বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

পরীক্ষাভীতি দূর করার উপায়
অনলাইন ডেস্ক

এ বছর থেকে জেএসসি তথা অষ্টম শ্রেণির সমাপনী ও সমমানের পরীক্ষা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়েছে। জানুয়ারির মাঝামাঝিতে প্রধানমন্ত্রী এ পরীক্ষা বাতিলের সুপারিশে সম্মতি দেন। এর আগে বাতিল করা হয় পিইসি তথা পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা। গত তিন বছর করোনার কারণে এ দুটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হলেও পরীক্ষাগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধের দাবি ছিলো অনেক দিনের। অবশেষে সেই দাবি পূরণ হয়েছে। এ পর্যায়ে এসে পরীক্ষাগুলোর পোস্টমর্টেম জরুরি। একই সঙ্গে বন্ধ-পরবর্তী প্রভাব এবং ভবিষ্যৎ শিক্ষার ওপর এটি কতটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে, সেটিও আলোচনার দাবিদার।

বলে রাখা দরকার, প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষাটি ২০০৯ সালে হুট করে শুরু হয়েছিলো। কোনো ধরনের গবেষণা, প্রস্তুতি ও পর্যবেক্ষণ ছাড়াই এটি চালু হয়। এর পর চালু হয় অষ্টম শ্রেণি সমাপনী পরীক্ষা- জেএসসি। এ দুটি পরীক্ষা ২০১৯ সাল পর্যন্ত পাবলিক পরীক্ষা হিসেবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরীক্ষা দুটি চালুর দু-এক বছরের মধ্যেই এর নেতিবাচক দিকগুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। পিইসির কারণে প্রাথমিক পর্যায় থেকেই শিক্ষায় বাণিজ্যিকীকরণ ব্যাপকভাবে শুরু হয়। সচ্ছল পরিবারগুলো এক শিক্ষার্থীর জন্য একাধিক শিক্ষকও নিয়োগ করেছে। অথচ দরিদ্র পরিবারগুলো তা করতে পারেনি। এতে বৈষম্য সৃষ্টি হয়। অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী এমনকি অভিভাবকদের মধ্যেও। গাইড বই, কোচিং-নির্ভরতা তো আছেই; পাশাপাশি শিক্ষকদের দ্বারা পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে অনৈতিকভাবে শিক্ষার্থীদের ‘সহযোগিতার’ ঘটনাও ঘটেছে। জিপিএ-৫ তথা ভালো ফলের জন্যে প্রাথমিক থেকেই শিক্ষার্থীদের ওপর এক ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়। সেজন্যে এই পরীক্ষা দুটি বাদ দেয়ার দাবি ওঠে শিক্ষাচিন্তকসহ প্রায় সব মহল থেকেই। চিরস্থায়ীভাবে পরীক্ষা দুটি বন্ধ হওয়া তাই এক ধরনের স্বস্তির কারণ বটে। কিন্তু এ পরীক্ষার পক্ষাবলম্বনকারীও যে নেই, তা নয়। এমনকি অনেক শিক্ষকও মনে করেন, পিইসি-জেএসসি চালু রাখা উচিত। তাঁদের মতে, এসব পরীক্ষা থাকার কারণেই শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মনোযোগী হয়েছে। পরীক্ষাগুলো উঠিয়ে দেওয়ায় তারা আগের মতো গুরুত্ব সহকারে পড়বে না। এ থেকে বোঝা যায়, শিক্ষার্থীর অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতা মূল্যায়নের জন্য পরীক্ষা একমাত্র মাধ্যম না হলেও আমরা শুধু পরীক্ষার ওপর নির্ভর করে আছি। উন্নত বিশ্বে শিশুদের নির্দিষ্ট শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষাই নেই। সেখানে তাহলে কীভাবে তারা শিক্ষার্থীদের মেধা পরিমাপ করছে? মূল বিষয় হলো, দীর্ঘদিনের পরীক্ষানির্ভর শিক্ষা থেকে আমরা বের হতে পারছি না। বিকল্প পদ্ধতিগুলো যদি শিক্ষকরা যথাযথ বাস্তবায়ন করতে পারেন, তবে পরীক্ষা উঠিয়ে দেওয়াও অপ্রয়োজনীয় হবে না। অবশ্য শিশুদের বাইরে অন্য শ্রেণিতে তো পরীক্ষা থাকছেই। আর বুঝতে হবে, পরীক্ষা থাকা এবং পরীক্ষা-নির্ভরতা এক কথা নয়।

পিইসি-জেএসসির শুরুটা যাই হোক, এগুলো থাকতে পারতো যদি সেগুলোকে আমরা স্বাভাবিক পরীক্ষার মতো থাকতে দিতাম। স্বাভাবিক বার্ষিক পরীক্ষার মতো হলে হয়তো শিক্ষার্থীরা বেশি চাপের মধ্যে পড়তো না। কিন্তু দিনে দিনে শিশুদের এ দুটি পরীক্ষা নিয়ে ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এতো মাতামাতি এবং সংবাদমাধ্যমে এতো আলোচিত হয়েছে, তাতে পিইসি-জেএসসি পরীক্ষার চেয়েও হয়ে ওঠে প্রতিযোগিতা, সামাজিক সম্মান ও শিক্ষার্থীর ওপর অত্যাচারের উপলক্ষ। সেজন্যে পরীক্ষা দুটি বাদ দেয়া ছাড়া বিকল্প ছিলো না। তাছাড়া এ পরীক্ষাগুলোর ভিত্তিও ছিলো না। অর্থাৎ শিক্ষানীতিতে নেই এবং নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখায় স্বাভাবিকভাবেই ছিলো না। পরীক্ষাগুলো বাতিল করার সেটিও কারণ।

পিইসি ও জেএসসি বাতিল হলেও পরীক্ষানির্ভর শিক্ষা থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে তা কতটা ভূমিকা পালন করবে? এর এককথায় উত্তর হতে পারে- নতুন শিক্ষাক্রম ‘যথাযথ’ বাস্তবায়ন হলে আমরা এ থেকে বের হতে পারব। প্রশ্নটা আসলে এখানেই; শঙ্কাটা যথাযথ বাস্তবায়ন নিয়েই।

নতুন শিক্ষাক্রম এ বছর থেকে কয়েকটি শ্রেণিতে চালু হয়েছে। প্রাথমিকে প্রথম, দ্বিতীয় শ্রেণি এবং মাধ্যমিকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে চালু হয়েছে। তবে এ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের শুরু থেকে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বাস্তবায়নে সংকট যেমন রয়েছে, তেমনি কারও কারও বিরোধিতাও স্পষ্ট। ২৪ জানুয়ারি সমকালে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে রাশেদা কে চৌধুরী নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে তিনটি বিষয়ের কথা বলেছেন, শিক্ষকদের দক্ষতা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সার্বিক অবস্থা ও সক্ষমতা এবং মনিটরিং।

ইতোমধ্যে অভিযোগ উঠেছে, শিক্ষকদের নামকাওয়াস্তে প্রশিক্ষণ দিয়ে শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হচ্ছে। এভাবে বাস্তবায়ন হলে প্রশ্ন থেকেই যাবে। অন্য দুটি বিষয়েও ঘাটতি স্পষ্ট। বিশেষ করে প্রশাসনের দিক থেকে সমন্বয়হীনতা আমরা দেখছি। যেমন গত বছর পিইসি বাতিল হলেও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় হুট করে সেখানে বৃত্তি পরীক্ষা চালু করেছে। কীসের ভিত্তিতে তারা এমনটি করল? প্রাথমিকে বৃত্তি পরীক্ষা এভাবে চালু থাকা মানে যে-ই লাউ সেই কদু। কারণ বৃত্তি পরীক্ষা মানেই আবার সেই নোট, গাইড, কোচিংয়ের দৌরাত্ম্য। এভাবে হুটহাট সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন সংকটে পড়বে।

সব মিলিয়ে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা পরীক্ষা-নির্ভরতা থেকে এত সহজে বেরুতে পারবে বলে মনে হয় না। তবে এ লক্ষ্যে যে চেষ্টা চলছে, সেটি উল্লেখযোগ্য এবং ইতিবাচক। বলা বাহুল্য, আমরা চাই শিশুরা হেসেখেলে শিক্ষা গ্রহণ করুক। সেদিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা বাদ দেয়া হয়েছে। এর সঠিক বাস্তবায়ন প্রয়োজন এবং সেজন্যে আরও বেশি প্রয়োজন শিক্ষক প্রশিক্ষণ। শিশুবান্ধব শিক্ষক ও শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারলে শিশুদের মধ্যে পরীক্ষাভীতি দূর হবে। বিদ্যালয়ে আসার ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ততা তৈরি হবে। নতুন শিক্ষাক্রমের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন ও পিইসি-জেএসসির সমাপ্তির মাধ্যমে তেমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে- আমরা সেই প্রত্যাশা করি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়