প্রকাশ : ২৬ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০
আমি একটি মৌচাকের প্রধান। সবাই যাকে রাণী মৌমাছি বলে জানে। আমার জীবনের দুঃখ-কষ্ট সবই আমার কর্মী মৌমাছিদের নিয়ে। ওদের সাথে সারাদিন মেতে থেকে, আহার সেরে রাতে নাচ-গানের আয়োজনের মাধ্যমে কিংবা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আমার দিনকাল ভালোই চলে। ওরা অন্য মৌচাকের কর্মীদের সামনে আমার নামে অনেক প্রশংসা করে। আমার মতো এমন লক্ষ্মী দায়িত্ববান রাণী নাকি ওরা দ্বিতীয়টি পায়নি। আমারও এ নিয়ে অনেক গর্ব হয়। কিসমত সাহেবের বড় বাগানটাতে যতোগুলো গাছে মৌচাক আছে, তার মধ্যে আমাদের মৌচাকটাই সবচেয়ে বড় এবং সেরা। কর্মীরা ওদের বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানে আমাকে প্রধান অতিথির মর্যাদা দেয়। রাণী হওয়ার সুবাদে অনেক জায়গায় দাওয়াতও পাই। এইতো গেলো সপ্তাহে কুক্কুরীর বিয়ে হলো বতুলের সাথে। কন্যা সম্প্রদানের সময় কুক্কুরীর বাবা কি যে একটা কাণ্ড ঘটিয়ে ফেললো আমি না গেলে হয়তো তার সমাধানই হতো না। বতুলের বাবার সাথে কুক্কুরীর বাবা ঝগড়া লাগিয়ে দিয়েছে। কারণ হলো বতুলের বাবা আধ মৌচাক মধু যৌতুক চেয়েছে। এতোগুলো মধু দেয়া কি আর মুখের কথা!
একটা মৌচাক বানাতে আমাদের অনেকদিন লেগে যায়। তাণ্ডও আবার আমরা একা বানাই না, অনেকগুলো মৌমাছির সমন্বয়ে একটা মৌচাক হয়। সেটা যে কতো কষ্টের ফল তা বতুলের বাবা ভালোভাবেই জানে। তবুও কেন এতো বড় চাহিদা জিজ্ঞেস করায় বতুলের বাবা বলে আমরা নাকি বাগানের সেরা মৌমাছি ওদের সবার তুলনায়। সবার চাইতে আমাদের মৌচাক তাড়াতাড়ি তৈরি হয়।
আধ মৌচাক যৌতুক দেয়া যে আমাদের জন্য কোনো ব্যাপারই না তা ভালোভাবে আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেয় বতুলের বাবা। আমি আর উপায়ান্তর না দেখে ঘোষণা দিলাম যে সবাই কুক্কুরীর বাবাকে যথাসাধ্য মধু দিয়ে সাহায্য করবে। সবাই সম্মতিও জানালো। কারণ কুক্কুরীর বাবার একার পক্ষে এতোগুলো মধু দেয়া যে সম্ভব নয় সেটা সবাই জানে। শেষমেশ অনেক কষ্টে বিষয়টা সমাধান করলাম। কুক্কুরী কাঁদতে কাঁদতে আমাদের রাজ্য থেকে বিদায় নিলো। বতুল ওকে পিঠে চাপিয়ে উড়তে উড়তে ওদের মৌচাকরাজ্যে নিয়ে গেলো।
এ রকম বহু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব আমাকে পালন করতে হয়। আমার সহকর্মীরাও আমাকে সব কাজে সহযোগিতা করে। কিন্তু এতো সুখের মাঝেও আমাদের জীবন আসলে অনেক দুঃখময়। এর অনেক কারণ আছে। যেমন মধু সংগ্রহে ফুলের কাছে গেলে প্রজাপতি আমাদের তাড়া করে। আবার কিছু কিছু পতঙ্গভুক ফুল আছে যেগুলোতে মধু সংগ্রহে গেলে ওরা বিষাক্ত আঠা দিয়ে আমাদের মেরে ফেলতে চেষ্টা করে। কিছু কিছু ফুল আছে আমরা তাদের ওপর গিয়ে বসতেই ওরা ঢাকনা ঢেকে আমাদের বন্দী করে ফেলে। এভাবে আমার মৌচাকের অনেক কর্মী মৌমাছি প্রাণ হারিয়েছে। আবার আমরা কোনো বাগানেই বেশিদিন টিকতে পারি না। আমাদের কষ্ট করে জমানো মধু মানুষ কেড়ে নেয়।
অন্যান্য মৌচাকের তুলনায় আমাদেরটা একটু বেশি বড় দেখে কারণ আমরা পাহাড়ি মৌচাক সুতরাং সবার নজর এখানেই পড়ে। মুখে গামছা পেঁচিয়ে ধোঁয়া দিয়ে বদমাশ মানুষগুলো আমাদের তাড়িয়ে সব মধুর চাক কেটে নিয়ে যায়। আমরা ধোঁয়াতে কিছু দেখতেও পাই না তাই কিছু করারও থাকে না। দেখতে পেলে যে মানুষগুলোর বারোটা বাজিয়ে দিতাম সবাই মিলে হুল ফুটিয়ে, তাতে কোনো সন্দেহ ছিলো না।