প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
তাকওয়া হলো ইত্তাকুল্লাহ বা আল্লাহভীতি। আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করে যাবতীয় অন্যায়-অপরাধ কার্যকলাপ থেকে নিজেকে বিরত রেখে সুনাহ মোতাবেক যথাযথভাবে জীবনকে পরিচালিত করা।
প্রতিটি কাজ-কর্মে আল্লাহ তা’য়ালাকে ভয় করতে হবে। অন্তরের মধ্যে এ অবস্থা করা আমাদের সকল কাজ-কর্ম মহান আল্লাহ তায়ালা দেখতেছেন। আল্লাহ তা’য়ালার সম্মুখে আমাদেরকে একদিন দাঁড়াতে হবে। আমাদের ভালো আমলের জন্য আল্লাহ তায়ালার দয়ায় জান্নাত আর মন্দ আমলের জন্য জাহান্নামে যেতে হবে। এ চিন্তা মনে সদা জাগ্রত করতে পারলেই তাকওয়ার গুন হাসিল।
রমজান মাস আমাদের মাঝে আগমন করে রহমত-মাগফিরাত-নাজাত নিয়ে। মহান আল্লাহ তায়ালা রমজান মাসে অগণিত গুনাহগার বান্দাকে মাফ করে দেন। রমজানে অঝোর ধারায় রহমত নাযিল হতে থাকে। রমজানের রোজা রাখার মূল উদ্দেশ্য হলো তাকওয়ার গুণ হাসিল করা। প্রতিটি মু’মিন মুসলমানের জন্য তাকওয়া সাথে নিয়ে সদা-সর্বদা জীবন পরিচালনা করা ইহাই ইসলামের শিক্ষা। আমরা মানুষ আমাদেরকে শয়তান ধোকা দিয়ে থাকে তাই আমরা অন্যায় কাজ করে থাকি। এজন্য একটি মাস সিয়াম পালনের দ্বারা তাকওয়ার গুণ হাসিল করে, তাকওয়ার শক্তি নিয়ে বছরের অন্যান্য সময় অতিবাহিত করা।
তাকওয়া এমন এক শক্তি, যার মধ্যে তাকওয়া রয়েছে সে কখনও মিথ্যা বলতে পারেনা, কারণ সে জানে মিথ্যা বলা গুনাহের কাজ,মিথ্যা বলায় গুনাহ লেখা হয়, যার দরুন গুনাহগার হয়ে জাহান্নামে যেতে হতে পারে। মিথ্যা বললে কেউ না জানলেও সত্যটা আল্লাহ জানে, এজন্য আল্লাহর ভয়ে মিথ্যা, চোগলখুরী, সুদ-ঘুষ, মদ-জুয়া, হারাম খাওয়া, গান-বাদ্য, অশ্লীলতা, যিনা, বেপর্দেগী-বেহায়াপনা থেকে দূরে থাকে।
যার মধ্যে তাকওয়া আছে সে কখনও নামাজ তরক করতে পারে না। কারণ সে মনে করে ফজর না পড়লে যোহরের পূর্বে যদি মারা যাই, যোহর না পড়লে আসরের পূর্বে যদি মারা যাই, বে-নামাজী হিসেবে মারা গেলে কঠিন আজাব ভোগ করতে হবে। আর সর্বোপরি কথা হলো আল্লাহ আমাদের দেখতেছেন আমরা কিভাবে অন্যায় কাজ করব। আল্লাহ পাক বলেছেন, আর যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তাহার জন্য নিঃস্কৃতির পথ করিয়া দেন। এবং তাহাকে তাহার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক প্রদান করেন। (সুরা আত-তালাক, আয়াত-০২-০৩)।
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, যে তাকওয়া অর্জন করিতে পারিল, (কিয়ামতে) তাহার থাকিবে না কোন ভয় এবং সে চিন্তিতও হইবে না। (সূরা আ’রাফ-৩৫)।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ্ তাহাদের সঙ্গে আছেন, যাহারা তাকওয়া অর্জন করিয়াছে এবং যাহারা সৎকর্ম করে। (সূরা নহল-১২৮)।
তাকওয়া অর্জনকারীদের জন্য মহান রাব্বুল আলামীনের পক্ষ হইতে সুসংবাদ হইল নি¤œরূপ। আল্লাহ তায়ালা বলিয়াছেন-
আর যদি সেই জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনিত এবং তাকওয়া অবলম্বন করিত, তবে আমি তাহাদের প্রতি আসমান ও যমিনের নিয়ামতসমুহ উম্মুক্ত করিয়া দিতাম। কিন্তু তাহারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করিল। সুতরাং তাহাদের কৃতকর্মের বদলায় আমি তাহাদিগকে পাকড়াও করিলাম। (সূরা আ’রাফ-৯৬)।
তাকওয়া অর্জনকারীকে মুত্তাকী বলে। মুত্তাকীদের পুরস্কার সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলিয়াছেন-
মুত্তাকীদের জন্যে যেই জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হইয়াছে তাহার অবস্থা এই যে, তাহার নি¤েœ নির্ঝরিণীসমুহ প্রবাহিত হয়। তাহার ফলসমুহ ও ছায়া চিরস্থায়ী। ইহা তাহাদের কর্মফল যাহারা তাকওয়া অর্জন করিয়াছে এবং কাফেরদের কর্মফল হইল অগ্নি। (সূরা রা’দ-৩৫)।
রাসূলে কারিম (সাঃ) ইরশাদ করিয়াছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহপাক তোমাদের সূরত-চেহারা ও সম্পদ দেখিবেন না বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও আমলসমূহ লক্ষ্য করিবেন (মুসলিম শরীফ, হাদীস নং ৬৭০৮)।
কাহাকেও ভালোবাসিলে আল্লাহর জন্যই বাসিতে হইবে। কাহারো সহিত শত্রুতা হইলে তাহা আল্লাহর জন্যই হইতে হইবে।
তাকওয়া বা খোদাভীতি সম্পর্কে আল্লাহ মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি অধিক সম্মানিত যিনি তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক খোদাভীরু। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সব কিছু জানেন এবং সব বিষয়ে অবহিত। (হুজরাত -১৩)।
আল্লাহ তা’আলা মানবজাতিকে সৃষ্টির সূচনার কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যে, তোমরা একজন মাত্র নর-নারী তথা আদম ও হাওয়া (আঃ) থেকে সৃষ্ট। আল্লাহ তা’আলা মানুকে চারটি পদ্ধতিতে সৃষ্টি করেছেন। (১) কোন নারী-পুরুষ ছাড়াই সৃষ্টি করেছেন, যেমন আদম (আঃ)। (২) পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছেন নারী ছাড়া, যেমন হাওয়া (আঃ), (৩) নারী থেকে সৃষ্টি করেছেন কোন পুরুষ ছাড়াই, যেমন ঈসা (আঃ), (৪) নারী-পুরুষের মাধ্যমে সৃষ্টি করেছেন যেমন সকল মানুষ।
আল্লাহ তা’আলা মানুষকে সৃষ্টি করার পর বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছেন যাতে একে অপরকে চিনতে পারে। যেমন সে অমুকের ছেলে, সে অমুক গোত্রের লোক ইত্যাদি। এজন্য বিভিন্ন গোত্র ও জাতিতে বিভক্ত করেন যে, অমুক গোত্র অমুক গোত্র থেকে, অমুক জাতি অমুক জাতি থেকে শ্রেষ্ঠ। আর শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি একটিই, তা হলো তাকওয়া। সে কৃষ্ণাঙ্গ হোক বা শ্বেতাঙ্গ হোক, আরবি হোক আর অনারবি হোক, প্রাচুর্যশালী হোক আর নিঃস্ব হোক।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো : কোন্ ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি সম্মানিত জবাবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বেশি আল্লাহ তা’আলাকে ভয় করেছে সে বেশি সম্মানিত...। (সহীহ বুখারী হা. ৩৩৮৩)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা তোমাদের আকৃতি ও সম্পদের দিকে লক্ষ্য করেন না। বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও আমল দেখবেন। (সহীহ মুসলিম হা. ২৫৬৩)।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিদায় হজে বলেছেন, তাকওয়া ব্যতীত অন্য কোন কিছুর কারণে আরবের ওপর কোন অনারবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া-অধ্যায় : বিদায় হজ)।
আয়াতের শিক্ষা-
১. মানবজাতির উৎস আদম ও হাওয়া (আঃ)।
২. মানব জাতিকে বিভিন্ন গোত্রে ও জাতিতে বিভক্ত করা হয়েছে পরস্পরে পরিচয় লাভের জন্য ।
৩. শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি একমাত্র তাকওয়া। গোত্র, জাতি বা দেশ নয়।
আল্লাহ তা'য়ালা আরো বলেন-
হে ঈমানদার লোকেরা ! আল্লাহকে ভয় কর এবং প্রত্যেক ব্যক্তি যেন লক্ষ্য করে যে, সে আগামী দিনের জন্য কি সামগ্রীর ব্যবস্থা করে রেখেছে। আল্লাহকেই ভয় করতে থাক। আল্লাহ নিশ্চয়ই তোমাদের সে সব আমল সম্পর্কে অবহিত যা তোমরা কর। (হাশর -১৮)
এ আয়াতের তাফসীর হলো-আল্লাহ তা’আলা মু’মিন বান্দাদেরকে তাঁর ভয় করার নির্দেশ দিচ্ছেন। তারপরেই কিয়ামত দিবসে আত্মরক্ষার্থে কী সৎ আমল প্রস্তুত করে রেখেছে তা হিসাব করে দেখার নির্দেশ প্রদান করেছেন। কারণ মানুষ যখন কিয়ামতের ভয়াবহতা স্মরণ করবে, সেদিনে নিজের অসহায়ত্ব খেয়াল করবে তখন নিজের মাঝে তাক্বওয়া চলে আসবে। আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করে সকল অবাধ্য কাজ বর্জন করবে এবং তাঁর নির্দেশমূলক কাজ পালনে সচেষ্ট হবে। এখানে কিয়ামত দিবসকে আগামী কাল বলে উল্লেখ করার কারণ হল-এর সংঘটন কাল বেশি দূরে নয় বরং অতি নিকটে।
প্রত্যেক নাবীরা যেমন এক আল্লাহ তা’আলার ইবাদতের দিকে আহ্বান করেছেন তেমনই তাক্বওয়ার দিকে আহ্বান করেছেন। সূরা শুআরার ১০৫-১০৮, ১২৩-১২৬, ১৬০-১৬৩ ও ১৭৬-১৭৯ নম্বর আয়াতে এ সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে। তাক্বওয়ার ফলাফল সম্পর্কে সূরা বাক্বারায় আলোচনা করা হয়েছে।
অর্থাৎ যারা (আল্লাহ তা’আলার ইবাদত, নির্দেশ পালন ও নিষেধ বর্জন না করার মাধ্যমে) আল্লাহ তা’আলার স্মরণকে বর্জন করেছে ফলে আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে সৎ আমলের কথা ভুলিয়ে দিয়েছেন যা আখিরাতে তাদের উপকারে আসতো। আল্লাহ তা’আলা মু’মিনদেরকে এমন সব মানুষের মতো হতে নিষেধ করেছেন যারা আল্লাহ তা’আলার স্মরণ থেকে বিমুখ হবে তারাই তাঁর আনুগত্য থেকে বের হয়ে যাবে, নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে।
যেমন আল্লাহ তা’আলা অন্যত্র বলেন : “হে মু’মিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ হতে উদাসীন না করে-যারা এমন করবে (উদাসীন হবে) তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত।” (সূরা মুনাফিকূন ৬৩ : ৯)
যেমন সূরা বাক্বারায় বলা হয়েছে, ‘হে আমাদের রব! আমরা ভুলে গেলে অথবা ভুল করলে পাকড়াও করবেন না।’ অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য উম্মতে মুহাম্মাদিকে পাকড়াও করা হবে না, এ উম্মতকে তা ক্ষমা করে দেওয়া হবে। কিন্তু এখানে অর্থ হল : স্বেচ্ছায় বর্জন করা। শব্দটি এ অর্থে কুরআনের সূরা ত্ব-হার ১১৫, ১২৬ ও সূরা আ’রাফের ৫১ ও সূরা সাজদাহর ১৪ নম্বর আয়াতে ব্যবহৃত হয়েছে।
‘জাহান্নামের অধিবাসী এবং জান্নাতের অধিবাসী সমান নয়।’ এরূপ পার্থক্য করে অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন : “দুষ্কতকারীরা কি মনে করে যে, আমি জীবন ও মৃত্যুর দিক দিয়ে তাদেরকে তাদের সমান গণ্য করবো যারা ঈমান আনে ও আমল করে? তাদের সিদ্ধান্ত কত মন্দ।” (সূরা জাসিয়া ৪৫ : ২১)
আল্লাহ তা’আলা বলেন : “যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে আমি কি তাদেরকে ঐসব লোকের সমান করে দেব, যারা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়ায় অথবা আমি কি মুত্তাক্বীদেরকে গুনাহগারদের সমান করে দেব” (সূরা সোয়াদ ৩৮ : ২৮)
অতএব জান্নাতী ও জাহান্নামী কখনো সমান নয়, বরং তাদের উভয় শ্রেণির মাঝে আকাশ-জমিন তফাত। সুতরাং প্রত্যেক মু’মিনের কামনা-বাসনা থাকবে সে কিভাবে জান্নাতী হতে পারবে। কারণ যে ব্যক্তি জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেল আর জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল সে ব্যক্তিই সফলকাম।
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন-হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর, তাকে যেরূপ ভয় করা উচিত। তোমরা মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। (আলে-ইমরান -১০২)।
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, হে ঈমানদার লোকেরা, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যাদর্শ লোকদের সঙ্গী হও। (তওবা -১১৯)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কেবল ইলমসম্পন্ন লোকেরাই তাঁকে ভয় করে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহাশক্তিশালী ও ক্ষমাকারী। (ফাতির-২৮)।
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, আল্লাহ তো তাদের সংঙ্গে রয়েছেন, যারা তাকওয়া সহকারে কাজ করে এবং ইহসান অনুসারে আমল করে। (নাহল -১২৮)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, আর সফলকাম হবে ঐ সমস্ত লোক যারা আল্লাহ ও রাসূলের হুকুম পালন, আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর নাফরমানী হতে দূরে থাকে। (নূর -৫২)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, রাসূল তোমাদেরকে যা দেন তা গ্রহণ কর। আর যা থেকে তোমাদের বিরত রাখেন তা হতে বিরত থাক । আল্লাহকে ভয় কর, আল্লাহ কঠিন শাস্তিদাতা। (হাশর -৭)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, যারা নিজেদের অদৃশ্য আল্লাহকে ভয় করে, নিশ্চয়ই তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও অতিবড় সুফল। (মুলক-১২)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, হে নবী! আল্লাহকে ভয় কর এবং কাফের ও মুনাফিকদের আনুগত্য কর না, প্রকৃতপক্ষে সব জ্ঞান ও বুদ্ধির মালিক তো আল্লাহই। (আহযাব-১)
আল্লাহ তা’য়ালা আরো বলেন, হে ঈমানদারগণ, ধৈর্য অবলম্বন কর, বাতেলপন্থীদের মোকাবেলায় দৃঢ়তা ও অনমনীয়তা প্রদর্শন কর, যুদ্ধের জন্য সর্বক্ষণ প্রস্তুত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর, আশা করা যায় যে, তোমরা কল্যাণ লাভ করতে পারবে । (আলে-ইমরান-২০০)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, তোমরা যথা সম্ভব আল্লাহকে ভয় কর। আর শোন ও অনুসরণ কর এবং নিজের ধন-সম্পদ ব্যয় কর, ইহা তোমাদের জন্যই কল্যাণকর। যে সকল লোক স্বীয় মনের সঙ্কীর্ণতা হতে রক্ষা পেয়ে গেলো, শুধু তারাই সফলকাম। (তাগাবুন -১৬)।
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, যে সব কাজ পূণ্য ও ভয়মূলক তাতে একে অপরকে সাহায্য কর, আর যা গুণাহ ও সীমালংঘনের কাজ তাতে কারো একবিন্দু সাহায্য ও সহযোগিতা করো না। আল্লাহকে ভয় কর, কেননা তাঁর দন্ড অত্যন্ত কঠিন। (মায়েদা-২)।
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, হে ঈমানদার লোকেরা, তোমরা যখন পরস্পরে গোপন কথা বল, তখন গুণাহ, বাড়াবাড়ি ও রাসূলের নাফরমানির কথাবার্তা নয়- বরং সৎ কর্মশীলতা ও আল্লাহকে ভয় করে চলার (তাকওয়ার) কথাবার্তা বল এবং সেই আল্লাহকে ভয় করতে থাক যার দরবারে তোমাদেরকে হাশরের দিন উপস্থিত হতে হবে। (মুজাদালা-৯)।
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, তোমাদের উম্মত একই উম্মত, আর আমি তোমাদের রব। অতএব আমাকেই ভয় কর। (মুমিনূন-৫২)।
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, (হে রাসূল) বলে দাও দুনিয়ার জীবন-সম্পদ খুবই নগণ্য। আর পরকাল একজন খোদা ভীরু ব্যক্তির জন্য অতিশয় উত্তম। আর তোমাদের প্রতি একবিন্দু পরিমাণ যুলুম করা হবে না। (নিসা-৭৭)।
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, আল্লাহকে ভয় কর, সম্ভবত তোমরা কল্যাণ লাভ করবে (বাকারা-১৮৯)।
হে ঈমানদারগণ ! আল্লাহকে ভয় কর, তার নৈকট্য লাভের উপায় সন্ধান কর এবং তার পথে চরম চেষ্টা সাধন বা জিহাদ কর। সম্ভবত তোমরা কল্যাণ লাভ করবে। (মায়েদা-৩৫)।
হে ঈমানদার লোকেরা আল্লাহকে ভয় করি এবং রাসূল (সাঃ)-এর প্রতি ঈমান আনি। (হাদীদ-২৮)
হে ঈমানদার লোকেরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অগ্রে অগ্রসর হয়ে যেও না । আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। (হুজরাত-১)।
হে মানবজাতি, তোমরা ভয় কর তোমাদের সেই রবকে যিনি তোমাদেরকে একটি নফস থেকে সৃষ্টি করেছেন । অতঃপর তা থেকে তার জোড়া সৃষ্টি করেছেন। আর তাদের দু’জন হতে অসংখ্য নারী-পুরুষ ছড়িয়ে দিয়েছেন । আল্লাহকে ভয় কর, যার নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাঞ্জা করে থাক এবং আত্মীয়- স্বজনদের ব্যাপারে ও ভয় করো। আল্লাহ তোমাদের উপর প্রহরীরূপে আছেন। (নিসা-১)।
তোমরা ভয় কর সেই দিনের কথা যেদিন কেউ কারো এক বিন্দু উপকারে আসবে না, কারো নিকট হতে কোন বিনিময় গ্রহণ করা যাবে না, কোন সুপারিশই কাউকে এক বিন্দু উপকার দান করবে না আর পাপীগণ কিভাবে কিছুমাত্র সাহায্যপ্রাপ্ত হবে। (বাকারা-১২৩)।
তাকওয়া সম্পর্কে হাদীস-আতিয়া আস- সাদী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, কোন ব্যক্তি পাপ কাজে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা যেসব কাজে গুণাহ নেই তা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত খোদাভীরু লোকদের শ্রেণীভুক্ত হতে পারে না। (তিরমিযী ও ইবনে মাজা)।
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, হে আয়েশা। ছোটো খাটো গুণাহর ব্যাপারেও সতর্ক হও। কেননা এজন্যেও আল্লাহর নিকট জওয়াবদিহি করতে হবে। (ইবনে মাজা)।
ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহর নির্ধারিত রিযিক পূর্ণ মাত্রায় লাভ না করা পর্যন্ত কোন লোকই মারা যাবে না । সাবধান! আল্লাহকে ভয় কর এবং বৈধ পন্থায় আয় উপার্জনের চেষ্টা কর। রিযিক প্রাপ্তিতে বিলম্ব যেন তোমাদেরকে অবৈধ পন্থা অবলম্বনে প্ররোচিত না করে। কেননা আল্লাহর কাছে যা কিছু রয়েছে তা কেবল আনুগত্যের মাধ্যমে লাভ করা যায়। (ইবনে মাজা)।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, মুসলমান মুসলমানের ভাই। সে তার উপর যুলুম করবে না; তাকে অসহায় অবস্থায় পরিত্যাগ ও করবে না এবং তাকে তুচ্ছজ্ঞান করবে না । তিনি নিজের বুকের দিকে ইশারা করে বলেন, তাকওয়া এখানে, তাকওয়া এখানে, তাকওয়া এখানে। কোন লোকের নিকৃষ্ট সাব্যস্ত হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে তুচ্ছজ্ঞান করে। প্রতিটি মুসলমানের জীবন, ধন - সম্পদ ও মান - সম্মান সকল মুসলমানের সম্মানের বস্তু (এর উপর হস্তক্ষেপ করা তাদের জন্যে হারাম)। (মুসলিম)।
হাসান ইবনে আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর জবান মুবারক হতে এই কথা মুখস্থ করে নিয়েছি, যে জিনিস সংশয়ের মধ্যে ফেলে দেয় তা পরিত্যাগ করে যা সন্দেহের ঊর্ধ্বে তা গ্রহণ কর। কেননা সততাই শান্তির বাহন এবং মিথ্যাচার সন্দেহ সংশয়ের উৎস। (তিরমিযী)।
হযরত আবু যার গিফারী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদা রাসূলে কারীমের খেদমতে হাযির হলাম। অতঃপর (হযরত আব যার, নতুবা তাঁর নিকট হতে হাদীসের শেষের দিকের কোন বর্ণনাকারী) একটি দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করেন। (এ হাদীস এখানে বর্ণনা করা হয়নি। এ প্রসঙ্গে হযরত আবু যার গিফারী (রাঃ) বললেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আমাকে নসীহত করুন। নবী কারিম (সাঃ) বললেন, আমি তোমাকে নসীহত করছি তুমি আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর। কেননা ইহা তোমার সমস্ত কাজকে সুন্দর, সুষ্ঠু ও সৌন্দর্যম-িত করে দেবে। আবু যার বলেন আমি আরো নসীহত করতে বললাম। তখন তিনি বললেন, তুমি কুরআন মাজীদ তেলাওয়াত করো এবং আল্লাহকে সব সময় স্মরণ রাখবে। কেননা এ তেলাওয়াত ও আল্লাহর স্মরণের ফলেই আকাশ রাজ্যে তোমাকে স্মরণ করা হবে এবং এ যমীনেও তা তোমার নূরস্বরূপ হবে। আবু যার আবার বললেন হে রাসূল। আমাকে আরো নসীহত করুন। তিনি বললেন, বেশির ভাগ চুপচাপ থাকা ও যথাসম্ভব কম কথা বলার অভ্যাস কর।
কেননা, এ অভ্যাস শয়তান বিতাড়নের কারণ হবে এবং দ্বীনের ব্যাপারে ইহা তোমার সাহায্যকারী হবে। আবু যার বলেন, আমি বললাম আমাকে আরো কিছু নসীহত করুন। বললেন, বেশি হাসিও না, কেননা ইহা অন্তরকে হত্যা করে এবং মুখম-লের জ্যোতি ইহার কারণে বিলীন হয়ে যায়। আমি বললাম, আমাকে আরো উপদেশ দেন। তিনি বললেন, সবসময়ই সত্য কথা ও হক কথা বলবে-লোকদের পক্ষে তা যতই দুঃসহ ও তিক্ত হোক না কেন। বললাম, আমাকে আরো নসীহত করুন। তিনি বললেন, আল্লাহর ব্যাপারে কোন উৎপীড়কের উৎপীড়নকে আদৌ ভয় করো না। আমি বললাম, আমাকে আরো নসীহত করুন। তিনি বললেন, তোমার নিজের সম্পর্কে তুমি যা জান, তা যেন তোমাকে অপর লোকদের দোষত্রুটি সন্ধানের কাজ হতে বিরত রাখে। (বায়হাকী শুআবুল ঈমান)।
লেখক : ইমাম ও খতিব, বিষ্ণুপুর মদিনা বাজার বাইতুল আমিন জামে মসজিদ, চাঁদপুর সদর।