ্রন্থে তাঁর নিজস্ব আমল এভাবে লিখেছেন, তিনি বলেন, এ রাতটি যদিও লাইলাতুল কাদর নয় তথাপিও তা অধিক পরিমাণে সম্মানিত এবং অত্যাধিক বকতময়। সালফে সালেহীন এরাতটিকে প্রচন্ড সম্মান করতেন এবং এই রাতটি আগমনের পূর্বেই তাঁরা এর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। অতএব, এ রাতের সাক্ষাৎ এবং সম্মান রক্ষার্থে পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহন করা অবস্থায় এই রাতটি তাঁদের নিকট উপস্থিত হতো। দ্বীন এবং শরীয়াতের নিদর্শনাবলীর প্রতি তাদের শ্রদ্ধাবোধই এ কথার পরিচায়ক যা পূর্বে উল্লেখিত হয়েছে। এটাই হচ্ছে এই রাতের প্রতি শারীয়াহ বিধিত সম্মান প্রদর্শন।”(আল মাদখাল, খ. ১, পৃ. ২৯২, ২৯৩)
এ রাতে কবর জিয়ারত করা
শবে-বরা’আতে কবরস্থান জিয়ারত করা মুস্তাহাব। কেননা নবী (সাঃ) কে এই রাতে মদীনা মুনাওয়ারার প্রসিদ্ধ কবরস্থান জান্নাতুল বাকীতে পাওয়া গেছে। নবী (সাঃ) এই কবরস্থানের ভেতরে বসে উম্মতের জন্য দু'আ করেছিলেন। এই রাতে ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে মা-বাবার কবরের পার্শ্বে যাওয়া নেহায়েত উপকার এবং সওয়াবের কাজ। এই মুবারক রাতে কবরের অসহায় ব্যক্তিদের জন্য জীবিত ব্যক্তিদের প্রাণখুলে মহান আল্লাহর দরবারে দু'আ করা এবং তাদের জন্য মাগফিরাত কামনা করা উচিৎ।
দেওবন্দী আলেমদের দৃষ্টিতে শবে বরা’আতে কবর জিয়ারত
মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহঃ) সাহেব লিখেছেন যে, “শবে বরা’আতে কবর জিয়ারত করা মুস্তাহাব।” (যাওয়ালুস সুন্নাহ, পৃ. ১০। ২৩৩)
মুফতী শফী (রহঃ) লিখেছেন, “শবে-বরা’আতে কবর জিয়ারত করা সুন্নাত আমলের অন্তর্ভুক্ত। (শবেবরাত, পৃ. ১৫)
শবে বরাত প্রার্থনা এবং আমলের রাত
মক্কাবাসীর আমল, “আল্লামা ফাকেহী বর্ণনা করেছেন যে, শা’বানের পনেরতম রাতের (শবে বরাতের রাতের) ফযীলতের কারণে মক্কাবাসীগণের আমল এবং প্রচন্ড ইবাদতের প্রতি তাদের আগ্রহ আলোচনা করার মত। বর্তমান সময় পর্যন্ত মক্কাবাসীগণ শা’বানের পনেরতম রাতের আমলকে চালিয়ে আসছেন। এই রাতে সাধারণত পুরুষ মহিলা সকলে ঘর থেকে বের হয়ে মসজিদে হারামে আসেন, কা’বার সামনে নামায পড়েন, সাধ্যমত তাওয়াফ করেন এবং তারা ফজর পর্যন্ত কুরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে মসজিদে হারামে পুরো রাত কাটান। এই রাতে এমনকি তারা কেউ কেউ পবিত্র কুরআন খতমও করে থাকেন। আদিকাল থেকেই আহলে মক্কা বা মক্কাবাসী বরাআতের এই রাতে তাদের যতটুকু সুযোগ হয় তারা নামায পড়েন এবং ইবাদত বন্দেগী করতে থাকেন। আর যে ব্যক্তি এই রাতে একশত রাকা'আত নামায পড়বে, প্রত্যেক রাকায়াতে একবার আল হামদুলিল্লাহ এবং দশবার করে সূরা ইখলাস “কুল হুআল্লাহু আহাদ” পাঠ করবে অতঃপর ঐরাতে যমযমের পানি পান করবে এবং তা দিয়ে গোসল করবে, অসুস্থ রোগীর জন্য এই যমযম পানি সংগ্রহ করে নেবে এবং এই রাতের বরকত তালাশ করবে আল্লাহ পাক তার সকল আশা পূরণ করে দেবেন। এ প্রসঙ্গে অসংখ্য হাদিস বর্ণিত হয়েছে। (আখবারু মাক্কা লিল ফাকেহী, খ. ৫. পৃ. ২৩)
সাহাবা-ই-কিরামের বাণী
“হযরত আবূ ইয়াহইয়া তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, আমার নিকট ৩৩ জনের বেশী নবী কারীম (সাঃ) এর সাহাবী হাদিস বর্ণনা করেছেন, তারা সকলে বলেছেন, “যে ব্যক্তি পনের শা’বানের পনেরতম রাতে (শবে বরা’আতের) নামায পড়ল।” হযরত ইবন আবী সালমা তাঁর হাদিসে বর্ণনা করেন যে, “যে ব্যক্তি শা’বানের পনেরতম রাতে একশত রাকা'আত নামায পড়ল এবং একশতবার করে সূরা ইখলাস'কুলহু ওয়াল্লাহু আহাদ'পাঠ করল। নিয়ম এভাবে যে, প্রত্যেক রাকায়াতে দশবার করে “সূরা ইখলাস” পাঠ করে মোট দশ রাকাতে ১০০ বার পাঠ করল, এমন ব্যক্তির মৃত্যু হবেনা যতক্ষণ না আল্লাহ পাক তার নিকট একশতজন ফিরিশতা প্রেরণ করেন। তম্মধ্যে ত্রিশজন ফিরিশতা তাকে জান্নাতের শুভ সংবাদ প্রদান করবেন, ত্রিশজন ফিরিশতা মহান আল্লাহর দরবারে তারজন্য দোযখের আগুনের থেকে পরিত্রাণের দু'আ করতে থাকবেন, ত্রিশজন ফিরিশতা তাকে গুনাহ থেকে নিষ্পাপ করে দেয়ার জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করতে থাকবেন এবং অবশিষ্ট দশজন ফিরিশতা তাকে তার শত্রুর হাত থেকে রক্ষার করার ব্যবস্থা করবেন।” (আখবারু মাক্কা লিল ফাকেহী, খ. ৫, পৃ. ২৭, হাদিস নং ১৭৭৬)
শবে বরা’আত প্রার্থনার রাত
“যখন শা’বানের পনেরতম রাত আসে তখন আহব্বানকারী এই বলে আহবান জানাতে থাকে যে, কোন ক্ষমা প্রার্থী আছ কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। কোন আবেদনকারী আছে কি? আমি তার আবেদন কবুল করে নেব। এ মূহুর্তে যে যা চাবে তাকে তিনি তাই দান করবেন। তবে ব্যভিচারী এবং মুশরিক ক্ষমা পাবে না। (জামিউল আহাদিস, খ. ১, পৃ. ২৫; বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান, খ. ৩, পৃ. ৩৮৩, হাদিস নং ৩৮৩৬)
এই রাতে দু'আ কবুল হয় অনুরুপভাবে শারহুত তাহযীব কিতাবে আছে, “পাঁচটি রাতে দু'আ কবুল হয়। যথা : জুমু'আ রাত, ঈদুল আযহার রাত, ঈদুল ফিতরের রাত, পহেলা রজবের রাত এবং শা’বানের পনেরতম রাত।” (আল মাজমুয়, শারহুত তাহযীব, খ. ৫, পৃ. ৪৫)
অতএব, কুরআন, হাদিস, ইজমা, কিয়াসের আলোকে চার মাযহাবের বিশ্বনন্দিত ইমামগণের তারীকা হলো শবে বরাতের মহাপবিত্র বরকতময় রাতটিতে রাতভর ইবাদত করা। যারা এই রাতে মসজিদ বন্ধ করে রাখে তারা ইবাদত এবং ইবাদতকারীদের শত্রু। এদেরকে সম্মিলিতভাবে বর্জন করা উচিৎ। এ ধরণের ইমামকে ইমাম বানানো কদাচ সঠিক হবে না।
পরিশেষে আবারও একটি হাদিস স্মরণ করিয়ে দেই-আয়িশা ছিদ্দীক্বা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আল্লাহর হাবীব ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামণ্ডএর সাথে কোন এক রাত্রিতে রাত যাপন করছিলাম। এক সময় উনাকে বিছানায় না পেয়ে আমি মনে করলাম যে, তিনি হয়ত অন্য কোন আহলিয়া রাদ্বিয়ালাহু আনহা-এর হুজরা শরীফে তাশরীফ নিয়েছেন। অতঃপর আমি তালাশ করে উনাকে জান্নাতুল বাক্বীতে পেলাম। সেখানে তিনি উম্মতের জন্য আল্লাহ পাকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। এ অবস্থা দেখে আমি স্বীয় হুজরা শরীফে ফিরে এলে তিনিও ফিরে এলেন এবং বললেনঃ আপনি কি মনে করেন আল্লাহর হাবীব ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার সাথে আমানতের খিয়ানত করেছেন? আমি বললামঃ ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আমি ধারণা করেছিলাম যে, আপনি হয়তো আপনার অন্য কোন আহলিয়ার হুজরা শরীফে তাশরীফ নিয়েছেন। অতঃপর হুযুর ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ শা’বানের ১৫ তারিখ রাত্রিতে পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাজিল করেন। অতঃপর তিনি বনী কালবের মেষের গায়ে যত পশম রয়েছে তার চেয়ে বেশী সংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করে থাকেন। (সুনানে তিরমিযি: ২/১২১, ১২২, মুসনাদে আহমাদ: ৬/২৩৮, ইবনে মাযাহ, রযীন, মিশকাত শরীফ)
হাদিসের সনদের মান
ইবন তাইমিইয়্যার ফাওজুল ক্বাদীর, ২য় খণ্ড, পৃ ৩১৭ ২) মধ্য শাবানের রাতে আল্লাহ তাঁর সৃষ্টিলোকের দিকে দৃষ্টি দান করেন এবং সবাইকে মাফ করে দেন, কেবল মুশরিক ব্যক্তি ছাড়া ও যার মধ্যে ঘৃণা বিদ্বেষ রয়েছে তাকে ছাড়া। বর্ণনায়, মুয়ায বিন জাবাল। (১) আল-মুনযিরী তাঁর আত-তারগীব ওয়াত-তারহীবে (২/১৩২) বলেন, “সহিস হাদিস।” (২) আহলে হাদিস ইমাম আলবানী বলেন, “হাদিসটি সহিহ।” (আস-সিলসিলাহ আস-সাহীহাহ : ৩/১৩৫)। ৩) আল্লাহ তা’আলা মধ্য শাবানের রাতে তাঁর বান্দাদের দিকে দৃষ্টিপাত করেন। তিনি বিশ্বাসীদেরকে মাফ করেন ও অবিশ্বাসীদের ক্ষমা স্থগিত করেন এবং হিংসা-বিদ্বেষীদেরকে তাদের নিজ অবস্থায় রেখে দেন (সেদিনের জন্য যখন তারা সংশোধিত হয়ে তাঁকে ডাকবে)। বর্ণনায় আবু সা’বাহ আল খাশানী (রাঃ)। (১) আল-মুনযিরী বলেন, ‘হাদিসটির সূত্র সহীহ বা হাসান বা এই দু’য়ের কাছাকাছি।” (আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব, ৩/৩৯২)
শবে বরাত বা লাইলাতুন নিসফী মিন শা’বানের অস্তিত্ব আছে। তাই আমরা এ রাতে কুরআন তিলাওয়াত, যত পারা যায় নফল নামাজ, তাহাজ্জুদ, সালাতুস তাসবীহ নামাজ, তাওবাহ, ইস্তেগফার। দোয়া- দুরুদ, জিকির-আজকার, মোরাকাবা-মোশাহাদা করবো। মহান আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করবো।
একটি প্রশ্ন যদি করি : এমন একটি রাত্র! যে রাতে আল্লাহ তা’আলা গুনাহগার বান্দাকে মাফ করেন। এমন কোন রাত্রের কথা জানা থাকলে আপনি কি করবেন? আবশ্যই মহান আল্লাহর ক্ষমা পেতে মরিয়া হয়ে ইবাদতে কাটিয়ে দিবেন। তাই আর তর্কে না গিয়ে এ রাতের গুরুত্ব দিয়ে এ রাতে মহান মালিকের দরবারে কান্নাকাটি করুন। মহান আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে শবে বরাতে মাফ করুক। আমিন
মুফতি মুহাঃ আবু বকর বিন ফারুক : ইমাম ও খতিব, বিষ্ণুপুর মদিনা বাজার বাইতুল আমিন জামে মসজিদ, চাঁদপুর সদর, চাঁদপুর।