প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
তুলির ছবি
এনায়েত রসুল
বাবা এক মহাকাশ বিজ্ঞানী। সে সঙ্গে একজন ভালো শিল্পীও। বাবা ছবি আঁকেন আর সময় পেলেই এক শিশু সংগঠনে গিয়ে ছবি আঁকা শিখিয়ে আসেন। বাবা যখন ঘরে বসে ছবি আঁকেন আমি তখন তন্ময় হয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে থাকি- তাকিয়ে থাকি আর ভাবি, আমিও বাবার মতো শিল্পী হবো। নিজেকে উজাড় করে দিয়ে ছবি আঁকবো। একেবারে বাবার মতো।
ভাবি ঠিকই এসব কথা, কিন্তু ছবি আঁকতে বসে আমার সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। নিয়ম মেনে ছবি আঁকতে আমার ভালো লাগে না। এ কারণে যখন ছবি আঁকার ইচ্ছে হয়, তখন আমি রং নিয়ে খেলা করি। সেই খেলাটাই ছবি চেহারা নিয়ে সবার চোখে ধরা পড়ে। সবাই বলে- তুলি ছবি এঁকেছে।
ছাদের ওপর বাবার গবেষণাগার। আর নিচতলায় ছবি আঁকার ঘর। প্রতিদিন গবেষণাগারে যাবার সময় বাবা বলেন, তুলি সোনা! আমার আঁকার ঘরে যাস না। প্লিজ মা, কোনো কিছু ছুঁস না।
আমি বলি, না না বাবা, ও ঘরে আমি যাবো না। কোনো কিছু ছোঁবো না।
বলি ঠিকই কথাটা, কিন্তু বাবা জানেন আমি সেই ঘরে যাবোই আর জিনিসপত্র ছোঁবোই। আমি করিও তা। বাবা গবেষণাগারে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে আমি আঁকার ঘরে ছুটে যাই আর জিনিসপত্র ছুঁয়ে এলোমেলো করে দিই। তারপর ছবি আঁকায় নেমে পড়ি।
সবাই বলে, বাবার সঙ্গে আমার হাজারটা মিল রয়েছে। আমার ওঠা-বসা, কথা বলা, হাঁটা-চলা- সব নাকি বাবার মতো! আর এই যে আমার চেহারা- যে চেহারাকে দেখে সবাই মুগ্ধ হয়, আদর করে বলে তুলি এক রাজকন্যা, সেই চেহারাটাও নাকি আমি বাবার কাছ থেকে ধার নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছি!
মেনে নিচ্ছি বাবার সঙ্গে আমার হাজারটা মিল রয়েছে। আমার ওঠা-বসা, কথা বলা বাবার মতো। চেহারাটাও বাবারই মতো। তবুও তার সঙ্গে আমার হাজারটা অমিলও রয়েছে। যেমন, বাবা ছবি আঁকেন রং আর তুলি নিয়ে- আমি আঁকি শুধু রং নিয়ে। তুলি আমার দরকারই হয় না। হাতের তালু আর আঙুলের ডগায় রং মেখে আমি কাগজের ওপর ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাই। ইচ্ছে মতো আঁকিবুঁকি করি। সেই ছোঁয়া আর আঁকিবুঁকিগুলো মিলেমিশে কিছু না কিছু একটা হয়েই যায়। তা দেখেই সবাই প্রশংসায় উচ্ছল হয়। খুশিতে ভেঙে পড়ে বলে, বাহ্! কী সুন্দর এঁকেছে তুলি! এমন ছবি তুই আঁকিস কেমন করে, তুলি?
সবাই যতই বলুক আমি সুন্দর ছবি এঁকেছি, যতই আমার প্রশংসা করুক, আমি কিন্তু তাদের প্রশংসায় গলে যাই না। কারণ আমি জানি, আমি ছবি আঁকিনি। রং নিয়ে এলোমেলো খেলা করেছি, সেই এলোমেলো রংগুলোই ছবি হয়ে গেছে।
এ তো গেল একটি অমিলের কথা। বাবার সঙ্গে আমার আরো একটি অমিল রয়েছে। ছবি আঁকতে আমার সময় লাগে দু-চার মিনিট- বাবার লাগে দু-চার ঘণ্টা। অথচ মজার ব্যাপার হলো, এতো সময় লাগিয়ে বাবা যে ছবিটি আঁকেন, তার মাঝে কোনো চমক খুঁজে পাওয়া যায় না। বাবার আঁকা ছবিগুলো একটা নির্দিষ্ট বিষয়কে আঁকড়ে ধরে স্থির হয়ে থাকে। সে ছবির বিষয়বস্তু ইচ্ছে মতো বদলে যেতে পারে না। তাই বাবা যদি গ্রামের দৃশ্য আঁকেন, সেই ছবিটিকে দেখে সবাই গ্রামই বলে- আর শহর আঁকলে বলে তিনি শহর এঁকেছেন। কিন্তু আমার ছবি জনে জনে ক্ষণে ক্ষণে বিষয় বদলায়। যে ছবিটিকে দেখে মামণি বলেন তুলি সমুদ্র এঁকেছে, সেই একই ছবি দেখে পরমা ফুপি বলেন, না না, সমুদ্র নয় সমুদ্র নয়। তুলি আকাশ এঁকেছে- মেঘমুক্ত অসীম এক নীল আকাশ। এভাবে আমার ছবি জনে জনে ক্ষণে ক্ষণে বিষয় বদলায়। কখনো ওটা সমুদ্র হয়ে যায়, কখনো হয় আকাশ! তবে আমাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, তুলি সোনা তুমি কী এঁকেছো- তাহলে আমি অথৈ সমুদ্রে পড়ে যাই। পড়ে না গিয়ে আমার উপায় নেই। কারণ আমি তো বাবার মতো বিষয় ঠিক করে ছবি আঁকি না। আমি আঁকি যেমন ইচ্ছে তেমন। সেই যেমন ইচ্ছে তেমনগুলো নিজ থেকে কখন যে কী হয়ে যায়, আমি তা বুঝি না।
আমি না বুঝলেও বাবা বোঝেন। আর বুঝে গিয়ে আমাকে ডেকে বলেন, অপূর্ব এঁকেছিস মা, অ-পূর্-র্ব! আহা রে, আমি যদি তোর মতো আঁকতে পারতাম, তাহলে এতদিনে কোনো বড়ো শিল্পী হয়ে যেতাম।
বাবা যখন মন খারাপ করে এসব কথা বলেন তখন আমি তাকে সান্তনা দিয়ে বলি, চেষ্টা করে যাও বাবা চেষ্টা করে যাও। চেষ্টা করলে তুমিও একদিন বড়ো শিল্পী হতে পারবে।
বাবা বলেন, চেষ্টা তো আমি করেই যাচ্ছি। কিন্তু তোর মতো আঁকা হয়ে উঠছে না। এমন অ্যাবস্ট্রাক্ট, এমন জীবন্ত ছবি তুই আঁকিস কেমন করে! আঁকাআঁকির প্রতিভায় তুই জয়নুল আবেদিনকেও হারিয়ে দিয়েছিস।
শুধু জয়নুল আবেদিন নয়, বাবা মাঝে মাঝে আরো দু’জনার নামও বলেন- কামরুল হাসান আর কাইয়ূম চৌধুরী। আঁকাআঁকির প্রতিভায় আমি নাকি এদেরকেও হারিয়ে দিয়েছি! হতে পারে হারিয়ে দিয়েছি। কিন্তু এরা যে কে, আমি তা জানি না। বাবার কোনো ছাত্র-টাত্র হবে হয়তো। হয়তো শিল্পী হবার ইচ্ছে নিয়ে ছবি আঁকার ক্লাসে ভর্তি হয়েছে, কিন্তু ছবি আঁকার টেকনিকটা রপ্ত করতে পারছে- অমন ছাত্র। সমস্যা নেই, আমি বাবাকে বলবো একদিন তাদের নিয়ে আসার জন্য। কেমন করে ভালো ছবি আঁকতে হয়, আমি তাদের শিখিয়ে দেবো। তখন তারাও ভালো ছবি আঁকাতে পারবে।
রোজকার মতো আজও আঙুলের ডগায় রং মেখে কাগজের ওপর ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছি। হঠাৎ তাকিয়ে দেখি সেই রংগুলো একটা প্রজাপতির চেহারা নিয়েছে! দুটো রঙিন পাখা, দুটো কালো চোখ, দুটো সরু শুঁড়- সব রয়েছে সেই চেহারাটাতে, প্রজাপতিদের যেমন থাকে। তার মানে, আমার ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাওয়া রংগুলো মিলেমিশে একটা প্রজাপতি হয়েছে। কী যে ভালো লাগছে!
এতদিন সবাই যে বলেছে তুলি ছবি এঁকেছে, আমি তাতে কোনো আনন্দ পাইনি। কারণ সেই রঙের মাঝে আমি কোনো ছবি খুঁজে পাইনি। কিন্তু আজ, আজ এই প্রথম রংগুলোর মাঝে আমি একটা ছবি খুঁজে পেলাম। আর সেই ছবি দেখে সৃষ্টিসুখের আনন্দে আমার মন ভরে গেল। সেই আনন্দভরা মন নিয়ে আমি ছবিটার দিকে তাকালাম, অমনি প্রজাপতির পাখা দুটো থিরথির করে কেঁপে উঠলো! তবে থেমেও গেল।
সত্যিই কি অমন কিছু ঘটেছিল? প্রজাপতির পাখা কেঁপে উঠেছিল- আমি নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলাম। তারপর সত্যি সত্যিই অমন কিছু ঘটেছে কি না, তা দেখার জন্য আবার আমি ছবিটার দিকে তাকালাম। অমনি ছবির প্রজাপতিটা চোখ নাচিয়ে হাসলো! তারপর আমাকে চমকে দিয়ে বললো, সুপ্রভাত মিষ্টি মেয়ে। কেমন আছো, ভালো?
ছবি প্রজাপতির প্রশ্ন আমার বুদ্ধিশুদ্ধি গুলিয়ে দিলো। আমার আঁকা প্রজাপতি জানতে চাইছে আমি কেমন আছি- এর চেয়ে অবাক করা আর কী হতে পারে! আমি দিশেহারার মতো ওর প্রশ্নের জবাব খুঁজে চললাম। সে সময় প্রজাপতি বললো, কী সুন্দর করে এঁকেছো আমাকে! পাখা দুটোয় উজাড় করে রং মেখেছো। লাল নীল সবুজ হলুদ- গুনে শেষ করা যায় না। মিষ্টি মেয়ে, আমাকে আঁকার জন্য ধন্যবাদ।
আমি বললাম, এমন করে বলার জন্য তোমাকেও ধন্যবাদ। কিন্তু এতো যে প্রশংসা করছো, তার কোনো দরকার ছিল না। আমি ভাই প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য নই।
কেন? এ কথা বলছো কেন?
ছবির প্রজাপতি অবাক চোখে আমার দিকে তাকালো। আমি বললাম, কোনো কাজ না করে প্রশংসা পেতে আমার ভালো লাগে না। পাওয়া উচিতও নয়।
প্রজাপতি বললো, তা অবশ্য ঠিক। মিছেমিছি প্রশংসা কুড়োনো উচিত নয়। কিন্তু তুমি এ কথা বলছো কেন? প্রশংসা পাওয়ার মতো কাজ তো তুমি করেছো- আমাকে এঁকেছো।
আমি বললাম, না প্রজাপতি, আমি তোমাকে আঁকিনি! আঙুলের ডগায় রং মেখে কাগজের ওপর ছুঁয়ে ছুঁয়ে গেছি, তুমি নিজ থেকে আঁকা হয়ে গেছো। এমন অনেক কিছুই আঁকা হয়ে যায়।
আমার কথা শুনে প্রজাপতি প্রতিবাদ করে বললো, না ভাই, না। আমি নিজ থেকে আঁকা হয়ে যাইনি। তোমার ওই রং মেখে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাওয়ার মাঝে শিল্পের প্রতি ভালোবাসা ছিল। সুন্দর একটা কিছু আঁকা হোক, মনের ভেতর তেমন চাওয়া ছিল। সেই ভালোবাসা আর চাওয়া মিলেমিশে আমাকে প্রজাপতি বানিয়েছে। সে যা হোক, আমার মন কী বলছে জানো?
কী বলছে?
মন বলছে, চিরদিনের জন্য তোমাকে বন্ধু করে নিই। তুমি আমার বন্ধু হবে?
জিজ্ঞেস করলো ছবি প্রজাপতি। সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিলাম, বন্ধু হবো কি! আমি তো তোমার বন্ধু হয়েই গেছি।
তাই? তো বন্ধু, কী নাম তোমার?
বললাম, বাবা ছবি আঁকেন তো, একটা শিল্পী শিল্পী মন রয়েছে তার ভেতর। তাই তিনি আমার নাম রেখেছেন তুলি। তোমার নাম কী, প্রজাপতি?
প্রজাপতি বললো, ওই যে বললে, ওটাই আমার নাম : প্র-জা-প-তি।
বাহ্!
নামটার প্রশংসা করলাম আমি। কিন্তু তা শুনে প্রজাপতির মন খারাপ হলো। সে বললো, বাহ্ বললে যে? নামটা তোমার ভালো লেগেছে? আমার কিন্তু ভালো লাগে না।
ভালো লাগে না! কেন? নামটা তো সুন্দর!
ওর কথা পাত্তা না দিয়ে বললাম আমি। সে কথা শুনে প্রজাপতি বললো, নাম তো সুন্দর। তবে সব সুন্দরই যে ভালো, তা তো নয়। ফুল তো সুন্দর। সেই ফুলের মাঝেও পোকা থাকে- থাকে না?
বললাম, হ্যাঁ, তা থাকে। ফুলের পাপড়িতে পোকা আর ফুলের বোঁটায় কাঁটা থাকে। কিন্তু তোমার নামের মাঝে তো পোকা-কাঁটা কিছুই নেই। তোমার সমস্যা কোথায়?
প্রজাপতি বললো, সমস্যা আছে তুলি, সমস্যা আছে। সমস্যা হলো, এ নামটার মাঝে দুটো উল্টো শব্দ জুড়ে দেওয়া হয়েছে- স্বভাবে-চরিত্রে, কাজে-কর্মে একেবারে উল্টো। ছি! কে যে নামটা রেখেছে!
প্রজাপতি নাক সিটকালো। তবে এমন করে নাক সিটকানোর কারণ কী, আমি তা বুঝে উঠতে পারলাম না। তাই বললাম, থাক না দুটো উল্টো শব্দ। তাতে সমস্যা কী?
প্রজাপতি বললো, সমস্যা কি মানে! বিরাট সমস্যা। আচ্ছা, তোমাকে বুঝিয়ে বলছি। একটা জিনিস তো খেয়াল করেছো, আমার নামের মাঝে রয়েছে দুটো শব্দ- প্রজা আর পতি। এবার বলি ‘প্রজা’ শব্দটার কথা। প্রজা বলতে কী বোঝায়? প্রজা বলতে বোঝায় একদল নিরীহ মানুষ। যারা বেঁচে থাকার জন্য সারাদিন কাজ করে আর প্রভুদের অত্যাচার মাথা পেতে নেয়। কেঁদে বুক ভাসায় তবু প্রতিবাদ করে না। এভাবে দুঃখ-কষ্টে দিন কেটে যেতে যেতে একদিন এ পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়।
বুঝলাম প্রজাদের কথা। একেবারে নাজেহাল অবস্থা বেচারাদের। তুমি এবার পতিদের কথা বলো।
বলছি। প্রথমেই জেনে রাখো, সমাজপতি, রাষ্ট্রপতি, দলপতি- মানে যত ধরনের পতি আছে, তারা খুব শাসুকে আর সুবিধাবাদী চরিত্রের হয়। তাদের মাঝে ভালোবাসা থাকে যতটুকু- শাসন আর শোষণ করার প্রবণতা থাকে তার চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু আমি তো অমন সুবিধাবাদী চরিত্রের নই! আমি এক নিরীহ প্রাণী। ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়াই আর পাখিদের গান শুনে যাই। আমার মতো এমন এক শান্তশিষ্ট প্রাণীর নামের সঙ্গে অমন দুটি উল্টো শব্দ জুড়ে দেওয়া হয়েছে কেন, আমি তা ভেবে পাই না। কথাটা যখন মনে পড়ে, বুকের ভেতর তখন মুচড়ে ওঠে। দুঃখ হয়। তাই তুমি অন্তত আমাকে অন্য নামে ডেকো।
প্রজাপতির কথা শুনে আমারও মন খারাপ হলো। ভেবে দেখলাম প্রজাপতি ভুল বলেনি। সত্যি সত্যিই দুটো উল্টো শব্দ জুড়ে দেওয়া হয়েছে বেচারির নামের সঙ্গে। নাহ্, এটা ঠিক হয়নি। আমি ওকে অন্য নামেই ডাকবো। কিন্তু কী নামে ডাকবো? কী হবে সেই অন্য নাম?
অন্য নাম ভেবে বের করার জন্য আমি চোখ বুজলাম, অমনি মনের কোণে একটা নাম ভেসে উঠলো- ছবি! হ্যাঁ, ছবি নামটাই উপযুক্ত হবে প্রজাপতির জন্য? কিন্তু সে কি তা মেনে নেবে? জিজ্ঞেস করে দেখি।
দুরু দুরু বুকে আমি বললাম, প্রজাপতি! তুমি তো ছবি থেকে হয়েছো। তাই আমি ভাবছি তোমাকে ছবি নামে ডাকবো। তোমার আপত্তি নেই তো?
আমার এ প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে প্রজাপতির কণ্ঠ রিনঝিন করে উঠলো। সে বললো, আপত্তি! কি যে বলো! একেবারেই আপত্তি নেই। কী সুন্দর নাম- ছবি! কেউ যদি জিজ্ঞেস করে, প্রজাপতি! তোমার নাম হঠাৎ ছবি হয়ে গেল কেমন করে? তো বলবো... তো বলবো... বলবো যে, ভালোবাসার ছোঁয়ায় এঁকে তুলি আমার...আমার...আমার নাম রেখেছে... নাম রেখেছে...
থেমে থেমে কথা বলতে বলতে শেষমেশ থেমেই গেল প্রজাপতি! আমি অবাক হলাম ওকে থেমে যেতে দেখে। তাই জিজ্ঞেস করলাম, কী হলো ছবি? থেমে থেমে কথা বলছো কেন?
প্রজাপতি বললো, রং শুকিয়ে যাচ্ছে তো, তাই শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। চোখ থির হয়ে আসছে। আমার জীবন ধীরে ধীরে ছবির মাঝে মিশে হয়ে যাচ্ছে।
এ তুমি কী বলছো ছবি! তোমার জীবন যদি ছবির মাঝে মিশে যায়, তাহলে কি তুমি হারিয়ে যাবে? আমার মন থেকে মুছে যাবে?
একবুক শঙ্কা নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম আমি। প্রজাপতি বললো, না বন্ধু, হারিয়ে যাবো না। মুছেও যাবো না। ভালোবাসায় গড়া জিনিস মুছে যায় না।
তাই?
হ্যাঁ। সে জিনিস মনের মাঝে স্মৃতি হয়ে বেঁচে থাকে। আমিও তোমার মনের মাঝে স্মৃতি হয়ে বেঁচে থাকবো। তবে আমার আর ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়ানো হবে না। পাখিদের গান শোনা হবে না।
আমার কাছে আসা হবে না?
হবে, তবে অন্যভাবে। যখনই তুমি আঙুলের ডগায় রং মেখে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাবে, তখনই আমি কোনো না কোনো নতুন ছবি হয়ে তোমার কাছে ফিরে আসবো। তুমি... তুমি... তুমি আমাকে...
কথা শেষ হলো না। কথা শেষ হলো না। তার আগেই রং শুকিয়ে গেল আর প্রজাপতির পাখা দুটো থির হয়ে গেল। কণ্ঠ থেমে গেল- প্রজাপতি ছবি হয়ে গেল!