প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২২, ০০:০০
আহলে বাইত হলো হযরত আলী (রাঃ), হযরত ফাতেমা (রাঃ), হযরত হাসান (রাঃ), হযরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু। মর্যাদার দিক থেকে তাঁরাই সবার ঊর্ধ্বে এবং নবী পত্নীরাও আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত। পবিত্র কোরআনে এসেছে, তারা বললো, আপনি কি আল্লাহর কাজে বিস্ময় বোধ করছেন? (হে) এই পরিবারের লোকেরা! আপনাদের প্রতি রয়েছে আল্লাহর রাহমাত ও বারাকাত; নিশ্চয়ই তিনি সমস্ত প্রশংসার যোগ্য, মহিমান্বিত। (সূরা হুদ : ৭৩)।
ইবরাহীম (আঃ)-এর স্ত্রীকে এখানে ফিরিশতাগণ ‘আহলে বায়ত’ বলে সম্বোধন করেছেন এবং তার জন্যে বহুবচন (আপনাদের) শব্দ ব্যবহার করেছেন। যাতে প্রথমত এই কথা প্রমাণ হয় যে, স্ত্রী সর্বপ্রথম আহলে বায়তের অন্তর্ভুক্ত। দ্বিতীয়ত এ প্রমাণ হয় যে, ‘আহলে বায়তের’ জন্য বহুবচন পুংলিঙ্গ শব্দ ব্যবহার করাও ঠিক। যেমন সূরা আহযাবের ৩৩নং আয়াতে আল্লাহ তা’আলা নবী (সাঃ)-এর পবিত্রা স্ত্রীগণকেও ‘আহলে বায়ত’ বলেছেন এবং তাঁদেরকেও বহুবচন পুংলিঙ্গ শব্দ দ্বারা সম্বোধন করেছেন।
আহলে বাইত আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামণ্ডএর প্রিয় ও স্নেহের পাত্র। সেদিকে নির্দেশ করেই আল্লাহর রাব্বুল আলামীন পবিত্র ক্বোরআনুল করীম এরশাদ ফরমান, অর্থাৎ : (হে হাবীব) আপনি বলে দিন যে, আমি (রাসূল) তোমাদের নিকট কোন বিনিময় চাই না, আমার বংশধরগণ ও নিকটাত্মীয়দের ভালোবাসা ব্যতীত। [সূরা শুরা-২৩]। এই আয়াতে কারীমা নাযিল হওয়ার পর, সাহাবায়ে কেরাম রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র নিকট স্বীয় আত্মীয় সম্পর্কে বিনয়ের সাথে জানতে চাইলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার নিকটাত্মীয় কারা? যাঁদের প্রতি (আমাদের) আন্তরিক ভালোবাসা ও সম্মান প্রদর্শন করা ওয়াজিব। [তাফসীর ইবনে কছীর-২য় খণ্ড, ২১১ পৃষ্ঠা]। নবীজি সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করলেন, তাঁরা (আহলে বাইত) হলেন হযরত আলী, হযরত ফাতিমা, হযরত ইমাম হাসান ও হযরত ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুম এবং তাদের উভয়ের আওলাদ। [যারক্বানী আলাল মাওয়াহিব, সাওয়াইক্বে মুহরিক্বা, খুৎবাতে মুহররমণ্ডপৃষ্ঠা ২৫৬, মুফতি জালালুদ্দীন আমজাদী (রহঃ)]।
বস্তুত আহলে বাইত ছিলেন রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামণ্ডএর খুবই আপনজন। পবিত্র ক্বোরআনে তাদের পবিত্রতা ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহ্ পাকের ইরশাদ, ‘হে আহলে বাইত! নিশ্চয় আল্লাহ্ তা’আলা চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে। [সূরা আহযাব : ৩৩]।
আহলে বাইতে রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামণ্ডএর পরিচয়ে প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এবং তাবেঈ হযরত মুজাহিদ, হযরত ক্বাতাদাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমাসহ অন্য মুফাস্সিরের মতে, আহলে বাইত বলতে ‘‘আহলে আবা’’ অর্থাৎ চাদরাবৃতদেরকে বুঝানো হয়েছে। প্রশ্ন হলো কারা এই চাদরাবৃত? এই প্রসঙ্গে একটি হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন নবীপাক সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম প্রত্যুষে বের হলেন, তখন তাঁর শরীর মুবারক কালো নকশাবিশিষ্ট চাদর দ্বারা আবৃত ছিলো। অতঃপর ইমাম হাসান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু আসলে নবীজী তাঁকে চাদরের মধ্যে শামিল করে নিলেন, এরপর ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এলে তাঁকেও নবীজী চাদর মুবারকে জড়িয়ে নিলেন। অতঃপর আসলেন হযরত মা ফাতিমা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা আল্লাহর রাসূল তাঁকেও চাদরের অভ্যন্তরে নিয়ে নিলেন। সর্বশেষ এলেন শেরে খোদা আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু। তাঁকেও তাঁর নূরানী চাদর মুবারকে প্রবেশ করিয়ে নিলেন। অতঃপর তিলাওয়াত করলেন, হে আহলে বাইত! নিশ্চয় আল্লাহ্ তা’আলা চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে। [সূরা আহযাব-৩৩]। অতঃপর রব্বুল আলামীনের দরবারে এই দোয়া করলেন, আল্লাহুম্মা হা-উলায়ে আহলু বাইতি ওয়াখাচ্ছাতি ফাআজহিব আনহুমুর রিজসা ওয়াতাতহিরহুম তাতহীরান। অর্থাৎ, হে আল্লাহ্, এরাই আমার আহলে বাইত এবং বংশীয় ও ঘনিষ্ঠজন। আপনি এদের থেকে অপবিত্রতা দূরীভূত করুন আর এদেরকে পরিপূর্ণভাবে পবিত্র করুন। [মুসলিম শরীফের বরাতে মিশকাত শরীফ: পৃষ্ঠা ৫৬৮]।
অপর এক হাদীসে পাকে এসেছে, হযরত উসামা ইবনে যায়দ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বর্ণনা করেন, ‘আমি নবীজীর খিদমতে উপস্থিত হয়ে দেখলাম নবীজী এমনভাবে কম্বল জড়িয়ে আছেন যে, মনে হলো তার ভিতরে কিছু লুকিয়ে রেখেছেন। আমি আবেদন করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্, সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়কা ওয়াসাল্লাম, কম্বলের ভিতরে কী যেনো লুকিয়ে আছে মনে হচ্ছে? সাথে সাথে নবীজী কম্বলখানা খুলে দিলেন। তখন দেখা গেলো নবীজীর নূরানী কোলে বসে আছেন ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা। অতঃপর নবীজী ইরশাদ করলেন, আল্লাহুম্মা ইন্নি উহিব্বুহুমা ফাআহিব্বাহুমা ওয়া আহিব্বা মান আহাব্বাহুমা। অর্থাৎ হে আল্লাহ্! আমি এই দুজনকে ভালোবাসি। সুতরাং তুমিও এদেরকে ভালোবাসো এবং ভালোবাসো তাদেরকে যারা এদেরকে ভালোবাসবে। [তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ : পৃষ্ঠা ৫৭০]। অতএব, প্রতীয়মান হলো যে, আহলে বায়ত হলো আলী, ফাতেমা, ইমাম হাসান, ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুম ও তাঁদের সন্তানগণ।
আহলে বাইতে রাসূলের মর্যাদা
আহলে বাইত তথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আওলাদদের যে মর্যাদা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দান করেছেন তা সাধারণ মমিনদের দেওয়া হয়নি। কারণ! আহলে বাইত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বংশধর। হাদীসে পাকে এসেছে, হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাস’ঊদ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি দেখেছি, নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইনের হাত ধরে বলেছেন-এরা আমার সন্তান। [দায়লামী আল্ ফিরদাউস বিমা’ সূরিল খিতাব-৪/৩৩৬ হাদীস ৫৯৭৩]।
ইমাম হাসান ও হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমার সাদৃশ্য হাদীসে পাকে এসেছে নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামণ্ডএর সঙ্গে। হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, তাঁরা সবচেয়ে বেশি সদৃশ ছিলেন। [আসকালানী, আল্ ইসাবা ফি তাময়িজিস সাহাবা ২/৭৭ হাদীস ১৭২৬]।
তাবরানী শরীফের এক হাদীসে পাকে রয়েছে, হযরত মাওলা আলী শেরে খোদা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত ইমাম হাসান রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বক্ষ থেকে মাথা মুবারক পর্যন্ত, আর ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু ছিলেন বক্ষ থেকে পা মুবারক পর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামণ্ডএর পুরোপুরি সদৃশ। [আল্ মুজামুল কবির, ৩/২৯ হাদীস ২৫৭]।
আহলে বাইত সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত বংশের অধিকারী
নবী-বংশ সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী। এ প্রসঙ্গে হাদীস পাকে এসেছে, হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ্ তা’আলা হযরত ইসমাঈল আলায়হিস সালামণ্ডএর আউলাদগণের মধ্যে কেনান গোত্রকে নির্বাচন করেছেন। তার মধ্য থেকে কোরাইশ বংশকে আর কোরাইশ বংশ হতে বনী হাশেমকে এবং সর্বশ্রেষ্ঠ বনী হাশেম হতে আমাকে মনোনীত করেছেন। [বরকাতে আলে রাসূল : পৃষ্ঠা ৯১, খুৎবাতে মুহররম পৃষ্ঠা ২৪৩]।
উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, একদিন জিবরাঈল আমীন এসে আমাকে বললেন, আমি জমিনের পূর্ব হতে পশ্চিম পর্যন্ত সবখানে তালাশ করলাম, কিন্তু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হতে উত্তম মর্যাদাবান সম্মানিত কাউকে খুঁজে পাইনি।
তাবরানী শরীফে ও দারু কুতনীর মধ্যে উল্লেখ রয়েছে, রাসূলে পাক ইরশাদ করেছেন, কিয়ামতের দিন আমার উম্মতের মধ্যে সর্বপ্রথম ‘আহলে বায়ত’-এর জন্যে আমার শাফা’আত হবে; অতঃপর অন্যান্যের জন্যে। আল্লাহর নবী ইরশাদ করেন, ‘আমি যাদের জন্য/যার জন্য সর্বপ্রথম সুপারিশ করবো। তারাই সর্বাধিক মর্যাদাবান হবে।’ [আশরাফুল মুয়াববাদ : পৃষ্ঠা ৩৯]। এসব হাদীসে পাক থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, আহলে বাইত অতি মর্যাদাপূর্ণ ও শ্রেষ্ঠ আসনে সমাসীন।
আহলে বায়তের প্রতি মুহাব্বত
আহলে বাইতের প্রতি মহাব্বত ভালোবাসা মূলত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ভালোবাসারই নামান্তর। তিরমিযী শরীফে উল্লেখ রয়েছে, হযরত জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বিদায় হজের সময় আরাফাত দিবসে রাসূলপাক সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে ‘ক্বাসওয়া’ নামক উটের উপর আরোহনরত অবস্থায় বলতে শুনেছি ও দেখেছি, নবীজী ইরশাদ করলেন, হে মানব সম্প্রদায়! আমি তোমাদের মাঝে এমন কিছু রেখে যাচ্ছি, যদি তোমরা তা মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরো তাহলে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। আর তা হলো কিতাবুল্লাহ্ ও আমার বংশধর, আমার আহলে বাইত। [মিশকাত শরীফ : পৃষ্ঠা ৫৬]।
আউলাদে রাসূলকে যে যতো বেশি ভালোবাসবে ও সম্মান করবে সে ততো বেশি সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হবে। হযরত আবূ হোরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি হাসান-হোসাইন আলায়হিমাস্ সালামকে ভালোবেসেছে, সে যেনো বাস্তবে আমি রাসূলকে ভালোবেসেছে। [ইবনে মাজাহ আস্ সুনান, ইমাম আহমদণ্ডআল্ মুসনাদ, নাসায়ী-আস্ সুনানুল কুবরা ও ফাযায়িলুস্সাহাবা। যথক্রমে হাদীস ১৪৩, ৭৮৬৩, ৮১৬৮ ও ৬৪]।
আর যাকে আল্লাহর রাসূল ভালোবেসেছেন, আল্লাহ্ও তাঁকে ভালোবাসবেন। সুতরাং আল্লাহ্ যাকে ভালোবাসবেন নিঃসন্দেহে তিনি তাঁকে নেয়ামতপূর্ণ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। হাদীসপাকে এসেছে, হযরত সালমান ফারসী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, হযরত রাসূল করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইমাম হাসান-হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা সম্পর্কে বলেছেন, যে ব্যক্তি তাঁদেরকে ভালোবাসবে তাকে আমি ভালোবাসবো, আর যাকে আমি (নবী) ভালোবাসবো, তাকে আল্লাহ্পাক ভালোবাসবেন, আর আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন যাকে ভালোবাসেন তাকে তিনি জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যা নেয়ামত দ্বারা পরিপূর্ণ। [তাবরানী : আল্ মু’জামুল কবীর ৩/৫০ হাদীস ২৬৫৫ হায়সমী : মাজমাঊয যাওয়ায়েদ ৯/১৮১]।
আহলে বাইতের মর্যাদা ও সম্মানের ব্যাপারে হযরত আবূ বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, (যার হাতে আমার প্রাণ এ সত্তা, তাঁর কসম) আমার নিকট আমার আত্মীয়গণ অপেক্ষা নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামণ্ডএর আত্মীয় ও বংশধরের ভালোবাসা অধিক প্রিয়। [বুখারী শরীফ ও আশশারফুল মুআব্বদ : পৃষ্ঠা ৮৭]।
নবীজী আরো বলেন, অর্থাৎ হোসাইন আমার থেকে আমি হোসাইন থেকে, যে হোসাইনকে ভালোবাসে তাকে মহান আল্লাহ্ ভালোবাসেন। [তিরমিযি শরীফ, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৮২]। নবী পাক সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম নামাযরত ছিলেন। ইমাম হোসাইন নিজ ঘর হতে বের হয়ে মসজিদে নববীতে গেলেন এবং দেখতে পেলেন নানাজান রাসূলাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের নিয়ে নামাযরত। শিশু ইমাম হোসাইন কালবিলম্ব না করে আল্লাহর রাসূলের কাঁধ মুবারকে ওঠে গেলেন। হুযূর-ই আকরাম সাজদাকে দীর্ঘ করে দিলেন। রাসূলুল্লাহরও ইচ্ছা ইমাম হোসাইন যতোক্ষণ নিজের ইচ্ছায় নামবে না ততোক্ষণ অবস্থান করুক। এক পর্যায়ে ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু অবতরণ করলে সাথে সাথে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামও মাথা মুবারক সাজদা হতে উত্তোলন করলেন। নামাজ শেষে সাহাবীরা সাজদা দীর্ঘ করার কারণ জানতে চাইলেন এবং বললেন আজ থেকে কি সাজদা দীর্ঘ করার কোনো হুকুম এসেছে? হে আল্লাহর রাসূল! হুযূর-ই আকরাম উত্তরে বললেন, ‘না, সাজদা দীর্ঘ করার কারণ আমার হোসাইন আমার কাঁধে উঠে গিয়েছিলো। আর সে পড়ে গিয়ে ব্যথা পাওয়ার আশঙ্কায় আমি সাজদা দীর্ঘ করি। [মুস্তাদরাক : ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠ ১৬৬]। ইমাম হোসাইনের এতটুকু কষ্টও নবীজী সহ্য করতে পারলেন না, তাণ্ডও আবার নামাজরত অবস্থায়। তাহলে ৬১ হিজরি সনে করবালার প্রান্তরে কুখ্যাত ইয়াজিদের সেই ইমামের নূরানী দেহ মুবারকে কত ধরনের নির্যাতন চালিয়ে পরিশেষে দেহ মুবারক হতে মাথা মুবারককে বিচ্ছিন্ন করে উল্লাস করলো! (নাঊযুবিল্লাহ্)। এতে নবীজী কত কষ্ট পেয়েছেন তা বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না।
ক্ষমতার লোভে এজিদ নবী পরিবারের কথা ভুলে আহলে বাইতের কথা ভুলে গিয়ে ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু ও তার সঙ্গী-সাথীদেরকে একদল নামধারী মুসলমান কারবালার প্রান্তরে নির্মমভাবে শহীদ করেছেন। যা ইসলামের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করে দিয়েছে।
ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি, প্রিয় নানাজি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইসলামকে পাপিষ্ঠ, পাপাচার, দুরাচার থেকে রক্ষা করার জন্যেই কারবালার প্রান্তরে উপস্থিত হন এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে শাহাদাত বরণ করেন।
পরিশেষে বলবো, আহলে বাইতের প্রতি আমাদের ভালোবাসা অটুট থাকুক। প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাদেরকে ভালোবেসেছেন আমরাও তাদেরকেই ভালোবাসবো ইমাম হাসান হোসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর পথ ও মতের উপর থেকে ইসলামী আদর্শ নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করবো। তবে তাদের থেকে দূরে থাকবো, যারা হায় হোসাইন! হায় হোসাইন বলে নিজেদের শরীরকে রক্তে রঞ্জিত করছে। নারী-পুরুষ একসাথে হয়ে ঢোল-বাদ্য বাজিয়ে হায় হোসাইন, হায় হোসাইন বলে মিছিল বের করছে।
মুফতি মুহাঃ আবু বকর বিন ফারুক : ইমাম ও খতিব, বিষ্ণুপুর মনোহরখাদী মদিনাবাজার বাইতুল আমীন জামে মসজিদ, চাঁদপুর সদর, চাঁদপুর।