প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
প্রতিটি মানুষ কোন না কোন কাজে চেষ্টা সাধনা করে থাকে। কোন মানুষ যদি আল্লাহর পথে সাধনা করে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার জন্য ওই কাজকে সহজ করে দেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পথে শ্রেষ্ঠ সাধনা করা, দ্বীনের প্রতি উন্নতির জন্য চেষ্টা সাধনা করা, পরকালে শান্তির জন্য শ্রেষ্ঠ সাধনা করা, জান্নাতে উচ্চ মাকাম লাভের জন্য চেষ্টা সাধনা করা, এগুলো প্রতিটি মুমিন মুসলমানের একান্তই দায়িত্ব কর্তব্য।
আমরা অনেক ক্ষেত্রে দ্বীনের পথে চেষ্টা সাধনা না করে দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকি। দুনিয়াতে কিছু মানুষ চাকরির জন্য চেষ্টা করে, কেউ ব্যাবসায়িক উন্নতির জন্য চেষ্টা করে, কেউ ফসল উৎপাদনের চেষ্টা করে, কেউ ধনী হতে চেষ্টা করে।
কিন্তু! যে আল্লাহ তা'আলা আমাদের কে সৃষ্টি করেছেন, সে আল্লাহকে পাওয়ার জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়ার জন্য চেষ্টা করি না।
ন¤েœ কুরআন হাদিসের আলোকে চেষ্টা সাধনার বিষয় আলোকপাত করা হলো-
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর যারা আমার পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, তাদেরকে আমি অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আর নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সাথেই আছেন। (সূরা ২৯. আল-আনকাবূত, আয়াত নং ৬৯)
যারা আমার (সন্তুষ্টির পথে) দ্বীনের উপর আমল করতে কষ্ট, পরীক্ষা এবং সমস্যার সম্মুখীন হয়। এর অর্থ হল, দুনিয়া ও আখেরাতের ঐ সকল পথ, যে সকল পথে চললে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হয়। 'ইহ্সান'-এর অর্থ হল, 'আমি যেন আল্লাহকে দেখছি অথবা আল্লাহ আমাকে দেখছেন' মনে করে প্রত্যেক সৎ কাজ আন্তরিকতার সাথে সম্পাদন করা। নবী (সাঃ)-এর তরীকা অনুযায়ী সে কাজ সম্পাদন করা। মন্দের প্রতিশোধে মন্দ না করে ভালো ব্যবহার প্রদর্শন করা। নিজের প্রাপ্য অধিকার ছেড়ে দেওয়া এবং অন্যকে তার অধিকার অপেক্ষা অধিক দেওয়া। এই সকল কর্ম 'ইহ্সান' (সৎকর্মপরায়ণতা)র অন্তর্ভুক্ত।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর এই যে, মানুষ যা চেষ্টা করে, তাই সে পায়। -(সূরা ৫৩. আন-নাজম, আয়াত নং ৩৯)
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যে ব্যক্তি সাধনা (জিহাদ) করে, সে তো নিজেরই জন্য সাধনা করে। আল্লাহ্ তো বিশ্বজগত থেকে অমুখাপেক্ষী।’ (২৯ সূরা আল ’আনকাবূত ৬)
যে ভাল কাজ করবে তার ফল সে নিজেই ভোগ করবে। তাছাড়া আল্লাহ বান্দাদের কোন কাজের মুখাপেক্ষী নন। যদি পৃথিবীর সবাই আল্লাহর পরহেযগার বান্দা হয়ে যায়, তাহলে তার ফলে তাঁর রাজ্যের শক্তি বৃদ্ধি হবে না। আর যদি সকল মানুষই আল্লাহর নাফরমান ও অবাধ্য হয়ে যায়, তাহলেও তাঁর রাজ্যে কোন প্রকার কমি আসবে না। শাব্দিক অর্থের দিক দিয়ে এতে কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদও শামিল। কারণ, এটিও অন্যতম সৎকর্ম।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মানুষ, তোমার রব পর্যন্ত (পৌঁছতে) অবশ্যই তোমাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। অতঃপর তুমি তাঁর সাক্ষাৎ পাবে।’ -(সূরা ৮৪. আল-ইনশিকাক ,আয়াত নং ৬)
মানুষের প্রত্যেক চেষ্টা ও অধ্যবসায় আল্লাহর দিকে চূড়ান্ত হবে। অর্থাৎ মানুষ দুনিয়ায় যা কিছু কষ্ট-সাধনা প্ৰচেষ্টা ও সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে সে সম্পর্কে সে মনে করতে পারে যে তা কেবল দুনিয়ার জীবন পর্যন্তই সীমাবদ্ধ এবং দুনিয়াবী স্বাৰ্থ লাভ করাই এর উদ্দেশ্য। কিন্তু আসলে সে সচেতন বা অচেতনভাবে নিজের রবের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে এবং অবশেষে তাকে তার কাছেই পৌছতে হবে। মানুষ এখানে যে চেষ্টা-চরিত্র করছে, পরিশেষে তার পালনকর্তার কাছে পৌছে এর সাথে তার সাক্ষাৎ ঘটবে এবং এর শুভ অথবা অশুভ পরিণতি সামনে এসে যাবে। অথবা এর অর্থ প্রত্যেক মানুষ আখেরাতে তার পালনকর্তার সাথে সাক্ষাৎ করবে এবং হিসাবের জন্যে তার সামনে উপস্থিত হবে। (দেখুন: কুরতুবী)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাত করতে চায়, আল্লাহও তার সাক্ষাত করতে পছন্দ করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাত করতে চায় না, আল্লাহও তার সাথে সাক্ষাত করতে অপছন্দ করেন।’ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা (অথবা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্য কোন স্ত্রী) বলেন, ‘আমরা তো মৃত্যুকে অপছন্দ করি।’ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তা নয়। কিন্তু মুমিন ব্যক্তির যখন মৃত্যু ঘণিয়ে আসে, তখন তাকে আল্লাহ তা'আলার সস্তুষ্টি ও সম্মানের সুসংবাদ দেওয়া হয়। তখন তার কাছে মৃত্যু অপেক্ষা অন্য কিছু প্রিয় হতে পারে না। এভাবে সে আল্লাহর সাক্ষাত করতে পছন্দ করে, তাই আল্লাহ্ তা'আলাও তার সাথে সাক্ষাত করতে পছন্দ করেন। আর কাফির ব্যক্তিকে মৃত্যুর সময় আল্লাহর আযাব ও শাস্তির সংবাদ দেওয়া হয়, তখন মৃত্যু অপেক্ষা অপ্রিয় আর কিছু থাকে না। সে আল্লাহর সাক্ষাত অপছন্দ করে বিধায় আল্লাহ্ তা'আলা তার সাথে সাক্ষাত অপছন্দ করেন’। (বুখারী: ৬৫০৭, মুসলিম: ২৬৮৩)
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর ইয়াকীন (মৃত্যু) আসা পর্যন্ত তুমি তোমার রবের ইবাদাত কর।’ -(সূরা ১৫. আল-হিজর, আয়াত নং ৯৯)
মুশরিকরা নবী (সাঃ)-কে যাদুকর, পাগল, গণক ইত্যাদি বলত। আর মানুষ হওয়ার কারণে তিনি এ সব কথায় দুঃখ পেতেন। মহান আল্লাহ সান্তনা দিয়ে বললেন, তুমি প্রশংসা কর, নামায পড় এবং নিজ আল্লাহর এবাদত কর। যাতে তোমার অন্তর শান্তি লাভ করবে এবং আল্লাহর সাহায্য আসবে। সিজদাকারী বলতে নামাজী ও ইয়াকীন বলতে মৃত্যুকে বুঝানো হয়েছে।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যারা আল্লাহর পথে জীবন দিয়েছে, তাদেরকে তুমি মৃত মনে করো না, বরং তারা তাদের রবের নিকট জীবিত। তাদেরকে রিয্কি দেয়া হয়।’ (সূরা ৩. আলে-ইমরান - আয়াত নং ১৬৯)
শহীদদের এ জীবন অবশ্যই প্রকৃতার্থে, রূপকার্থে নয়। তবে এ জীবনের সঠিক ধারণা দুনিয়াবাসীর নেই। (কুরআনে এটা পরিষ্কারভাবে বর্ণিত হয়েছে। দ্রষ্টব্যঃ সূরা বাক্বারাহ ২:১৫৪) কিন্তু এ জীবনের অর্থ কি? কেউ বলেছেন, কবরে তাঁদের আত্মা ফিরিয়ে দেওয়া হয় এবং সেখানে তাঁরা আল্লাহর নিয়ামত দ্বারা পরিতৃপ্ত হন। কেউ বলেছেন, জান্নাতের ফলের সুগন্ধি তাঁদের কাছে আসে, যার ফলে তাঁদের প্রাণ সব সময় সুবাসে ভরে থাকে। তবে হাদীস থেকে তৃতীয় আর একটি জিনিস যা জানা যায় --আর এটাই সঠিক-- তা হল, তাঁদের আত্মাসমূহকে সবুজ রঙের পাখির পেটে অথবা বুকে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হবে। ফলে তারা জান্নাতে খেয়ে বেড়াতে এবং তার নিয়ামত দ্বারা তৃপ্তি লাভ করতে থাকবে। (ফাতহুল ক্বাদীর, সহীহ মুসলিম)
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের থেকে তাদের জান ও মাল ক্রয় করে নিয়েছেন (এর বিনিময়ে) যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত।’ (সূরা ৯. আত-তাওবা, আয়াত নং ১১১)
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় যারা আমার সাক্ষাতের আশা রাখে না এবং দুনিয়ার জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট আছে ও তা নিয়ে পরিতৃপ্ত রয়েছে। আর যারা আমার নিদর্শনাবলী হতে গাফেল।’ -(সূরা ১০. ইউনুস , আয়াত নং ৭)
কাতাদা বলেন, দুনিয়াদারদের তুমি দেখবে যে, তারা দুনিয়ার জন্যই খুশী হয়, দুনিয়ার জন্যই চিন্তিত হয়, দুনিয়ার জন্যই অসন্তুষ্ট হয় আর দুনিয়ার জন্যই সন্তুষ্ট হয়। [তাবারী] এ আয়াতে জাহান্নামের অধিবাসীদের বিশেষ লক্ষণসমূহ বর্ণনা করা হচ্ছে।
প্রথমত : তারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের আশা করে না, বিশ্বাসও করে না।
দ্বিতীয়ত : তারা আখেরাতের চিরস্থায়ী জীবন ও তার অনন্ত-অসীম সুখণ্ডদুঃখের কথা ভুলে গিয়ে শুধুমাত্র পার্থিব জীবন নিয়েই সন্তুষ্ট হয়ে গেছে।
তৃতীয়ত : পৃথিবীতে তারা এমন নিশ্চিত হয়ে বসেছে যেন এখান থেকে আর কোথাও তাদের যেতেই হবে না; চিরকালই যেন এখানে থাকবে। কখনো তাদের একথা মনে হয় না যে, এ পৃথিবী থেকে প্রত্যেকটি লোকের বিদায় নেয়া এমন বাস্তব বিষয় যে, এতে কখনো কোন সন্দেহ হতে পারে না। তাছাড়া এখান থেকে নিশ্চিতই যখন যেতে হবে, তখন যেখানে যেতে হবে, সেখানকার জন্যও তো খানিকটা প্রস্তুতি নেয়া কর্তব্য ছিল।
চতুর্থত : এসব লোক আমার নিদর্শনাবলী ও আয়াতসমূহের প্রতি ক্রমাগত গাফিলতী করে চলেছে। সুতরাং এরা না আল্লাহর কুরআনের আয়াত দ্বারা উপকৃত হয়, না আসমান-যমীন কিংবা এ দুয়ের মধ্যবর্তী কোন সাধারণ সৃষ্টি অথবা নিজের অস্তিত্ব সম্পর্কে একটুও চিন্তা-ভাবনা করে। তাই তাদের ঠিকানা, অবস্থান ও বাসস্থান হবে জাহান্নাম যেখান থেকে তারা আর কোথাও যেতে বা পালাতে পারবে না। কারণ তারা কুফরী, শির্ক ও বিভিন্ন প্রকার পাপের মাধ্যমে তাই অর্জন করেছে। [সা'দী]।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তারা যা উপার্জন করত, তার কারণে আগুনই হবে তাদের ঠিকানা।’ -(সূরা ১০. ইউনুস , আয়াত নং ৮)
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যেদিন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোন উপকারে আসবে না’। -(সূরা ২৬. আশ-শুআ'রা , আয়াত নং ৮৮)
‘তবে যে আল্লাহর কাছে আসবে সুস্থ অন্তরে’। -(সূরা ২৬. আশ-শুআ'রা ,আয়াত নং ৮৯)
আর মুত্তাকীদের জন্য জান্নাত নিকটবর্তী করা হবে, -(সূরা ২৬. আশ-শুআ'রা , আয়াত নং ৯০)
এবং পথভ্রষ্টকারীদের জন্য জাহান্নাম উন্মোচিত করা হবে। -(সূরা ২৬. আশ-শুআ'রা ,আয়াত নং ৯১)
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তাদের রবের কাছে তাদের পুরস্কার হবে স্থায়ী জান্নাত, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত, সেখানে তারা থাকবে স্থায়ীভাবে। আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন তারাও আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট হয়েছে। এটি তার জন্য, যে স্বীয় রবকে ভয় করে।’ -(সূরা ৯৮. আল-বায়্যিনাহ , আয়াত নং ৮)
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর পথে একটি সকাল বা একটি বিকাল অতিবাহিত করা, দুনিয়া ও তার সমুদয় সমস্ত সম্পদ হতে সর্বোত্তম।’ (সহীহ : সহীহুল বুখারী ৪৬১৫, সহীহ মুসলিম ১৮৮০, তিরমিযী ১৬৫১, মুসনাদ আহমাদ ১২৩৫০, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৬০২, সহীহ আল জামি‘ ৪১৫১, সহীহ আৎ তারগীব ১২৬১।)
মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, ‘দোজখকে লোভনীয় জিনিস দিয়ে আড়াল করে রাখা হয়েছে। আর জান্নাতকে দুঃখণ্ডকষ্টের দ্বারা আড়ালে রাখা হয়েছে।’ (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম সূত্রে রিয়াজুস সালেহিন : ১০১)
আয়েশা ((রাঃ)) বর্ণনা করেন, নবী (সাঃ) রাতে এত বেশি ইবাদত করতেন যে তাতে এমনকি তার পা মোবারক ফুলে ফেটে যেত। আমি তাকে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি এরূপ কেন? আপনার অতীত ও ভবিষ্যতের সব ত্রুটিবিচ্যুতি তো আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি কি আল্লাহর শুকরগুজার বান্দা হওয়া পছন্দ করব না।’ (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম সূত্রে রিয়াজুস সালেহিন : ৯৮)
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর তুমি তোমার রবের নাম স্মরণ কর এবং একাগ্রচিত্তে তাঁর প্রতি নিমগ্ন হও।’ -(সূরা ৭৩. আল-মুযযাম্মিল,আয়াত নং ৮)
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘সেদিন মানুষ স্মরণ করবে যা কিছু করার জন্য সে জোর প্রচেষ্টা চালিয়েছে।’ -(সূরা ৭৯. আন-নাযি'আত, আয়াত নং ৩৫)
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি আখেরাতের জীবনের সফলতা প্রত্যাশা করে এবং তার জন্য চেষ্টাও সাধনা করে এবং সে মুমিন, এই শ্রেণির লোকদের চেষ্টা ও পরিশ্রম গৃহীত ও মর্যাদাশীল হবে।’ (সূরা ১৭বাণী ইসরাঈল : ১৯)।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আল্লাহর কাছে কুরবানীর পশুর গোস্ত এবং রক্ত পৌঁছে না, বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের (অন্তরের) তাকওয়া।’ ( ২২ সূরা হাজ্জ : ৩৭)
এখানে একথা বলা উদ্দেশ্য যে, হাদঈ যবেহ করা বা কুরবানী করা একটি মহান ইবাদাত; কিন্তু আল্লাহ্র কাছে এর গোশত ও রক্ত পোঁছে না কারণ তিনি অমুখাপেক্ষী। আর হাদঈ ও কুরবানীর উদ্দেশ্যও এগুলো নয়; বরং আসল উদ্দেশ্য জন্তুর উপর আল্লাহ্র নাম উচ্চারণ করা এবং পূর্ণ আন্তরিকতা সহকারে পালনকর্তর আদেশ পালন করা। তাঁকে যথাযথভাবে স্মরণ করা। [ইবন কাসীর]
অন্তরে তাঁর বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নাও এবং কাজে তার প্রকাশ ঘটাও ও ঘোষণা দাও। এরপর কুরবানীর হুকুমের উদ্দেশ্য ও কারণের প্রতি ইংগিত করা হয়েছে। পশুদের উপর আল্লাহ্ মানুষকে কর্তৃত্ব দান করেছেন, শুধুমাত্র এ নিয়ামতের বিনিময়ে আল্লাহ্র প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করাই যথেষ্ট নয়। বরং এ জন্য ওয়াজিব করা হয়েছে যে, এগুলো যাঁর পশু এবং যিনি এগুলোর উপর আমাদের কর্তৃত্ব দান করেছেন, আমরা অন্তরে ও কাজে-কর্মেও তাঁর মালিকানা অধিকারের স্বীকৃতি দেবো, যাতে আমরা কখনো ভুল করে একথা মনে করে না বসি যে, এগুলো সবই আমাদের নিজেদের সম্পদ। কুরবানী করার সময় যে বাক্যটি উচ্চারণ করা হয় তার মধ্য দিয়ে এ বিষয়বস্তুটিরই প্রকাশ ঘটে। যেমন সেখানে বলা হয় ‘হে আল্লাহ্ ! তোমারই সম্পদ এবং তোমারই জন্য উপস্থিত।’ [আবুদাউদঃ ২৭৯৫]
পরিশেষে বলবো, আমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি লাভের জন্য চেষ্টা করি। তবে,আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সাফল্য দান করবেন।
লেখক : ইমাম ও খতিব, বিষ্ণুপুর মনোহরখাদী মদিনা বাজার বাইতুল আমীন জামে মসজিদ, চাঁদপুর সদর, চাঁদপুর।