প্রকাশ : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
সত্য হলেও মিথ্যা
বেশকিছুদিন রাজ্যে থমথমে পরিস্থিতি রাজামশাইর কিছুতে মন ভালো হচ্ছে না কয়েকজনের গর্দান গেল। রাজা কয়েক মাস হয়ে গেল গল্প শুনতে চেয়েছেন সাথে শর্ত জুড়ে দিয়েছেন, গল্প শোনানো যায় তবে এমন উদ্ভট শর্তে গল্প কে শোনাবে? এমন গল্প কেউ রচনা করতে পারছে না, রাজ্যের পন্ডিত কয়েকজনের গর্দান যাওয়ার পরে এখন মন্ত্রীদের পালা। মন্ত্রী নোহেন্দী নিয়মিত রাজ্য থেকে স্বর্ণমুদ্রা দেয়া হয় সাহিত্যচর্চার জন্য তাই তার একটু পেরেশানী বেশি। রাজা আজকে সকল মন্ত্রীদের কড়া বিধি জানিয়ে দিছেন, আগামীকাল সূর্যাস্তের পূর্বে গল্প শোনাতে হবে, নয়তো গর্দান যাবে এবার মন্ত্রীদের। নোহেন্দীর দিকেই রাজা দৃষ্টি দিছিল, রাজা আগে কখনো এমন ক্ষিপ্ত হননি।
নোহেন্দী রাজ্যের গল্পকারদের দ্বারস্থ হয়েও রাজার ইচ্ছেমতো গল্প কেউ লিখতে পারছে না। সন্ধ্যার পরে রাত্রি গভীর হচ্ছে। মন্ত্রী নোহেন্দী নয়াবিবাহ জীবনে পদার্পন করছে। সন্ধ্যার পূর্বেই নিকেতনে আসতেন, মন্ত্রী অপেক্ষা করছেন নিকেতনে কখন আসবে চিন্তা করতে করতে অস্থির হয়ে আছেন।
মন্ত্রী নোহেন্দী আগামীকাল রাজাকে গল্প শোনাতে না পারলে গর্দান যাবে, কি কঠিন কষ্টের মৃত্যু হবে তার প্রিয়তমা স্ত্রীর কি হবে? এসব নিয়ে চিন্তা করতে করতে নিকেতনে চলে আসছেন।
এতো গভীর রাতে নিকেতনে ফিরলেন? স্ত্রীর প্রশ্নে চমকে উঠলেন অস্থিরতার নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন ছাওয়াল-জবাবের সময় নেই।
স্ত্রী খাবার খাওয়ার অনুরোধ জানালেন, মন্ত্রী নোহেন্দী অসহায়ত্বের স্বরে বললেন, খাবার খেয়ে কি হবে? আগামীকাল গর্দান চলে যাবে।
স্ত্রী অবাক হয়ে গেছে কি হয়েছে? রাজার মন ভালো করার জন্য শর্ত জুড়িয়ে গল্প শুনতে চেয়েছেন স্ত্রীকে সব বললেন।
স্ত্রী সব শুনে হাসি দিয়ে বললেন এই রকম গল্প আমি জানি। আগামীকাল রাজ দরবারে আমাকে নিয়ে যাবেন। আমি রাজাকে গল্প শুনিয়ে মন ভালো করে দেব।
আগামীকাল উপস্থিত সকলের সামনে মন্ত্রী নোহেন্দী রাজাকে বললেন, আমার প্রিয়তমা স্ত্রী আপনাকে গল্প শোনাবে, ঠিক আপনি যেমন গল্পের কথা বলছেন ‘মিথ্যা হলেও সত্যের মতো মনে হবে’।
রাজা মন্ত্রীর স্ত্রীকে অনুমতি দিয়েছেন। শ্রদ্ধা জানিয়ে স্ত্রী বলা শুরু করলেন, এক নগরে চারজন বন্ধু বাস করতো। তাদের আলাদা আলাদা ব্যবসার ছিলো তাদের নিজ নগরে ব্যবসার লাভ বেশি হতো না।
একদিন তারা চারজন মিলে ঠিক করল তারা সমুদ্র পার হয়ে অন্য নগরে গিয়ে ব্যবসা করবে।
পরিকল্পনা মতো এক বন্ধু কাঠ কেটে একটা নতুন বড় নৌকা তৈরি করল তাদের সমুদ্র যাত্রার জন্য। তারপর নির্দিষ্ট দিনে সকলেই বিক্রির জন্য কিছু কিছু মালপত্র নিয়ে সেই বড় নৌকায় করে রওনা হয়ে গেল। নৌকাটা বেশ ভালো চলছিলো, আবহাওয়া ভালো ছিল, সমুদ্র পথে নোঙ্গর ফেলে
যাত্রাবিরতি দিয়ে তারা মদ্যপান করতে শুরু করছে। হঠাৎ আবহাওয়ার রূপ পরিবর্তন ভয়ংকর সমুদ্র! উথালপাতাল শুরু হয়ে গেছে ঢেউয়ে। কাঠের নৌকা সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে তাল মিলিয়ে দুলতে থাকে।
কিন্তু অবশেষে বড় ধাক্কা লেগে নৌকাটা একেবারে উল্টে গেল। মালপত্রসহ চারজন বন্ধু সমুদ্রে ডুবে গিয়ে প্রাণ হারাল।
কয়েক বছর পরে তারা আবার এই পৃথিবীতে জন্ম নিলো, সেই কাঠের মিস্ত্রী এই জন্মে হলো এক কাঠ পোকা সে শুকনো কাঠ খেয়ে বেঁচে থাকে।
একজন স্বর্ণকার বন্ধু ছিলো এ জন্মে মশা হয়ে জন্ম নিলো। সে শুধু মানুষের কাছে গুনগুন করে যেন তার হারানো সোনার দুলগুলো খুঁজতে থাকে। কারণ আগের জন্মে সোনার দুল নিয়ে অন্য নগরে ব্যবসা করার জন্য যাত্রা করছে।
ফল বিক্রেতা বন্ধু ওজনে কম দিত এ জন্মে শিয়াল হয়ে জন্ম নিয়েছে সে পচা দুর্গন্ধময় ফল ডাস্টবিন থেকে খেয়ে ফল ব্যবসার স্মৃতিচারণ করে।
শুকনো মাছ বিক্রেতা বন্ধু এ জন্মে হল মাছরাঙা। সে পুকুর ঝিলের ধারে গাছের উপরে বসে বসে মাছের খোঁজ করে বেড়ায়।
স্ত্রী গল্প শেষ করে বলেন, এই গল্পটি কাল্পনিক হলেও সত্য ঘটনা বলেই মনে হবে সকলের। পুনরায় জন্ম কখনো সম্ভব না।
স্ত্রীর কাছ থেকে রাজার শর্ত জুড়িয়ে দেয়া গল্প শুনে রাজার মন ভালো হয়ে গেল। রাজা মন্ত্রীর স্ত্রীর কাল্পনিক শক্তির প্রশংসা করছেন। অসাধারণ কাল্পনাশক্তির জন্য রাজা মূল্যবান পুরস্কার দিয়েছেন।