শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

খারাপ সময়

মোঃ লিমন খান
খারাপ সময়

আমার বয়স যখন প্রায় চার থেকে পাঁচ বছর আমি ছোট থাকায় কিছু বুঝতে পারতাম না। আমার মনের কথা কেউ বুঝতে চেষ্টা করতো না আর আমিও কাউকে কিছু বুঝিয়ে বলতে পারতাম না। ছোট থাকায় আমাকে সবাই আদর করত ও ভালোবাসতো। সবাই আমাকে নতুন নতুন জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যেত। আমি অনেক মজা করতাম আমাকে সবাই খেলনা কিনে দিত। আমিও মজা করতাম আর খেলাধুলা করতাম। আমার খেলাধুলার মধ্যে সবচেয়ে পছন্দের খেলা ছিল ফুটবল। আমি যখন দোকানে যেতাম তখন ফুটবল দেখলে ফুটবল কিনতে চাইতাম। সময় দিন দিন যেতে থাকে আর আমার বয়স ও দিন দিন বাড়তে থাকে, সময়ের সাথে সাথে আমারও বন্ধু বাড়তে থাকে। আমি যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি তখন আমার দুইটা বন্ধু হয় তিথিন ও সাব্বির, এই দুইজন ছিল আমার জীবনের প্রথম বন্ধু। আমি আমার এই বন্ধু দুইটা পেয়ে অনেক খুশি। কারণ এই দুইজন বন্ধু ছিল আমার বন্ধুদের মধ্যে অন্যতম। ওদের নিয়ে আমি সব জায়গায় যেতাম আমরা তিনজন একে অপরকে ছেড়ে আরেকজন কোথাও যেতাম না। এভাবেই আমাদের দিন কাটতে লাগলো। একদিন ওদের নিয়ে আমি আমার নানার বাড়ি যাচ্ছিলাম। তখন রাত বাজে নয়টা। সকালে পড়াশোনার জন্য যেতে পারিনি, তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম রাতে যাব। আমরা প্রথমে রিক্সা করে লঞ্চঘাট গেলাম, যেতে যেতে আমাদের মনে ভয় কাজ করতে শুরু করল। কারণ কখনো এত রাতে একা বের হয়নি তাই তো একটা ভয় ছিল ।তারপরেও কষ্ট করে লঞ্চঘাট এসে পড়লাম। তারপর লঞ্চের টিকিট কেটে আমরা যখন প্রবেশ করালাম তখন সাথে সাথে লঞ্চের লাইটগুলো একবার বন্ধ হয় আবার চালু হয়। আমার দুইটা বন্ধু পুরো ভয় পেয়ে গেল। কিভাবে এইসব হচ্ছে, আমি বললাম আমিও তো বুঝতে পারছি না। কিছুক্ষণ পর একটা লোক আমাদের দিকে এগিয়ে এসছিলো আমরা তো আরো ভয় পেয়ে গেলাম। তখন ভালো করে দেখলাম উনি লঞ্চের কাজের লোক। আমরা তো পুরো ভয় পেয়ে গেছিলাম। ওই লোকটা আমাদের এসে বলল তোমাদের থাকার রুম তিন তলায়। আমরা চাবি নিয়ে উপরে চলে গেলাম, তখন বাজে রাত এগারোটা আমরা চাবি দিয়ে দরজা খুললাম এবং রুমে প্রবেশ করার সাথে সাথে কে যেনো দরজাটা অনেক জোরে লাগিয়ে দিলেন। আমরা অবাক হয়ে গেলাম! কেউই তো ছিল না আমার একটা বন্ধু বলল আমাদের সময়টা খারাপ। আমি বললাম কিছু করার নাই। আমাদের বাড়িতে যেতেই হবে। আমরা অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছি তাই আমি বললাম চল কিছুক্ষণের জন্য ঘুমিয়ে পড়ি। আমরা বিছানায় শুয়ে গল্প করতে করতে আমাদের চোখটা লেগে আসে আর আমরা ঘুমিয়ে পড়ি, তখন বাজে রাত একটা। এক ঘন্টা ঘুমানোর পর কে যেন আমার পা টা ধরে হালকা করে টান দিল। আমি লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম কেউই তো ছিল না হয়তো আমার মনের ভুল? তারপর আমি এ বিষয়টা নিয়ে কিছুক্ষণ ভাবলাম কি করে হতে পারে? রুমে তো আমরা তিনজন ছাড়া আর কেউই তো ছিল না। তারপর ঘুমিয়ে গেলাম,সকাল হলো,ঘুম থেকে উঠলাম, তারপর আমাদের লোকটা নাস্তা দিল। ওনি নাস্তা রেখে চলে গেলো , আমরা নাস্তা খাওয়া শেষ করলাম বাটির নিচে একটা কাপড় ছিল আমারা ভেবেছিলাম হাত মোচার জন্য দিয়েছি, কাপড়টা যখনই খুললাম ভিতরে দেখতে পেলাম রক্ত। রক্ত দেখে তাড়াতাড়ি করে কাপড়টা পানিতে ফেলে দিলাম। আমরা সবাই পুরো ভয় পেয়ে গেছিলাম কিছুক্ষণের জন্য। তাড়াতাড়ি করে লঞ্চ থেকে বিদায় নিলাম আমাদের সময় গুলো সত্যি অনেক খারাপ যাচ্ছে। কোন রকমে বের হওয়ার পর আমরা চিন্তা করলাম, আমার নানা বাড়ি যেতে তো অনেক সময় লাগবে আর রাত না হলে তো ওখানকার গাড়ি ও পাওয়া যাবে না। আমার একটা বন্ধু বলল, চল আমরা সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুরি তারপর রওনা দিব। আমি বললাম চল দাঁড়িয়ে থেকে কি করব? তারপর আর কি যেই কথা সেই কাজ, সন্ধ্যা পর্যন্ত আমরা ঘুরতে থাকলাম। তারপর আমরা বললাম চল সন্ধ্যা হয়ে রাত হতে চলল। এবার আমাদের যাওয়া উচিত, না হলে অনেক দেরি হয়ে যাবে। তাড়াতাড়ি করে আমরা রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছি তখন আমার সামনে পেলাম রিক্সা। রিক্সা নিয়ে আমরা আমাদের নানুর বাড়ি দিকে রওনা হলাম। রাস্তা ছিল পুরো অন্ধকার। আমরা তো ভয়ে কাঁপতে শুরু করলাম, আমরা রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তার ওপারে দেখি একটা মসজিদ। মসজিদে লাইট জ্বলছিল? তখন বাজে প্রায় রাত এটা। আমরা দেখতে পেলাম মসজিদের দেওয়াল লাফিয়ে কে যেন উঠে পরছে। পা দুটো অনেক বড় বড়... আমরা দেখে তো অবাক! আমরা রিক্সাওয়ালা কে জিজ্ঞেস করলাম আপনি কি দেখেছেন? রিক্সাওয়ালা বললো আমি তো এগুলো প্রতিদিনই দেখি কারণ আমি রাতে রিকশা চালাই। এটা আসলে ছিল একটা জিন। রিক্সাওয়ালা বললো তোমাদের একটা গল্প শোনাই? যেটা দেখে আমি অনেক ভয় পেয়েছিলাম! আমি বললাম শুনান : আমি একদিন রাতে বের হলাম রিক্সা চালানোর জন্য, তখন আমাকে তিনটা লোক ডাক দিল "ভাই" যাবেন? আমি বললাম কেন যাব না, অবশ্যই যাবো। "ওদের মধ্যে একটা লোককে আর দুইটা লোক কাপড় দিয়ে ঢেকে আনছিল " আমি বললাম ভাই ওনার কি হয়েছে? ওরা বলল ও অনেক অসুস্থ। আমি আরেকটা জিনিস খেয়াল করলাম কাপড় দিয়ে ঢাকা লোকটা শরীর থেকে রক্ত পড়ছে। আমি ওদের বললাম সত্যি করে বলো ওর কি হয়েছে? তারা বলল ওকে আরো ৪-৫ জন মিলে মারছিলো আর ছুরি দিয়ে আঘাত করছিল। আমি বললাম আচ্ছা তাড়াতাড়ি ওঠো আমি তোমাদের নামিয়ে দিয়ে আসি। তারপর ওদের নামিয়ে দিয়ে আমি যখন আরো সামনের দিকে যায় তখন আমি দেখলাম ওই তিনজন রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে আমি দেখে অন্য রাস্তায় চলে গেলাম। মনে মনে ভাবলাম ওদের না নামিয়ে দিয়ে আসলাম। ওরা আবার কিভাবে আসলো? এই ছিল আমার গল্পটা। ঐদিন শুধু দেখে আমি ভয় পেয়েছিলাম। তারপর থেকে আর ভয় পায়নি। ওনার গল্প শুনতে শুনতে আমার নানা বাড়ি এসে পড়লাম। রিক্সাওয়ালাকে বিদায় দিলাম। তারপর বাড়ি এসে শুয়ে এই ব্যাপারে কথা বলছিলাম কথা বলছিলাম। তখন আমি বললাম আজকের দিনের প্রত্যেকটা সময় ছিল আমাদের জন্য খারাপ সময়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়