শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ২৮ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

শিক্ষাঙ্গনে শারীরিক শিক্ষা
সুধীর বরণ মাঝি

শারীরিক শিক্ষা কেবল দৈহিক নয়, সাধারণ শিক্ষারও একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। শিক্ষার সফলতা বা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে হলে শারীরিক শিক্ষাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিশ্চিত করতে হবে। শারীরিক শিক্ষা মানুষের মানসিক বিকাশ ও সামাজিক গুণাবলি অর্জনের উপায় নিয়ে আলোকপাত করে। একজন শিক্ষার্থীকে পরিপূর্ণ করে গড়ে তুলতে অত্যাবশ্যকীয় ভূমিকা পালন করে। আমরা জানি, দেহ ও মনের সম্পর্ক একান্ত ঘনিষ্ঠ। বর্তমান সময়ে শারীরিক শিক্ষা ছাড়া সাধারণ অসম্পূর্ণ, অপূর্ণাঙ্গ। অ ংড়ঁহফ সরহফ ষরাবং রহ ধ ংড়ঁহফ নড়ফু (সুস্থ দেহে সুন্দর মন)- এই প্রাচীন প্রবাদটি যুগযুগান্তর থেকে সত্য বলে প্রমাণিত হয়ে আসছে।

আজকাল শারীরিক শিক্ষা বলতে শারীরিক উন্নয়ন, মানসিক বিকাশ ও সামাজিক গুণাবলি অর্জনকে বুঝায়। পৃথিবীর অন্যান্য দেশ যখন শারীরিক শিক্ষায় নতুন নতুন গবেষণায় ব্যস্ত, নতুন নতুন কর্মপরিকল্পনা নিয়ে দেশের শারীরিক শিক্ষা ও খেলাধুলাকে এগিয়ে নিচ্ছে, দেশের উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে, আমরা তখন ঠিক তার উল্টোপথে। আমাদের শিক্ষা কারিকুলামে নামেমাত্র শারীরিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করছি। যা আগামী স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য চাই স্মার্ট মানুষ, স্মার্ট শিক্ষাব্যবস্থা। শারীরিক শিক্ষার আধুনিকায়ন এবং শিক্ষা কারিকুলামে নিয়মিত বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা ছাড়া স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন কতটা সফল হবে তা প্রশ্নসাপেক্ষ।

শারীরিক শিক্ষাবিদদের মতামত থেকে এটা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, শারীরিক শিক্ষার উদ্দেশ্য সাধারণ শিক্ষার মতোই ব্যক্তিসত্তার সর্বোচ্চ ও সুষম বিকাশ সাধন করে থাকে এবং পরিকল্পিতভাবে খেলাধুলা পারদর্শিতা অর্জনে সাহায্য করে। শারীরিক শিক্ষা এবং খেলাধুলার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী অনেক গুণাবলি অর্জন করতে পারে। যেমন- খেলাধুলার নিয়মকানুন মেনে ভালো করে খেলতে পারা। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য হাসিল করা। স্নায়ু ও মাংসপেশির সমন্বয় সাধনে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করা। দেহ ও মনের সুষম উন্নতি করা। সুস্বাস্থ্যের মাধ্যমে শারীরিক সক্ষমতা অর্জন করা। সহিষ্ণুতা ও আত্মবিশ্বাস অর্জন করা।

উপস্থিত চিন্তাধারার বিকাশ সাধন। নৈতিকতা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন। সেবা ও আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ হওয়া। বিভিন্ন দলের মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণ ও প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব গড়ে ওঠা। আনুগত্যবোধ ও নৈতিকতা বৃদ্ধি পাওয়া। খেলাধুলার মাধ্যমে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত হওয়া। খেলোয়াড়ি ও বন্ধুত্বসুলভ মনোভাব গড়ে ওঠা। প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মনোভাব গড়ে ওঠা। আত্মসংযমী হওয়া ও আবেগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করা। নেতৃত্বদানের সক্ষমতা অর্জন ও সামাজিক গুণাবলি অর্জন করা। বিনোদনের সঙ্গে অবসর সময় কাটানোর উপায় জানা। সকলের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ ও সেবামূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করা। সর্বোপরি তাদের মাঝে দেশপ্রেম জাগ্রত হয়।

স্কুল বয়সেই শিক্ষার্থীরা সর্বোত্তম শারীরিক শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। সমাজে শারীরিক কার্যকলাপের গুরুত্ব সম্পর্কে বার্তা সঠিকভাবে পৌঁছানো প্রয়োজন। একবার এটি জানা হয়ে গেলে সারাজীবন স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োগ করা সম্ভব। শারীরিক শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি রোগ, খারাপ অনুভূতি, ডাক্তারের কাছে এবং হাসপাতালে যাওয়ার প্রবণতা কমায়। শারীরিক কার্যকলাপ স্বাস্থ্য রক্ষা করে এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য সমস্ত রোগ দূরে রাখে। ফলে ওষুধও কম খেতে হয়। মনের মাঝে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করে। এটি একবিংশ শতাব্দীর নাগরিককে দলগতভাবে প্রশিক্ষণ দিতে সাহায্য করবে। এটি ক্রস-কাটিং থিমগুলোর বিকাশের অনুমতি দেয়।

এগুলো যৌথভাবে পাঠ্যক্রমের অনেক ক্ষেত্রকে সম্বোধন করে। দক্ষতার ওপর কাজ করা এবং উন্নতি করা এখন খুবই সাধারণ বিষয়। এটি মূল্যবোধ শিক্ষা দেয়। এটা শেখায় যে অন্যদের গ্রহণ করা অপরিহার্য। এটি একটি দলের মধ্যে প্রত্যেকের প্রচেষ্টা চিনতে সাহায্য করে। অন্যান্য চ্যালেঞ্জিং বিষয়ের তুলনায় এটি অনেক সহজ এবং খেলাধুলার মতো মজাদার কার্যকলাপ অন্তর্ভুক্ত করে। যে সকল ছাত্র-ছাত্রীরা খেলাধুলায় জড়িত, তারা এই বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে নেয় এবং পেশাগতভাবে দক্ষ হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। শারীরিক শিক্ষা এমন দক্ষতা তৈরি করে যা মানুষের জীবনে বিকশিত হয়।

এটি পরিবেশের অবস্থার ওপর নির্ভর করে কী করতে হবে, কীভাবে এটি করতে হবে, কখন এবং কার সঙ্গে করতে হবে তা জানার সুযোগ করে দেওয়ার মাধ্যমে বুদ্ধির বিকাশ করে। শারীরিক শিক্ষা হলো শারীরিক শক্তি এবং জ্ঞানের বিষয়। এই বিষয়ের সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন শারীরিক কৌশল অধ্যয়ন করতে পারে। এই কৌশলগুলো খেলাধুলার সময় ব্যবহার করা যেতে পারে এবং দৈনন্দিন জীবনের রুটিনে সহায়ক।

কয়েক বছর থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ‘শারীরিক শিক্ষা’ বিষয় পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করা হলেও উচ্চ মাধ্যমিক তথা কলেজ পর্যায়ে বিষয়টি আজও অন্তর্ভুক্ত হয়নি। বিদ্যমান জনবল কাঠামো অনুসারে প্রতিটি সরকারি ও বেসরকারি কলেজে একটি করে শরীরচর্চা শিক্ষকের পদ রয়েছে। প্রায় সব কলেজে ‘শরীরচর্চা শিক্ষক’ হিসেবে একজন করে শিক্ষক কর্মরত থাকলেও তাদের পড়ানোর জন্য শারীরিক শিক্ষা বা এ জাতীয় কোনো বিষয় কিংবা পাঠ্যবই নেই। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, বর্তমানে দেশে সরকারি ও বেসরকারি মিলে প্রায় চার হাজার কলেজে একজন করে শরীরচর্চা শিক্ষক কর্মরত আছেন। তাদের পড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয় কিংবা বই নেই।

ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, জাপান, আমেরিকাসহ প্রায় সকল দেশে কলেজ পর্যায়ে শারীরিক শিক্ষা বিষয়টি পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। শিক্ষার্থীদের শারীরিক বিকাশের সঙ্গে মানসিক বিকাশও অপরিহার্য একটি বিষয়। এই উভয় রকমের বিকাশ সাধনের জন্য শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার পাশাপাশি শারীরিক শিক্ষা গ্রহণও একান্ত প্রয়োজন। শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশের জন্য কলেজ পর্যায়ে শারীরিক শিক্ষা চালু করা এখন সময়ের দাবি। শারীরিক শিক্ষার মূল কথা হলো- দেহ ও মনের সার্বিক উন্নতির লক্ষ্যে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সুষম উন্নয়ন, মানসিক বিকাশ সাধন, সামাজিক গুণাবলি অর্জন ও খেলাধুলার মাধ্যমে চিত্তবিনোদন। আজকের শিক্ষার্থীদের আগামী দিনের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য শারীরিক শিক্ষা একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই, কলেজ পর্যায়ে শারীরিক শিক্ষা বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া একান্ত জরুরি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়