প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
ঈদ হলো পাপমুক্তির আনন্দ। সফলতা ও বিজয়ের আনন্দ। এ বিজয় নাফসের ওপর আকলের, এ বিজয় শয়তানের ওপর ইনসানের। মনের সব কালিমা দূর করে, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে, মান-অভিমান বিসর্জন দিয়ে সবাই হাতে হাত মেলানো, বুকে বুক মেলানো, গলায় গলা মেলানো, অর্থাৎ সবার দেহ-মন এক হওয়ার আনন্দ হলো ঈদের আনন্দ। নিজের মনের হিংসা, ঘৃণা, লোভ, অহংকার, অহমিকা, আত্মম্ভরি, আত্মশ্লাঘা, রাগ-ক্রোধ, বিদ্বেষসহ যাবতীয় কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজেকে মুক্ত করার আনন্দ। সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ঐক্য, সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির আনন্দ।
‘ঈদ’ মানে আনন্দ উৎসব; ঈদ মানে যা বারবার ফিরে আসে প্রতি বছর। রমজানের রোজার শেষে এ ঈদ আসে বলে এর নাম ‘ঈদুল ফিতর’। ‘ফিতর’ মানে উপবাস ভঙ্গ করা বা রোজা ভঞ্জন; বাংলায় এটি রোজার ঈদ। রোজার পর যেদিন সকালে প্রথম সুন্নত মিষ্টান্নের মাধ্যমে প্রাতরাশ গ্রহণ করা হয়, তা হচ্ছে ঈদের দিন। মুসলিম মিল্লাতের দুটি ঈদের একটি ঈদুল ফিতর। সুতরাং ঈদুল ফিতর বিশ্ব মুসলিমের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহাউৎসব। এটি আরবি হিজরি সনের দশম মাস তথা শাওয়াল মাসের প্রথম দিন। রমজান মাসের পূর্ণ নাম হলো ‘রমজানুল মোবারক’ মানে বরকতময় রমজান। শাওয়াল মাসের পূর্ণ নাম হলো ‘শাওয়ালুল মুআজ্জম’ অর্থাৎ মহিমাময় শাওয়াল। রমজানের বরকত লাভের জন্যে ত্যাগ, কষ্ট-ক্লেশ ও আয়াস সাধ্য-সাধনার পর যে মাসটি সাফল্যের বার্তা নিয়ে আসবে, তা অবশ্যই মহান। সে মাসের প্রথম দিনই ঈদ উৎসব। এই দিনে ‘জাকাতুল ফিতর’ বা ‘সদকাতুল ফিতর’ তথা ফিতরা প্রদান করা হয়; তাই এটি ঈদুল ফিতর।
নবী করিম (সাঃ) বলেছেন: রোজাদারের জন্যে দুটি আনন্দের মুহূর্ত রয়েছে। একটি হলো যখন সে ইফতার করে; দ্বিতীয়টি হবে যখন সে তার মাবুদ আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। (বুখারি)। রোজাদার প্রতিদিন ইফতার করে; আবার পরের দিন রোজা রাখে। এটি হলো ছোট ইফতার; কারণ, এটির পর আবারও রোজা আসে। ইফতার বা ফিতর হলো রোজা পূর্ণ করার পর আহার গ্রহণ করা; পূর্ণ রমজান মাস রোজা পালন শেষে শাওয়াল মাসের প্রথম দিন সকালে যখন রোজাদার মিষ্টিমুখ করে, তখন সে এক বছরের জন্যে প্রকৃত অর্থে ইফতার করে বা সিয়াম সাধনা সম্পূর্ণ করে এদিন প্রথম সকালের আহার গ্রহণ করে; তাই এটি এক বছরের জন্যে বড় ইফতার; সুতরাং ঈদুল ফিতর রোজাদার মোমিন মুসলমানের জন্যে পরম আনন্দের দিন। হযরত খাজা মুঈনুদ্দিন চিশতি (র.) বলেছেন, ফিতর বা ইফতার মানে ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ করা। ঈদুল ফিতর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, রমজান মাসের রোজার মাধ্যমে কুপ্রবৃত্তিগুলোকে ভেঙে চুরমার করে, কলবকে আল্লাহর আসন হিসেবে গড়ে তোলার আনন্দ উপভোগ ও উদ্যাপন করা।
প্রতিটি জাতিগোষ্ঠী ও সম্প্রদায় নির্দিষ্ট দিনে আনন্দ করে থাকে। সাধারণত দেখা যায়, যারা ধনী তারা আনন্দ-ফুর্তি করে, গরিব অসহায়রা তা হতে বঞ্চিত থাকে। ঈদের খুশি শুধু ধনীরা পাবে, তা নয়, বরং গরিব-অসহায়রাও ঈদের খুশি ভোগ করবে। তাই ঈদুল ফিতরের সময় ধনীদের ওপর সাদাকাতুল ফিতর অত্যাবশ্যক করা হয়েছে। মুসলমানদের সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদ ঈদুল ফিতর। রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মাস মাহে রমজান। যারা মাহে রমজানকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পেরেছেন, তাদের জন্যে ঈদ খুশির বার্তা নিয়ে আসে।
ঈদুল ফিতরের তাৎপর্য হলো- আমি আল্লাহ পাকের একটা বড় ইবাদত পালন করার তৌফিক পেয়েছি বলে আমি মহাখুশি; তাই তাঁর শোকর আদায় করার জন্যে ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করছি। এজন্যেই ঈদের নামাজকে সালাতুশ শুকর তথা কৃতজ্ঞতা প্রকাশের নামাজ বলা হয়। এতে মোমিন বান্দার জন্যে আনন্দও আছে, সেই আনন্দ খুশির বহিঃপ্রকাশ করা হয় আরেকটি হুকুম পালন করার মাধ্যমে। এ হলো আমাদের ঈদের আনন্দ উৎসবের তাৎপর্য; কারণ, আমাদের আনন্দ উৎসব সবই ইবাদত। এতে ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণ রয়েছে। ঈদ দিয়েছেন আল্লাহ পাক, তা পালন করতে হবে আল্লাহর বিধান ও রাসুলের নির্দেশিত সুন্নত নিয়মের মাধ্যমে। আমাদের উচিত ঈদে সব ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের সব ক্ষেত্রে ইসলামি আদর্শ ও সুন্নত নিশ্চিত করা।
ঈদুল ফিতরের জন্যে উনত্রিশে রমজান ঈদের চাঁদ দেখা সুন্নত; এদিন চাঁদ উদিত না হলে ৩০ রমজানও চাঁদ দেখা সুন্নত; যদিও এদিন চাঁদ দেখা না গেলে পরদিন ১ শাওয়াল তথা ঈদুল ফিতর হবে। ঈদের চাঁদ তথা নতুন চাঁদ দেখে দোয়া পড়া সুন্নত। ঈদের রাত হলো ইবাদতের বিশেষ রাতগুলোর অন্যতম; তাই ঈদের রাতে বেশি বেশি নফল ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকা উত্তম। ঈদের আগেই শারীরিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জন করতে হবে; হাত-পায়ের নখ কাটতে হবে, গোঁফ ছোট করতে হবে। ঈদের রাতে ঘুমানোর আগে চোখে সুরমা ব্যবহার করতে হবে। সকালে গোসল করতে হবে। সকালবেলায় মিষ্টান্ন আহার এবং নতুন পোশাক বা সাধ্যমতো ও সামর্থ্য অনুযায়ী সুন্দর ও উত্তম ইসলামি সুন্নতি পোশাক পরতে হবে। সেই সঙ্গে পুরুষেরা টুপি বা পাগড়ি পরবেন। চাইলে আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারবেন। সদকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে (আগে আদায় করলেও হবে)। পুরুষদের ঈদের মাঠে যাওয়া ও ঈদের জামাতে শামিল হতে হবে এবং খুতবা শুনতে হবে। সম্ভব হলে ঈদগাহে এক পথে গিয়ে অন্য পথে ফিরে আসা। ঈদের মাঠে যাওয়া-আসার পথে আস্তে আস্তে তাকবির (আল্লাহু আকবার) বলতে হবে। ঈদের দিন আত্মীয়স্বজনের কবর জিয়ারত করা ভালো।