শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

কষ্ট মুমিন জীবনের একটি অধ্যায়
অনলাইন ডেস্ক

পৃথিবীতে বাস্তব জীবন পরিচালনায় কিছু কিছু সময় কষ্টে পড়তে হয়। এটা জীবনের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এ কষ্টের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক অনেকটা সুদৃঢ়। যেসব বান্দা আল্লাহর প্রিয়ভাজন হয়েছেন, যাদের নাম ইসলামের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ রয়েছে তাঁদের জীবন পর্যালোচনা করলে এ কষ্ট নামক অধ্যায়টি অতি সহসা বেরিয়ে আসে।

এযাবৎকালে অবশ্য কারো কারো জীবনে এ কষ্টটা বিলাসিতার মতো। আবার কারো ক্ষেত্রে অত্যন্ত অসহনীয়। বর্তমান সময়ে করোনা মহামারীর ক্রান্তিলগ্নে কষ্টের বেড়াজালে আক্রান্ত হয়ে কিছু মানুষ প্রায় দিশে হারার মতো। আর এ মহামারী মানুষের উপার্জিত মন্দ আমলের ফসলও হতে পারে তার কারণ। অথবা এগুলো হলো মুমীনের জন্য পরীক্ষা স্বরূপ। তবে এটা চিরন্তন সত্য যে, মহান আল্লাহ তা‘আলা কাউকে সাধ্যাতীত কষ্ট বা বোঝা চাপিয়ে দেন না।

পবিত্র কোরআনে কতইনা সুন্দরভাবে এসেছে, ‘আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা অর্পণ করেন না, কিন্তু তার সাধ্য পরিমাণ। তার জন্য কল্যাণ, যে ভালো সে উপার্জন করেছে। আর তার জন্য ক্ষতি, যে মন্দ সে উপার্জন করেছে ।

মানব জীবনে এই কষ্ট নানান দিক থেকে আসে। প্রতিটা কষ্টে মানুষ কিছু না কিছু হারায়। কেউ কেউ হয়তো ভাবেন, মহান আল্লাহ তাআলাকে এতো করে মেনে চললাম, এবাদত বন্দেগীও করলাম তাও কষ্ট দিলেন, চাকরিটা কেড়ে নিলেন, ফসল নষ্ট করে দিলেন কিংবা প্রিয়জন কেড়ে নিলেন? আল্লাহর প্রতি হয়তো বান্দার বিশাল অভিমান, কী অপরাধে আল্লাহ এত কষ্ট দিচ্ছেন? অথচ একবারের জন্য হলেও মানুষের ভাবা উচিত। মহান প্রভুর অমীয় বাণী, ‘তিনিই সেই সত্তা, যিনি মানুষকে হাসান এবং কাঁদান (অর্থাৎ হাসি-কান্নার মূল ও কারণ তিনিই সৃষ্টি করেছেন, যা সম্পূর্ণরূপে পৃথক পৃথক)। তিনিই তো মৃত্যু দেন, জীবন দেন।

মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেছেন, তিনিই অভাবমুক্ত করেন ও সম্পদ দান করেন। উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় আবু সালেহ ও ইবনে জারীর রহ. প্রমুখ তাফসীরকারক এরূপ উক্তি করেছেন , ধন-সম্পদ তাঁরই অধিকারে রয়েছে যা তাঁর কাছে পুঁজি হিসাবে থাকে। তিনি তা থেকে যাকে যতটুকু দান করেন সে তা নিজের জন্য ব্যবহার করতে পারে।

অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে ভয়, ক্ষুধা, ধন-সম্পত্তি, জীবন এবং ফল-ফসল হারানো দিয়ে পরীক্ষা করব। এবং ওইসব ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ প্রদান কর!, যাদের উপর জীবনে কোনো বিপদ আসলে তারা সঙ্গে সঙ্গে বলে, “ নিশ্চয়ই আমরা তো আল্লাহরই জন্য। নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহরই কাছে প্রত্যাবর্তণকারী” তাঁদের উপর তাঁদের প্রভুর পক্ষ থেকে আছে বিশেষ অনুগ্রহ এবং শান্তি। এধরনের মানুষরাই সুপথগামী (সঠিক পথে রয়েছে)।

আল্লাহ বলেন, “ফলে তাদের কৃতকর্মের কারণে আল্লাহ তাদেরকে আস্বাদ গ্রহণ করালেন ক্ষুধা ও ভীতির।

এসব কিছুর ভাবার্থ এই যে, সামান্য ভয়-ভীতি, কিছু ক্ষুধা, কিছু ধন-সম্পদের ঘাটতি, কিছু প্রাণের হ্রাস অর্থাৎ নিজের ও অপরের, আত্মীয়-স¦জনের এবং বন্ধু-বান্ধবের মৃত্যু, কখনো ফল-ফলাদি এবং উৎপাদিত শস্যের ক্ষতি ইত্যাদি দ্বারা আল্লাহ স্বীয় বান্দাদেরকে পরীক্ষা করেন। এতে ধৈর্যধারণকারীদের তিনি উত্তম প্রতিদান দেন এবং অসহিষ্ণু, তাড়াহুড়াকারী এবং নৈরাশ্যবাদীদের উপর শাস্তি অবতীর্ণ করেন। এ জন্যই তিনি বলেন, ধৈর্যশীলদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ।

আল্লাহ বলেন, “অবশ্য ধন-সম্পদে এবং জনসম্পদে তোমাদের পরীক্ষা হবে এবং অবশ্য তোমরা শুনবে পূর্ববর্তী আহলে কিতাবদের কাছে এবং মুশরেকদের কাছে বহু অশোভন উক্তি। আর যদি তোমরা ধৈর্য্য ধারণ কর এবং পরহেজগারী অবলম্বন কর, তবে তা হবে একান্ত সৎসাহসের ব্যাপার।

অন্য দিকে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘তারা কি লক্ষ্য করে দেখে না যে, তারা প্রতিবছর একবার অথবা দু‘বার কোন না কোন বিপদে পতিত হয়? এরপরও তারা তাওবা করে না, আর না তারা উপদেশ গ্রহণ করে (অর্থাৎ উপলব্ধি করার চেষ্টাও করে না)।’

হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে তিনি দুঃখ-কষ্টে পতিত করেন। ’

উম্মুল মু‘মীনীন আয়েশা সিদ্দিকা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লামের চাইতে বেশী রোগ যন্ত্রণা ভোগকারী কাউকে দেখিনি।

আলোচ্য হাদিসে দেখা যায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম মাঝে-মধ্যে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়তেন, এবং কুরআন মাজীদে সুরা আম্বিয়াতে হযরত ইয়াকুব আলায়হিস্ সালামের কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে উক্ত রোগ যন্ত্রণা হতে নিস্কৃতি চেয়ে আল্লাহর নিকট দোয়া করেছেন। উক্তাবস্থায় ধৈর্য্যধারণ করেছেন, আর এটাই হলো উম্মতে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামণ্ডএর জন্য আসল শিক্ষা।

রাসুলে পাক দ. আরো বলেন, ‘যদি কারো উপর কোনো কষ্ট আসে, আল্লাহ তায়ালা এর কারণে তার গুনাহসমূহ ঝরিয়ে দেন, যেমনভাবে গাছ থেকে পাতা ঝরে পড়ে। ’

সুখণ্ডসচ্ছলতায় মুমিন শোকর আদায় করে ফলে তার কল্যাণ সাধিত হয়। আবার দুঃখ-কষ্ট-বিপদের মুখোমুখি হলে ধৈর্য্য ধারণ করে। ফলে এটিও তার জন্য কল্যাণকর হয়।’

সুতরাং ঈমানদারের জন্য যে কোনো সময় দুঃখ-কষ্ট, বিপদ-আপদ এমনকি মৃত্যুও আসতে পারে। মুমিন বান্দা সব ক্ষেত্রেই দুঃখ-কষ্ট বরণ করে নিতে এবং ঈমানের ওপর দৃঢ় থাকতে প্রস্তুত থাকবে। আর তাতেই থাকবে ঈমানদারের জন্য কল্যাণ। মুমিন বান্দা সুখের সময় যেমন আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করবে তেমনি কোনো বিপদের কারণে তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবে না। দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়া মুমিনের শান নয়। কারণ যে কোনো সময় মুমিনের অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে। মনে রাখতে হবে!

মুমিন কখনো আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয় না। আল্লাহর ঘোষণাও এমন-‘তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।’ যারা আল্লাহর রহমতের ওপর অবিচল থাকে তারাই প্রকৃত ঈমানদার ও তাকওয়ার অধিকারী। আর সফলতা তাদের জন্যই সুনির্ধারিত।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, সুখের সময় আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা আর বিপদে পরিস্থিতির মোকাবেলা করার সক্ষমতা না থাকলে আল্লাহর ওপর ভরসা করে ধৈর্য ধারণ করা। পবিত্র হাদিসের ঘোষণা অনুযায়ী তাতেই রয়েছে দুনিয়া ও পরকালের শান্তি এবং নিরাপত্তা।

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুঃখ-কষ্ট, বিপদ-আপদ কিংবা দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি হতে উত্তীর্ণ হতে তাঁর উম্মতকে এ দোয়া পড়ার জন্য উৎসাহিত করেছেন-অর্থাৎ : আল্লাহ তাআলাই আমাদের জন্য যথেষ্ট, তিনিই হলেন উত্তম কাজ সম্পাদনকারী। আল্লাহ তাআলাই হচ্ছে উত্তম অভিভাবক এবং উত্তম সাহায্যকারী।’

মুসনাদে আহমদে রয়েছে, উম্মে সালমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেন একদা আমার স্বামী আবু সালমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামণ্ডএর নিকট থেকে আমার কাছে আসেন এবং অত্যন্ত খুশি মনে বলেন, আজ আমি এমন একটি হাদিস শুনেছি, যা শুনে আমি খুবই খুশি হয়েছি। হাদিসটি হলো-যখন কোন মুমীনের উপর দুঃখ-কষ্ট ও বিপদ আসে এবং সে নি¤েœর দোআটি পাঠ করে তখন আল্লাহ তাকে অবশ্যই বিনিময় ও প্রতিদান দিয়ে থাকেন।

হে আল্লাহ! আমাকে মুসিবতের (বিপদে) সময় ধৈর্য্য ধারণ করার শক্তি দাও এবং উহার পরিবর্তে উত্তম কিছু দান কর। [তাফসীরে ইবনে কাসীর-২/৪২৮।] বিশ্বব্যাপী মুসলমানের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কারণ ঈমানদারদের হারানোর কিছু নেই। তাদের বিপদ-আপদে, দুঃখ-কষ্টেও রয়েছে কল্যাণ, মর্যাদা ও সম্মান। বরং পরাজয় কিংবা ধ্বংস সেসব ব্যক্তি গোষ্ঠীর জন্য যারা মুসলমানদের ওপর অন্যায়ভাবে অত্যাচার ও নির্যাতন করে।

মুমিন বান্দাকে বিপদে ভয় পেলে চলবে না, মুমিনের কষ্টও সম্মান এবং মর্যাদার কারণ। তাই মুমিন বান্দা নিজেকে ঈমানি তেজে শক্তিশালী করবে। আল্লাহর কাছে হিম্মত ও সাহায্য প্রার্থনা করবে।

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন, ‘প্রতিটি কষ্টের সঙ্গে অবশ্যই কোনো না কোনো দিক থেকে স্বস্তি রয়েছে। কোনো সন্দেহ নেই, অবশ্যই প্রতিটি কষ্টের সঙ্গে অন্য দিকে স্বস্তি আছেই।’ [সুরা আল-ইনশিরাহ, আয়াত: ৫-৬] পরিশেষে বলা যায় দুঃখ-কষ্ট মুমিন জীবনের একটি অন্যতম অধ্যায়। আর মুমিনের প্রতিটি কষ্টই ক্ষণস্থায়ী। এ কষ্টের বিনিময়ে মুমীন বান্দাকে সর্বোত্তম প্রতিদান দেওয়া হবে। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে সুখের সময় কৃতজ্ঞতা ও দুঃখ-কষ্টের সময় ধৈর্যধারণ করে আল্লাহর একান্ত রহমত লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন বিহুরমাতি সায়্যিদিল মুরসালিন।

লেখক : সহকারী মৌলভী, কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া কামিল মাদ্রাসা, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়