মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ০২ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

স্মৃতিতে ড. মোহাম্মদ শাহ মিরান
অনলাইন ডেস্ক

যাদের ছায়া মাড়ালে গুণীজন হওয়ার বীজ অংকুরিত হয়। সহিষ্ণুতা, উদারতা, মানবিকতা, নানা গুণের সুঘ্রাণ পাওয়া যায়, তেমনি একটি নাম বন্ধুবর মোহাম্মদ শাহ মিরান। সেই শৈশব থেকেই তার সাথে মিশে আছে অনেক স্মৃতিচিহ্ন।

আমি এ বন্ধুবরের সাথে যতোই কথা বলি ততোই বিমোহিত হই। যার চিন্তা-চেতনায় নিজের স্বদেশ-স্বজাতির উন্নয়নের ভাবনা, সামাজিক অবক্ষয় রোধে সুক্ষ্মদর্শী মতামত, শিক্ষা ক্ষেত্রকে আলোকিত করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা, গ্রামে-গঞ্জে অপরিকল্পিত গৃহায়নের কুফল হিসেবে আবাদি জমির হ্রাসে খাদ্য সঙ্কট নিয়ে ভাবনা ইত্যাদি বিষয়ে গভীর পর্যবেক্ষণ। অর্থাৎ প্রতিটি কথার তাৎপর্য অনেক গভীরে। যা বাস্তবায়ন হলে জাতি উপকৃত হবে। এমন একজন মহৎ মানুষের সান্নিধ্য পেয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে ধন্য।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যার নাম মেধা তালিকায় প্রথম থাকতো। এর পরের নামটা আমার ছিলো। প্রাথমিকের পরে আমি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিচ্ছিন্ন হলেও তার সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা ছিলাম বন্ধুত্বের মাধ্যমে। এমন বীর কখনও অহংকারে পদদলিত করেননি আমার মতো অধমকে।

প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) পড়াশোনার সময় যখন অতিথি হিসেবে যেতাম, কি অসাধারণ আপ্যায়ন, অভ্যর্থনা! যা স্মৃতিতে অমলিন। আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সফরে মধুর ক্যান্টিন, টিএসসি, কলা ভবন, আইবিএ লাঞ্চ করা, হালিম খাওয়ার প্রথম অভিজ্ঞতা এ বীরের হাতে। তার সাহচর্যে জীবনে যে একবার এসেছে, মহানুভবতায় মুগ্ধ হয়ে ফিরেছে।

প্রাণখুলে দোয়া করার মতো বন্ধুবর মুহাম্মদ শাহ মিরানের শিক্ষাজীবনের সফলতা ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে অগ্রসর হতে থাকে। আমি এর বড় কারণ হিসেবে খুঁজে পাই তাঁর আদর্শ, উন্নত চরিত্র, ধর্মভীরুতা (আল্লাহর বিধান পালনে একনিষ্ঠতা), আর চরম অধ্যবসায়, সমাজের সর্বজনের দোয়া। ইউনিভার্সিটি লাইফে আমি যা দেখেছি, ইসলাম ধর্মের যাবতীয় বিধি-নিষেধের প্রতি অধিক যত্নবান ছিলেন। একজন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে ধর্মভীরুতার গুণ পরিলক্ষিত হয়। আর এ গুণ পারিবারিকভাবেই অর্জিত হয়। কারণ তাঁর মাতামহকে একজন পরহেজগার সূফী সাধক হিসেবেই দেখেছি। যাঁর কিছুটা নাতীর চরিত্রে প্রস্ফুটিত হয়েছে। অথচ ছাত্র বয়সে সাধারণত অনেকেই ধর্ম-কর্মের বিষয়ে গাফেল থাকে। তিনি ৮ম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তির মাধ্যমে বড় সফলতার বাহনে আরোহন করেছেন। এর ধারাবাহিকতায় ক্রমাগত সফল হয়েই এগিয়ে যাচ্ছিলেন। কোনো হিংসুকের হিংসা তাঁকে পেছনে টেনে নিতে পারেনি। তার কারণ আমি যা বুঝি, তা হলো মহান আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা তাঁকে অনেক উচ্চতর আসনে সমাসীন করেছেন। এক পর্যায়ে ঢাবিতে রসায়ন বিভাগের ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়েই শিক্ষাজীবনের ইতি টানেন। এ আদর্শ মানুষের কাছে এলে অনেক কিছু শিখতে পারি। যতো কাছে আসি ততোই ভালো লাগে।

বন্ধুত্বের পাশাপাশি তাঁর মিষ্টি আলাপন, তাত্ত্বিক ও পর্যবেক্ষণধর্মী কথাবার্তায় আমি চরম ভক্ত হয়ে পড়েছি। তাঁর সাহচর্যে থাকলে হতাশা, ক্লান্তি অনেকটা বিদুরিত হয়ে জীবনে সজীবতা ফিরে পাই। এমনকি দূর স্বপ্নের জাল বুনি, তিনি সুস্থভাবে বেঁচে থাকলে অনেক ভালো কিছু উপহার দিতে পারবেন। সমাজ ও জাতির কাছে একজন দার্শনিক হিসেবে নিজেকে অমরত্বের আসনে সমাসীন করতে পারবেন, ইনশাআল্লাহ। (এ আমার মনোবাসনা)।

কর্মজীবনের ভাবনা সবার মাঝেই থাকে। আমরা মৃত্যু পর্যন্তই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি। তিনি গতানুগতিক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার শেষ প্রান্তে এসে ২৬তম ইঈঝ শিক্ষায় কর্মজীবন শুরু করেন। অর্থ চিন্তা কার না থাকে? এমন আদর্শ বন্ধুর সান্নিধ্যে থেকে যা অনুভব করেছি, সঠিক পথে সম্মানজনক পেশায় অর্থোপার্জন করাই তাঁর সাধনা। তাই তো শিক্ষকতা নামক মহৎ পেশায় নিজেকে উজাড় করে দেন। প্রশাসনিক বড় বড় পদে যাওয়ার সুযোগ অবলীলায় বিসর্জন দেন। শিক্ষা ক্যাডারে বেশি দিন পড়ে থাকেননি, কারণ যাঁকে যেখানে শোভা পায়। মাত্র ১০ মাসের মাথায় (২/০৪/২০০৬ থেকে ২০/০১/২০০৭) প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের লেকচারার হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেন। এমন মহৎ বন্ধু আর পাবো কি না জানি না, যে শত ব্যস্ততার মাঝেও আমার বিপদে-আপদে সাড়া দিয়ে থাকেন। নাড়ীর টানে বাড়ি আসলে এ অধমকে ডেকে কাছে নেয়। কিছু মূল্যবান সময় বন্ধুত্যের জন্যে উৎসর্গ করে। সময়ের ভারসাম্য বজায় রেখে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী, সামাজিক কর্মকাণ্ডে মূল্যবান সময় দিয়ে থাকেন। মোট কথা, জীবনের সর্বক্ষেত্রে ইনসাফ বজায় রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেন বলে আমার ধারণা।

শিক্ষিত মহল নিশ্চয়ই জানেন, একজন প্রফেসর হতে কত কাঠ-খড় পুড়িয়ে, কত দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে এ খেতাব অর্জিত হয়। আমার এ বন্ধুর প্রফেসর হওয়ার গল্প বলতে গর্বে বুক স্ফীত হয়ে যায়। কারণ তিনি এমন এক বিস্ময়কর ব্যক্তি, যিনি মাত্র ১৩ বছর ১ মাস ৪ দিনের মাথায় (২১/০১/২০০৭-২৫/০২/২০২০) প্রফেসর হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। যে কথা বলা প্রয়োজন, ঢাবিতে যোগদানের পরে Ph.D পড়ার জন্যে জাপান পাড়ি দেন। ২০১৩ সালে Yokohama National University থেকে সফলতার সাথে Ph.D ডিগ্রি অর্জন করেন।

প্রিয় পাঠক-পাঠিকার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি, গুগুলে Muhammed Shah Miran লিখে সার্চ দিলেই পুরো প্রোফাইল দেখার সুযোগ পাবেন।

এখানে সংক্ষেপে শিক্ষকতার ধারাবাহিকতা তুলে ধরার প্রয়াস পাচ্ছি-

* Lecturer : ২৬তম বিসিএস। সিলেট, মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ। (২/০৪/২০০৬ থেকে ২০/০১/২০০৭)।

* Lecturer : University of Dhaka. (২১/০১/২০০৭ থেকে ২০/১২/২০১১)।

* Ph.d.-Yokohama National University. Japan. (২০১৩).

* Assistant Professor : University of Dhaka. (২১-১২-২০১১ থেকে ২৯-০৯-২০১৪)।

* Associate Professor : University of Dhaka. (৩০-০৯-২০১৪ থেকে ২৪-০২-২০২০).

* Professor : University of Dhaka. (২৫-০২-২০২০ থেকে চলমান।)

আমি তাঁকে নিয়ে যতোই গবেষণা করি, তাঁর সর্বক্ষেত্রে সাফল্য দেখে ততোই বিমোহিত হই।

সম্প্রতি আমার এ বন্ধু খোশ-গল্প করার সময় নতুন নতুন ম্যাসেজ দেন, তাঁর উপর বিভিন্ন দায়িত্ব অর্পিত হয়। এখানে সংক্ষিপ্তভাবে কিছু উল্লেখ করছি-

যুগের চাহিদা এবং গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিকতা বিবেচনায় নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম বিষয়ে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী সুপারিশ ও পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্যে ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ ১১ জনের মধ্যে ‘ড. মোহাম্মদ শাহ মিরান’ অন্যতম।

চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় সমস্যা ও সমাধানে মাননীয় সংসদ সদস্যকে পরামর্শ ও সুপারিশ প্রদানের লক্ষ্যে পরামর্শকের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।

এছাড়া ঢাবির ‘বিজয় ৭১’ হলের ‘হাউজ টিউটর’, রসায়ন বিভাগের রিসার্চ সুপারভিশনসহ বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন।

তিনি হাজীগঞ্জ উপজেলার ডাটরা আদর্শ ছাত্রকল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। যে সংস্থা আমিসহ একঝাঁক বন্ধুকে ডেকে পরামর্শ করে ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন। তিল তিল করে গড়ে তোলা এ সংস্থাটি আজ বিশাল মহীরুহ আকার ধারণ করেছে। প্রতি বছর এ সংস্থা নতুন নতুন গুণীজনের পদচারণায় মুখরিত হয়। আর এ সংস্থার একমাত্র স্বপ্নদ্রষ্টা Professor Dr. Muhammed Shah Miran. ‘ডাটরা আদর্শ ছাত্রকল্যাণ সংস্থা’ যেনো এক দর্পণ, যাতে ডাটরা শিবপুর গ্রামের শিক্ষা-সংস্কৃতির মুখোচ্ছবি প্রস্ফুটিত হয়। যিনি আজ পর্যন্ত শত ব্যস্ততার মাঝেও এ সংস্থার পাশে ছায়ার মতো আছেন। এখন প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে এগিয়ে নিচ্ছেন।

নাতিদীর্ঘ আলোচনা-পর্যালোচনার বেলাভূমিতে এসে যে অনুভূতি জাগ্রত হয়, আদর্শ মানুষের সান্নিধ্যে থাকার পিপাসা আমার দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। এ বাল্যবন্ধু, পাঠের দোসর আমার ব্যক্তিজীবনের বিভিন্ন দিকনির্দেশনাও দিতে কার্পণ্যবোধ করেন না। অর্থচিন্তার লোভে বিদেশ পাড়ি দিতেও নারাজ। কারণ দেশ ও জাতির হিতসাধন করার মহৎ উদ্দেশ্যেই ব্রত হন তিনি। দেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্তের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে তাঁর চরিত্রে। আমরা জানি যে, আমাদের দেশের মেধাবীদেরকে লোভনীয় অফার দিয়ে কিনে নিয়ে যায় বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলো। অনেক মেধাবীই যথাযথ মূল্যায়নের অভাবে বিদেশে চলে যান। তাই দেশ ও জাতির নিকট আমার আবেদন থাকবে যে, আমরা যেনো এমন গুণীজনের যথাযথ মর্যাদা দিতে পারি। তবেই তো আমাদের দেশে এমন অসংখ্য গুণীজনের সমারোহ ঘটবে। দেশ সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলায় রূপান্তরিত হবে। আর এ কথাও স্মরণ রাখা জরুরি, যে জাতি গুণীজনের কদর করতে জানে না সে জাতি কখনো উন্নত হতে পারবে না। আমি আশাবাদী ড. মোহাম্মদ শাহ মিরান সাহেব উত্তরোত্তর দেশের কল্যাণে কাজ করে অমর হয়ে থাকবেন, ইনশাআল্লাহ।

মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম : প্রভাষক, বাংলা, বিঘা আহমদিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা, রামগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়