প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০
মৌসুম অনুযায়ী ইভেন্টভিত্তিক খেলা চালানো উচিত জেলা ক্রীড়া সংস্থার
চৌধুরী ইয়াসিন ইকরাম ॥ ছোটকাল থেকেই ক্রিকেটের প্রতি ছিলো তার আগ্রহ। সাথে ছিলো বাবা ও বড় ভাইয়ের প্রবল উৎসাহ। পরিবারের সদস্যরা সবসময়ই খেলাধুলার প্রতি সাপোর্ট দিতেন। ইলিশের নগরী হিসেবে পরিচিত চাঁদপুর জেলার হয়ে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের বয়সভিত্তিক দলে চাঁদপুরের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। খেলেছেন দেশে এবং বিদেশের মাটিতেও। বাবা ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সাবেক সদস্য ও ১৯৯৩ সাল হতে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। হাইস্কুলের গ-ি না পেরুতেই পেসার হান্টিংয়ে বিসিবির কর্মকর্তাদের নজর কেড়ে জাতীয় বয়সভিত্তিক ক্রিকেট দলে সুযোগ পান। একসময় ক্রিকেটের সাথে পুরোপুরি জড়িয়ে খেলতে থাকেন নিয়মিতভাবেই। খেলাধুলা ছেড়ে দেয়ার পর নিজের পরিবারের সদস্যদের অর্থায়নে পরিচালিত ইয়ুথ ক্লাবের সকল খেলাধুলাসহ সবকিছুতেই জড়িত রয়েছেন। একজন ক্রীড়া সংগঠক ও ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি রয়েছে তার। তিনি হলেন সাবেক ক্রিকেটার সফিউল আজম রাজন। ছিলেন একজন অলরাউন্ডার। ডান হাতে বোলিং ও ডান হাতেই ব্যাটিং করতেন। তাদের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার গৃদকালিন্দিয়ায়। তার বাবার নাম মরহুম এম সফিউল্লা (সাবেক এমপি), যিনি ছেলেদের খেলাধুলার জন্যে চাঁদপুর শহরের কোড়ালিয়া রোড এলাকায় নিজ বাড়িতে ক্রিকেটের পিচ বানিয়ে দিয়েছিলেন। ফরিদগঞ্জ উপজেলা থেকে ১৯৭৩ সালে তিনি জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। রাজনের মায়ের নাম বদরুন নাহার। ৩ ভাই, ২ বোনের মধ্যে বড় সফিউল আলম সুমন (মরহুম) ছিলেন ইয়ুথ ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা। বোনদের মধ্যে সালমা সুলতানা, সাবিয়া সুলতানা ও সাজেদা কাকন গৃহিণী। কনিষ্ঠজন জড়িত রয়েছেন চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবে। চাঁদপুর শহরের কোড়ালিয়া এলাকাস্থ বাড়িতে তাদের বসবাস। ২০০৩ সালের ১৫ অক্টোবর পেট্রোবাংলার জিএম আঃ হকের মেয়ে তাহমিনা শারমিনের সাথে রাজন বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের সংসারে রয়েছে জয়ী রুদমিলা তিলোত্তমা নামের এক কন্যা সন্তান। সে ঢাকা ভিকারুননেছা স্কুলের অষ্টম শ্রেণীতে পড়াশোনা করছে।
সফিউল আজম রাজন শিক্ষাজীবন শুরু করেন চাঁদপুর শহরের প্রেসক্লাব সংলগ্ন উদয়ন শিশু বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে পঞ্চম শ্রেণীতে পাস করার পর ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন চাঁদপুর হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। ১৯৯৭ সালে এসএসসি পাস করে তারপর পুরানবাজার ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে গ্র্যাজুয়েশন, বিবিএ, এমবিএ শেষ করে ব্যবসায়িক কাজে জড়িয়ে পড়েন। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে পড়াশোনাকালে নির্যাতন-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০০ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন শেষে ২০০৬ থেকে ২০১১ পর্যন্ত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সম্মানিত সদস্যের দায়িত্বেও ছিলেন। রাজন ফুজিয়ামা ফেব্রিক্স লিমিটেড (টেক্সটাইল মিলস্) ও নাহিয়ান ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড (ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট কোম্পানী)-এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর হিসেবে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য, চাঁদপুর ইয়ুথ ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক, পুরাণবাজার বি.এন. ট্রেডার্সের প্রোপ্রাইটর, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এম. সফিউল্লাহ মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ জাতীয় দল (অনূর্ধ্ব-১৬), ১৯৯৯ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্রিকেটার ছিলেন। প্রায় ৭ বছর অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন চাঁদপুর জেলা ক্রিকেট দলের। এছাড়া তিনি আজাদ বয়েজ ক্লাবের হয়ে ঢাকা দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট লীগ, ১৯৯৮ সালে সূর্যতরুণ ও ১৯৯৯ সালে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগে খেলেছেন। স্কুলজীবন থেকে শুরু করে নিজের খেলাধুলা এবং বর্তমানে ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী সফিউল আজম রাজনের সাথে তার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠের পাক্ষিক আয়োজন ‘ক্রীড়াকণ্ঠ’-এর পক্ষ থেকে আড্ডা হয়। আলাপচারিতায় তুলে ধরেন তার সকল কিছু। পাঠকদের জন্যে তার কথাগুলো হুবহু তুলে ধরা হলো।
ক্রীড়াকণ্ঠ : আসসালামুআলাইকুম, কেমন আছেন?
সফিউল আজম রাজন : ওয়ালাইকুম আস্সালাম। বিজয়ের মাসের শুরুতেই সকলের প্রতি রইলো শুভেচ্ছা। আল্লাহতায়ালার রহমতে সকলের দোয়া ও ভালোবাসায় ভালো আছি।
ক্রীড়াকণ্ঠ : খেলাধুলা শুরু হয় কীভাবে এবং কখন থেকে জড়িয়ে পড়েন ক্রিকেটের সাথে?
সফিউল আজম রাজন : ১৯৮৭ সাল থেকে চাঁদপুরে ক্রিকেট লীগ শুরু হলে তখন থেকেই বড় ভাইয়ের সাথে আসা-যাওয়া হতো মাঠে। আমি তখন ৪র্থ শ্রেণীতে পড়ি। ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াবস্থায় ১৯৯১ সালে আবাহনীর হয়ে চাঁদপুর প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগে অংশ নেই। আমার সুযোগ হয়েছিলো তখন সাবেক ক্রিকেটার মুজিব খন্দকারের সাথে ওপেনিংয়ে ব্যাটিং করতে নামা। ওই ম্যাচে আমরা চাঁদপুর মোহামেডানের সাথে জয়ী হই। সপ্তম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় ঢাকায় লোটাস কামাল পেসার হান্টিংয়ে অংশ নিই। তখন বিসিবির কর্মকর্তাদের মধ্যে ওসমান খান ও ওয়াহিদুল গণি আমাকে সিলেক্ট করেন। এছাড়া ওই বছর চাঁদপুর ইয়ুথ ক্লাবের হয়ে চাঁদপুরে প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগে খেলতে নামি। আমাদের দল ওই বছর চ্যাম্পিয়ন হয়। ফাইনালে আমাদের দল আবাহনীকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। আমি ফাইনাল ম্যাচে ম্যান অব দ্যা ম্যাচ নির্বাচিত হই।
ক্রীড়াকণ্ঠ : বিসিসিবির অনূর্ধ্ব-১৬ দলে কোন্ কোচের অধীনে ছিলেন এবং ওই সময়ে আপনার সাথে কারা খেলেছে?
সফিউল আজম রাজন : আমি ওই সময়ে বাংলাদেশের আধুনিক ক্রিকেটের রূপকার ওয়েস্টইন্ডিজের সাবেক ক্রিকেটার ও পরবর্তীতে ক্রিকেট কোচ গর্ডন গ্রিনিজের তত্ত্বাবধানে ছিলাম। আমার সাথে তখন ছিলো হাসিবুল হাসান শান্ত, রাহাত খানসহ অনেক ক্রিকেটার। বাংলাদেশ ক্রিকেট কাউন্সিল বোর্ডের অধীনে দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণেও অংশ নিয়েছিলাম।
ক্রীড়াকণ্ঠ : হাইস্কুলে পড়া অবস্থায় ক্রিকেটে?
সফিউল আজম রাজন : আমি অষ্টম ও নবম শ্রেণীতে পড়াবস্থায় ইয়ুথ ক্লাবের হয়ে চাঁদপুরে খেলি। ওই সময়ে আমরা চাঁদপুরের ক্রিকেটে মোহামেডানের সাথে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করি। একই বছরে ঢাকায় ২য় বিভাগ ক্রিকেটে আজাদ বয়েজের হয়ে ট্রাফে খেলতে নামি। ওই টুর্নামেন্টে কালিয়াকান্দি ক্রীড়াচক্রের সাথে সেঞ্চুরী করি। আমার সাথে তখন জাহাঙ্গীর শাহ বাদশা, নাদিম শাহসহ অনেকেই খেলেছেন। দশম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় ঢাকায় আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লীগে খেলি। একই বছরে ঢাকা সূর্যতরুণ ক্লাবের হয়ে প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগে খেলি। আমরা তখন বিদেশী খেলোয়াড় হিসেবে পাকিস্তানের ওয়াসিম আকরাম, শহীদ সাইদ, বাংলাদেশের মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, নাদির শাহসহ একই দলে খেলেছি।
ক্রীড়াকণ্ঠ : ১৯৯৭ সালে কীভাবে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৬ দলে সুযোগ পেয়েছিলেন। কোথায় খেলেছেন, কোন্ কোন্ দলের সাথে?
সফিউল আজম রাজন : ওই বছর সারাদেশ থেকে অনূর্ধ্ব-১৬ দল জাতীয় পর্যায়ে গঠনের জন্যে ৭০০ জন খেলোয়াড় বাছাই করা হয়। এদের থেকে ২২ জনের স্কোয়াড করা হয়। এর মধ্যে আমি ও পুরাণবাজারের শিমুল ভাই সুযোগ পেয়েছিলাম। আমি তখন ক্রিকেট কোচ দীপু রায় চৌধুরীর মাধ্যমে অনুশীলন করার সুযোগ পাই। আমি জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৬ বাংলাদেশ দলের হয়ে ভারত সফর করি। তখন আমাদের দলটি কলকতা, দার্জিলিং, হারিয়ানা মাঠে অনূর্ধ্ব-১৬ দলের সাথে খেলে। ওই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দলটি রানারআপ হয়। ওই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দলের হয়ে আমি দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের সাথে খেলার সুযোগ পাই।
ক্রীড়াকণ্ঠ : বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে কোন্ দলের সাথে কোথায় খেলেছিলেন?
সফিউল আজম রাজন : বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে ১৯৯৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করি। আমাদের দলের খেলাগুলো হয়েছিলো কেপটাউনে। ওই সময়ে আমি ছাড়াও দলে ছিলেন হান্নান শাহ, রাজিন সালেহ, হাসিবুল হাসান শান্ত, রোকন ও মেহরাব হোসেন অপি। ওই সফরে ওপেনিংয়ে ব্যাটিং করার সুযোগ হয়েছিলো আমার।
ক্রীড়াকণ্ঠ : চাঁদপুরের কোন্ ক্লাবের হয়ে খেলেছেন বা অনুশীলন করেছেন?
সফিউল আজম রাজন : হ্যাঁ, আমি মোহামেডান ক্লাবের হয়ে রামগঞ্জে ক্রিকেট টুর্নামেন্টে অংশ নিই। এছাড়া চাঁদপুর পৌর পার্কে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, চাঁদপুর স্টেডিয়ামে নিতাইগঞ্জ ক্রীড়া চক্র ও রিভারসাইড ক্লাবের প্র্যাকটিসগুলোতে অংশ নিতাম। ওই সময়ে একদলের ক্রিকেটার আরেক দলে গিয়ে অনুশীলন করার সুযোগ পেতো। ক্রিকেটের এবং খেলোয়াড়দের প্রতি তখন সবারই অনেক সম্মান ছিলো।
ক্রীড়াকণ্ঠ : আপনাকে খেলাধুলার ব্যাপারে উৎসাহ দিতেন কে?
সফিউল আজম রাজন : আমাকে খেলাধুলার ব্যাপারে উৎসাহ দিতেন আমার মরহুম বাবা তৎকালীন চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম. সফিউল্লা ও আমার মরহুম ভাই সুমন। আমি যতোক্ষণ মাঠে ব্যাটিং করতাম ততোক্ষণ শত ব্যস্ততার মাঝেও বাবা মাঠে বসে থাকতেন। ঢাকায় আমার খেলা চলাকালে বাবা মাঠে গিয়ে বসে থাকতেন খেলা দেখার জন্যে। আর বড় ভাই তো হাতে-কলমে ক্রিকেটের অনেক কিছু আমাকে শিখিয়েছেন। আমার ভাই তো আমার সাথে সবসময়ই থাকতেন। মা ও বোনদেরও ছিলো খেলাধুলায় অনেক উৎসাহ। চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা মুনির আহমেদ ভাইও ক্রিকেটের ব্যাপারে আমাকে অনেক উৎসাহ দিয়েছেন। জাতীয় পর্যায়ে জাহাঙ্গীর শাহ বাদশা, দীপু রায় চৌধুরী, ওসমান খান, শিশির, নাদির শাহ-এর সহযোগিতা পেয়েছি।
ক্রীড়াকণ্ঠ : চাঁদপুর জেলা দলের ক্রিকেটের সাথে?
সফিউল আজম রাজন : আমি ১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত চাঁদপুর জেলা ক্রিকেট দলের হয়ে খেলি। এর মধ্যে ৪ বছর খেলোয়াড় থাকলেও পরর্বতী ৩ বছর অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করি। আমার খেলার সময় চাঁদপুর ১৯৯২ সালে কুমিল্লায় রানারআপ ও ১৯৯৩ সালে চট্টগ্রামে ৩য় স্থান লাভ করে। এছাড়াও জেলা দলের হয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে ঢাকাতেও খেলি। ওই সময়ে বর্তমান জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বাবু, শিমুল, শেখ মঞ্জুরুল কাদের সোহেল, জয়নাল, কেশওয়ার, পূর্ব শ্রীরামদীর লক্ষ্মীর সহযোগিতা পেয়েছি ও একসাথে খেলেছি।
ক্রীড়াকণ্ঠ : আপনার খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুতে এবং পরবর্তীতে জেলা পর্যায়ের কোন্ কোন্ ক্রিকেটারকে পেয়েছিলেন?
সফিউল আজম রাজন : আমার খেলার উঠতি বয়সে পেয়েছি ফয়সাল, ভুট্টো, আমার বড় ভাই মরহুম শফিউল আলম সুমন, ফারুক, গৌর দা, রানা দা, সুমন সাহা, অমিত সাহা, পাপ্পু সাহা, রাজিব ও জাকিরসহ অনেককেই। পরবর্তীতে গাজী আলমগীর, সঞ্জয় দাস সুখন, সঞ্জয় সাহা সুমন, তুহিন, শেখ মঞ্জুরুল কাদের সোহেল, ফয়সাল গাজী বাহার, শরীফ, নিটুল, জামিল, আজিম, শামিম ফারুকী, হারু ঘোষ, আনোয়ার মাঝি, বাবু ভাই, মুকুল ভাই, সজল দা, সমর দা, মনটিল (বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার একটি এলাকার কাউন্সিলর), মুক্তার, রামু, গণেশসহ অনেকেই পেয়েছি।
ক্রীড়াকণ্ঠ : চাঁদপুরে ওই সময়ে ক্রিকেটের অবস্থা কী ছিলো?
সফিউল আজম রাজন : ওই সময়ে চাঁদপুর জেলা দল বিভাগীয় পর্যায়ে রানারআপ হতো। আমাদের সাথে কুমিল্লা দলের খেলার সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রতিযোগিতা হতো। ওই সময় শাহিদুর রহমান চৌধুরী, সুভাষ চন্দ্র রায়, ক্রিকেট উপ-কমিটির সেক্রেটারি অজয় ভৌমিক, জয়নাল আবেদীন জনুসহ অনেকেই জেলা দলের সাথে জড়িত ছিলেন।
ক্রীড়াকণ্ঠ : আপনি কি জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলে?
সফিউল আজম রাজন : আমি ১৯৯৭ সালে পাকিস্তান ট্যুরে স্ট্যান্ডবাই ছিলাম। তখন বাংলাদেশের কোচের দায়িত্বে ছিলেন গর্ডন গ্রিনিজ।
ক্রীড়াকণ্ঠ : আপনি চাঁদপুর ইয়ুথ ক্লাবের দায়িত্ব নেন কবে?
সফিউল আজম রাজন : চাঁদপুর ইয়ুথ ক্লাব একটি ঐতিহ্যবাহী ক্লাব। ১৯৮৭ সালে ক্লাবের জন্মলগ্ন থেকেই জড়িত ছিলাম। ৬ বারের চ্যাম্পিয়ন ও ৪ বারের রানারআপ এ ক্লাবটি। এ ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আমার বাবা মরহুম এম. সফিউল্লাহ। আমার বড় ভাই প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। আমার বড় ভাই আমৃত্যু প্রায় ২৯ বছর দায়িত্ব পালন করেন। আমি কখনও বল-বয়, ওয়াটার-বয়ের দায়িত্ব পালন করি। আমি ২০১৭ সালে ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা এবং সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম সুমন ভাইয়ের মৃত্যুর পর ইয়ুথ ক্লাবের সেক্রেটারির দায়িত্ব নিই। আমি ১৯৯৩ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ক্লাবের ক্রিকেট দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করি। ২০০২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করি। ২০১৭ সালে ২৪ জানুয়ারি আমার বড় ভাই সফিউল আলম সুমনের ইন্তেকালের পর আমি ক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিই। তখন থেকেই নিয়মিতভাবে চাঁদপুরের প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগসহ বিভিন্ন টুর্নামেন্টে নিয়মিত অংশ নিচ্ছে দলটি। এছাড়াও ব্যাডমিন্টনে জুনিয়রে চ্যাম্পিয়ন ও দাবা প্রতিযোগিতায় রানারআপ হয় দলটি। আগামীতে ফুটবল, কাবাডিসহ অন্যান্য ইভেন্টে অংশগ্রহণ করবো।
ক্রীড়াকণ্ঠ : চাঁদপুর জেলার ক্রিকেটের জন্যে?
সফিউল আজম রাজন : খেলাধুলার ব্যাপারে জেলা ক্রীড়া সংস্থার একটি নিয়মিত ক্যালেন্ডার হওয়া উচিত। কারণ চাঁদপুর ক্রিকেট লীগ হয় মার্চ মাসে। তখন বৃষ্টি শুরু হয়। সর্বপ্রথম ক্রিকেটের জন্যে (সব সময়ের) একটি ক্রিকেট পিচ করতে হবে। ক্রিকেটারদের জন্যে পিচ হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একটা পিচ করতে অনেক সময় লাগে। দুঃস্থ ক্রিকেটারসহ অন্যান্য খেলোয়াড়কে সহযোগিতাসহ খেলাধুলায় সুযোগ করে দিতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আমাদের চাঁদপুর জেলায় খেলাধুলা পকেট কমিটির অন্তর্ভুক্ত। সকল কিছুই হচ্ছে সদর উপজেলাকেন্দ্রিক। চাঁদপুর ক্লেমনের ৫৫০ জন স্টুডেন্ট ও শেখ কামালের ৮০ জন স্টুডেন্ট। তাদেরকে দিয়েই বাছাই পর্ব, বয়সভিত্তিক জেলা দল গঠন করা হয়। কিন্তু জেলা ক্রীড়া সংস্থার উচিত ক্লাব থেকে রিক্রুট করা খেলোয়াড়দের থেকে বাছাই করে দল সিলেক্ট করা। জেলা ক্রীড়া সংস্থা যদি উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার মাধ্যমে উপজেলায় ৩য় ও ২য় বিভাগ ক্রিকেট লীগের খেলার সুযোগ করে দেয়, তাহলে উপজেলার ক্রিকেটারসহ স্থানীয় ক্লাব খেলাধুলায় অনেক উৎসাহ পাবে। চাঁদপুর সদর থেকে উপজেলায়ও খেলাধুলা ছড়িয়ে দেয়া হোক। উপজেলা থেকে ভালো খেলোয়াড়দেরকে বাছাই করে তাদেরকে জেলা পর্যায়ে এনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হোক। তেমনি যদি জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে ফ্রি নিয়মিতভাবে ক্রিকেটের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হতো তাহলে অনেক ক্রিকেটার সৃষ্টি হতো। সেই সাথে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী ক্রিকেটারদের দীর্ঘমেয়াদী আবাসিক ক্যাম্পের ব্যবস্থা করতে হবে।
এছাড়া জেলা পর্যায়ের খেলাগুলো যদি ধারাবাহিকভাবে হতো তাহলে ক্লাবগুলোর খেলোয়াড়রা অনুশীলন করার সুযোগ পেতো। জেলা ক্রীড়া সংস্থা হঠাৎ করে বলে ক্রিকেট খেলার কথা। এতে করে ক্রিকেটাররা প্রস্তুতির সুযোগ পায় না। আমার মতে, জেলার প্রত্যেকটি উপজেলার সাংসদদের সম্মান দিতে হবে। তাহলে উপজেলা থেকেও খেলোয়াড়রা খেলাধুলার জন্যে উৎসাহ পাবে এবং তারাও খেলাধুলার জন্যে প্রস্তুতি নিবে। আর জেলা পর্যায়ে যে টুর্নামেন্ট বা লীগের আয়োজন করা হয় সেটা যেনো ফাইনাল ও পুরস্কার অনুষ্ঠান পর্যন্ত গড়ায় সে ব্যাপারে আন্তরিক হতে হবে।
ক্রীড়াকণ্ঠ : উঠতি বয়সী ক্রিকেটারদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।
সফিউল আজম রাজন : উঠতি বয়সী ক্রিকেটারদের খেলার নিয়ম মেনে নিয়মিত অনুশীলন, পরিশ্রম করতে হবে। মনোযোগ বৃদ্ধিসহ কমিটমেন্টের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। খেলার ২ দিন হলেই বাজেট চায়। আমাদের সময় আমরা সেটা চাইতাম না। যে কোনো লেভেলেরই ক্রিকেটাররা আগে ডিমান্ড করে বসে। মনে রাখতে হবে, ক্রিকেটারদের মধ্যে যে ভালো কিছু করতে পারে তাহলে এমনিতেই সে অনেক কিছুতেই এগিয়ে যাবে।
ক্রীড়াকণ্ঠ : খেলাধুলার ব্যাপারে চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা?
সফিউল আজম রাজন : আমাদের জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংসদ সদস্য ও শ্রদ্ধেয় শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি খেলাধুলার ব্যাপারে অনেক আন্তরিক। এছাড়া ক্রীড়া সচিব আক্তার ভাইসহ তাঁদের মাধ্যমে ক্রিকেটের জন্যে বিশেষ কিছু করা দরকার। আমাদের এখানে অনেক বড় আউটার স্টেডিয়াম রয়েছে। খেলোয়াড়দের জন্যে বড় প্রয়োজন একটি ইনডোর স্টেডিয়াম। যেটা আবাহনী মাঠে রয়েছে ঢাকায়। বিসিবি থেকে সারাদেশেই ফান্ড দেয়া হয়। ক্রাইটেরিয়া অনুযায়ী সকল কিছু ফুলফিল করতে পারলে সকল সহযোগিতা পাওয়া যাবে উপরের থেকে। যেই মৌসুমে যেই ইভেন্টের খেলা প্রয়োজন সেটি চালাতে হবে। দেখা যায় ফুটবল মৌসুমে ক্রিকেট ও ক্রিকেট মৌসুমে ফুটবল চালানো হয়। জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে মৌসুম অনুযায়ী ইভেন্টভিত্তিক খেলা চালানো উচিত। চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। প্রত্যেকটি ইভেন্টে সাবেক খেলোয়াড়দেরকে সংশ্লিষ্ট করতে হবে। অতীতে সাবেক যেই খেলোয়াড়রা যেই খেলার সাথে জড়িত ছিলেন তাদেরকে স্ব স্ব ইভেন্টের দায়িত্ব দিলে খেলার ফলাফলও ভালো পাওয়া যাবে। সর্বোপরি প্রকাশ্য নির্বাচনে ডেলিগেটদের ভোটের মাধ্যমে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সেক্রেটারি নির্বাচিত করা হোক। সেই সাথে জেলা ক্রীড়া সংস্থার প্রত্যেকটি অনুষ্ঠানে জেলার সকল সংসদ সদস্যের পাশাপাশি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের সম্পৃক্ত করা হোক। তাহলে চাঁদপুর থেকে খেলোয়াড়দের সংখ্যা বাড়বে। মনে রাখতে হবে, মসজিদ, মন্দির, স্কুল, মাদ্রাসা ও ক্লাব এগুলো কারো ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্পত্তি হয় না। আর যদি হয়েও থাকে, তাহলে জনপ্রিয়তা বা গ্রহণযোগ্যতা পায় না জনগণের নিকট।
ক্রীড়াকণ্ঠ : সময় দেয়ার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ।
সফিউল আজম রাজন : আপনার মাধ্যমে সকলের প্রতি বিজয় দিবসের শুভেচ্ছাসহ নতুন বছরের শুভেচ্ছা রইলো।