প্রকাশ : ১৭ মে ২০২৪, ০০:০০
হজ্জের নিয়ত
দাদু! দাদু! ও দাদু! তুমি কোথায় যাবে?
জানতে চায় তার এগারো বছরের নাতনি সুমাইয়া আক্তার খুশি। একমাত্র ছেলের দারুণ মিষ্টি মেয়ে সে। ৬ষ্ঠ শ্রেণির বেশ মেধাবী ছাত্রী। রোল তিন। স্থানীয় একটি মহিলা দাখিল মাদ্রাসায় অধ্যয়ন করে খুশি। বেশ শান্তশিষ্ট ও কৌতূহলী মেয়ে খুশি।
নিজের বাসায় অথবা অন্য কারোর বাসায় বেশি লোকের সমাগম দেখলে সহজে বুঝে নেয় কিছু একটা হতে যাচ্ছে। তাই আজ নিজের বাসায় আত্মীয়-স্বজনদের আসা যাওয়ার পদচারণা ও কথাবার্তা শুনে বুঝতে পারে কিছু দিনের জন্য কোথাও যাবে তার প্রিয় দাদু।
কেউ বলছে আমার সালাম ও দরুদ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর পবিত্র রওজা মুবারকে পৌঁছে দিও। কেউ বলছে সেখানে সালাত আদায়ের পর আমার ও আমাদের সকলের জন্য দোয়া করো। ভুলে যেও না যেন! তাই খুশি তার দাদুকে জিজ্ঞেস করে- কোথায় যাবে দাদু?
দাদু হাসি মুখে উত্তর দেয় হজ্জ করতে। পুনরায় খুশি জানতে চায় কোথায় সেটা?
দাদু বলে আমাদের বাংলাদেশের বাইরে পশ্চিম দিকে অনেক দূরে সৌদি আরব নামক একটি দেশ আছে সেখানে। পৃথিবীতে যত দেশ আছে প্রত্যেক দেশের ধনী মুসলিম জনগোষ্ঠী হজ্জ পালন করে একটি নির্দিষ্ট সময়।
সবাই যায় দাদু?
না দিদিমণি! উত্তর দেয় দাদু। শুধুমাত্র ধনী বা সম্পদশালীরা। শারীরিক ও মানসিক সুস্থ মুসলমানরা। সবার ওপর হজ্জ ফরজ নয়। যাদের ওপর ফরজ হয় কেবল তারাই পালন করে থাকে। জীবনে একবার মাত্র হজ্জ ফরজ। পরে যদি কেউ করে তাহলে নফল হিসেবে সাওয়াব পাবে। তুমি তোমার শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ইবাদত অংশে হজ্জ পড়নি?
জি দাদু। সেখানে হজ্জ আছে জানি কিন্তু বিস্তারিত তো বুঝি না। তাই সব এখনো পড়া হয়নি।
ঠিক আছে শুনো দাদুমণি। ইসলামের খুঁটি বা স্তম্ভ কয়টি? জানো?
জি দাদুভাই। পাঁচটি।
কী কী তা বলতে পারবে দাদুমণি?
জি দাদুভাই। ঈমান, সালাত, জাকাত, সাওম ও হজ্জ।
এগুলোকে ইসলামের রুকনও বলা হয়। মহান রবের বিধিবিধান বিভিন্নভাবে বিভিন্ন সময় পালন করতে হয়। এর সুন্দর সুন্দর বেশ কিছু নীতিমালা রয়েছে। সেদিক থেকে ইবাদত তিন প্রকার।
(ক) শারীরিক ইবাদত। যেমন- সালাত ও সিয়াম।
(খ) আর্থিক ইবাদত। যেমন- জাকাত ও দান সাদকা।
(গ) শারীরিক ও আর্থিক ইবাদত। যেমন- হজ্জ ও জিহাদ।
সম্পদশালী বা অর্থশালীদের জন্য তিনটি ইবাদতই বরাদ্দ। তাই এরকম অবস্থাশালী সকলে ঈমান আনার পর সব কয়টি যথাযথভাবে পালনে বাধ্য। এমন ব্যক্তিরা কোনো বিধান না মানলে তাদের কবিরা গুনাহ হবে। তাই এদের কোনোভাবে ছাড় নেই। এক্ষেত্রে কেউ না মানলে তাকে পরকালে মহান আল্লাহর দরবারে কঠিনভাবে জবাবদিহি দিতে হবে।
তবে গরিবদের জন্য সালাত ও সিয়াম পালন করতে হবে। যাকাত আদায় ও হজ্জ পালন করা লাগবে না। কেননা যাকাত আদায় ও হজ্জ পালন করার মতো তাদের সম্পদ নেই। তবে শোনো দাদুমণি প্রকৃত মুসলমান হতে হলে সর্বপ্রথম ঈমান আনতেই হবে।
আর ঈমান হলো একত্ববাদের ঘোষণা। আল্লাহকে এক ও অদ্বিতীয় ইলাহ হিসেবে মনে প্রাণে মেনে নেওয়া আর আমাদের সকলের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সা.-কে শেষ রাসূল হিসেবে মেনে নেওয়া। অর্থাৎ আল্লাহর কথা যথাযথভাবে পালন করা।
তারপর সালাত। সালাতকে আমরা নামাজ হিসেবে জানি বা চিনি। ঈমান আনার পর সালাত অবশ্যই কায়েম করতে হবে। তা না হলে সে ঈমানদার হিসেবে কোনো দাবি করতে পারবে না। আর কিয়ামতের ময়দানে সর্বপ্রথম সালাতের হিসাব নেওয়া হবে।
জাকাতের বিষয়টি ধনী মুসলিমদের সাথে সংশ্লিষ্ট। জাকাত হলো আর্থিক ইবাদত।
সাওম সুস্থ ও বালেগ সকল নর-নারীর ওপর ফরজ। সাওম শারীরিক ইবাদত। বছরে শুধুমাত্র রমজান মাসে ফরজ রোজা পালন করতে হয়। হজ্জ একটি নির্দিষ্ট সময়ে করতে হয়। তাই আমি হজ্জ করার নিয়ত করেছি।
দাদু আমি যেতে পারবো না হজ্জ করতে?
হুম্। পারবে, তবে এখন নয়। যখন তোমার হজ্জ করার মতো অর্থ থাকবে। নিয়ত করো, নিশ্চয় আল্লাহ পূরণ করবে। তাহলে দাদু তুমি আমার জন্য সেখানে দোয়া করো যাতে আল্লাহ আমার হজ্জ করার নেক নিয়তটি পূরণ করে।
দাদু প্রাণভরে দোয়া করে বলল, ফি আমানিল্লাহ্।