প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০
আমরা তিনবন্ধু। যে কোন সম্পর্কে বন্ধুত্বটাই আসল। কারণ বন্ধুত্ব হয় স্বার্থহীন এক অপার্থিব চাওয়া পাওয়ার বিনিয়র প্রথার। এটা এতটাই একটা মূল্যবান সম্পর্ক যেখানে শুধু থাকে একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস, একে অপরের সুখ-দুঃখকে ভাগ করে নেয়ার প্রতিশ্রুতি। তাই বন্ধুত্বের কখনো বয়স বাড়ে না, বন্ধুত্বের কোন পদবি হয় না, বন্ধু তাই চিরনবীন।
Three Stooges এই নামে ডাকতেন আমাদের প্রিয় শিক্ষক কিউ.এম. হাসান শাহরিয়ার স্যার। যদিও আমরা সরাসরি স্যারের বিভাগের ছাত্র ছিলাম না, তবুও স্যার আমাদের অনেক স্নেহ, মায়া করতেন।
আমরা তিন বন্ধুর মধ্যে প্রথমে বলবো মাইনুল হাসান খান (রবি) সম্পর্কে। আমরা তাকে সবাই মাইনুল বলেই ডাকতাম। মাইনুলের বাবা ছোট বেলায় মারা যায়। মা-ই ছিল সব। ছাত্রজীবনে মাইনুল একটু বেশি পড়াশোনা করতো এটা আমাদের ধারণা ছিল। মাইনুল কলেজে না গিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে বাসায় পড়তো। তখন আমরা এইচএসসিতে পড়ি। আমাদের আরেক বন্ধু ছিল নিশাত মাহমুদ। আচ্ছা নিশাতের কথা যেহেতু আসলোই তার কথা একটু বলি, নিশাত কিন্তু বর্তমানে ৪০তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত (আলহামদুলিল্লাহ)। মাইনুল একদিন কলেজে অনুপস্থিত আমি আর নিশাত গেলাম মাইনুলকে দেখতে, গিয়ে দেখলাম মাইনুল বাসায় পড়ছে। আমাদেরকে দেখে সে অন্য রুমে গিয়ে ঘুমানোর ভান করে আছে (দুঃখিত বন্ধু)। মাইনুল পড়াশোনার ব্যাপারে অনেক সিরিয়াস ছিল। বর্তমানে সে একজন সফল ব্যাংকার। সে বর্তমানে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত।
আমার কথা যত কম বলা যায়। আমি পড়াশোনা শেষ করে বর্তমানে আইনজীবী হিসেবে নিজ জন্মস্থান ইলিশের শহর চাঁদপুরে প্র্যাকটিশ করছি।
তৃতীয় বন্ধু মোঃ আবুল বাশার সুমন সম্পর্কে বলি। বাশার অনেকটা এলাকার ভাই ধরনের। যৌথ ফ্যামিলির বড় ছেলে হবার দরুণ, পরিবারের মত বন্ধুদের ও খোঁজ-খবর রাখত। অনেকটা আমাদের বন্ধু মোঃ জহির উদ্দিনের মতো। জহির সম্পর্কে একটু বলি, সে হচ্ছে বর্তমান সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, চাঁদপুর জেলা শাখা। দায়িত্বশীল ব্যক্তিত্ব। বাশার খুব খেলাধুলা পছন্দ করতো। সারাক্ষণ ক্রিকেট, ফুটবল নিয়েই সময় কাটাতো। বাশার খেলাধুলা এবং পড়াশোনা উভয় দিকেই ভালো ছিল। সে বর্তমানে একজন সফল আইনজীবী হিসেবে চাঁদপুরে প্র্যাকটিস করছে।
আমরা অনার্স ( হিসাববিজ্ঞান) পড়াকালীন আমাদের মধ্যে অনেক মেধাবী মেয়ে বন্ধু ছিল। এর মধ্যে দুইজনের কথা অবশ্যই বলতে হয় একজন হচ্ছে আফরোজা এবং আরেকজন হচ্ছে নাবিলা বিনতে সিদ্দিক (সুমি)। অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয় আমাদের এই দুই বন্ধুর মধ্যে আফরোজা বিয়ে হয় তার এক ছেলে সন্তান আছে, সে তার সোনামানিক রেখে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে চলে গিয়েছে। আর নাবিলা বিনতে সিদ্দিক যাকে আমরা সুমি বলেই ডাকতাম, সেও অবিবাহিত অবস্থায় জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে ইন্তেকাল করে। আল্লাহ তাদের দুজনকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুক, আমিন।
বন্ধুত্বের রং কী? ঠিক জানা নেই। যদি হয় তবে তা হবে অনেক উজ্জ্বলতার। হয়তো সূর্যের প্রথম কিরণের রং। বন্ধু অবারিত অধিকারের হাতছানি। কখনো রাগ করেছি, কখনো রাগের কারণ হয়েছি কিন্তু সেটা আবার মিশে গেছে বন্ধুত্বের মায়াজালে। আমরা তিন বন্ধু একসাথে কলেজে বসতাম, কেউ একজন আগে আসলে বাকিদের জন্য জায়গা রেখে দিতাম। বন্ধুত্ব নিয়ে বিখ্যাত দার্শনিক এরিস্টটল বলেছেন, প্রত্যেক নতুন জিনিসকেই উৎকৃষ্ট মনে হয় , কিন্তু বন্ধুত্ব যতই পুরাতন হয় ততই উৎকৃষ্ট ও দৃঢ় হয়। সুন্দর ও প্রাণবন্ত কিছু সময় কেটেছে আমাদের। বিখ্যাত সিনেমা ‘থ্রি ইডিয়টস’ বা হুমায়ুন আহমেদের ‘তারা তিনজন’ সিরিজের মতো না হলেও আমাদের বন্ধুত্বটা ছিল আলোচিত।
বন্ধুত্ব কখনো মাপা যায় না।, নির্দিষ্ট সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করা যায় না। কর্মব্যস্ত জীবনে বন্ধুরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকলেও হৃদয় থেকে দূরে নয়। জীবনের এই পর্যায়ে এসে ওই আনন্দমুখর দিনগুলোর কথা খুব মনে পড়ে। আমি আজও সেই নস্টালজিয়ায় ভুগছি। স্মৃতি বেদনাঘন, বন্ধুত্ব আর সহযোগিতা বন্ধুত্বের হাতকে প্রসারিত করে আরা কখনো কখনো দূরত্বের ব্যাবধানে হতাশ করে। দিন আসে, দিন যায় কিন্তু পুরানো স্মৃতি, আনন্দণ্ডবেদনা মনের মণিকোঠায় ঘুরে-ফিরে আসে।
খোরশেদ আলম সোহাগ : আইনজীবী। শিক্ষাবর্ষ : ২০০৭-২০০৮, হিসাববিজ্ঞান, চাঁদপুর সরকারি কলেজ।