প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
বিশ্ববিদ্যালয় সৃজনশীলতার শ্রেষ্ঠ সময়
বিশ্ববিদ্যালয় মানেই স্বপ্নের জায়গা। পরিশ্রম, ভাগ্য এবং তারপর আসে সফলতা। প্রত্যেক মানুষেরই নানা স্বপ্ন থাকে। কারও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার আবার কারও প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে। উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত বহু বিদ্যাচর্চার প্রতিষ্ঠানকে বিশ্ববিদ্যালয় বলে। মূলত স্কুল ও কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে অ্যাডমিশন নামক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে আমরা একটা সিট দখল করে নিই। এটা মানতে হবে যে বিশ্ববিদ্যালয়-জীবন মানেই হরেক রকমের গল্প এবং স্মৃতি। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা শিক্ষার্থী, ভিন্ন তাদের মানসিকতা, ভিন্ন সংস্কৃতি, ভিন্ন ধর্মের মানুষগুলো এক হয়ে যায় ক্যাম্পাসের বন্ধুত্বে। বড় ভাই-আপুরা তো গাইডলাইন হিসেবে থাকেনই। তাঁদের কাছ থেকেও আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। এখানেই ক্যাম্পাসের বন্ধুত্বের সবচেয়ে বড় সার্থকতা। এই বন্ধুত্ব মানুষকে জাতি-ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে উঠতে শেখায়, শেখায় সহিষ্ণুতা। মুক্তচিন্তার চর্চা করতে শেখায়।
ক্যাম্পাস জীবনের সবচেয়ে বিরক্তিকর ব্যাপার ক্লাস করা। সঙ্গে আবার পরীক্ষা, বিভিন্ন অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন আরও কত কি! এত কিছুর পরও বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় কোনো কমতি থাকে না। ক্লাসের ফাঁকে একটু সময় পেলেই বসে পড়ে ক্যাম্পাসে, কখনোবা লাইব্রেরিতে, কখনো ডিপার্টমেন্টেরই করিডরে। দুষ্টুমি আর খামখেয়ালিপনাতেও জুড়ি নেই। এখান থেকেই কেউ হবে মন্ত্রী, ব্যাংকার, পুলিশ, শিক্ষক, বিসিএস ক্যাডার এবং অনেকেই বিভিন্ন পদে জায়গা করে নেবে।
বিশ্ববিদ্যালয়-জীবন কি শুধুই পড়ালেখার জন্য? না, সময় সুযোগ পেলে এখানে মেধাকে কাজে লাগিয়ে অনেক কিছু করা সম্ভব। এখানে এসে কেউ নষ্ট হয় আবার কেউ সফলতার শিখরে আরোহণ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন রকমের সংগঠন থাকে, চাইলে সেখানে যুক্ত হয়ে অনেক কিছু শেখা সম্ভব। প্রশ্ন আসতে পারে, সংগঠনে আমরা কেন যুক্ত হব? কারণ, এগুলো সংগঠন মানবিক ও উদার হতে শেখায়। যদি বন্ধুসভার কথাই বলি তাহলে বলতেই হয়, বন্ধুসভা নিঃস্বার্থভাবে মানবকল্যাণে সর্বদা নিয়োজিত থাকে। থাকে হাজারও বন্ধু। তাদের চিন্তাচেতনা বিলিয়ে দিয়ে মানুষের জন্য কাজ করে। লেখাপড়ার পাশাপাশি কালচারাল, পাঠচক্র, প্রতিযোগিতা, বিভিন্ন খেলাধুলা ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করার সুযোগ থাকে, যা সৃজনশীলতা বিকাশে সাহায্য করে। কথাবার্তা, আচার-আচরণ, সবার সামনে বক্তৃতা দেওয়া বা মুক্ত আলোচনা করা এসব সবাই পারে না। বন্ধুসভায় তরুণেরা তাদের মেধা, শ্রম, শিক্ষা ও রুচি দিয়ে দেশের মানুষ ও বিশ্বমানবতার কল্যাণে নিজেদের নিয়োজিত করতে পারে। সংগঠনগুলোতে যুক্ত হলে এসব দিক দিয়ে এগিয়ে থাকা যায় এবং পরবর্তী সময়ে প্রেজেন্টেশনে কাজে দেয়।
এককথায়, আমার নিজেরা রিপ্রেজেন্ট করতে পারি। একটু লক্ষ করলেই বুঝতে পারব যে সিনিয়ররা যাঁরা সংগঠনে যুক্ত আছেন, তাঁদের প্রায়ই দেখা যায় সময়-অসময় রক্ত দিয়ে বা অন্যান্য কিছু দিয়ে সাহায্য করছেন। এর থেকেও আমরা শিক্ষা নিতে পারি।
শুধু সার্টিফিকেট অর্জনের মধ্য দিয়ে শিক্ষা পরিপূর্ণতা পায় না। আমরা শুধু সার্টিফিকেট পাই, কিন্তু মূল শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হই। বিশ্ববিদ্যালয়–জীবনকে লেখাপড়ার শেষ ধাপ বলা হয়ে থাকে। আর এটি এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যেখানে থাকে আনন্দ, আড্ডা এবং জ্ঞানের চর্চা। সেখানে থাকে না কোনো ভেদাভেদ। বিশ্ববিদ্যালয়-জীবন থাকে স্বাধীন, কত শত স্মৃতি এবং ভালোবাসা। একদিন সবাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সার্টিফিকেট নিয়ে চলে যাবে, কিন্তু আনাচে-কানাচে থেকে যাবে তাদের স্মৃতিগুলো। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর আনন্দের বেশির ভাগই থাকে ক্যাম্পাস-জীবন। আর বিশ্ববিদ্যালয় সাফল্যের একটি সিঁড়িমাত্র। তাই বিশ্ববিদ্যালয়জীবন গড়ে উঠুক পড়ালেখার পাশাপাশি গঠনমূলক কাজে। তবেই প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করা সম্ভব এবং বিশ্ববিদ্যালয়জীবন হবে সার্থক। ভালো কাজে নিজেকে সংযুক্ত রাখতে, একজন সমাজকর্মী হিসেবে নিজেকে সবার কাছে মেলে ধরতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠন বিভিন্নভাবে সহায়তা করে থাকে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় সৃজনশীলতার শ্রেষ্ঠ সময় বলা চলে।