সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

বিতর্ক পরিবার

সাবা আক্তার

অনলাইন ডেস্ক
বিতর্ক পরিবার

ছোটবেলা থেকেই ভাবতে ভালোবাসতাম। সবকিছুকে নিয়ে আমার ভাবার স্বভাব এখনো রয়ে গেছে। একবার বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)তে একটা বিতর্কের অনুষ্ঠান প্রচার হয়েছিলো। সেখানে আমার বড় ভাইয়ের বন্ধুরা তথা হাসান আলী স্কুলের শিক্ষার্থীরা ছিলো বিতার্কিক হিসেবে। তারা পক্ষ দল ছিলো বিতর্কের এবং জয়লাভও করেছিলো। সেইবারই প্রথম ‘বিতর্ক’ নামটার সাথে পরিচয়। সেই থেকে আবার বিতর্কের ভাবনা শুরু হয়ে গেলো। তারপর থেকে শুরু করলাম বিতর্ক প্রতিযোগিতার রেকর্ড ভিডিওগুলো দেখা। খুব অবাক হয়ে দেখতাম, ওরা কী সুন্দরভাবে কথা বলে! ওরা কীভাবে এতো গুছিয়ে কথা বলে! ওরা কীভাবে এতো তথ্য পায়! আমার বাবাও এ বিষয়ে উৎসাহী ছিলেন। তিনি আমায় বলেছিলেন, বিতর্ক শিখাবেন। এ কথা শোনার পর থেকে আমার আগ্রহ আরো একধাপ এগিয়ে গেলো।

পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্কের কথা প্রায়ই বাবার কাছে শুনতাম। দেখতে দেখতে সব মিলিয়ে করোনা মহামারী আসলো, আর এক প্রকার জট পাকিয়ে গেলো। মাধ্যমিকে ওঠার পর লক্ষ্য করলাম, আমাদের মধ্যে দুধরনের শিক্ষার্থীর বাচনভঙ্গি খুব চমৎকার। প্রথমত, আবৃত্তি করে যারা এবং যারা বিতর্কের সাথে যুক্ত বা জড়িত আছে। তখন আমারও খুব ইচ্ছে হতো যে, আমিও বিতর্ক করি। আমিও সুন্দর করে কথা বলতে চাই। সবচে’ বেশি অনুাপ্রেরণা বা আগ্রহ যেটাই বলা হোক তা পেতাম ডাঃ দীপু মনি ম্যাম-এর কথা বলার ধরণ থেকে। চমৎকার বাচনভঙ্গি! তারপর নতুন কারিকুলাম পাওয়ার পর যখন দল গঠন করা হলো প্রত্যেক বিষয়ের, তখন রোল অনুযায়ী দলনেতা নির্ধারণ করা হলো প্রতি দলের জন্যে। ভাগ্যক্রমে আমি বেশিরভাগ দলেরই দলনেতা হয়ে গেলাম, দলগত কাজ উপস্থাপনার দায়িত্ব দলনেতার ওপরই পড়ে। তখন দেখতাম, আমাদের যে সহপাঠীরা বিতর্ক করে তারা খুব সুন্দরভাবে শুদ্ধ বা প্রমিত উচ্চারণে উপস্থাপনা করছে। তাদের দাঁড়ানোর ভঙ্গিমা থেকে শুরু করে পতিটি পদক্ষেপই সাধারণের তুলনায় ভিন্ন।

আমার সবসময়ের স্বভাব পত্রিকা পড়া। আমি বাবার মাধ্যমে প্রতিদিন চাঁদপুর কণ্ঠ সংগ্রহ করতাম। তখন দেখলাম চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমির বিজ্ঞাপন। বিতর্ক একাডেমির অধ্যক্ষ যখন দেখলাম পীযূষ স্যার, তখন মনে পড়ে গেল স্যারের হাত থেকে পুরস্কার পাওয়ার কথা। আর শাহাদাত স্যারের নাম দেখে ভাবতে থাকলাম, উনি কে? তখন আবার স্মরণে এলো, জীবনদীপ কার্যালয়ে চিত্রাঙ্কন ও হস্ত লিখন প্রতিযোগিতা হয়েছিলো। তখন হস্তলিখন বিষয়ে আমাকে প্রথম পুরস্কার দিয়েছিলেন শাহাদাত স্যার। তারপর বাবাকে বললাম। বাবা প্রধান সমন্বয়কারী হানিফ স্যারের সাথে কথা বলে ভর্তি নিশ্চিত করলেন। ভর্তি হলাম বাংলা ও ইংরেজি দুই ফরম্যাটেই। তার সাথে সংগ্রহ করলাম ডাঃ পীযূষ কান্তি স্যারের লেখা ‘বিতর্ক সমগ্র’ বইটি। এতে বিতর্কের পূর্ণাঙ্গ ধারণা পাওয়া যাবে।

বিতর্ক একাডেমিতে ভর্তির পর থেকে যেন একটু সাহস হলো। আমি কোনো স্টেজে উঠে কথা বলার কথা শুনলেই ভয় পেয়ে যেতাম, সেখানে আমিও কোনো উপস্থাপনায় অংশ নিবো ভাবতেই পারিনি। বিদ্যালয়ের উপস্থিত বক্তৃতায়ও প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করলাম। শুধু তাই নয়, বিদ্যালয়ের দলগত উপস্থাপনাও করলাম। সবার পছন্দ হতে লাগলো। বেশিরভাগ উপস্থাপনার স্ক্রীপ্ট তৈরি করতে লাগলাম বিতর্কের সূত্রানুযায়ী।

যাই হোক, আমি মনে করি, বিতর্ক একইসাথে বিতার্কিকের জ্ঞান যেমন সমৃদ্ধ করে, তেমনি বহুমুখী দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করে। সেই প্রয়াসে চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমির চমৎকার কোর্স পরিচালিত হচ্ছে। বিতর্কে আসার পর থেকেই আমার ভাবনাগুলো আরো সুন্দর করে সাজাতে শিখছি। আমাদের ১৬ ফেব্রুয়ারি তারিখের একটা ক্লাস নিয়েছিলেন সৈকত স্যার। তিনি তার ক্লাসে বলেছিলেন,অ ফবনধঃড়ৎব রং মড়ড়ফ ঢ়বৎংড়হ". সফ্ট স্কিলের যুগে এসে এ কথাটা আমি চিরন্তন সত্য হিসেবে উপলব্ধি করি। বিতর্ককে সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমের গণ্ডিতে বেঁধে রাখা যায় না। শুধু বাচনিক দক্ষতাই নয়, বরং যুক্তিবাদী চিন্তাচেতনা, নেটওয়ার্কিং, সময়ানুবর্তিতা, ভালো উপস্থাপনা বা বক্তৃতা, পরমতসহিষ্ণুতার মতো গুণগুলো শুধুমাত্র এ বাচিক শিল্পচর্চার মাধ্যমেই অর্জন করা সম্ভব।

বিতর্ক একাডমিতে আসার পর থেকে মনে আরো গেঁথে গিয়েছে শ্রদ্ধেয় ডাঃ পীযূষ স্যারের কথটি ‘যে আসে বিতর্ক, সে হারে না’। প্রতিক্লাসেই যেন আমি তা উপলব্ধি করছি। আমি সুন্দর করে বলতে না পারলেও সুন্দর কথা শুনছি, সুন্দর করে ভাবতে না পারলেও, কীভাবে সুন্দর করে ভাবতে হয় তা সহপাঠীকে দেখে শিখছি। এভাবেই বিতর্ক একাডেমির প্রত্যেকটি ক্লাস, প্রত্যেক সহপাঠীর সাহচর্য ও শিক্ষকদের ক্লাসগুলো আমাকে ব্যাপকভাবে মুগ্ধ করছে। মনে হয় যেন, এটাও একটা পরিবার। বিতর্ক করে একজন বিতার্কিক এ সকল দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি সবচেয়ে বড় যে গুণ অর্জন করে তা হলো সকল বিষয়ের প্রতি ধারণা। কেননা, তারা বিতর্কের সুবাদে সবকিছু বিশ্লেষণ করে, সবকিছু জানতে হয় তাদের। এছাড়াও অর্জন করে উপস্থিত বুদ্ধির মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের দক্ষতা। আমি ছোটবেলা থেকেই সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতাম। কিন্তু বিতর্কে একাডেমির সাথে যুক্ত হওয়ার পর থেকে অনুধাবন করছি, বিতর্ক সকল সহশিক্ষমূলক কার্যক্রমের ঊর্ধ্বে এক অসাধারণ স্থান নিয়ে আছে। পরিশেষে বলতে চাই, বিতর্ক বিতার্কিককে একটা শুদ্ধ, শুভ্র আত্মা দান করে। তাই, জয় হোক বিতর্কের। জয় হোক ‘বিতর্ক একাডেমি’ নামক বিতর্ক পরিবারের। শুভ কামনা সকল বিতার্কিকের জন্যে।

লেখক : মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী এবং চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমির শিক্ষার্থী।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়