শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ২৯ জুলাই ২০২২, ০০:০০

মুহাররম ও আশুরা
অনলাইন ডেস্ক

১৪৪৪ হিজরি। মুহাররম চাঁদের বারো মাসের মধ্যে প্রথম মাস। চাঁদের মাসের গণনা মুসলিমদের জন্য একটি বিশেষ গুরুত্ব ও তাৎপর্য বহন করে থাকে তার কারণ হলো, মুসলিম জাতির ধর্মীয় সকল কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় হিজরি সাল অনুযায়ী। তাদের সকল ইবাদাত- বন্দেগীর সময় সীমাও নির্ধারিত হয় আরবী নববর্ষ তথা হিজরি বর্ষপঞ্জী অনুসারে।

প্রাচীন আরবের লোকেরা চাঁদের কয়েকটি মাসকে মর্যাদাপূর্ণ বলে মনে করতো তন্মধ্যে মুহাররম মাস অন্যতম। এছাড়াও রজব, জিলক্বদ ও জিলহজ্জ মাসকে পবিত্র জ্ঞান করতো। এ মাসগুলোতে তারা কোন প্রকারে মারামারি, হানাহানি, কলহ-বিবাদ, ঝগড়া, হত্যা, রাহাজানি, লুঠতরাজ, খুন-খারাবি ও যুদ্ধ বিগ্রহসহ সকল প্রকারের খারাপ ও অনিষ্ঠকর কাজগুলো থেকে বিরত থাকার চেষ্ঠা করতো। এসকল গর্হিত কাজ আরব সমাজে এই মাসগুলোতে নিষিদ্ধ ছিল। আরব জাতিরাও সেটি মেনে চলতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। আল কুরআনে সুরা তাওবার ৩৬ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন- “নিশ্চয়ই আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাস বারোটি, আসমানসমুহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তম্মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং এ সময়ের মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার অবিচার করো না।”

মহানবী (সাঃ) বলেছেন- “আকরিমু শাহরুল্লাহিল মুহাররমু ফামান আকরামাল মুহাররামু আকরামাহুল্লাহু বিল জান্নাতি ওয়া নাজাহু মিনান নারি।” অর্থাৎ “তোমরা আল্লাহর নির্ধারিত মাস মুহররামের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করো। কেননা যে ব্যক্তি মুহাররমের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করে সম্মানিত করবেন এবং দোযখের আগুন হতে নাজাত দান করবেন।” কুরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মুহাররম মাসের অন্যান্য মাসের তুলনায় যথেষ্ঠ গুরুত্ব, ফযিলত ও বরকত রয়েছে। আরবী মাসের মধ্যে এটি একটি অন্যতম সেরা মাস। এ মাসে নেক আমলসমুহ করলে অশেষ সওয়াব ও নেকী পাওয়া যাবে। এ সম্পর্কে অসংখ্য হাদীস বর্ণিত হয়েছে- “রমজান মাসের রোজার পরেই মুহাররমের দশ তারিখের রোজা অন্যান্য সমস্ত রোজার চেয়ে উত্তম।” একটি হাদীসে মহানবী (সাঃ) বলেন, “আমি আল্লাহ তা’য়ালার নিকট এ আশা রাখি যে, আশুরার রোজা তার পূর্ববর্তী বছরের সমস্ত সগীরা গুনাহের কাফফারা স্বরূপ হবে।” ( মুসলিম) ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, “যে ব্যাক্তি আরাফাতের দিন রোজা রাখে, তার দুই বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যায়। আর যে ব্যাক্তি মুহাররমের যে কোন দিন রোযা রাখে, সে প্রতিটি রোজার বিনিময়ে ৩০ দিন রোজা রাখার সওয়াব অর্জন করে থাকে।” (তাবরানী)

মহানবী (সাঃ) মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করে আসার পরে মদীনার ইহুদীদের মুহাররমের আশুরার দিনে রোজা রাখতে দেখেন। মদীনার ইহুদীদের থেকে জানতে পারলেন যে, আশুরার দিনে মুসা (আঃ) ফিরাউনের বন্দীদশা থেকে তাঁর জাতি বনী ইসরাঈলকে উদ্ধার করেছিলেন এবং ফিরাউন দলবলসহ নীলনদে ডুবে মারা গিয়েছিল, এর কৃতজ্ঞতা স্বরুপ মুসা (আঃ) এ দিনে রোজা রেখেছেন ফলে বনী ইসরাঈল জাতি তথা ইহুদীরাও রোজা রাখে। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন- মুসা (আঃ) এর সাথে তোমাদের চেয়ে আমার সম্পর্ক আরো অধিক ঘনিষ্ঠ। তখন থেকেই রাসুল (সাঃ) নিজে আশুরার রোজা রাখা শুরু করেন এবং তার উম্মতদের রোজা রাখার নির্দেশ প্রদান করেন। এই দিনে ইহুদীরা একটি রোজা রাখে, মহানবী (সাঃ) বলেন, তোমরা দুইটি অর্থাৎ ৯ ও ১০ মুহাররমের রোজা রাখো তাহলে ইহুদীদের অনুকরণ করা হবে না। অপর একটি বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, নূহ (আঃ) এর যুগে মহাপ্লাবনে সবকিছু ডুবে গেলে তিনি ঈমানদারদের নিয়ে নৌকায় উঠেন এবং বন্যার পানি নেমে গেলে এই আশুরার দিনেই তিনি পৃথিবীর মাটিতে পা রাখেন তথা নৌকা থেকে অবতরণ করেন। তার শুকরিয়া আদায় করার জন্য তিনি রোজা রেখেছিলেন।

মুহাররম মাসের অনেকগুলো ঘটনার মধ্যে ১০ মুহাররম তারিখের সংঘটিত অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী রয়েছে। যা পৃথিবীর সৃষ্টির সুচনালগ্ন থেকে অদ্যাবধি অসংখ্য ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক তৎপর্যপূর্ণ ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। এই দিনটি শুধুমাত্র মুসলিমদের কাছেই বিশেষ তাৎপর্য বহন করে না বরঞ্চ ইহুদী ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নিকটেও এর যথেষ্ঠ গুরুত্ব রয়েছে।

১০ মুহাররম আশুরার দিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলি যেমন-

আল্লাহ তা‘য়ালা এই দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। এই দিনেই পৃথিবী ধংস হয়ে কিয়ামত সংগঠিত হবে। আদম (আঃ) কে এই দিনে সৃষ্টি করা হয় এবং পৃথিবীতে পাঠনোর পরে এই দিনে তাঁর দু‘আ কবুল হয়। তখন থেকে তিনি ও তাঁর স্ত্রী হাওয়া (আঃ) পৃথিবীতে বসবাস করতে আরম্ভ করেন। নূহ (আঃ) মহাপ্লাবনের শেষে তিনি নৌকা থেকে পৃথিবীর মাটিতে পা রাখেন। এটিও এই মুহাররমের দশ তারিখেই সংগঠিত হয়েছিল। ইব্রাহীম (আঃ) তৎকালিন বাদশাহ নমরুদের অগ্নীকুন্ডের মধ্য থেকে এই দিনে পরিত্রাণ লাভ করেছিলেন। ইয়াকুব (আঃ) ও ইউসুফ (আঃ) এর দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর তাদের মধ্যে এই দিনে আল্লাহ তা‘য়ালা সাক্ষাতের ব্যবস্থা করেছিলেন। ইরাকের দজলা নদীতে মাছের পেটে ৪০ দিন থাকার পরে ইউনুস (আঃ) কে মাছ নদীর তীরে পেট থেকে উগলিয়ে বের করে দিয়েছিল এই আশুরার দিনে। দীর্ঘ আঠারোটি বছর রোগ-শোকে কাতর হয়ে ভোগার পরে আইয়ুব (আঃ) কে আল্লাহ তায়ালা রোগমুক্তি প্রদান করেছিলেন এই দিনে। এই দিনে অত্যাচারি জালিম শাসক ফেরাউনের কবল থেকে মুসা (আঃ) এর মাধ্যমে বনী ইসরাঈল জাতি মুক্তি লাভ করেছিল। মরিয়ম (আঃ) এর গর্ভে ঈসা (আঃ) এর জন্ম লাভ ও এই দিনে ইহুদীদের আক্রোশ থেকে রক্ষা করতে তাঁকে আল্লাহ আকাশে উঠিয়ে নেন। এমনকি ইব্রাহীম (আঃ) কে এই দিনে খলিলুল্লাহ বা আল্লাহর বন্ধু উপাধী প্রদান করা হয়। এমনও নানবিধ আশ্চর্যান্বিত অলৌকিক ঘটনাবলির সাথে এই দিনটি জড়িয়ে আছে।

৬৮০ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক ৬১ হিজরির ১০ মুহাররমে ইরাকের ইউফ্রেটিস নদী বা ফোরাত নদীর উপকূলে কারবালা নামক মরুময় প্রান্তরে মানব জাতির ইতিহাসের এক কঠিন মর্মান্তিক, বেদনাদায়ক, দুঃখজনক, বিয়োগান্তকর ঘটনা সংঘঠিত হয়েছিল। যা পৃথিবী সৃষ্টির এই দিনের অসংখ্য ঘটনাবলিকে ম্লান করে দিয়েছে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর তিরোধানের পরে নিয়মতান্ত্রিকভাবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে খুলাফায়ে রাশিদুনের রাস্ট্র ক্ষমতার পরিবর্তন হচ্ছিল। কিন্তু মুয়ারিয়া (রাঃ) তাঁর পুত্র ইয়াজিদকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় মানোনয়ন দান করে খেলাফত ব্যবস্থার মূলোৎপাটন সাধন করে এককেন্দ্রীক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথের সুচনা করেন। মুয়াবিয়া (রাঃ) এর ইন্তিকালের পরে তাঁর পুত্র ইয়াজিদ রাস্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে ইসলামী আদর্শ বিরোধী কর্মকান্ড শুরু করে দেয়। আহলে বায়েত, প্রবীণ সাহাবী কিরাম ও ইমাম হুসাইন (রাঃ) এর বিরোধীতা করেন। ফলে ইয়াজিদের সাথে দ্বন্দ্ব সংঘাতের সূত্রপাত হয়। ইমাম হুসাইন (রাঃ)ই ছিলেন প্রকৃতপক্ষে ইসলামী খিলাফতের ন্যায় সঙ্গতভাবে উত্তরসূরি। তারই ফলশ্রুতিতে কারবালার মর্মান্তিক ঘটনাবলি সংঘটিত হয়ে ইমাম হুসাইন(রাঃ)সহ তার পরিবারের আরো ৭২ জনের শাহাদাত বরণ করতে হয়। উল্লেখ যে, বাংলা সাহিত্যের জনৈক লেখক কারবালার এই বিয়োগান্তক ঘটনাকে নিছক একটি নারী ঘটিত

বিবাহ জনিত বিষয় বলে শত শত পৃষ্ঠার কয়েক খন্ডের আবেগীয়, অবাস্তব, অবান্তর, অকল্পনীয় বিষয়ের অবতারণা করে সাহিত্যিকের কল্পনাকে কলমের আঁচড়ে, সাহিত্যের রস-কষ দিয়ে মনের মাধুরী মিশিয়ে তথাকথিত গাল-গল্প রচনা করেছেন। লেখক নায়েবীয় কায়দায় বৃটিশ শাসনামলে ঘটনার প্রকৃত বিষয়াবলি আড়াল করে তিনি কোন উদ্দেশ্য সাধনে ব্যস্ত ছিলেন তা পরবর্তী ইতিহাস গবেষকদের দ্বারা বিশ্লেষণের দাবী রাখে।

অপরদিকে একশ্রেণির ধর্মব্যবসায়ী, ধান্ধাবাজ, ধর্মের লেবাসধারী, উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠি এই দিবসকে কেন্দ্র করে ধর্মপ্রাণ তৌহিদী মুসলিম জনগণকে এ দেশে খেলাফত প্রতিষ্ঠার কথা বলে বিভ্রান্ত করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার অহেতুক অপচেষ্ঠায় লিপ্ত রয়েছে। তাদের এই অপচেষ্ঠার বিরুদ্ধে এ দেশের স্বাধীনচেতা বীর বাঙ্গালী সজাগ ও সচেতন রয়েছে। আশুরার দিবসকে কেন্দ্র করে তারা কখনও এই দেশের মুসলমানদের বিভ্রান্ত করতে পারবে না।

আজকের স্বাধীনচেতা, গণতন্ত্রকামী, সত্য-ন্যায়ের সংগ্রামী মানুষগুলো অন্যায়-অবিচার, জুলুম ও নির্যাতনের এককেন্দ্রীক শাসন ব্যবস্থার ও রাজতন্ত্রের এবং অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচারী, সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ও মুসলিম নির্যাতনের মূলোৎপাঠন করে ইসলামের বিজয় ঝান্ডা উড্ডীনের মাধ্যমে ইমাম হুসাইন (রাঃ) এর ইসলামের খিলাফত ও গণতান্ত্রিক রাস্ট্র ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নিবেদিত প্রাণদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধমূলক শান্তিপূর্ণ সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার দুর্বার আন্দোলনকে বেগবান ও অব্যাহত রাখতে প্রেরণা জোগাবে এই দিনটি। কারবালার ঘটনার শিক্ষা হলো নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত কোন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন মানুষের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। যা সম্প্রদায়, জাতি ও দেশের মধ্যে অশান্তি দ্বন্দ্ব কলহ বাধিয়ে দেয়। অবশ্যই ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে ভালোমানের ও মনের সৎ, যোগ্য ইমামতের দায়িত্ব পালনে লোক না নিয়োগ দান করলে এরুপ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সূত্রপাত হওয়ার সম্ভবনাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না। জনরায়কে সম্মান প্রদর্শন করা উচিত। আশুরার দিনের নিন্দনীয় ও পরিত্যজ্য কাজের মধ্যে হলো- তাজিয়া মিছিল বের করা, হায় হোসেন, হায় হোসেন বলে মাতাম করা, মর্সিয়া বা শোকগাঁথা পাঠ করে কান্না-কাটি করা, এই মাসে বিয়ে-শাদী না করা, ১০দিন ওজু গোছল না করা, খালি পায়ে হাঁটা, বাড়ি-বাড়ি চাউল তুলে সিন্নী রান্না করে খাওয়া, নিজের শরীর রক্তাক্ত করা, বুক চাপড়িয়ে মাতাম করা। এহেন বেহুদা কাজ করার ইসলামী শরীয়ত অনুমোদন দেয় নাই। এই দিবস উপলক্ষ্যে গ্রামে গঞ্জে লাঠিখেলার আয়োজন করা, তীর ধনুক চালানো, জারিগান, শোকগীতি গাওয়া ও নাচের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা অহেতুক। কেউ মনে করতে পারেন, এই নর্তন-কুর্দন করে কাফের বেইমানদের ভয় দেখানো আরকি! বলতে চাই, এই আধুনিক যুগে পারমানবিক বোমা, এটমবোমা ও ক্ষেপনাস্ত্র, কামান ও জঙ্গী বিমানের যুগে যুদ্ধে তীর ধনুকের কশরত হাস্যকর বৈ কি। শক্তি যদি অর্জন করতেই হয় তবে আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র তৈরী করতে হবে। প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এ কথা বলতে অত্যুক্তি হবে না- যারা নিজের শরীর রক্তাক্ত করা, বুক চাপড়িয়ে মাতাম করে ইমাম হোসেনের জন্য বকধার্মিক সেজে অতিভক্তি দেখাতে চায়, তারা এখন যদি কারবালার ঘটনা হতো এরা এজিদের পক্ষ অবলম্বন করতো? যুগে যুগে অনেক কারবালার মত ঘটনা পৃথিবীতে সংগঠিত হয়েছে ও হচ্ছে তখন সে সমস্ত কাজের বিরুদ্ধে এ শ্রেণির লোকদের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের জন্য তাদের টিকিটিও খুঁজে পাওয়া যায় না। আনন্দ ও অহেতুক কাজকর্মগুলো তো তারাই করবে যারা এই দিনে ইমাম হোসেন (রাঃ) এর পরিবারের সকল লোককে হত্যা করে কারবালার অসম যুদ্ধে বিজয় লাভ করেছিল। মুসলমানদের রক্তের হোলি খেলে বিজয়ীরা আনন্দ করতেই পারে কিন্তÍ নবী প্রেমিক মুসলিম উম্মাহ এই হৃদয় বিদারক দিনটিতে খেলতামাশা, আনন্দ ফুর্তি ও ঢাকঢোল পিটিয়ে পালন করতে পারে না। এই দিনটি মুসলিম উম্মাহর জন্য আনন্দ করার দিন নয়। এ সকল রসম রেওয়াজ পালন না করে বরং এই দিনে রোজা রাখা, নফল সালাত আদায় করা, কুরআন তিলাওয়াত করা, তাসবীহ- তাহলীল পাঠ করা, দুরুদ শরীফ পাঠ করে সওয়াব বিশ্ব মুসলিম নর-নারীর উপরে ও কারবালার শহীদের উপরে বখশিয়ে দেয়াই হলো প্রকৃত সওয়াবের কাজ। ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর স্মরণে তার জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা মাহফিল হতে পারে। কারবালার ময়দায়ে শাহাদাতবরণকারীদের জন্য দু‘আ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যেতে পারে। ইসলামের বিজয়ের জন্য তাদের ত্যাগ ও আবদান তুলে ধরা এবং মুসলিম উম্মাহর মাঝে অনুপ্রেরণা জাগিয়ে তোলা দরকার। আল্লাহ আমাদের বুঝার ও নেক আমল করার তাওফিক দান করুন।

ড. মোঃ আব্দুল গাফফার মল্লিক : অধ্যক্ষ, পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়