প্রকাশ : ৩০ জুন ২০২৪, ০০:০০
ছাত্রই যখন শখের মুরগিওয়ালা!
বলছিলাম একজন ছাত্রের কথা। তিনি ২০২২ সালে ঢাকা দারুন্নাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসা থেকে আলিম পরীক্ষা দেন। ওই বছরই তিনি তার অবসর সময় কাটাতে বাবার উৎসাহ ও উদ্দীপনায় ১ জোড়া ইউরোপীয়ান সিল্কি মুরগি দিয়ে শুরু করেন মুরগি পালন। বর্তমানে তিনি চাঁদপুর সরকারি কলেজে বিএসএসে পড়াশোনা করছেন।
৫ হাজার টাকার মূলধন দিয়ে শুরু করেন, বর্তমানে ৮০-৯০ হাজার টাকার মুরগি রয়েছে তার। ক্রেতাদের অনুরোধে ডিম এবং মুরগি বিক্রি করেন। ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদনের প্রক্রিয়া এবং মুরগির রোগ নির্ণয় ও পালন পদ্ধতিতে জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ এবং অভিজ্ঞ খামারি বড় ভাইদের পরামর্শ নিয়ে কাজ করতে করতে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। দেশের যে কোনো জায়গায় অর্ডার পেলে মুরগি বিক্রি করেন। মুরগি বিক্রি করতে গিয়ে ঠিকানা তো একটা লাগেই, আর সে ঠিকানা ব্যবহার করতে তার মুরগি খামারের নামকরণ করেন শখের মুরগিওয়ালা চাঁদপুর।
ছাত্রই যখন শখের মুরগিওয়ালা, তাকে দেখতে যেতে হয় চাঁদপুর ডিসি অফিস সংলগ্ন জিটি রোড উত্তরে তরপুরচণ্ডী ইউনিয়নের বাঁশি বাড়ি সংলগ্ন মাওঃ একেএম সিদ্দিকুর রহমান মজুমদার বাড়িতে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, শেড করে আলাদা খোপে প্রায় ৪ শতাংশ জায়গা জুড়ে আল-আমিন সিদ্দিকী ফাহাদ বিদেশি জাতের মুরগি লালন-পালন করছেন। তার সংগ্রহে ইউরোপিয়ান সিল্কি, বাফ মল্টেড, জাপানিজ বেন্থাম, সিলভার কোচিন, রেড মিলি, কলেম্বিয়ান লাইট ব্রাহামা, কলেম্বিয়ান বাফ ব্রাহামা, ফিজেল কোচিন, মিশরীয় নাওমিসহ দেশীয় প্রজাতির মুরগিও রয়েছে। মুরগিগুলো ছোট থেকে বড় হয়ে যাওয়ার পর অনলাইনে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তিনি এগুলো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করছেন। এতে করে তিনি উপজেলা পর্যায়ে ডিম ও মাংসের চাহিদা মেটানোয় ভূমিকা রাখছেন। এছাড়া ওই ফার্মে সৌখিন প্রজাতির ময়ূরপক্সক্ষী, রেড চেকার, মিলি, গিরিবাজ কবুতরও পালন করছেন।
ফাহাদ জানান, মুরগির বাচ্চা ফুটিয়ে নিজের হাতে ভ্যাকসিনসহ সব উপকরণ প্রয়োগ করে এদের বড় করতে থাকি। বর্তমানে আমার যে মুরগি রয়েছে, তা আমি অনলাইনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করছি। এমনকি মুরগির বিষ্ঠাগুলোও আমি চাষাবাদের কাজে লাগাচ্ছি। আমার নিজস্ব ফলদ বাগান রয়েছে।
ফাহাদের বাবা মোঃ আসলাম মজুমদার। তিনি সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (কর্পোরাল)। তার মা রাশেদা বেগম একজন আদর্শ গৃহিণী। তার ছোট বোন হুমায়রা সিদ্দিকী।
জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য মতে, চাঁদপুরে কক, লেয়ার ও ব্রয়লার জাতের মুরগিই বেশি পালন হয়। সব মিলিয়ে বছরে পোল্ট্রি মুরগি থেকে প্রায় ২০ লাখ মেট্রিক টন মাংস ও ডিমের চাহিদা অর্জিত হচ্ছে। উৎসাহ বাড়াতে ১১০ জন নিবন্ধিত খামারিকে প্রণোদনার আওতায় আর্থিক সহায়তা করার পরিকল্পনা রয়েছে।
চাঁদপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ জ্যোতির্ময় ভৌমিক বলেন, আমরা সব সময়ই খামারিদের পাশে রয়েছি। সময়মত টিকা প্রদান, কৃমিনাশক ওষুধ বিতরণ ও বিভিন্ন ফ্রি ভেটেরিনারি মেডিক্যাল ক্যাম্পে চিকিৎসা পরামর্শ এবং হাসপাতালে আসা খামারিদের পোল্ট্রি মুরগির রোগ অনুসন্ধান করে সঠিক চিকিৎসা প্রদান করছি। ফাহাদের মতো উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিতে আমরা তাদের নিয়ে নানা সময়ে প্রশিক্ষণের আয়োজন করি। যেখানে মুরগির ফাউল, টাইফয়েড, কলেরা, ব্রংকাইটিস রোগ সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়। এতে করে উদ্যোক্তারা সময়মত মুরগিকে টিকা প্রদান, কোয়ারেন্টাইনে রাখা, জীবণুনাশক দিয়ে খামার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, অসুস্থ অবস্থায় টিকা ব্যবহার না করা, হাতুড়ে ডাক্তারের পরামর্শ না নেওয়াসহ যাবতীয় বিষয় বলছি। একই সাথে আর্থিক সঙ্কট কাটাতে ঋণ সুবিধা সম্পর্কিত পরামর্শও দিয়ে আসছি।
একজন ছাত্রই যখন শখের মুরগিওয়ালা হয়েছে পড়াশোনার পাশাপাশি, তাকে পরামর্শ না দিয়ে আর থাকা যায়। পড়ালেখার পাশাপাশি কৃষি কাজে সময় ব্যয় করা একটা অভিজ্ঞতা এবং তার বাড়ির পরিবারের মাংসের চাহিদা মেটাবার সুযোগ রয়েছে। ফাহাদের খামার দেখে এখন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকেই খামারি হতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। এটা শুনে বেশ ভালই লাগলো।