প্রকাশ : ২১ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
আল্লাহ তা’আলা নারীদের পুরুষ হতেই সৃষ্ট করেছেন, যাতে তাদের পরষ্পরিক সম্পর্ক সুদৃঢ় ও গভীর হয় এবং তাদের মধ্যে প্রেম, ভালোবাসা ও দয়া-অনুগ্রহ যেনো হয়, অতীব সুন্দর ও মধুময়। আল্লাহ তা’আলা বলেন, “হে মানুষ তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক নফস থেকে। আর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রীকে এবং তাদের থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চাও। আর ভয় কর রক্ত সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ওপর পর্যবেক্ষক। [সূরা আন-নিসা, আয়াত : ১]
“আর তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এর মধ্যে রয়েছে সে কাওমের জন্য, যারা চিন্তা করে।” [সূরা আর-রূম, আয়াত : ২১]
নারী জাতি হলো মহান আল্লাহর এক বিশেষ নেয়ামত। আল্লাহ তা’আলা নারীকে পুরুষের জীবনসঙ্গিনী হিসেবে মানব জীবন পরিচালনার জন্যে পারস্পরিক সহযোগী করেছেন। ইসলাম মর্যাদার দিক দিয়ে নারীকে পুরুষের থেকে ভিন্ন করে দেখেনি। বরং ইসলামের আগমনেই নির্যাতিত, নিপীড়িত, অবহেলিত নারীসমাজ পেয়েছে মুক্তির সন্ধান। সারা দুনিয়াতে যখন নারীরা নিদারুণ অবস্থায় কালাতিপাত করছিল, তাদেরকে জন্তু-জানোয়ার বলে মনে করা হত এবং মানুষ হিসাবে তাদের কোন মর্যাদা ও অধিকার স্বীকার করা হত না। তখন ইসলাম নারীর যথাযথ অধিকার ও মর্যাদা প্রদান করে নারী জাতিকে সম্মানের সুউচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করেছে।
যেমন আল্লাহ তা’আলা পুরুষদের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘তারা তোমাদের পোশাক এবং তোমরা তাদের পোশাক’। (বাক্বারাহ ১৮৭)
তিনি আরো বলেন, ‘হে মানব সকল! তোমরা তোমাদের স্বীয় প্রতিপালককে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে একই আত্মা (আদম) হতে সৃষ্টি করেছেন এবং ঐ আত্মা হতে তাঁর জোড়া (হাওয়া)-কে সৃষ্টি করেছেন এবং এতদুভয় হতে বহু নর ও নারী বিস্তার করেছেন। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা পরস্পরের নিকট (স্বীয় হকের) দাবী করে থাক এবং আত্মীয়তা (এর হক বিনষ্ট করা) হতেও ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের সকলের খবর রাখেন’ (নিসা ১)।
ইসলাম-পূর্ব যুগে নারীর অবস্থান : ইসলাম-পূর্ব যুগে নারী ছিল সবচেয়ে অবহেলিত, লাঞ্ছিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত এবং অধিকার হারা জাতি। সে সময় নারীকে ভোগ-বিলাসের উপকরণ এবং বাজারের পণ্য হিসেবে গণ্য করা হত। সেই সময়ে নারীদেরকে মানুষ হিসাবে যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়া হত না এবং তাদের কোন সামাজিক অধিকার স্বীকৃত ছিল না। এমনকি মানবজাতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে সমাজে বেঁচে থাকার অধিকারটুকুও ছিল না। তাদের প্রতি খুবই কঠোর আচরণ করা হত। সে যুগে নারীদেরকে মনে করা হত দাসী এবং ভারবাহী পশু হিসেবে। যাদেরকে ক্রয়-বিক্রয় করা হত। সে আমলে স্বামী যত খুশি স্ত্রী গ্রহণ করত এবং ইচ্ছা করলে তার স্ত্রীকে অপরের কাছে বিক্রি করে দিতে পারত কিংবা স্ত্রীকে দিয়েই কেউ ঋণ পরিশোধ করত। আবার কেউ উপহার হিসাবে কাউকে এমনিই দিয়ে দিত।
কন্যাসন্তান জন্মকে লজ্জাজনক মনে করে স্বীয় নিষ্পাপ কন্যাসন্তানকে জীবন্ত কবর দিতেও কুণ্ঠিত হতো না। তাদের এমন বিবেক বর্জিত কর্ম সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যখন জীবন্ত সমাধিস্থ কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে, কি অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল?’ (তাকভীর ৮-৯)।
সে যুগে তারা পিতা-মাতা বা স্বামীর মৃত্যুর পর পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকেও বঞ্চিত হত। পিতৃহীনা সুন্দরী-ধনবতী বালিকার অভিভাবক যথাযথ মোহর দানে তাকে বিবাহ করতে সম্মত হত না। আবার অন্যত্র বিবাহ দিতেও অসম্মতি প্রকাশ করত। সুন্দরী বাদী দ্বারা দেহ ব্যবসা করিয়ে অর্থ উপার্জন করা হত। এ গর্হিত কাজ হতে বিরত রাখার উদ্দেশ্যে আল্লাহ তাআলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেন, ‘আর তোমরা দুনিয়ার ধন-সম্পদ লাভের উদ্দেশ্যে তোমাদের যুবতী দাসীদেরকে ব্যভিচারে লিপ্ত হতে বাধ্য করবে না। যখন তারা পাপমুক্ত থাকতে চায়’ (নূর ৩৩)। উল্লিখিত যুগে একের অধিক নারী বিবাহ করে তাদের ন্যায্য পাওনা হতে বঞ্চিত করা হত। তাদেরকে তালাক দিয়ে অন্যত্র স্বামী গ্রহণের অবকাশও দেয়া হত না। এ জাতীয় অমানবিক ও অমানুষিক যুলুম অত্যাচার নারী জাতির উপর করা হত।
নারীর অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় ইসলামের ভূমিকা : মানব সৃষ্টির প্রথম দিকে আল্লাহ তা’আলা আদি পিতা আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করার পর তাঁর সহধর্মিণী হিসেবে তাঁরই বাম পাঁজরের একটি হাড় হতে আদি মাতা হাওয়া (আঃ)-কে সৃজন করেন। অতঃপর তাঁদের হতে অসংখ্য নর-নারী সৃষ্টি করেছেন।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ এরশাদ করেন, ‘হে মানবজাতি! আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন নারী হতে সৃষ্টি করেছি’ (হুজুরাত ১৩)।
মহান আল্লাহ এ বিশ্ব জগতে অসংখ্য মাখলুকাতের মধ্যে মানব জাতিকে শ্রেষ্ঠ জাতি হিসাবে মর্যাদা দান করেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘আর আমি বনী আদমকে সম্মানিত করেছি এবং তাদেরকে জলে ও স্থলে আরোহণ করিয়েছি এবং উত্তম বস্তুসমূহ প্রদান করেছি। আর আমি তাদেরকে আমার বহু সৃষ্টির উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি’ (বনী ইসরাঈল ৭০)।
আল্লাহ তা’আলা নারী-পুরুষ উভয়কেই সম্মান দিয়েছেন, পুরুষের থেকে নারীকে ভিন্ন ভাবে দেখেননি। বরং যুগ যুগ ধরে অবহেলিত ও উপেক্ষিত নারী সমাজকে পুরুষের সমমর্যাদা এবং কোন কোন ক্ষেত্রে তার চেয়ে অধিক মর্যাদা দান করেছেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘স্ত্রীদেরও পুরুষদের উপর ন্যায় সঙ্গত অধিকার রয়েছে। আর নারীদের উপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে’ (বাক্বারাহ ২২৮)।
ইসলাম নারীর প্রতি সকল প্রকার অত্যাচার, অবিচার নিষিদ্ধ ঘোষণাকরত নারীকে সর্বক্ষেত্রে অধিকার ও মর্যাদা প্রদান করেছে। ইসলাম বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর যে অধিকার ও মর্যাদা প্রদান করেছেন তা আলোচনা করা হলো-
বিবাহের মাধ্যমে নারীকে অধিকার ও মর্যাদা দান : জাহিলী যুগে বৈবাহিক ক্ষেত্রে নারীদের কোনরূপ অধিকার ছিল না। তারা শুধু পুরুষের ভোগের সামগ্রী ছিল। ইসলাম এহেন ঘৃণিত প্রথার মূলোৎপাটনকরত নারী ও পুরুষের বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছে।
এ মর্মে আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন, ‘তবে যেসব নারী তোমাদের পছন্দ হয়, তাদের মধ্য থেকে দুই দুই, তিন তিন, চার চার জনকে বিবাহ কর। কিন্তু তোমাদের মনে যদি আশংকা জাগে যে, তোমরা তাদের সাথে ইনসাফ করতে পারবে না। তাহলে একজন স্ত্রী গ্রহণ কর অথবা তোমাদের দাসীদেরকে স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ কর। অবিচার হতে বাঁচার জন্য এটাই অধিক সঠিক কাজ’ (নিসা ৩)।
স্বামী নির্বাচনের স্বাধীনতায় নারীকে অধিকার ও মর্যাদা দান : ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে নারীদের পছন্দমত স্বামী গ্রহণের কোন অধিকার ছিল না। যখন-তখন তাদেরকে পাত্রস্থ করা হত। কিন্তু ইসলাম নারীকে স্বামী নির্বাচনের স্বাধীনতা দিয়েছে। যে কেউ ইচ্ছা করলে বলপূর্বক কোন নারীর স্বামী হতে পারবে না।
আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘হে পুরুষরা! তোমরা মহিলাদেরকে (স্বীয় স্বামী নির্বাচন করে) বিয়ে করাতে বাধা প্রদান করো না’ (বাক্বারাহ ২৩২)।
হাদীসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘স্বামীহীনা নারীর বিবাহ তার অনুমতি ব্যতীত দেয়া যাবে না। কুমারীর বিবাহ তার সম্মতি ব্যতীত দেয়া চলবে না। তারা (উপস্থিত ছাহাবায়ে কেরাম) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! কুমারীর সম্মতি কিরূপে (নেওয়া যাবে)? উত্তরে তিনি বললেন, তার নীরবতাই সম্মতি’। (বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত হা/৩১২৬।)
স্ত্রী হিসেবে নারীকে অধিকার ও মর্যাদা দান : ইসলাম পারিবারিক জীবনে নারীকে দিয়েছে তার ন্যায্য অধিকার। সংসার জীবনে নারী-পুরুষ পরস্পরের পরিপূরক। কোন একজনের একক প্রচেষ্টায় সংসার জীবন পূর্ণতা লাভ করতে পারে না।
মহান আল্লাহ এরশাদ করেন, ‘তারা তোমাদের পোশাক এবং তোমরা তাদের পোশাক’ (বাক্বারাহ ১৮৭)।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম চরিত্রের অধিকারী, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম। আর আমি তোমাদের মধ্যে নিজ স্ত্রীদের কাছে উত্তম’। (তিরমিযী, মিশকাত হা/৩২৫২, সনদ ছহীহ।)
শুধু তাই নয় নবী করীম (সাঃ) তাঁর বৈবাহিক জীবনে বাস্তব দৃষ্টান্ত পেশ করে পুরুষদের শিক্ষা দিয়েছেন যে, স্ত্রীর সম্মান ও অধিকার কিভাবে প্রদান করতে হবে। আর স্ত্রীদের প্রতি সদাচরণ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘তোমরা তাদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন করো’ (নিসা ১৯)।
মোহর দানের মাধ্যমে নারীর অধিকার ও মর্যাদা : ইসলাম নারীর মর্যাদার স্বীকৃতিস্বরূপ বিবাহের ক্ষেত্রে মোহর প্রদান অপরিহার্য করে দিয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘তোমরা তোমাদের স্ত্রীদেরকে মোহর দিয়ে দাও সন্তুষ্টির সাথে’ (নিসা ৪)।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, ‘যে শর্তটি পূরণ করা সবচেয়ে জরূরী তাহল ঐ শর্ত-যা দ্বারা তোমরা (স্ত্রীর) লজ্জাস্থান হালাল করো’। অর্থাৎ ‘মোহর’। (বুখারী ও মুসলিম,)
নারীদের সাথে উত্তম ব্যবহার করা : আল্লাহ তা’আলা নারীদের সাথে উত্তম ব্যবহার করতে আদেশ দেন এবং তাদের সাথে কোনো প্রকার দুর্ব্যবহার করতে নিষেধ করেন। তাদের সাথে যেন কোনো প্রকার অনিয়ম না হয় এবং আল্লাহর দেয়া বিধান ও যাবতীয় আইনকানুন মেনে চলা হয়, তার জন্য তিনি বিশেষ নির্দেশ দেন। আর যারা তাদের ওপর যুলুম-অত্যাচার করে, আল্লাহ তা’আলার বেধে দেয়া সীমারেখা অতিক্রম করে এবং সীমাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে, তাদের তিনি বিশেষ সতর্ক করেন।
নারীদের জন্য খরচ করার বিধান : আল্লাহ তা’আলা নারীদের ওপর ব্যয় করার বিষয়ে নিখুঁত একটি নীতিমালা তৈরি করে দিয়েছেন। আল্লাহর নির্দেশ হলো, যখন নারীদের সাথে ঘর সংসার করবে, তখন তাদের যাবতীয় খরচা তোমরাই বহন করবে। আর যদি তাদের সাথে ঘর সংসার করা কোনোভাবেই সম্ভব না হয়, তখন তোমরা দয়া ও অনুগ্রহের সাথে তাদের ছেড়ে দেবে। কোনো প্রকার বাড়াবাড়ি করবে না। আর তোমাদের এ কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে, তোমরা সর্বদা তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে।
নারীদের জন্যে মালিকানা প্রতিষ্ঠা : আল্লাহ তা’আলা নারীদের জন্য উত্তরাধিকারী সম্পত্তিতে অংশ নির্ধারণ করেন। ফলে তাদের মাতা-পিতা, সন্তানাদি বা নিকট আত্মীয় কেউ মারা গেলে তারাও পুরুষদের মতো সম্পত্তির মালিক হবে।
আল্লাহ তা’আলা বলেন, “পুরুষদের জন্য মাতা পিতা ও নিকটাত্মীয়রা যা রেখে গিয়েছে তা থেকে একটি অংশ রয়েছে। আর নারীদের জন্য রয়েছে মাতা পিতা ও নিকটাত্মীয়রা যা রেখে গিয়েছে তা থেকে একটি অংশ (তা থেকে কম হোক বা বেশি হোক) নির্ধারিত হারে।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত : ৭]।
নারীদের প্রতি উদারতা প্রদর্শন করা : আল্লাহ তা’আলা নারীদের কোনো প্রকার কষ্ট দিতে এবং তাদের দেয়া মোহরানাকে ফেরত নিতে সম্পূর্ণ নিষেধ করেছেন। তাদের সদয় থাকা জন্য তিনি নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ তা’আলা বলেন, “হে মুমিনগণ, তোমাদের জন্য হালাল নয় যে, তোমরা জোর করে নারীদের ওয়ারিস হবে। আর তোমরা তাদেরকে আবদ্ধ করে রেখো না, তাদেরকে যা দিয়েছ তা থেকে তোমরা কিছু নিয়ে নেয়ার জন্য, তবে যদি তারা প্রকাশ্য অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়। আর তোমরা তাদের সাথে সদ্ভাবে বসবাস কর। আর যদি তোমরা তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে এমনও হতে পারে যে, তোমরা কোনো কিছুকে অপছন্দ করছ আর আল্লাহ তাতে অনেক কল্যাণ রাখবেন।
আর যদি তোমরা এক স্ত্রীর স্থলে অন্য স্ত্রীকে বদলাতে চাও আর তাদের কাউকে তোমরা প্রদান করেছ প্রচুর সম্পদ, তবে তোমরা তা থেকে কোনো কিছু নিও না। তোমরা কি তা নেবে অপবাদ এবং প্রকাশ্য গুনাহের মাধ্যমে।
আর তোমরা তা কীভাবে নেবে অথচ তোমরা একে অপরের সাথে একান্তে মিলিত হয়েছ; আর তারা তোমাদের থেকে নিয়েছিল দৃঢ় অঙ্গীকার? [সূরা আন-নিসা, আয়াত : ১৯-২১]।
ইবাদতের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ সমান বিনিময় : আল্লাহ তা’আলা নারীদেরকে ইবাদত বন্দেগী ও আল্লাহর নৈকট্য লাভে পুরুষের সঙ্গী বানিয়েছেন। তাদেরও সেই কাজের আদেশ দেয়া হয়েছে, যে কাজের আদেশ পুরুষদের দেয়া হয়েছে। প্রত্যেককে তাদের ইখলাস, চেষ্টা ও কর্ম অনুযায়ী কিয়ামত দিবসে সাওয়াব ও বিনিময় দেয়া হবে। তাদের কাউকে কোনো প্রকার বৈষম্য করা হবে না। আল্লাহ তা’আলা বলেন, “নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ ও নারী, মুমিন পুরুষ ও নারী, অনুগত পুরুষ ও নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও নারী, বিনয়াবনত পুরুষ ও নারী, দানশীল পুরুষ ও নারী, সিয়ামপালনকারী পুরুষ ও নারী, নিজেদের লজ্জাস্থানের হিফাযতকারী পুরুষ ও নারী, আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও নারী, তাদের জন্য আল্লাহ মাগফিরাত ও মহান প্রতিদান প্রস্তুত রেখেছেন।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত : ৩৫]
স্বামীর মধ্যকার বিবাধ মীমাংসা : আল্লাহ তা’আলা স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মাঝে কোনো ঝগড়া-বিবাধ দেখা দিলে, তা মীমাংসার জন্য কতক নীতিমালা নির্ধারণ করে দিয়েছন। স্ত্রী যদি স্বামীর অবাধ্য হয়, তখন তার সাথে কি ধরনের আচরণ করতে হবে, আর স্বামী যদি বাড়াবাড়ি করে তার ব্যাপারে স্ত্রীর করণীয় কি হবে, তা আল্লাহ সবিস্তারে বলে দিয়েছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন, “যদি কোনো নারী তার স্বামীর পক্ষ থেকে কোনো দুর্ব্যবহার কিংবা উপেক্ষার আশঙ্কা করে, তাহলে তারা উভয়ে কোনো মীমাংসা করলে তাদের কোনো অপরাধ নেই। আর মীমাংসা কল্যাণকর এবং মানুষের মধ্যে কৃপণতা বিদ্যমান রয়েছে। আর যদি তোমরা সৎকর্ম কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর তবে আল্লাহ তোমরা যা কর সে বিষয়ে সম্যক অবগত।
আর তোমরা যতই কামনা কর না কেন তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে সমান আচরণ করতে কখনো পারবে না। সুতরাং তোমরা (একজনের প্রতি) সম্পূর্ণরূপে ঝুঁকে পড়ো না, যার ফলে তোমরা (অপরকে) ঝুলন্তের মতো করে রাখবে। আর যদি তোমরা মীমাংসা করে নাও এবং তাকওয়া অবলম্বন কর তবে নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত : ১২৮-১২৯]।
কন্যাসন্তানদের প্রতি বৈষম্য নিরসন বিষয়ে : মুশরিকরা কন্যাসন্তানদের অপছন্দ ও ঘৃণা করার কারণে আল্লাহ তা’আলা তাদের ভর্ৎসনা করেন এবং তাদের তিরস্কার করে বলেন, “আর যখন তাদের কাউকে কন্যাসন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয়, তখন তার চেহারা কালো হয়ে যায়। আর সে থাকে দুঃখ ভারাক্রান্ত। তাকে যে সংবাদ দেয়া হয়েছে, সে দুঃখে সে কওমের থেকে আত্মগোপন করে। অপমান সত্ত্বেও কি একে রেখে দেবে, না মাটিতে পূতে ফেলবে? জেনে রেখ, তারা যা ফয়সালা করে, তা কতই না মন্দ!” [সূরা আন-নাহল, আয়াত : ৫৮-৫৯]
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মুহাব্বাত আল্লাহর একটি নিদর্শন : আল্লাহ তা’আলা বিবাহ সম্পর্কে বলেন, বিবাহ হলো, আল্লাহ তা’আলার মহান নিদর্শন, যার মাধ্যমে স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের মাঝে প্রেম, ভালোবাসা ও পারস্পরিক অনুগ্রহ তৈরি হয়।
আল্লাহ তা’আলা বলেন, “আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলি রয়েছে সে কাওমের জন্য, যারা চিন্তা করে।” [সূরা আর-রূম, আয়াত : ২১]।
লেখক : ইমাম ও খতিব, বিষ্ণুপুর মদিনা বাজার বাইতুল আমিন জামে মসজিদ, চাঁদপুর সদর।