প্রকাশ : ২৮ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
তাসমিয়াহ রহমান দিপা মতলব কচি-কাঁচা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তার মাও একজন শিক্ষক। ফলে ছোটবেলা থেকেই তিনি শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। তরুণ এ শিক্ষক শিক্ষকতা পেশার রোমাঞ্চকর সুখস্মৃতি ও প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার প্রত্যাশার কথা জানান ‘শিক্ষাঙ্গন’কে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : কেমন আছেন?
তাসমিয়াহ রহমান দিপা : আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার শিক্ষাজীবন সম্পর্কে জানতে চাই।
তাসমিয়াহ রহমান দিপা : আমি ২০০৫ সালে ১৪৯নং দক্ষিণ পয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মতলব দক্ষিণ উপজেলায় ৫ম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুল বৃত্তিতে ২য় স্থান অর্জন করি। মতলবগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, হাজীগঞ্জ মডেল সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ২০১৯ সালে চাঁদপুর সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে যোগদানের অনুভূতি কেমন ছিল?
তাসমিয়াহ রহমান দিপা : আলহামদুলিল্লাহ, আমি যেহেতু শিক্ষকতাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিতে চেয়েছিলাম সেহেতু যোগদানের অনুভূতি ছিলো অসাধারণ। আমার মনে হয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষক হওয়ায় শিক্ষার প্রান্তিক জায়গা থেকে শিশুদের মাঝে শিক্ষা নিয়ে কাজ করার সুযোগ পাবো।
চাঁদপুর কণ্ঠ : শিক্ষক হওয়ার ক্ষেত্রে কোন বিষয়টি অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে?
তাসমিয়াহ রহমান দিপা : আমার মা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তাই চাকরি হওয়ার আগে থেকেই প্রাথমিক শিক্ষার বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা ছিলো। সেখান থেকেই আমার মনে হয়েছে শিক্ষকতা এমন একটি পেশা, যে পেশার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভালো মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে আমি মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারবো, তাদেরকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে পারবো। বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই এই মৌলিক আদর্শে একজন শিক্ষার্থী গড়ে উঠে। বাচ্চাদের ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষকের ভূমিকা অনেক। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলাধুলা এবং অনেক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকে। যেটি আমার খুব আগ্রহের জায়গা। এ সকল কিছুই শিক্ষক হওয়ার ক্ষেত্রে আমার অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার প্রিয় শিক্ষক কে? কেনো প্রিয়?
তাসমিয়াহ রহমান দিপা : আমার প্রিয় শিক্ষক বর্তমানে নাগদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত প্রধান শিক্ষক কাজল কুমার দে এবং আরেকজন শিক্ষকের কথা না বললেই নয়। তিনিও একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাজমা আক্তার। তাঁরা সৎ, কর্মনিষ্ঠ। শিক্ষক হিসেবে নয়, একজন অভিভাবক হিসেবে আন্তরিকতার সাথে পাঠদান করাতেন। আমার এখনো মনে আছে, নাজমা ম্যাডাম অসুস্থ শরীর নিয়েও আমাদের ক্লাস নিতে আসতেন। কারণ তিনি ছুটিতে থাকলে আমাদের পাঠদানের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তিনি বলতেন, ‘আমি যদি অন্যের সন্তানকে ঠকাই, কোনো না কোনোভাবে আমার সন্তানও অন্যের দ্বারা ঠকে আসবে’।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার শিক্ষার্থীদের কোন বিষয়টি আপনার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে?
তাসমিয়াহ রহমান দিপা : আমার শিক্ষার্থীদের নতুন কিছু জানার প্রতি আগ্রহ অধিক। বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার প্রতি অধিক আগ্রহের বিষয়টি আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। আরো যদি বলি, আমার শিক্ষার্থীরা একটু ভালোবাসা পেলেই আপ্লুত হয়ে মনোযোগ দিয়ে পাঠগ্রহণ করে এবং দৌড়ে বোর্ডে আসে লেখার জন্যে। পড়া কার আগে কে দিবে সে প্রতিযোগিতা করে। যা আমাকে আন্তরিকতার সাথে পাঠদানে আরও বেশি উৎসাহিত করে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার আরও উৎকর্ষের জন্যে সরকারের পক্ষ থেকে আর কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার?
তাসমিয়াহ রহমান দিপা : প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য সরকার ইতোমধ্যেই সময়োপযোগী ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে- প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রমোশন পোস্টের ব্যবস্থা থাকলে অনেক মেধাবীই এই পেশায় আসার আগ্রহ পাবে। আমরা জানি শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। তাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় মেধাবীদের সম্পৃক্ততা সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপকে অধিক উৎকর্ষিত করবে বলে আমি মনে করি। বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিজ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ানো বন্ধ করার পদক্ষেপটি সরকারকে আরো জোড়ালো করা দরকার বলে আমি মনে করি। অন্যথায় অনেক সময় প্রাইভেট পড়ানোর দ্বন্দ্বে শিক্ষক-শিক্ষক জড়িয়ে যান। এতে করে বিদ্যালয়ের কর্মপরিবেশ, পাঠদানের পরিবেশ নষ্ট হয়। সেই সাথে নির্দিষ্ট কিছু বাচ্চা প্রাইভেট পড়ানোর নামে সুযোগ-সুবিধা বেশি পেয়ে থাকলে ক্লাসের প্রতি মনোযোগের চেয়ে শিশুরা প্রাইভেটের প্রতি অধিক মনোযোগের আশঙ্কা তৈরি হয়। কখনও কখনও এটি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। এতে সরকার কর্তৃক উৎকর্ষ পদক্ষেপ অনেকটাই ফিকে হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বলে আমি মনে করি। যে সকল বিদ্যালয়ে দপ্তরি নেই সেসব বিদ্যালয়ে দপ্তরি নিয়োগের ব্যবস্থাগ্রহণ করা উচিত। স্কুলে দপ্তরি না থাকায় শিক্ষকের এ সকল কাজ তদারকি করতে গিয়ে অনেক সময় শ্রেণি পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে চাই।
তাসমিয়াহ রহমান দিপা : আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম কচি-কাঁচা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। মতলবের প্রাণকেন্দ্রেই বিদ্যালয়টির অবস্থান। বিদ্যালয়ে আমরা শিক্ষক ৬ জন এবং ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা ২শ’র অধিক।
চাঁদপুর কণ্ঠ : শিক্ষকতা জীবন কেমন উপভোগ করছেন?
তাসমিয়াহ রহমান দিপা : কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভালোবাসা আমাকে তাদের প্রতি আরো দায়িত্বশীল করে তুলছে। আমি যেহেতু শিক্ষকতাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিতে চেয়েছিলাম তাই আমি আমার সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে এই পেশায় সম্পৃক্ত থাকতে পেরে ভীষণভাবে উপভোগ করছি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : শিক্ষকতা জীবনের কোনো সুখস্মৃতি সম্পর্কে পাঠককে বলুন।
তাসমিয়াহ রহমান দিপা : শিক্ষকতা জীবনের প্রায় প্রতিদিনই আমার কাছে সুখস্মৃতি হয়ে থাকছে। পাঠকদের বলতে চাই, বঙ্গবন্ধু টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট (বালিকা)-২০২৩-এ মতলব উপজেলায় রানার্সআপ হতে পারায় আমার শিক্ষার্থীরা যেই আনন্দণ্ডউচ্ছ্বাস করেছিলো সেটিই আমার শিক্ষকতা জীবনের অন্যতম সুখস্মৃতি হয়ে থাকবে।