শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

প্রতিশোধ

সুমাইয়া শিমু
প্রতিশোধ

রাত ঠিক ২:৫৪ বাজে।ঠিক এমন সময় ঘুম ভেঙ্গে যায় দীপার। সে এপাস ওপাস হয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু তার ঘুম আর আসলো না। নানা রকমের চিন্তা তার মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো। সে বাথরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। বাথরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে সে বেরিয়ে আসলো। এবং বাথরুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে শুয়ে পড়ে সে বিছানায় গাঁ দিতে না দিতেই তার কানে পানির শব্দ আসে।আমি তো কলের মুখটা বন্ধ করলাম তাহলে পানি কিভাবে পড়ছে।দীপা আবার বাথরুমে গিয়ে কলের মুখ বন্ধ করে আসে। সে এবার বাথরুম থেকে বেরিয়ে যেই না বিছানায় বসতে যাবে এমন সময় তার ফোনটা বেজে উঠে। দীপা দেখে একটা অন্য নম্বর থেকে কল এসেছে। দীপা কল রিসিভ করে আর বলে হ্যালো, কে বলছেন? হ্যালো কে বলছেন? কথা কেন বলছেন না? অনেকক্ষণ যাবৎ কোনো উত্তর আসছে না দেখে দীপা যেইনা ফোনটা রাখতে যাবে ঠিক তখনই ফোনের ওপার থেকে একটা কর্কশ, বিশ্রী হাসিতে ফোনটা কেঁপে উঠে।দীপার পুরো শরীরের লোম দাড়িয়ে যায় সেকেন্ডের মধ্যেই। দীপা কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললো, হ্যা......হ্যালো, কে বলছেন? তখন আবারও ওপাশ থেকে বিশ্রী হাসি দিয়ে বলে উঠে, চিনতে পারছো আমাকে দীপা। এই কটা বছরেই আমাকে ভূলে গেছো দীপা। দীপা বলে কে.....কে বলছেন? আপনার পরিচয় দিন কে আপনি? কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে আবারও বললো, বলুন....কে আপনি?

আমাকে চিনতে পারছোনা দীপা? এতো তাড়াতাড়ি ভূলে গেলে চলবে দীপা। কত কিছুর হিসাব যে এখনো বাকি আছে।দীপার আস্তে আস্তে সব মনে পড়ে যে খারাপ অতীত কে সে এতো বছর ভূলে ছিলো।

সেই সব কথা দীপার আস্তে আস্তে মনে পড়তে লাগলো। না....... এ হতে পারে না। কে আপনি? বলুন কে আপনি?

ফোনের ওপাশ থেকে কণ্ঠস্বর ভেসে আসে দীপা ভয় পাচ্ছো আমাকে? এ বলেই আবার সেই বিশ্রী হাসিতে হেসে উঠে। এবার দীপা ভয়ে ফোনটা কেটে দেয়।

আজ থেকে প্রায় দশ বছর আগের কথা।

দীপা একটা মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে। যখন সে দশম শ্রেনিতে এসএসসি পরীক্ষা দেয় তখন পরীক্ষার হলে একটা ছেলের সাথে পরিচয় হয়। নাম তার জয়। সেও এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। জয়ের ব্যবহার, কথাবার্তা তার মন কেড়ে নেয়। তখন থেকে তাদের বন্ধুত্ব হয়ে যায়। কলেজে ভর্তি হবার সময় ভাগ্যক্রমে তারা দুইজনেই একই কলেজে চান্স পেয়ে যায়। তাদের বন্ধুত্ব দিন দিন আরো গভীরে যেতে লাগলো। ইন্টার ২য় বর্ষ ওঠার পরপরই দীপা নিজেই জয়কে প্রপোজ করে দেয়। কিন্তু জয় কিছু বলে না।

না বলেই সেদিন জয় বাসায় চলে যায়। জয় পরের দিনই দীপাকে হ্যাঁ বলে দেয়। তবে জয় দীপাকে বলে আগে আমরা পড়াশোনা শেষ করি এবং আমি নিজের পায়ে দাঁড়াই তারপর সবকিছু। অতঃপর দুজনই কলেজ লাইফ শেষ করে।দীপা মেডিকেল নিয়ে পড়াশোনা শুরু করে আর জয় "ল"তে পড়ার জন্য বাহিরে চলে যায়। তারপর থেকে তাদের আর দেখা হয় না। তবে ফোনে কথা হতো রোজ। তবে আস্তে আস্তে কথা কমতে লাগলো।তাদের মধ্যে দূরত্বও বাড়তে লাগলো।দীপা ডাক্তারি পড়ছে। এখনো তার পড়াশোনা শেষ হয় না। আর জয় পড়াশোনা চলাকালীন দেশে চলে আসে। আর এসেই দীপাকে কল করে। বলে দেখা করতে। দীপা কিছু বুঝার আগেই কল কেটে দেয় জয়। দীপা খানিকটা অবাক হয়ে ভাবে কি হলো এটা। তারপর সেও মনের আনন্দে দেখা করতে যায় একটা কফি হাউজে। সেখানে জয় আগে থেকেই অপেক্ষা করছে দীপার জন্য। দীপা গিয়ে দেখে জয় বসে আছে কফি হাউজে।

জয়কে দীপা অনেকদিন পর দেখলো।জয় দীপাকে দেখেই এক বুক হাসি তার মুখে চলে আসে। জয় দীপার দিকে তাকিয়েই আছে। কিছুই বলছে না। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়েই আছে। দুজনই চুপ কেউ কিছুই বলছে না। জয় নিরবতা ভেঙে কথা বলা শুরু করলো। অনেক কথা বলার পর বললো-

জয় : আমি চাকরি পেয়েছি। আর ওখানেই এখন জব করি।

দীপা : অভিনন্দন জয়।

জয় : ধন্যবাদ। তো তোমার কি খবর।

দীপা : আমি মেডিকেলে আছি। ভালোই যাচ্ছে। আর একটা এক্সাম আছে। সেটা দিলেই তারপর মেডিসিন ডক্টর হয়ে বের হবো।

জয় : ওহ দারুণ তো। খুব ভালো খুব ভালো।

দীপা : হুম।

জয় : তাহলে এই আমাদের নিজেদের কথা বাড়িতে বলা যায় তাইতো। কি বলো তুমি।

দীপা : হুম বলবো।

জয় : আমি আমার পরিবারের সাথে কথা বলি।

দীপা : হুম বলো।

জয় হলো বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে। জয়ের বাবা অনেক বড় একজন ব্যবসায়ী। জয় তাদের সম্পর্কের কথা তারা বাবা মাকে জানায় এবং দীপাও জানায়।জয় দীপার বাবা মায়ের সাথে দেখা করে এবং দীপার বাবা মায়ের মন কেড়ে নেয়।বিয়ের কথাবার্তা চলতে থাকে। সবার মতামতে তাদের বিয়েটা হয়ে যায়। বিয়ের পর জয় আবার দেশের বাহিরে চলে যায় আর দীপা এখানে তার এক্সাম দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে।যেহেতু জয় দেশের বাহিরে জব করে তাই সে খুব অল্প সময়ের জন্যই দেশে এসেছিলো। বিয়ের পর ৩ দিন পর্যন্ত ছিলো জয়। তারপর সে বাহিরে চলে যায়। দীপা এক্সাম শেষ করে কিছু দিন সময় পেয়েছিলো আর সেই সময় জয় দেশে আসে। যেহেতু জয় বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে আর দীপাও একমাত্র মেয়ে তাই দীপার এক্সাম শেষ হওয়ার আগেই জয়ের বাবা জয়কে দেশে আসতে বলেছিলো। আর উনি ছেলে আর ছেলের বউ এর জন্য সাত দিনের সুইজারল্যান্ড হানিমুন ট্রিপ ঠিক করে। এবং এ সপ্তাহের ট্রিপের ফ্লাইট এবং টিকেট কেটে দেয়। আর ওরাও মনের আনন্দে সুইজারল্যান্ড গিয়ে পৌঁছায়। বেশ ভালোভাবেই তারা সুইজারল্যান্ড ট্রিপ সম্পন্ন করে দেশে ফিরে আসে। তাদের দিনগুলো ভালো চলতে লাগলো।দীপা এখন মেডিসিন ডাক্তার হয়ে বের হয়েছে আর জয় তার কাজের জন্য দীপাকে সময় দিতে পারছে না। আর দীপাও ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। অনেক মানুষের সাথে উঠাবসা তার।

জয়কে দীপা অনেকদিন পর দেখলো। জয় দীপাকে দেখেই এক বুক হাসি তার মুখে চলে আসে। জয় দীপার দিকে তাকিয়েই আছে। কিছুই বলছে না। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়েই আছে। দুজনই চুপ কেউ কিছুই বলছে না। জয় নিরবতা ভেঙে কথা বলা শুরু করলো। অনেক কথা বলার পর বললো-

জয় : আমি চাকরি পেয়েছি। আর ওখানেই একন জব করি।

দীপা : অভিনন্দন জয়।

জয় : ধন্যবাদ। তো তোমার কি খবর।

দীপা : আমি মেডিকেলে আছি। ভালোই যাচ্ছে। আর একটা এক্সাম আছে। সেটা দিলেই তারপর মেডিসিন ডক্টর হয়ে বের হবো।

জয় : ওহ দারুণ তো। খুব ভালো খুব ভালো।

দীপা : হুম।

জয় : তাহলে এই আমাদের নিজেদের কথা বাড়িতে বলা যায় তাইতো। কি বলো তুমি।

দীপা : হুম বলবো।

জয় : আমি আমার পরিবারের সাথে কথা বলি।

দীপা : হুম বলো।

জয় হলো বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে। জয়ের বাবা অনেক বড় একজন ব্যবসায়ী। জয় তাদের সম্পর্কের কথা তারা বাবা মাকে জানায় এবং দীপাও জানায়। জয় দীপার বাবা মায়ের সাথে দেখা করে এবং দীপার বাবা মায়ের মন কেড়ে নেয়। বিয়ের কথাবার্তা চলতে থাকে। সবার মতামতে তাদের বিয়েটা হয়ে যায়। বিয়ের পর জয় আবার দেশের বাহিরে চলে যায় আর দীপা এখানে তার এক্সাম দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। যেহেতু জয় দেশের বাহিরে জব করে তাই সে খুব অল্প সময়ের জন্যই দেশে এসেছিলো। বিয়ের পর ৩ দিন পর্যন্ত ছিলো জয়। তারপর সে বাহিরে চলে যায়। দীপা এক্সাম শেষ করে কিছু দিন সময় পেয়েছিলো আর সেই সময় জয় দেশে আসে।যেহেতু জয় বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে আর দীপাও একমাত্র মেয়ে তাই দীপার এক্সাম শেষ হওয়ার আগেই জয়ের বাবা জয়কে দেশে আসতে বলেছিলো। আর উনি ছেলে আর ছেলের বউ এর জন্য সাত দিনের সুইজারল্যান্ড হানিমুন ট্রিপ ঠিক করে এবং এ সপ্তাহের ট্রিপের ফ্লাইট এবং টিকেট কেটে দেয়। আর ওরাও মনের আনন্দে সুইজারল্যান্ড গিয়ে পৌঁছায়। বেশ ভালোভাবেই তারা সুইজারল্যান্ড ট্রিপ সম্পন্ন করে দেশে ফিরে আসে। তাদের দিনগুলো ভালো চলতে লাগলো।দীপা এখন মেডিসিন ডাক্তার হয়ে বের হয়েছে আর জয় তার কাজের জন্য দীপাকে সময় দিতে পারছে না। আর দীপাও ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। অনেক মানুষের সাথে উঠাবসা তার।

দীপার সাথে আরেকজন মেডিসিন ডক্টরও ছিল। যিনি অনেক সুন্দর সুদর্শন ও ইয়াং। দীপা এখন তার সাথেই বেশি সময় কাটায়। এই ছেলের নাম রাজ। রাজের সাথে দীপার বন্ধুত্ব হয়ে গেল। আস্তে আস্তে তাদের বন্ধুত্ব বেড়ে গেল। খুব গভীরে যেতে লাগলো বন্ধুত্ব। দীপার চোখে এখন জয়কে বিরক্ত লাগতে শুরু করলো। জয় কল দিলে কল ইগনোর করা শুরু করলো। দীপার শ্বশুর শাশুড়ি অসুস্থ হতে লাগলো তাই জয়ের বাবা সকল সম্পত্তি জয় নামে করে দেওয়ার প্লান করে নেয়। তবে দীপা সেটা টের পেয়ে যায়। জয়ের সাথে ভালোভাবে কথা বলা এবং ব্যবহার সব চেঞ্জ হয়ে যায় দীপার এবং জয়কে ভালোভাবে কথা বলে দীপার নামের সকল সম্পত্তি লিখে নিলো। এবং দীপা সকল সম্পত্তির মালিক হয়ে গেল। তারপরপরই দীপার ব্যবহার পরিবর্তন হতে লাগলো সবার সাথে কথা কমিয়ে দিল এর ভিতরেই জয়ের বাবা স্ট্রোক করে বসলো। আর সাথে সাথেই জয়ের বাবা মারা গেলো।জয়ের মা একা হয়ে পড়লো। জয় মা ভেঙ্গে পড়ল। জয় জয়ের বাবার মারা যাওয়ার পর সকল কাজ শেষ করল এবং সে বাহিরে আবার চলে গেলো। এখানে বাড়িতে দীপা আর দীপা শাশুড়ি। দীপা বাড়িতে থেকে বাড়ি সকল কাজের লোক তাড়িয়ে দিলো। আর সকল কাজ দীপার শাশুড়িকে করতে দিতো। শাশুড়ি মনে কষ্ট নিয়ে দীপার সব কাজ করে দিতো। জয় অনেক ব্যস্ত হয়ে পড়ে যার ফলে তার মাকে সময়মতো কল দিতে পারতো না। দীপা সামনে থেকে কথা বলে দিতো। জয়ের মন আস্তে আস্তে খারাপ হতে থাকে তাই সে চাকরি ছেড়ে চলে আসে। এসে তার বাবার দোকান ছিল সেখানেই বসছে এবং সে বাবার রেখে যাওয়া ব্যবসা আবার শুরু করছে। তবে দীপার চলাফেরা ক্রমশ আরো খারাপ হতে লাগলো। দীপা যেন জয়কে আর চাচ্ছে না। জয় এটা বুঝতে পারে। আর দীপা রাজের সাথে যে সম্পর্ক সেটাও জয় জানতে পারে।একদিন জয় কে ফোন করে বলে আমি চেম্বারে আছি আজ রাতে আসতে পারবো না। হসপিটালে একটা অপারেশন আছে এই বলে ফোন রেখে দেয়। জয়ের মনটা কেমন যেন করতে লাগলো তাই কিছু না বলেই চেম্বারের দিকে রওনা দিলো। সেখানে যেতে দেখে দীপা রাজের সাথে বেরিয়ে যাচ্ছে। জয় ডাক দেয় না তাদের যাওয়া দেখছে এবং তাদেরকে অনুসরণ করতে লাগলো। যেতে যেতে একটা বড় বিল্ডিং এর সামনে গিয়ে পৌছালো যেটা জয়দের বিল্ডিং। আর এখানে একটি ফ্ল্যাট খালি আছে যখন তখন দীপা বা জয়ের বাবা মা এসে থাকার জন্য ফ্ল্যাট টা খালিই রাখছে। আর সেই বিল্ডিং আজ দীপার নামে করে নিয়েছে এবং একদিনে আগের সকল ভাড়াটিয়া বের করে দিয়েছে দীপা। এখন এখানে নতুন নতুন ভাড়াটিয়া থাকে এবং সবার কাছে পরিচয় যেটা দিপার বাড়ি জয়ের নামটাও উঠেছে জয় দীপ পাওয়ার পিছু নিয়ে নিল দীপা আর রাজ রুমে ঢুকে গেল জয় বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে আর পুরনো কথা ভাবছে ভাবতে ভাবতে অনেকটা সময় চলে গেল জয় ভাবলো যা হবার হবে আমি আজ তার সামনাসামনি হবোই হবো।জয় দরজায় নক করলো। রাজ দরজা খুললো। রাজ ভয় পেয়ে দরজা বন্ধ করতে যাবে কিন্তু জয় ধাক্কা দিয়ে রুমে ঢুকে যায়। রুমে গিয়ে জয় নিজেইলজ্জা পেয়ে যায়। জয় আর কিছু বলতে পারেনা। জয় কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। দীপা পরিপাটি হয়ে জয়কে বলে জয় তুমি শান্ত হও তোমার সাথে আমার কিছু বলার আছে। জয় বলে হ্যাঁ বলো-

দীপা : আমি রাজকে ভালোবাসি।

জয় : আর আমাকে।

দীপা : দেখো তুমি বাইরে ছিলে তখন থেকেই আমি রাজকে ভালোবাসতে শুরু করি। আর সেও আমাকে ভালোবাসে। জয় পিছন থেকে একটা ফুলের টপ হাতে নিয়ে দীপার দিকে আগাচ্ছে আর দীপার কথা শুনছে। দীপাও পিছনের দিকে সরে যেতে যেতে ডাইনিং টেবিলের সাথে ধাক্কা খেয়ে থেমে গেলো। জয় দীপার দিকে আগাচ্ছে আর বলছে আমার সাথে কেন এমনটা করলি? কেনো কেনো। আমার মাকে কাজের লোক কেন বানালি। আমার বাবার সকল সম্পত্তি তুই নিজের করে নিলি। তারপরও আমার মাকে কাজের মহিলা কেন বানালি। তারা তোর কাছ থেকে কি চাইছিলো। একটু ভালোবাসা আর তোর সুন্দর ব্যবহার কিন্তু তুই কি করলি। এসব বলে যেই না জয় দীপাকে দিয়ে আঘাত করতে যাবে তার আগেই দীপা টেবিল থেকে চুরি দিয়ে পেটে আঘাত মেরে দেয়। পুরো চুরিটাই জয় এর পেটে ঢুকে গেছে। জয়ের হাত থেকে টপ নিচে পড়ে যায় এবং সে দীপার উপর পড়ে যায়। জয় কিছুক্ষণের মধ্যে মারা যায়। রাজ আর দীপা তখন ভয় পেয়ে যায় কি করবে না করবে ভেবে পাচ্ছিলোনা। যেহেতু তারা দুজনেই ডাক্তার তাই তারা দুজন মিলে সারারাত জয়কে টুকরো টুকরো করে পেলে। আর জয়ের হাড় গুলো ও মাংসগুলো আলাদা আলাদা করে ফেলে। আর যেহেতু জয়দের অনেক বড় বাড়ি তাই তারা মাংসগুলো রাতে রাতে বাড়ির পিছনে মাটিতে পুঁতে ফেলে। আর হাড় গুলো তাদের ল্যাবে নিয়ে যায়। দীপা বাড়িতে আসলে জয়ের মা জয়ের কথা জিজ্ঞেস করে। দীপা বলে জয় বাহিরে চলে গেছে তার চাকরিতে আবার জয়েন করেছে। তাই কাল রাতে যেতেই হয়েছে তাকে। এসব বলে জয়ের মাকে মুখ বন্ধ করে রাখে। আস্তে আস্তে দিন যেতে লাগে আর জয়ের মায়ের অবস্থা খারাপ হতে লাগলো। এর মধ্যে দীপা রোজ জয়ের মাকে একটা ইনজেকশন পুশ করে যেটা শরীর দুর্বল করে দেয়। আর দীপাও চায় তার শাশুড়ি এভাবেই আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যাক। এভাবে আস্তে আস্তে শাশুড়ি ও এ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যায়। দীপার রাজকে বিয়ে করে নেয়। জয়ের সহায়সম্পত্তি নিয়ে ভালোভাবেই দিন পার করছে তারা। এভাবেই অনেকটা দিন পার হয়ে গেলো। তাদের একটি ছেলে আছে। ছেলের বয়স ৭। দেখতে দেখতে এভাবেই দশটি বছর কেটে গেছে। আজ একটি কাজে দীপা সেই বাড়িতে গেছে যেই বাড়িতে জয় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে। দীপা কাজ শেষ করতে করতে রাত বারোটা বাজলো তার আর বাসায় যাওয়া হয় নাই। আর সেজন্য সেই ফ্ল্যাটেই উঠেছে। আর আজ জয়ের কণ্ঠ শুনে দীপার অতীত চোখের সামনে ভেসে ওঠে।দীপার ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। সে খাটেরনমধ্যে স্থীর হয়ে বসে পড়েছে। ভয়ে গলা শুকিয়ে এসেছে দীপার। হঠাৎ দীপা দেখল কে যেন পানির গ্লাসটা এগিয়ে নিয়ে এসে বলল বাবা অনেকক্ষণ তো গলা শুকিয়ে বসে আছো এই নাও পানি খাও। এতো ভয়ের মধ্যেও দীপার গলাটা যেন চেনা চেনা লাগলো। দীপা মুখটা তুলে দেখল না কেউ নেই। তো তাহলে। তাহলে কি আমারি মনের ভুল। হয়তোবা মনের ভুল। লাইট অফ করে দীপা শুতে গেল ঠিক তখনই আর একটা ঘটনা ঘটলো। পছন্দের হিন্দি গান দীপার কানে আসছে। ম্যায়নে তেরা নাম দিল রাখ দিয়া এই গানটা কে যেন গাইছে। আর দীপার জয়ের মৃত্যুর পর এই গান আর শুনে নাই। এত বছর পর আবার এই গানটা শুনলো। জয়ের সাথে যখন প্রথম প্রথম রিলেশনে যায় তখন জয় রোজ দীপাকে এই গানটা গেয়ে শোনাইতো।এখন আজ এত বছর পর এই গান শুনে দীপা আরো ভয় পেতে লাগলো। দীপার বেলকনির দরজার সামনে ছায়ামূর্তি হয়ে কে যেন দাঁড়িয়ে আছে। দীপার ভয় ক্রমশ বেড়েই যাচ্ছে।

দীপা : কে আপনি? কে আপনি? এত রাতে আমার বাড়িতে আপনি ঢুকলেন কি করে।

জয় : দীপার কথা শুনে জয় বিশ্রী মাখা এক হাসি হাসতে রইল।

দীপার সারা শরীরে আবার সেই ভয় জাগরণ হচ্ছে। দীপা ভয়ে আর মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না। দীপা গুড়-মুড়ি দিয়ে ঘাটে উঠে বসে আছে। জয় বলছে তুমি আমাকে এখনো চিনো নাই। আর তোমার বাড়িতে আসছি মানে আমার বাড়িতে আমি আছি সেটা কি কাউকে বলে আসতে হবে।

দীপা : জ...........য়!

জয় : এইতো চিনেছো কিন্তু এত তাড়াতাড়ি চিনলে কি করে।

দীপা :..........

জয় : তুমি আমাকে দশটি বছর আগে এখানে রেখে গেছো তাই এতদিন আমি তোমার অপেক্ষাতে ছিলাম। কবে আসবে? কবে আসবে? আর আমরা একটু মিট করব আগের মতো।

দীপা :...........

জয় : কি হলো কিছু বলছ না কেন ভয় পাচ্ছো দীপা।

দীপা :..........

জয় : ভয় পেয়ো না ভয় পেয়ো না। আজ তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দিবো কি নিবা না?

দীপা : তু.......মি এখানে। কিভাবে (কাঁদো কাঁদো)।

জয় : কেন আমার তো এখানেই থাকার কথা ছিলো। অন্য কোথাও কি থাকার কথা ছিলো নাকি দীপা।

দীপা : আমাকে ছেড়ে দাও প্লিজ। (কাঁদো কাঁদো)

জয় : আমার বাবাকে কি ছেড়ে দিলে? আমার মাকে কি ছেড়ে দিলে? আমাকে কি ছেড়ে দিলে?

দীপা : প্লিজ আইএম সরি।

জয় : চলো তোমার সাথে একটা খেলা খেলি। তুমি যদি আমাকে ধরতে পারো তাহলে আমি তোমাকে ছেড়ে দিবো।

দীপা : ঠিক আছে।

দীপার এটা মাথায় নেই যে সে জয়কে ধরা ছোয়ার কাছে যেতে পারবেনা।

জয় : ওকে তুমি আসো আমাকে ধরো।

দীপা আস্তে আস্তে জীবন বাঁচাতে জয়কে ধরতে যায়। তবে জয়কে ধরাই যাচ্ছে না। ধরতে গেলেই হাত বেরিয়ে যায়। জয় বিশ্রী হাসি হাসতে থাকে। দীপা কান্না করতে থাকে। অনেকক্ষণ এই খেলা চলতে থাকে। জয় শুধু হাসতে থাকে।

জয় : আর তো সময় নাই। অনেক সময় দিয়েছি তুমি পারোনি। চলো এবার আমার হিসাবটা আমি নিয়ে নেই।

একটা পেপার দীপার সামনে দিয়ে বলে এতে সাইন দাও। দীপা পেপারটা হাতে নিয়ে দেখে এতে জয়দের যত সম্পত্তি ছিল সব এতিমদের দিয়ে দেওয়ার জন্য।

দীপা : ভয়ে ভয়ে এটা কেন?

জয় : বলছি সাইন দিতে।

দীপা : ভয়ে ভয়ে সাইন দিয়ে দেয়।

জয় : চলো এবার আসল হিসাবটা নেই।

দীপা : মানে

জয় : বাবা-মা এবং আমাকে এই দুনিয়া থেকে আস্তে আস্তে সরিয়ে ফেললা এর হিসাব দিবানা তুমি?

দীপা : আমাকে মাফ করে দাও (কাঁদো কাঁদো)।

জয় : আমার মাকে যতটা কষ্ট দিয়েছো ঠিক ততটা কষ্ট পেয়ে আজ তোমাকে মরতে হবে।

দীপা: দয়া করে আমাকে মাফ করে দাও। আমার একটি ছেলে আছে।

জয় : কি! তোকে মাফ। আমার মায়ের ছেলেও তো আমি ছিলাম তাই না। তো আমার মাকে ছেড়ে দিছত।

দীপা : আমার ভুল হয়েছে।

জয় আর কিছু বলে না দীপা কে পুরোপুরি না মেরে তাকে আস্তে আস্তে মারা শুরু করলো। দীপার আঙ্গুল একটি একটি করে কাটলো। মুরগির মতো করে তার শরীরে চামড়া খুলতে লাগলো। দীপা চিৎকার করছে তবে কেউ নেই তাকে বাঁচানোর জন্য। আস্তে আস্তে দিপার শরীরটা টুকরো টুকরো করে ফেলল। তার শরীরের রক্তে পুরো রুম ভেসে উঠলো।

জয় এক তৃপ্তির হাসি হেসে হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। দীপার খোঁজ না পেয়ে দুইদিন পর রাজ ওই ফ্লাটে এসে দেখে রক্তে মাংসে দীপা কে চিনাই যাচ্ছেনা। রাজ রুমে ঢুকতেই দরজা বন্ধ হয়ে গেলো। রাজ খুব ভয় পেয়ে গেলো। নিমিষেই একটি ছুরি এসে তার শরীর থেকে মাথাটা পড়ে যায়। জয় এবার মনে শান্তি পেলো। এত বছরের প্রতিশোধ সে আজ নিয়ে নিলো। জয় রক্ত দিয়ে তার মৃত্যুর সব ঘটনা লিখে গেলো। দরজা খুলে রেখে জয় নিজের স্থানে চলে যায়। পাশের ফ্ল্যাটের মানুষ দেখে পুলিশকে খবর দেয়। পরে সব তদন্ত করে সবাইকে দাফন করা হয়। দীপার বাচ্চাকে দীপার মা-বাবা তাদের কাছে নিয়ে যায়। জয়ের সকল সম্পত্তি এতিমখানাতে চলে যায়। এভাবেই জয় তার প্রতিশোধ নিয়ে নিল।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়