প্রকাশ : ২৪ জুন ২০২২, ০০:০০
‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নিমাতা লাকা ওয়াল মুলক্, লা শারিকা লাক।’ অর্থাৎ হাজির, আমি আপনার দরবারে, হে আল্লাহ! আমি হাজির, আমি হাজির, আপনার কোনো শরিক নেই, আমি হাজির; নিশ্চয় সব প্রশংসা আপনার জন্য, সব নিয়ামত আপনার প্রদত্ত, আপনার রাজত্বে আপনার কোনো শরিক নেই।
আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা বলেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব (সুরা-৪০ মুমিন, আয়াত : ৬০)।’ দোয়া ইবাদতের সার। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘দোয়া ইবাদতের মগজ।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘দোয়াই ইবাদত (বুখারি ও মুসলিম)।’ নবী করিম (সাঃ) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে দোয়া করে না, আল্লাহ তাআলা তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন (তিরমিজি, খণ্ড : ৫, পৃষ্ঠা : ৪৫৬, হাদিস : ৩৩৭৩)।’
আল কোরআনের সূচনাতেই দোয়া শিখিয়ে দেয়া হয়েছে : ইয়্যাকা নাবুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতাইন (আমরা কেবল তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই সাহায্য চাই। সুরা-১ ফাতিহা, আয়াত : ৪)’। হজের সফর পুরোটাই দোয়া কবুলের সময়। হজ বা ওমরাহর জন্য ইহরাম নিয়ত করা থেকে শুরু করে হজ ও ওমরাহ সম্পন্ন করে বাড়িতে ফিরে আসার পরও ৪০ দিন ধরে হাজির দোয়া কবুল হতে থাকে। হজের সফরে এমন কিছু সময় ও স্থান রয়েছে, যে সময় ও স্থানে দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। যে স্থানগুলোতে আগেকার নবী-রাসুলদের দোয়া কবুল হয়েছিলো বলে বর্ণিত আছে, সেখানে নবী করিম (সাঃ), সাহাবায়ে কেরাম ও অলি-আউলিয়াদের দোয়া কবুল হয়েছিল। সেসব জায়গায় দোয়া করা বাঞ্ছনীয়। মক্কা শরিফের সব স্থানে দোয়া কবুল হয়।
কাবা ও তার সংলগ্ন দোয়া কবুলের স্থানগুলো হলো হারাম শরিফ, মসজিদুল হারাম, কাবা শরিফ, হাতিমে কাবা, মিজাবে রহমত, হাজরে আসওয়াদ, রোকনে হাজরে আসওয়াদ, রোকনে ইরাকি, রোকনে শামি, রোকনে ইয়ামনি ও হাজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থান, মুলতাজিম, কাবার দরজা, মুস্তাজার, মাকামে ইব্রাহিম, জমজম কূপ ও মাতাফ।
তাওয়াফের প্রতি চক্করের শেষে পড়তে হয় : রাব্বানা আতিনা ফিদ দুনিয়া হাসানা, ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানা; ওয়া ক্বি না আজাবান নার। অর্থাৎ হে আল্লাহ, ‘আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দিন, আখিরাতেও কল্যাণ দিন ও দোজখের আগুন থেকে আমাদের রক্ষা করুন। সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২০১।’
আরাফাত, জাবালে রহমত ও মসজিদে নামিরায় দোয়া কবুল হয়। আরাফাত ময়দানে হযরত আদম (আঃ)-এর সঙ্গে হজরত হাওয়া (আঃ)-এর পুনর্মিলন হয় এবং তাঁরা নিজেদের ভুলের জন্য সেখানে আল্লাহ তাআলার দরবারে মোনাজাত করেন এবং তা কবুল হয়। সে জন্য হাজিরা এ স্থানে সমবেত হয়ে দোয়া করেন : রাব্বানা জালামনা আনফুছানা, ওয়া ইন লাম তাগফির লানা ওয়া তারহামনা; লানাকুনান্না মিনাল খসিরিন। অর্থাৎ, ‘হে আমাদের রব! আমরা আমাদের নফসের প্রতি জুলুম করেছি। আপনি যদি আমাদের ক্ষমা না করেন ও দয়া না করেন, অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ২৩।’
মুজদালিফা, মিনা ও মসজিদে খায়েফ দোয়া কবুলের ঐতিহাসিক স্থান। মসজিদে খায়েফ মিনা প্রান্তরে অবস্থিত। এখানে আদিকাল থেকে আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) পর্যন্ত ৭০ জন পয়গাম্বর (আঃ) আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করেছেন। জামরাত বা পাথর মারার স্থান মিনার পাশেই অবস্থিত। এগুলো ছোট শয়তান (জোমরায়ে উলা), মেজ শয়তান (জোমরায়ে উস্তা), বড় শয়তান (জোমরায়ে আকাবা) নামে পরিচিত। হজরত ইসমাইল (আঃ)-কে কোরবানির পথে এ স্থানে শয়তান বাধা সৃষ্টি করলে তিনি পাথর ছুড়ে তাকে বিতাড়িত করেন। এখানে দোয়া কবুল হয়।
মুমিনের সব দোয়া সব সময় কবুল হয়। হজের পর হাজি যত দিন গুনাহমুক্ত থাকবেন, তত দিন তাঁর দোয়া কবুল হতে থাকবে, ইনশাআল্লাহ।