প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২২, ০০:০০
সাহাবি শব্দটি আরবি ভাষার ‘সুহবত’ শব্দের একটি রূপ। একবচনে ‘সাহাবি’ এবং বহুবচনে ‘সাহাবাতুন’ ও ‘আসহাব’ ব্যবহৃত হয়। আভিধানিক অর্থ সঙ্গী, সাথী, বন্ধু, অনুসারী, সহচর, এক সাথে জীবনযাপনকারী অথবা সাহচর্যে অবস্থানকারী।
ইসলামি পরিভাষায় ‘সাহাবা’ শব্দটি দ্বারা মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সঙ্গী-সাথীদের বুঝায়। ‘সাহেব’ শব্দটির বহুবচনের আরও কয়েকটি রূপ আছে, তবে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সঙ্গী-সাথীদের বুঝানোর জন্যে ‘সাহেব’-এর বহুবচনে ‘সাহাবা’ ছাড়া ‘আসহাব’ ও ‘সাহব’ও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
ইবনে হাজার ‘আল-ইসাবা ফী তাময়ীযিস সাহাবা’ গ্রন্থে সাহাবির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, সাহাবি সেই ব্যক্তি যিনি মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রতি ঈমান সহকারে তার সাক্ষাৎলাভ করেছেন এবং ইসলামের ওপরই মৃত্যুবরণ করেছেন।
সাহাবির উল্লেখিত সংজ্ঞাটি ইমাম বুখারী, ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বলসহ অধিকাংশ পণ্ডিতের নিকট সর্বাধিক সঠিক বলে বিবেচিত, অবশ্য সাহাবির সংজ্ঞার ক্ষেত্রে আরও কয়েকটি অপ্রসিদ্ধ মতামতও আছে। যেমন, কেউ কেউ সাক্ষাতের (আল-লিকা) স্থলে চোখে দেখার (রু’ইয়াত) শর্ত আরোপ করেছেন, কিন্তু তাতে এমন সব ব্যক্তি বাদ পড়ে যাবেন যারা মুমিন হওয়া সত্ত্বেও অন্ধত্বের কারণে মুহাম্মদকে চোখে দেখার সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। যেমন : আবদুল্লাহ ইবন উম্মে মাকতুম। অথচ তিনি অতি মর্যাদাবান সাহাবি ছিলেন।
সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ)-এর অন্তর ছিলো কলুষমুক্ত এবং আমলও ছিলো উত্তম। সুতরাং যার দৃষ্টি তাদের পবিত্র চেহারার উপর পড়তো, সে তাদের পবিত্রতা অনুভব করতে পারতো এবং সে তাদের চাল-চলনে ও মধুর আচরণে খুশি হতো। হযরত মালিক (রাঃ) বলেন, যখন সাহাবিগণ সিরিয়া জয় করেন তখন তথাকার খৃষ্টানরা তাদের চেহারার দিকে তাকিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলে ওঠে, “আল্লাহর কসম! এঁরা তো হযরত ঈসা (আঃ)-এর হাওয়ারীগণ (হযরত ঈসা (আঃ)-এর ১২ জন শিষ্যকে হাওয়ারী বলা হয়) হতেও শ্রেষ্ঠ ও উত্তম! প্রকৃতপক্ষে তাদের এ উক্তিটি চরম সত্য। পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহে এই উম্মতের ফজিলত ও শ্রেষ্ঠত্ব বিদ্যমান রয়েছে। এই উম্মতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হলেন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাহাবিবর্গ (রাঃ)। এঁদের বর্ণনা পূর্ববর্তী কিতাবসমূহে এবং পূর্বের ঘটনাবলির মধ্যে বিদ্যমান আছে। এজন্যেই মহান আল্লাহ বলেন যে, তাওরাতে তাদের বর্ণনা এই রূপই এবং ইঞ্জিলেও। এরপর আল্লাহ পাক বলেন, তাদের দৃষ্টান্ত একটি চারাগাছ, যা হতে নির্গত হয় কিশলয়। অতঃপর এটা শক্ত ও পুষ্ট হয় এবং পরে কাণ্ডের উপর দাঁড়ায় দৃঢ়ভাবে যা চাষীর জন্যে আনন্দদায়ক। অনুরূপভাবে সাহাবিগণও (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর পৃষ্ঠপোষক এবং সাহায্যকারী ছিলেন। তাঁরা তাঁর সাথেই সম্পর্ক রাখতেন যেমন চারাগাছের সম্পর্ক থাকে ক্ষেত্রের সাথে। মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেন, “এই ভাবে আল্লাহ মুমিনদের সমৃদ্ধি দ্বারা কাফিরদের অন্তর্জালা সৃষ্টি করেন। সাহাবায়ে কিরামের ফজিলত এবং তাদের পদস্খলন সম্পর্কে কটুক্তি করা হতে বিরত থাকা সম্পর্কীয় বহু হাদীস এসেছে। স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা তাঁদের প্রশংসা করেছেন এবং তাদের প্রতি নিজের সন্তুষ্টির কথা প্রকাশ করেছেন। তাঁদের শ্রেষ্ঠত্বের জন্যে এটাই কি যথেষ্ট নয়? এরপর মহান আল্লাহ বলেন, ঈমানদার ও সকর্মশীলদের জন্যে আল্লাহর এই প্রতিশ্রুতি রয়েছে যে, তিনি তাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন এবং তাদেরকে মহাপুরস্কার অর্থাৎ উত্তম জীবিকা, প্রচুর সওয়াব এবং বড় বিনিময় প্রদান করবেন। আল্লাহর ওয়াদা সত্য ও অটল। এটা কখনো পরিবর্তন হবে না এবং এর ব্যতিক্রম হবে না। তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণকারীদের জন্যেও এ অঙ্গীকার সাব্যস্ত আছে। কিন্তু তাদের যে মর্যাদা ও ফজিলত রয়েছে তা এই উম্মতের অন্য কারো নেই। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকুন এবং তাঁদেরকে সন্তুষ্ট রাখুন। আর জান্নাতুল ফিরদাউসকে তাঁদের আশ্রয়স্থল ও আবাসস্থল করুন! আর তিনি করেছেনও তাই। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, “তোমরা আমার সাহাবিদেরকে (রাঃ) গালি দিয়ো না ও মন্দ বলো না। যাঁর অধিকারে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! তোমাদের কেউ যদি উহুদ পাহাড়ের সমানও স্বর্ণ খরচ করে (অর্থাৎ দান করে) তবুও তাঁদের কারো এক মুদ্দ (প্রায় এক পোয়া) এমনকি অর্ধ মুদ্দ পরিমাণ (দানকৃত) শস্যের সমান সওয়াবও সে লাভ করতে পারবে না (অর্থাৎ তাদের কেউ এ পরিমাণ শস্য দান করে যে সওয়াব পেয়েছেন, তোমাদের কেউ উহুদ পাহাড়ের সমান সোনা দান করেও ঐ সওয়াব লাভ করতে পারবে না)।” (এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ) স্বীয় সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)
পবিত্র কুরআনুল কারীমের মহান আল্লাহ তা’য়ালা এরশাদ করেন, আল্লাহ তাঁদের উপর সন্তুষ্ট এবং তাঁরা তাঁর (আল্লাহর) উপর সন্তুষ্ট। এটা তারই জন্যে, যে আপন প্রতিপালককে ভয় করে। (সূরা বাইয়্যেনাহ, আয়াত : ৮।)
‘মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর রাসূল; তাঁর সহচরগণ কাফিরদের উপর কঠোর এবং নিজেদের পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় তুমি তাঁদেরকে রুকু ও সিজদায় অবনত দেখবে। তাঁদের মুখমন্ডলে সিজদার চিহ্ন থাকবে, তাওরাতে তাঁদের অনুরুপ গুনাবলীর বর্ণনা এবং ইনজীলেও রয়েছে তাঁদের অনুরুপ গুনাবলী।’ (সূরা আল ফাতহ, আয়াত : ২৯)।
‘এমন সব লোকই (সাহাবিরা) সত্যিকারের মুমিন (যাঁদের ভেতর ও বাহির এক রকম এবং মুখ ও অন্তর ঐক্যবদ্ধ)। তাদেরজন্য রয়েছে স্বীয় পরওয়ারদিগারের নিকট সুউচ্চ মর্যাদা ও মাগফিরাত এবং সম্মানজনক রিযিক। (সূরা আনফাল, আয়াত : ৪)।
‘তারাই মুমিন, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনার পর সন্দেহ পোষণ করে না এবং আল্লাহর পথে জান ও মাল দ্বারা জিহাদ করে। তারাই (সাহাবিগণ) সত্যনিষ্ঠ বা সত্যবাদী।’ (সূরা হুজুরাত, আয়াত : ১৫)।
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘এ সম্পদ অভাবগ্রস্ত মুহাজিরদের জন্য যারা নিজেদের ঘর-বাড়ী ও সম্পত্তি হতে উৎখাত হয়েছে। তারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনা করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাহায্য করে। তারাই তো সত্যাশ্রয়ী। মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে যারা এই নগরীতে (মাদীনা) বস-বাস করেছে ও ঈমান এনেছে তারা মুহাজিরদের ভালোবাসে এবং মুহাজিরদের যা দেওয়া হয়েছে তার জন্য তাঁরা অন্তরে আকাঙ্খা পোষণ করে না। আর তারা তাঁদেরকে নিজেদের ওপর প্রাধান্য দেয় নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও। (সূরা আল-হাশর, আয়াত : ৮৯)।
‘মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যাঁরা নিষ্ঠার সাথে তাঁদের অনুসরণ করে, আল্লাহ তাদের প্রতি প্রসন্ন এবং তারাও তাতে সন্তুষ্ট এবং তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন জান্নাত, যার নিম্ন দেশে নদী প্রবাহিত, যেখানে তাঁরা চিরস্থায়ী হবে। এটা মহা কামিয়াবী। (সূরা আত-তাওবা, আয়াত ১০০।)
মহান আল্লাহ সূরাহ্ আল হাদীদণ্ডএর ১০ নং আয়াতে বলেন, “তোমাদের মধ্যে যে লোক মক্কা বিজয়ের পূর্বে সদাকাহ করেছে এবং জিহাদ করেছে সে সমান নয়। এই সমস্ত লোকেদের মর্যাদা অনেক বেশি ঐসব ঈমানদার লোকেদের চেয়ে যারা পরে সদাকাহ করেছে এবং জিহাদ করেছে”। (সূরা আল হাদীদ ৫৭:১০)।
আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেন, তোমরা আমার সাহাবিগণকে গালমন্দ করো না। কেননা তোমাদের কেউ যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ সোনাও আল্লাহর পথে খরচ করে, তবুও তাঁদের মর্যাদার এক মুদ কিংবা অর্ধ মুদ (যব গম খরচ)-এর সমান সাওয়াব পৌছতে পারবে না। (বুখারী ও মুসলিম)
বুখারী শরীফ ৩৬৭৩, মুসলিম শরীফ ২২১-(২৫৪০), ২২২-(২৫৪১), তিরমিযী ৩৮৬১, আবূ দাউদ ৪৬৫৮, ইবনু মাজাহ ১৬১, সহীহুল জামি ৭৩১০, সিলসিলাতুস সহীহাহ ১৯২৩, মুসনাদে আহমাদ ১১০৯৪, মুসনাদে আবদ ইবনু হুমায়দ ৯১৮, আবূ ইয়া'লা ১০৮৭, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭২৫৩, শু’আবূল ঈমান ১৫০৮, আস্ সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী ৮৩০৮, আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৩০৩, আল মু'জামুস সগীর লিত্ব তবারানী ৯৮২, আল মু’জামুল আওসাত্ব ৬৮৭।
‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আমার সাহাবিদেরকে সম্মান কর। কেননা তারা তোমাদের মাঝে সর্বোত্তম লোক। অতঃপর তৎপরবর্তী লোকেদেরকে, অতঃপর তৎপরবর্তী লোকেদেরকে, এরপর প্রকাশ্যে মিথ্যা চলতে থাকবে। এমনকি কোন লোক কসম করবে, অথচ তার নিকট হতে কসম চাওয়া হবে না। সে সাক্ষ্য দিবে, অথচ তার কাছ হতে সাক্ষ্য চাওয়া হবে না। সাবধান! যে ব্যক্তি জান্নাতের মধ্যস্থলের আকাক্সক্ষী, সে যেন জামা’আতকে ধরে রাখে। (অর্থাৎ সাহাবি, তাবিঈ, তাবি তাবিঈন ও সালাফে সালিহীনদের অনুসরণ করে চলে) কেননা শয়তান একক লোকের সাথে থাকে। আর সে দুজনের জামা'আত হতে বেশি দূরে থাকে। তোমাদের কেউ যেন কোন বেগানা নারীর সাথে নির্জনে অবস্থান না করে। কেননা শয়তান তৃতীয় লোক হিসেবে তাদের সাথে উপস্থিত থাকে। আর যার ভালো কাজে মনের মধ্যে আনন্দ জাগে এবং বদকাজ তাকে চিন্তিত করে ফেলে সে-ই প্রকৃত ঈমানদার।
হাদিসটি সহীহ : আস সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী ৯২২২, মা'রিফাতুস্ সুনান ওয়াল আসার ৫২, মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ২০৭১০, মুসনাদে আবদ ইবনু হুমায়দ ২৩, মুসনাদুশ শাফি'ঈ ১২০৭, মুসনাদুল হুমায়দী ৩২, শু’আবূল ঈমান ১৫০৬, আল মু'জামুল আওসাত্ব ২৯২৯, আল মু'জামুস্ সগীর লিত্ব ত্ববারানী ২৪৫।
আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, মানুষের ওপর এমন এক সময় আসবে, যে বহুসংখ্যক লোকে জিহাদের যোগদান করবে। তখন তারা একে অপরকে প্রশ্ন করবে, তোমাদের মাঝে কি এমন কোন লোক আছেন, যিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) -এর সাহচর্য অর্জন করেছেন? তারা বলবে, হ্যাঁ, আছেন। তখন তাদেরকে বিজয় দান করা হবে। অতঃপর লোকেদের ওপর এমন এক সময় আসবে যে, তাদের বহুসংখ্যক লোক জিহাদে যোগদান করবে। তখন তাদেরকে প্রশ্ন করা হবে, তোমাদের মাঝে কি এমন কোন লোক রয়েছেন, যিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) -এর সাহাবিদের সাহচর্য লাভ করেছেন? তারা বলবে, হ্যাঁ, রয়েছেন। তখন তাদেরকে বিজয় দান করা হবে। তারপর লোকেদের ওপর এমন এক যামানা আসবে যে, তাদের বহুসংখ্যক লোক জিহাদে যোগদান করবে। তখন তাদেরকে প্রশ্ন করা হবে, তোমাদের মাঝে কি এমন কোন ব্যক্তি রয়েছেন, যিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) -এর সাহাবিদের সাহচর্য লাভকারীদের (তাবিঈদের) সাহচর্য লাভ করেছেন? তারা বলবে, হ্যাঁ, রয়েছেন। তখন তাদের (উক্ত তাবি তাবি'ঈদের বরকতে) জয়যুক্ত করা হবে। (বুখারী ও মুসলিম)
মুসলিম-এর অপর এক রিওয়ায়াতে আছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, মানুষের উপর এমন এক সময় আসবে, তাদের মধ্য হতে একটি সেনাদলকে অভিযানে পাঠানো হবে, তখন মুজাহিদগণ বলবে, তালাশ করে দেখ তো তোমাদের মধ্যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) -এর সাহাবিদের কাউকেও পাও নাকি? তখন এক ব্যক্তিকে পাওয়া যাবে। অতএব তাদেরকে জয়যুক্ত করা হবে। পরবর্তী যুগে দ্বিতীয় আরেকটি সেনাদল পাঠানো হবে। তখন তারা পরস্পর বলবে, তাদের মাঝে এমন কোন লোক আছেন কি, যিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) -এর সাহাবিদেরকে দেখেছেন? তখন তাদেরকেও বিজয় দান করা হবে। এর পরবর্তী সময়ে তৃতীয় সেনাদল প্রেরণ করা হবে। তখন বলা হবে, খোঁজ করে দেখ তো তাদের মাঝে এমন কোন লোক আছেন কি, যিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) -এর সাহাবিকে দেখেছেন, বা তাকে দেখেছেন? তারপর চতুর্থ সেনাদলকে পাঠানো হবে, তখন বলা হবে, অনুসন্ধান করে দেখ! তাদের মাঝে এমন কোন লোক আছেন কি যিনি এমন কোন লোককে দেখেছেন যিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) -এর সাহাবিকে দর্শনকারী কোন লোককে দেখেছেন। তখন এক ব্যক্তিকে সন্ধান করে পাওয়া যাবে। অতএব তাদেরকেও তার কারণে জয়যুক্ত করা হবে।
বুখারী ৩৬৪৯, মুসলিম ২০৮-(২৫৩২), সহীহুল জামি ৯৬, মুসনাদে আহমাদ ১১০৫৬, সহীহ আত তারগীব ওয়াত তারহীব ৩৭৬১, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৮৫৩, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ৫৫১৭, মুসনাদুল হুমায়দী ৭৪৩, আবূ ইয়া'লা ৯৭৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৭৬৮, শু’আবূল ঈমান ৪২৬০, আল মুসতাদরাক লিল হাকিম ২৩৮৯।
“ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম লোক হলো আমার যুগের লোক (সাহাবিদের যুগ)। অতঃপর তৎপরবর্তী যুগের লোক, অতঃপর তৎপরবর্তী যুগের লোক, অতঃপর তৎপরবর্তী যুগের লোক, তাদের পর এমন কিছু লোকের আগমন ঘটবে, যারা সাক্ষ্য দিবে অথচ তাদের কাছ হতে সাক্ষ্য চাওয়া হবে না। তারা খিয়ানত করবে, তাদের আমানাতদারীর উপর বিশ্বাস করা যাবে না। তারা মানৎ করবে; কিন্তু তা পূর্ণ করবে না, তাদের মধ্যে স্থূলতা প্রকাশ পাবে। অপর এক বর্ণনাতে আছে, তারা (নিষ্প্রয়োজনে) শপথ করবে, অথচ তাদের কাছ হতে শপথ চাওয়া হবে না। (বুখারী ও মুসলিম)।
বুখারী ৩৬৫০, মুসলিম ২১০-(২৫৩৩), ২১৪-(২৫৩৫) নাসায়ী ৩৮০৯, সহীহুল জামি ৩৩১৭, মুসনাদে আহমাদ ১৯৮৪৮, আস্ সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী ৪৭৫১, আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব তবারানী ১৪৯৮৫, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী ২০৫৮২।
মাইমুনী রহঃ বলেন, আমাকে ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহঃ বলেছেন, হে আবুল হাসান! যখন তুমি দেখবে কোন ব্যক্তি সাহাবাগণের মাঝে কোন সাহাবির ব্যাপারে সমালোচনা করছে, তাহলে তুমি বুঝে নিও তার ঈমান ও ইসলামে খাদ আছে। [আলবিদায়া ওয়াননিহায়া-৮/১৪৮, ১৪৯, ]
পরিশেষে বলবো, সাহাবায়ে কেরাম নক্ষত্র তুল্য। তাদের সমালোচনা করা যাবে না বরং সাহাবায়ে কেরামের অনুষ্ঠিত পথে জীবন পরিচালনা করলে দুনিয়া এবং আখেরাতের শান্তি ও কল্যাণ বয়ান পাওয়া যাবে। সাহাবায়ে কেরামের পথ অনুসরণ করলে সঠিক পথ প্রাপ্ত হওয়া যাবে।
লেখক : বিষ্ণুপুর মনোহরখাদী মদিনা বাজার বাইতুল আমিন জামে মসজিদ, চাঁদপুর সদর, চাঁদপুর।