প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২২, ০০:০০
মাওঃ জিল্লুর রহমান ফারুকী। তিনি আলগীবাজার সিনিয়র মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। এছাড়াও তিনি একজন ইসলামী আলোচক এবং বাংলাদেশ জমিয়তুল মুদার্রেছীন, হাইমচর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। সম্প্রতি তিনি দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের মুখোমুখি হন।
সাক্ষাৎকার নেন : মুহাঃ আবু বকর বিন ফারুক।
চাঁদপুর কণ্ঠ : কেমন আছেন?
মাওঃ জিল্লুর রহমান ফারুকী : আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহর ইচ্ছায় ভালো আছি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : হিজরি সন কিসের স্মৃতি বহন করে?
মাওঃ জিল্লুর রহমান ফারুকী : মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় গিয়েছেন সেই স্মৃতি হিসেবেই হিজরি সন প্রবর্তন করা হয়।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আরবি বছরের এই মাসটি মহররম মাস। মহররম সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?
মাওঃ জিল্লুর রহমান ফারুকী : পবিত্র কোরআনুল কারীমে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে আল্লাহর বিধানে মাস গণনায় বারটি। এর মধ্যে বিশেষ রূপে চারটি মাস হচ্ছে সম্মানিত। এটাই হচ্ছে সুপ্রতিষ্ঠিত ধর্ম। (সূরা তাওবাহ-৩৬)।
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করলেন, রমজান মাসের পর কোন্ রোজা উত্তম? উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আল্লাহর মাস যাকে তোমরা মহররম হিসেবে ডাক। (ইবনে মাজাহ ১৮১৪)।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আশুরাতে কী কী ঘটনা সংঘটিত হয়েছিলো?
মাওঃ জিল্লুর রহমান ফারুকী : এইদিনে আল্লাহ তা’আলা পৃথিবীর সৃষ্টি করেছেন এবং এই দিনই কেয়ামত সংগঠিত হবে। বহু আসমানী কিতাব এই দিনে আল্লাহ তা’আলা নবীদের প্রতি নাযিল করেছেন। বহু সংখ্যক নবী ও রাসূলগণকে আল্লাহ তা’য়ালা এই দিনে মুক্তি দিয়েছেন। হযরত আদম আলাইহিস সালামের তওবা কবুল করেছেন, হযরত নূর আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মহাপ্লাবণ থেকে মুক্তি দিয়েছেন, হযরত আইয়ুব আলাইহিস সালামকে রোগ থেকে মুক্তি দিয়েছেন, মুসা আলাইহিস সালাম ও বনী ইসরাইলদেরকে ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি দিয়েছেন। লোহিত সাগর পাড়ি দিয়ে মূসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর আদেশে সাগর পাড়ি দিয়ে ওপারে চলে যান, ফেরাউন এবং তার দলবল লোহিত সাগরে ডুবে ধ্বংস হয়ে যায়। এই দিনেই আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয় নাতি ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু তাঁর পরিবারের অনেক সদস্যসহ কারবালার প্রান্তরে এজিদ বাহিনীর হাতে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্যে শাহাদাত বরণ করেন।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আশুরার রোজা কয়টি ও কয় তারিখে?
মাওঃ জিল্লুর রহমান ফারুকী : আশুরার রোজা দুটি। যথা : মহররমের ৯ ও ১০ তারিখ। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি আমি আগামী বছর বেঁচে থাকি তাহলে অবশ্যই ৯ তারিখ ও রোজা রাখবো। (ইবনে মাজা ১৮০৮, আবু দাউদ শরীফ ও মুসান্নাফে আবু সায়বা ও অন্যান্য হাদিস গ্রন্থে ৯ ও ১০ দুইটি রোজার কথা উল্লেখ আছে)।
চাঁদপুর কণ্ঠ : কারবালার ঘটনা কেনো সংঘটিত হয়েছিলো?
মাওঃ জিল্লুর রহমান ফারুকী : পাপিষ্ট, পাপাচার, দুরাচার এজিদের হাতে বায়াত গ্রহণ করতে ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু অস্বীকৃতি করলে এজিদের ক্ষমতার মসনদ মজবুত করতেই ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে জোর করে এজিদের বায়াত আদায়ের চেষ্টা করা অথবা তাকে দুনিয়া থেকে চিরবিদায় করে দেয়ার জন্যে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু কূফাতে না গেলেই কি পারতেন? কিন্তু তিনি কী কারণে কূফাতে গেলেন?
মাওঃ জিল্লুর রহমান ফারুকী : মানুষ কখনো পাপিষ্ট, পাপাচারকে নিজেদের খলিফা হিসেবে মেনে নেয়নি। বরং নিজেদের জান ও মালের হেফাজতের জন্যে মুখ বন্ধ করে রাখে। এ থেকে উদ্ধারের জন্যে মুসলিম জাহানের খলিফা ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে কূফায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিলো। যাতে করে মানুষরা ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর বাতানো নির্দেশনা অনুসারে নিজেদের জীবনকে ইসলামের আদর্শে পরিচালিত করতে পারে। ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু সেই আহ্বানে সাড়া দিতেই কূফাতে রওনা হলেন। কিন্তু যখন পরিস্থিতি খারাপ অনুভব করলেন, তখন তিনি কারবালা থেকে মদিনায় ফিরে আসতে চেষ্টা করেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসেই ইমাম হুসাইন ও তাঁর পরিবার পরিজনকে কারবালার প্রান্তরে থাকতে বাধ্য করে। তিনি যুদ্ধের জন্যে মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। বরং সর্বদা যুদ্ধকে এড়ানোর জন্যে সর্বাত্মক চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
চাঁদপুর কণ্ঠ : কারবালা থেকে আমরা কী শিক্ষা পাই?
মাওঃ জিল্লুর রহমান ফারুকী : কারবালা থেকে আমরা এই শিক্ষাই পাই, সত্য, ন্যায় কখনো অন্যায়ের কাছে মাথানত করে না। কোনো পাপিষ্ট পাপাচারকে খলিফা বা ইমাম হিসেবে মেনে নেয়া যায় না।
চাঁদপুর কণ্ঠ : বর্তমানে বিভিন্ন পথ ও মত রয়েছে আমরা কোন্ পথ ও মত অনুসরণ করলে সিরাতুল মুস্তাকিম পথে চলতে পারবো?
মাওঃ জিল্লুর রহমান ফারুকী : মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনুল কারীমের সূরা ফাতিহাতে এরশাদ করেন, আমাদেরকে সরল-সঠিক পথপ্রদর্শন করুন। (সূরা ফাতেহা-৬)। পরের আয়াতে এরশাদ করেন, তাদের পথ, যাদের প্রতি তুমি অনুগ্রহ করেছো, তাদের পথ নয় যারা শাস্তিপ্রাপ্ত ও পথভ্রষ্ট। (সূরা ফাতেহা-৭)। আর যারা মহান আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করেছেন, তাদের বর্ণনা সূরাহ্ নিসার মধ্যে এসেছে। ইরশাদ হচ্ছে, আর যে কেউ মহান আল্লাহ ও রাসূলের অনুগত হয়, তারা ঐ ব্যক্তিদের সাথী হবে যাদের প্রতি মহান আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন; অর্থাৎ নবীগণ, সিদ্দীকগণ, শহীদগণ ও সৎ কর্মশীল; আর এরাই সর্বোত্তম সাথী। এটাই মহান আল্লাহর অনুগ্রহ এবং মহান আল্লাহর জ্ঞানই যথেষ্ট। (সূরা নিসা, আয়াত নং ৬৯-৭০)।
উল্লিখিত আয়াতটি উক্ত আয়াতটির মতো : ‘আর যে কেউ মহান আল্লাহ ও রাসূলের অনুগত হয়, তারা ঐ ব্যক্তিদের সাথী হবে যাদের প্রতি মহান আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন।
বর্তমানে বিভিন্ন পথ ও মতের অসংখ্য মানুষ থাকলেও আমরা নবী, সিদ্দিক, শোহাদা ও সালিহীনদের পথে চলতে হবে। পরিশেষে বলবো, হক্কানী আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখদের অনুসরণে সঠিক পথ প্রাপ্ত হওয়া যায়।