শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

ভাষা-বর্ণে স্রষ্টার মাগফেরাত
অনলাইন ডেস্ক

মানবজাতির প্রতি সৃষ্টিকর্তার এক বিশেষ নিয়ামত ও সেরা দান ভাষা, এটা সৃষ্টিকর্তার বিশেষ এক নিদর্শনও । পৃথিবীতে প্রায় আট কোটি মানুষ বসবাস করছে। কিন্তু’ তাদের ভাষার সংখ্যা নির্নয় করা আদৌ সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে এ সংখ্যা বের করণে অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। তন্মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সামার ইনস্টিটিউট অব লিঙ্গুইস্টিকস আন্তর্জাতিক ভাষা সংস্থা ২০০৯ সালের একটি গবেষণায় কিছু হলেও এ বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায়। যেখানে বলা হয়েছে যে, বিশ্বের বর্তমানে ভাষার সংখ্যা হচ্ছে ছয় হাজার ৯০৯টি। বিখ্যাত কবি রামনিধি গুপ্তের কবিতার চরণেও মাতৃভাষার গুরুত্ব ও পরিধি লক্ষ্যণীয় :

নানান দেশের নানান ভাষা।

বিনা স্বদেশী ভাষা পুরে কি আশা..!

ভাষা মানুষের মনের ভাব প্রকাশের সর্বোত্তম মাধ্যম। বস্তুত ভাষার ব্যবহার মুখের কথায় বা কলমের মাধ্যমেও হয়ে থাকে। স্রষ্টার পক্ষ থেকে সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসার এক অসাধারণ নিয়ামতস্বরূপ। মানুষ দুভাবেই ভাষা প্রয়োগের ক্ষমতা পেয়েছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তিনিই মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে ভাব প্রকাশ করতে ভাষা শিখিয়েছেন।’ (সুরা আর-রাহমান: ৩-৪)

ভাষা শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ জ্ঞানী-গুণী ও পণ্ডিত হয়; তবে এ জন্য মাতৃভাষার ভূমিকা ব্যাপক ও গুরুত্বপূর্ণ। তাই জ্ঞানার্জনের সাথে ভাষা চর্চারও যথেষ্ট গুরুত্ব লক্ষ্য করা যায়। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি মানুষকে রক্তপি- থেকে সৃষ্টি করেছেন। যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। পড়ো, আর জেনে রেখো, তোমার প্রভু মহা মহিমান্বিত। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন, যা সে জানত না।’ (সুরা আল-আলাক : ১-৫)

পৃথিবীর এ ভাষা ও বর্ণ বৈচিত্রের সৃষ্টির মাঝেও রয়েছে স্রষ্টার নিপুণতার পরিচয়। আল্লাহ বলেন, হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে, পরে তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর প্রতি সর্বাধিক ভীতসন্ত্রস্ত ব্যক্তিই আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদাবান। আর জেনে রেখো, আল্লাহ সব কিছু জানেন এবং সব কিছুরই খবর রাখেন। (সুরা হুজরাত: ১৩) মানুষের বর্ণ বৈচিত্রের রহস্য সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, তুমি কি দেখনা যে, আল্লাহ আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তা দ্বারা তিনি বিচিত্র বর্ণের ফলমূল উগত করেন? পাহাড়ের মধ্যে আছে বিচিত্র বর্ণের ফল-শুভ্র, লাল ও নিকষ কালো। এভাবে রং বে-রংয়ের মানুষ, জানোয়ার ও চতুষ্পদ জন্ম’ রয়েছে। আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে যারা জ্ঞানী তারাই তাঁকে ভয় করে; আল্লাহ পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল। (সুরা ফাতির : ২৭ ও ২৮)

কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা বহু আয়াতে এ আসমান ও জমিনের মালিকানা দাবি করে নিজের পরিচয় তুলে ধরেছেন। মানব সৃষ্টির উপকরণ এবং মানবজীবনের বিভিন্ন অধ্যায়ের বর্ণনায়ও মানুষের সক্ষমতা আর দুর্বলতার বিবরণে তাঁর সৃষ্টি ক্ষমতার অসাধারণ পরিচয় প্রধান করেছেন। সুরা আররূমের ১৯ থেকে ২৫ নাম্বার আয়াত পর্যন্ত সুস্পষ্টভাবে তিনি তাঁর সৃষ্টি নিদর্শন সমূহ তুলে ধরেছেন। আল্লাহ বলেন, আল্লাহর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র। এতে জ্ঞানীদের জন্য অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে। (সুরা আররূম : ২৩)

মাতৃভাষার গুরুত্ব বোঝাতে প্রখ্যাত ভাষাবিজ্ঞানী ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন, ‘মানুষের স্বভাবের মধ্যে যদি ভাষার বীজ না থাকত, তাহলে ভাষার অস্তিত্ব সম্ভবত মানুষের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যেত না। সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টির সঙ্গেই তার মধ্যে ভাষার বীজ রেখে দিয়েছেন। এদিক থেকে ভাষাকে মানুষের প্রতি সৃষ্টিকর্তার অপূর্ব দান বলা যেতে পারে।’

মানবতার বন্ধু মহানবী (সাঃ) মাতৃভাষা বিশুদ্ধভাবে শিক্ষা ও চর্চার প্রতি প্রবলভাবে গুরুত্বারোপ করেছেন। তাই মাতৃভাষার শুদ্ধ চর্চাও হুজুর (সাঃ)-এর এক অনুপম সুন্নাত। কেননা রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা তিনটি কারণে আরবি ভাষাকে ভালোবাসবে। কেননা, আমি আরবি ভাষী, কোরআনের ভাষা আরবি এবং জান্নাতবাসীর ভাষাও হবে আরবি। (বায়হাকি)

ভাষার মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করার সুযোগ্যদান মানুষের প্রতি আল্লাহ তায়ালার বিশাল এক নেয়ামত ও অনুগ্রহ। এভাবেই তিনি মানবদেহের প্রতিটা অঙ্গ-প্রতঙ্গে তার সৃষ্টি নিপুণতা ফুটিয়ে তুলে তার কুদরতের পরিচয় দিয়েছেন। তাই তিনি বলেছেন, তোমরা যেদিকে তাকাবে সেদিকেই আল্লাহর প্রতিচ্ছবি দেখবে। (সুরা বাকারা : ১১৫)

সুরা ওয়াকিয়ায় বলা হয়েছে, আমি তোমাদের সবচেয়ে নিকটতম অথচ তোমরা তা প্রত্যক্ষ কর না। এ জন্যই পরিশেষে বলা যায়, ‘আমি ক্ষুদ্র তাই বুঝিতে পারি না ওগো মহা মহিয়ান, তুমি সবখানে বিরাজমান।’

মাওঃ মোঃ জসিম উদ্দিন মাহদী : খতীব, রেলওয়ে কাঁচা কলোনি

জামে মসজিদ, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়