শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২১, ০০:০০

শতবর্ষী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির হাজারো শিক্ষার্থী দেশের উন্নয়নে অবদান রাখছেন
অনলাইন ডেস্ক

ডাঃ হারুন অর রশিদ (সাগর)। তিনি চান্দ্রা ইমাম আলী স্কুল এন্ড কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সম্প্রতি চাঁদপুর কণ্ঠের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। বলেছেন নিজের স্বপ্ন, চিন্তা-ভাবনা ও পরিকল্পনা সম্পর্কে। সাক্ষাৎকারটি আজ প্রকাশিত হলো।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চান্দ্রা ইমাম আলী স্কুল এন্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে বলুন।

ডাঃ হারুন অর রশিদ (সাগর) : এখন থেকে ১শ’ বছরেরও পূর্বের কথা। তখন চান্দ্রা বাজারের ১০ মাইল ব্যাসার্ধের মধ্যে কোনো প্রাইমারি স্কুলও ছিলো না। স্থানীয় লোকজন লেখাপড়ার মর্যাদা তেমন একটা বুঝতেন না। তখন লেখাপড়ার কোনো সুযোগ ছিলো না। ১৮৮২ সালে সকদীরামপুর গ্রামের শিক্ষানুরাগী আদিনাথ রায় চৌধুরী তাঁর বাড়ির বৈঠকখানায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন। সেই থেকে শুরু। ১৯০২ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়টি আদিনাথ বাবু তার বাড়ি থেকে চান্দ্রা বাজারের কয়েকশ’ গজ উত্তরে ডাকাতিয়া নদীর তীরে স্থানান্তরিত করেন এবং মধ্য ইংরেজি স্কুলে উন্নীত করেন। মধ্য ইংরেজি স্কুলে চান্দ্রার মতো একটি জনবহুল এলাকায় স্কুলগামী ছেলেদের বিদ্যাশিক্ষার চাহিদা পূরণ করতে না পারায় স্থানীয় গণ্যমান্য শিক্ষানুরাগী লোকজন মধ্য ইংরেজি স্কুল থেকে উচ্চ ইংরেজি স্কুলে উন্নীত করার বিশেষভাবে চিন্তা করতে লাগলেন। এর মধ্যে ইমাম আলী পাটোয়ারী, করিম বক্স পাটোয়ারী, হামিদ আলী মিজি, গোবিন্দ চন্দ্র সাহা, শশীভূষণ রায় চৌধুরী ও কৃষ্ণ কুমার শর্মা আলী বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ফলে স্থানীয় লোকদের সক্রিয় সাহায্য ও সহযোগিতায় মধ্য ইংরেজি স্কুলটিও ১৯১৮ সালে উচ্চ ইংরেজি স্কুলে উন্নীত হয়। ১৯২৩ সালে বিশিষ্ট জমিদার করিম বক্স পাটোয়ারী দুই বিঘা জমি রেজিস্ট্রি দলিলের মাধ্যমে বিদ্যালয়কে দান করেন। ১৯৬৪ ও ১৯৬৫ সালে বিদ্যালয়টি যথাক্রমে বাণিজ্য ও বিজ্ঞান বিভাগ খোলার জন্যে কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদন লাভ করে। এরপর ১৯৭৮ সালে বিদ্যালয় কৃষি বিভাগ খোলা হয়। ১৯৬৫ সালে বিদ্যালয়ের নতুন দালান তৈরি পুরাতন দালান মেরামত বিজ্ঞানাগারের জন্যে আসবাবপত্র তৈরি ও যন্ত্রপাতি খরিদ ইত্যাদি কাজের জন্যে ৮২ হাজার টাকা সরকারি মঞ্জুরি লাভ করেছিলো। ১৯৭২ সালে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে একটি শহীদ মিনার তৈরি করা হয়। স্মরণীয় এবং অভূতপূর্ব মুহূর্তের জন্ম দিয়ে বিদ্যালয়টি কলেজ শাখায় পরিণত হয় ১৯৯৪ সালে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : এক দশক পূর্বের এবং বর্তমান সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির কেমন পরিবর্তন হয়েছে।

ডাঃ হারুন অর রশিদ (সাগর) : গত এক দশকে স্কুল ও কলেজ শাখার জন্যে আলাদা সদৃশ্য বহুতল ভবন স্কুল শাখার পুরাতন ভবনের জায়গায় নতুন ভবন স্থাপন স্কুলকে নবরূপ দিয়েছে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

ডাঃ হারুন অর রশিদ (সাগর) : স্কুলটির সবচাইতে বড় সমস্যা ক্লাসরুম, শিক্ষক মিলনায়তনসহ একোমোডেশানের যে সমস্যা লাঘব হয়েছে আগামীদিনে এই স্কুলের শিক্ষার মানোন্নয়নের মাধ্যমে এবং আধুনিকায়নের মাধ্যমে দেশের প্রথম শ্রেণির স্কুলে পরিণত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : প্রতিষ্ঠানে পাঠদান করতে গিয়ে কী কী প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন শিক্ষকরা?

ডাঃ হারুন অর রশিদ (সাগর) : গত বেশ কয়েক বছর ধরে ছাত্র-ছাত্রীদের তুলনায় ক্লাসরুমের অপ্রতুলতাসহ বিভিন্ন সমস্যা ছিলো, যা এরই মধ্যে সমাধানের পর্যায়ে রয়েছে। আশা করছি, করোনাকালীন জটিলতা কাটিয়ে স্কুল খুলতে খুলতে এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার শিক্ষাজীবনের স্মৃতির কথা জানতে চাই।

ডাঃ হারুন অর রশিদ (সাগর) : আমার গ্রামের খুব কাছেই হওয়ায় স্কুলটি আমার শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত। স্কুলের সহপাঠী ও প্রিয় শিক্ষকবৃন্দের সাথে স্কুলজীবনের সেই সোনালি স্মৃতি কখনো ভোলার নয়।

চাঁদপুর কণ্ঠ : শিক্ষামন্ত্রী আমাদের চাঁদপুরের মানুষ। সার্বিকভাবে তাঁর কাজটাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

ডাঃ হারুন অর রশিদ (সাগর) : আমাদের সৌভাগ্য যে জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের শ্রদ্ধেয় ডাঃ দীপু মনি আপাকে শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছেন। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই তিনি তাঁর যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারি করোনাভাইরাসসহ সামগ্রিক প্রতিকূলতার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন। তাঁর দক্ষ পরিচালনা বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা বর্তমানের এই প্রতিকূলতা কাটিয়ে আগামীদিনে ভালো অবস্থানে যেতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।

ডাঃ হারুন অর রশিদ (সাগর) : চান্দ্রা ইমাম উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার ক্ষেত্রে রয়েছে ঐতিহাসিক পটভূমি। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সেক্টরে স্বীয় যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে শতবর্ষ পেরিয়ে আসা এই প্রতিষ্ঠানের হাজারো শিক্ষার্থী দেশের উন্নয়নে প্রতিনিয়ত অবদান রেখে চলেছেন। এখানকার বর্তমান শিক্ষার্থীরা আগের চাইতে অনেক বেশি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। সেসবকে কাজে লাগিয়ে অতীতের সফল ব্যক্তিদের অনুসরণ করে তারা সফলকাম হতে পারে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : অবসরে কী করেন?

ডাঃ হারুন অর রশিদ (সাগর) : আমি একজন চিকিৎসক পাশাপাশি রাজনীতি করি। একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমার সাধারণ মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতেই বেশি ভালো লাগে। পাশাপাশি ঘুরতে পছন্দ করি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে আপনি কতদিন দায়িত্ব পালন করছেন?

ডাঃ হারুন অর রশিদ (সাগর) : আমি ২০০৯ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত এই প্রিয় বিদ্যাপীঠের সভাপতির দায়িত্বে ছিলাম। এরপর ২০২০-এর মার্চ থেকে বর্তমানে সভাপতির দায়িত্বে রয়েছি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার সময়কালে বিশেষ একটি সাফল্যের কথা জানতে চাই।

ডাঃ হারুন অর রশিদ (সাগর) : এ বিদ্যাপীঠের সফল ব্যক্তিবর্গের সাথে সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে কলেজ শাখার প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখা থেকে শুরু করে পরবর্তীতে স্বনামধন্য শিক্ষক অধ্যক্ষ মুজিবর রহমান স্যারের আড়ম্বরপূর্ণ বিদায় সংবর্ধনা, সভাপতি থাকাকালে বিভিন্ন কার্যক্রমের পাশাপাশি আমার স্বপ্ন ছিলো প্রতিষ্ঠানের সফল প্রাক্তন ছাত্রদেরকে একটি সংবর্ধনা দেয়ার। যার মধ্যে রয়েছে সেক্টর কমান্ডার, সাব সেক্টর কমান্ডার, মুক্তিযোদ্ধা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ব্যবসায়ী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সংগঠক, শিক্ষক ও সমাজসেবক। ২০২০ সালের ২৭ মার্চ আমি এই প্রোগ্রামটি সফলতার সাথে করতে পেরে নিজের স্বপ্নের এই জায়গাটিকে সমৃদ্ধ করতে পেরেছি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : ব্যর্থতার কথা জানতে চাই।

ডাঃ হারুন অর রশিদ (সাগর) : অনেক উন্নয়ন ও পরিবর্তন হলেও শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন ও আধুনিকায়নের বিষয়ে আমরা এখনো পিছিয়ে রয়েছি। আগামীদিনে এই বিষয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে আমূল পরিবর্তন হবে। বিশেষত শিক্ষার মানোন্নয়ন ও আধুনিকায়নের উদ্যোগ গ্রহণের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে রয়েছে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।

ডাঃ হারুন অর রশিদ (সাগর) : চাঁদপুর কণ্ঠকেও ধন্যবাদ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়