প্রকাশ : ২২ জুন ২০২৩, ০০:০০
পিতৃ-মাতৃহীন শিশু এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে পিতৃহীন গরীব অসহায় শিশুদের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে বা শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে নির্ভরযোগ্য ঠিকানা সরকারি শিশু পরিবার। এক সময় এটাকে বলা হতো সরকারি এতিমখানা। আধুনিক যুগে বলা হয়ে থাকে সরকারি শিশু পরিবার।
চাঁদপুর শহরের পূর্বাংশে পুলিশ লাইনের পাশে স্থাপিত সরকারি শিশু পরিবারে এক সময় ছেলে এবং মেয়ে উভয়কেই রাখা হতো। কালের পরিক্রমায় বর্তমানে চাঁদপুর শিশু পরিবারে শুধু মেয়ে শিশুদের রাখা হয়। এদেরকে আগামীর যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার নানামুখী ভালো উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সরকারের গৃহীত বেশ ক’টি ভালো উদ্যোগের অন্যতম হচ্ছে পড়ালেখার পাশাপাশি আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে তাদের সকল ক্ষেত্রে যোগ্য করে গড়ে তুলতে সাস্কৃতিক কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট রাখা। বেশ ক’বছর পূর্বেই শুরু হয়েছে এই কার্যক্রম।
চাঁদপুর পৌর এলাকার ১৪নং ওয়ার্ডের বাবুরহাট নামক স্থানে অবস্থিত এই শিশু পরিবারের ৪০ জন শিশুকে প্রতি সপ্তাহের ২ দিন নির্ধারিত সময়ে নৃত্য প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। জেলা শিল্পকলা একাডেমীর একজন নৃত্য প্রশিক্ষক সপ্তাহের ২ দিন প্রায় ২ ঘন্টা করে এই নৃত্য প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছেন। শুধু তাই নয়, নৃত্য প্রশিক্ষণের জন্যে প্রতিটি শিশুর যা কিছু উপকরণের প্রয়োজন হয়, সকল কিছুর যোগান নিশ্চিত করছে সরকার।
নৃত্য প্রশিক্ষণের বিষয়ে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর নৃত্য প্রশিক্ষক সোমা দত্তের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী আমি শিশু পরিবারে শিশুদের নৃত্য প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছি। সরকারের পক্ষ থেকে এদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে সকল ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি সকল উপকরণের ব্যবস্থাও রয়েছে। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, শিশু পরিবারের শিশুরা অত্যন্ত মেধাবী। তারা ইতিমধ্যে চাঁদপুরের সংস্কৃতি অঙ্গনে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে।
এই শিশু পরিবারে শিশুদের লেখাপড়ার পাশাপাশি ক্রীড়া ও সংস্কৃতি চর্চায় সমান গুরুত্ব দেয়া হয়। প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে শিশুদের মেধা ও মননের বিকাশ ঘটানোর চেষ্টা সরকার অব্যাহত রেখে চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, শিশুরা পড়াশোনার পাশাপাশি ক্রীড়া ও সংস্কৃতি চর্চায় যুক্ত থাকলে তাদের মন থেকে আজেবাজে চিন্তা দূর হবে। এখানে শিশুদের সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি খেলাধুলায় ব্যস্ত রাখতে নিয়মিত ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, কেরামবোর্ড, দাবা ইত্যাদির অনুশীলন হয়ে থাকে। এই শিশু পরিবারের শিশুদের শুধু নৃত্য আর সংগীত নয়, নিয়মিত আবৃত্তিও শেখানো হচ্ছে। এ সকল প্রশিক্ষণের জন্যে সরকারিভাবে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে খণ্ডকালীন প্রশিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
প্রতি বছর সরকারি শিশু পরিবার, চাঁদপুরে অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্যায়ে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার বিভিন্ন ইভেন্টে শিশুরা অংশগ্রহণ করে পুরস্কার অর্জন করে থাকে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসন, চাঁদপুর-এর আয়োজনে বিভিন্ন জাতীয় দিবস, অনুষ্ঠান, মেলাসহ বিভিন্ন খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক ইভেন্টে অংশগ্রহণ করে পুরস্কার পেয়ে থাকে।
চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার বালিকা শিশুদের ফুটবল টিমে সরকারি শিশু পরিবারের ৯ জন শিশু নিয়মিত অংশ নিচ্ছে। জাতীয় শিশু দিবস, নববর্ষ, দুটি ঈদ, পিঠা উৎসব, ফল উৎসব, আচার উৎসব এই সরকারি শিশু পরিবারের শিশুরা আড়ম্বরপূর্ণভাবে পালন করে থাকে।