প্রকাশ : ০২ জুলাই ২০২১, ০০:০০
গৃহকর্মী বলতে আমরা বুঝি, যিনি পারিশ্রমিকের বিনিময়ে অন্যের বাসায় গৃহকর্ম সম্পাদন করেন। তেমনি একজন গৃহকর্মী হলেন হালিমা বেগম। এক মেয়ে নিয়ে তার সংসার। স্বামী মারা গেছে ১ বছর হয়ে এলো। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকেই বাপের বাড়ি ও শ^শুর বাড়ি কোনোটাতেই ঠাঁই মিলেনি হালিমা বেগম আর তার মেয়ে রিনার। তখন থেকেই হালিমা বেগম গৃহকর্মের কাজ শুরু করেন।
শহরের বড় ব্যবসায়ী আসিফ চৌধুরীর বাসায় কাজ করতো হালিমা বেগম। আসিফ সাহেবের স্ত্রী হালিমাকে অনেক অত্যাচার করতো। তাকে প্রায় প্রতিদিনই মারধর করতো। চর-থাপ্পর, গরম ফুটানো পানি দিয়ে হাত পুড়িয়ে দেয়া এগুলো রোজই চলতে থাকতো। আসিফ সাহেবের স্ত্রী মনে করতো সঠিকভাবে কাজ করাতে হলে মারতেই হবে, গৃহকর্তী হিসেবে তাকে মারধর করার অধিকার আমার আছে।
এমতাবস্থায় একদিন হালিমা বেগম অসুস্থ হয়ে পড়ে। মালিকের সাথে তার চুক্তি ছিলো একদিনও ছুটি নিতে পারবেনা। ছুটি নিলে এক হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। যেখানে হালিমা বেগমের নুন আনতে পান্তা ফুরায় সেখানে সে এক হাজার টাকা জরিমানা কিভাবে দিবে। তাই সে নিজের যায়গায় তার মেয়ে রিনাকে পাঠায় কাজ করার জন্য। রিনার ওপরেও সেই একই ধরনের অত্যাচার হতে থাকে। একটা সময় রিনা এসব সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করে। নিজের মেয়ের জন্য হালিমা বেগমের কান্নার শেষ থাকে না। তিনি রিনার মৃত্যুর জন্য তার মালিককে দায়ী করেন এবং নিজের মেয়ের মৃত্যুর বিচার দাবি করেন। প্রতিপক্ষ শক্তিশালী হওয়ায় কোথাও বিচার মিলেনি তার। আমরা সবাই জানি এ পৃথিবীতে অসহায়রা কখনো বিচার পায়না। আর বিচার না পেয়ে হালিমা বেগম মেয়ের শোকে গলায় ফাঁসি দিয়ে মারা যায়।
আমাদের সমাজে এরকম অনেক হালিমা বেগমের সাথেই ঘটে যায় এমন নির্মম সব ঘটনা। যা আমাদের দৃষ্টির বাহিরেই থেকে যায়। আমাদের সমাজের তথাকথিত উচ্চ বিত্ত মানুষেরা হালিমা বেগমের মতো গৃহকর্মীদের মানুষ বলে গন্য করতেই নারাজ। গৃহকর্মী নির্যাতন এমন একটি অপরাধ যার বিচারের ঘটনা খুবই নগন্য। বিচারহীনতার সাথে অন্য একটি বিষয়ের জন্যেও গৃহকর্মীরা অত্যাচারিত হয় তা হলো দুর্বল টার্গেট। বাংলায় একটি প্রবাদ আছে ‘শক্তের ভক্ত, নরমের জম।’ গৃহকর্মীরা প্রতিপক্ষ হিসেবে খুবই নরম। তারা নির্যাতনকারীকে প্রতিহত করার কোনোরকম সামর্থ্য থাকেনা বলেই তাদের নির্দিধায় শারিরীক ও মানষিক অত্যাচার করা হয়।
আমাদের উচিৎ অত্যাচারিত গৃহকর্মীর পাশে দাঁড়ানো। তাদেরকে নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে সাহায্য করা। প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া। তবেই তাদের কষ্ট কিছুটা লাঘব করা যেতে পারে। আর হয়তো কোনো হালিমাকে পরিবারসহ জীবন দিতে হবেনা।