শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪  |   ৩০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা গণফোরামের কর্মী সমাবেশ
  •   নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিনে ফরিদগঞ্জে অবাধে ইলিশ বিক্রি
  •   পিকনিকে যাওয়া শিক্ষার্থীর মরদেহ মেঘনায় ভেসে উঠলো দুদিন পর
  •   নেতা-কর্মীদের চাঁদাবাজি না করার শপথ করিয়েছেন এমএ হান্নান
  •   বিকেলে ইলিশ জব্দ ও জরিমানা

প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

জীবনকে সফল করে পরিশ্রম

সুমাইয়া শিমু
জীবনকে সফল করে পরিশ্রম

ইসলাম সব সময় ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা দেয়। অসহায় অসচ্ছল মানুষের সেবায় এগিয়ে আসা ইসলামে অন্যতম ইবাদত। আল্লাহ যাকে অর্থ-সম্পদ দিয়েছেন তিনি সে সম্পদ থেকে অভাবী মানুষকে সাহায্য করলে তাতে আল্লাহতায়ালা খুশি হন।

এ ধরনের মানবিক কর্তব্য পালন রাত জেগে অবিরাম নফল নামাজ আদায় ও অবিরত নফল রোজার সমতুল্য।

মুমিন মাত্রই একে অন্যের ভাই। এক মুমিন অপর মুমিনের মধ্যে এমন ভালোবাসা ও আন্তরিকতা থাকবে যে, পরস্পর একটি দেহের মতো মনে হবে। একজনের ক্ষতি আরেকজনকে ততটাই আহত করবে, মাথায় আঘাত পেলে যেমন সারা শরীর আহত হয়। ঠিক সেরকম ভাবেই বিপদগ্রস্ত ও অভাবের সময় একে অন্যের প্রতি আন্তরিকভাবে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করবে।

কোনো ভাই অসুস্থ বা আহত হলে কিংবা কোনো ক্ষতি বা বিপদের সম্মুখীন হলে অপর ভাই তার সাহায্যে এগিয়ে আসবে। কারণ দুনিয়ায় কোনো মানুষের পক্ষে একাকী বাস করা সম্ভব নয়। বিভিন্ন প্রয়োজনে একে অপরের সাহায্য ছাড়া মানুষ চলতে পারে না।

এ ছাড়া বিপদসংকুল পরিস্থিতিতে অন্যের সাহায্যের প্রয়োজন পড়ে। কেননা, কোনো মানুষ যখন কোনো বিপদের সম্মুখীন হয়, সে তখন সবচেয়ে বেশি অসহায়ত্ব অনুভব করে। ওই সময় সে আন্তরিকভাবে অন্যের সাহায্য প্রত্যাশা করে।

আল্লাহতায়ালা কোরআনুল কারিমে এরশাদ করেন, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই।’ (সূরা হুজরাত, আয়াত : ১০)

মহানবী (সাঃ) আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়ায় অপরের একটি প্রয়োজন মিটিয়ে দেবে, পরকালে আল্লাহ তার ১০০ প্রয়োজন পূরণ করে দেবেন এবং বান্দার দুঃখ-দুর্দশায় কেউ সহযোগিতার হাত বাড়ালে আল্লাহ তার প্রতি করুণার দৃষ্টি দেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৫৬৬)।

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। সমাজে সেই মানুষেরই একটা অংশ গরীব-দুস্থ। তারা আমাদের সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। গরীব-দুস্থসহ সমাজের আশ্রয়হীন, দুর্বল ও অসহায় মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করা ইসলামে অন্যতম ইবাদত। অসচ্ছল, বিপদগ্রস্ত এবং অভাবী মানুষের সাহায্যে কেউ এগিয়ে এলে আল্লাহ খুব খুশি হন।

তাই গরীব-অসহায়ের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা প্রদর্শন ও সহানুভূতিশীল হওয়া অত্যাবশ্যক। ভ্রাতৃত্বের নৈতিক ও মৌলিক দাবি হল, একে অপরকে সাহায্য-সহযোগিতা করা এবং বিপদাপদে পাশে দাঁড়ানো। সহায়তা ও সহমর্মিতার হাত প্রসারিত করা। আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দান করুন

আরব দেশের মক্কা শহর। ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল সেই শহরে জন্ম নেয় এক শিশু। তাঁর নাম রাখা হয় মুহাম্মদ—মানে প্রশংসিত। তাঁর পিতার নাম আব্দুল্লাহ, মায়ের নাম আমিনা। তিনি আমাদের মহানবী। পৃথিবীর শেষ নবী। তিনি জানতেন, পরিশ্রম করা ছাড়া জীবনের উন্নতি করা যায় না। জীবনকে চালিয়ে নিয়ে যেতে হলে পরিশ্রম অনিবার্য। তাই পরিশ্রম করাকে তিনি খুব গুরুত্ব দিতেন।

একবার হলো কি, এক গরীব লোক তাঁর কাছে সাহায্য চাইতে এলো। নবীজী তাকিয়ে দেখলেন লোকটির পরনে ছেঁড়া কাপড়, চোখে-মুখে বেদনার ছাপ। লোকটি পঙ্গু বা বুড়ো নয়, ইচ্ছে করলেই কাজ করে খেতে পারে। তিনি বললেন, ‘তুমি ভিক্ষা করছো কেন?

খেটে খেতে পারো না?’

লোকটি বলল, ‘কি করবো হুজুর, কাজ পেলে কি আর ভিক্ষা করতাম? কাজ না পেয়েই তো পেটের দায়ে ভিক্ষায় নেমেছি।’

নবীজীর মায়া হলো। ভাবলেন, সাহায্য দিলে হয়তো একবেলা তাঁর আহার জুটবে। কিন্তু তারপর? সারাজীবন কি একটি লোক ভিক্ষা করে কাটাবে? এমন কিছু করা দরকার যাতে তাঁর অভাব দূর হয়।

মানুষের কাছে হাত পেতে অপমান সইতে না হয়। মহানবী (সাঃ) তাঁকে বললেন, ‘তোমার বাড়িতে কি এমন কিছু আছে যা বিক্রি করতে পারবে?’

লোকটি বলল, ‘হুজুর, আমি গরীব মানুষ। তেমন কিছুই নেই। তবে ঘরে একটি কম্বল আছে, চাইলে ওটা বিক্রি করা যায়।’

নবীজী বললেন, ‘ঠিক আছে, তাই করো। তোমার একমাত্র সম্বল কম্বলটাই নিয়ে এসো।’

লোকটি তাই করলো। নবীর কথা মত চলে গেল বাড়ি। একটু পর ফিরে এলো কম্বল নিয়ে। নবীজী কম্বলটি সাহাবীদের দেখালেন। বললেন, ‘এটি বিক্রি হবে। কেউ কি উপযুক্ত মূল্য দিয়ে কম্বলটি কিনতে রাজি আছো?’

নবীজীর কথা শুনে এক সাহাবী বললেন, ‘আমি কিনবো হুজুর।’

মহানবী (সাঃ) তাঁর কাছে উপযুক্ত দামে কম্বলটি বিক্রি করে দিলেন। কম্বল নিয়ে সাহাবী চলে গেলে নবীজী লোকটিকে ডাকলেন। তাঁর হাতে কিছু অর্থ তুলে দিয়ে বললেন, ‘এই অর্থ দিয়ে কিছু খাবার কিনে খাও।’ এরপর বাকী অর্থ দিয়ে তিনি একটি কুঠার কিনলেন। সেই কুঠারে নিজেই হাতল লাগালেন। লোকটিই বললেন, ‘এই কুঠার নিয়ে প্রতিদিন বনে যাবে। বন থেকে কাঠ কেটে বাজারে বিক্রি করবে।’

লোকটি তাই করলো। সে প্রতিদিন বন থেকে কাঠ কেটে সেই কাঠ বাজারে বিক্রি করতে থাকলো। এতে তাঁর খুব লাভ হলো। তাঁর অভাব দূর হয়ে গেল। এখন আর তাঁকে ভিক্ষা করতে হয় না; বরং অভাবী মানুষকে নিজেই সাহায্য করতে পারে।

কিছুদিন পর। সে মহানবীর সঙ্গে আবার এসে দেখা করলো। এবার তাঁর গায়ে নতুন জামা। মুখে হাসি। সে রাসূল (সাঃ) কে বলল, ‘আমি এখন মেহনত করে খাই। আমার আর কোন অভাব নেই। আপনার কথা শুনের আমার খুব উপকার হয়েছে। আপনি আমাকে সুন্দর জীবনের পথ দেখিয়েছেন।’

তাঁর কথা শুনে হাসলেন নবী। বললেন, ‘যে মেহনত করে খায় আল্লাহই তাঁকে সাহায্য করেন।’ তাইতো কবি বলেনঃ ‘নবীর শিক্ষা করো না ভিক্ষা, মেহনত করো সবে।’

আমাদের প্রিয় নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও ছোট বেলা থেকে অনেক কষ্ট করে অনেক পরিশ্রম করেই বড় হয়েছিলেন। যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ৭ বছর তখন থেকে উনি ভেড়া চড়াতে পাহাড়ে যেতেন। এবং প্রখর রোদে উনি ভেড়া গুলো চড়াতে যেতেন। যৌবন বয়স পর্যন্ত উনি এই পরিশ্রমী কাজ করে গেছেন।

জীবনে উন্নতি করতে চাইলে পরিশ্রমী হও, জীবনকে সফল করতে চাইলে পরিশ্রমী হও। যে পরিশ্রমী নয় সে অলস, সে কখনো সফলতা লাভ করতে পারে না। একজন কবি চমৎকার ভাবে এ কথাটিই বলেছেন তাঁর কবিতায়। তিনি বলেন, পরিশ্রমে ধন আনে, পুণ্যে আনে সুখ, আলস্যে দারিদ্র্য আনে, পাপে আনে দুঃখ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়