বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০

শিশু জীবনে পরিবার

মেহরাব হোসেন
শিশু জীবনে পরিবার

একটি শিশুর সর্বপ্রথম ও সর্বোত্তম শিক্ষক হচ্ছেন তার বাবা-মা। বাবা-মায়ের কাছ থেকে শিশু শিক্ষা গ্রহণ করে আজীবন তবে শিশু বয়সের শিক্ষা তার সচেতন ও অবচেতন মনে কাজকর্মে ফুটে উঠে। মানুষ আজীবন তার এই পারিবারিক শিক্ষা ও সাংস্কৃতি বহন করে চলে। একটি শিশুকে ছোট থেকে সুশিক্ষায় গড়ে তোলা হলে তার সুশিক্ষার প্রভাব সার্বিক জীবনের আচার আচরণ ও কাজকর্মে প্রতিমান হয়ে থাকে। একটি নৈতিক মূল্যবোধ সম্পন্ন, সুশিক্ষিত পরিবারের সন্তান তার আচার-আচরণের মাধ্যমে সমাজকে সুন্দর করে তোলে।

শিশুর বিকাশে বাবা মা তার চরিত্র গঠনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করে। এরপরই চলে আসে তার নিকট আত্মীয় ও পরিবারের সদস্যদের ভূমিকা। বাংলাদেশে বর্তমানে যৌথ পরিবারের সংখ্যা কমছে এবং পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গবেষণায় দেখা যায় যে, যৌথ পরিবারে বড় হওয়া শিশুদের মেধা বিকাশ দ্রুততম সময় হয়ে থাকে এবং তাদের শিক্ষা অর্জন করার মেধাশক্তি তুলনামূলক বেশি হয়ে থাকে। বাবা মায়ের পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের আচরণ শিশুর মনে গভীর রেখাপাত করে থাকে। অনেক সময় দেখা যায় ছোট শিশুরা তার বড় ভাই বোন অথবা কোন নিকট আত্মীয়কে তার আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। এজন্য পরিবারের প্রতিটি সদস্যকেই নৈতিক ও সুন্দর আচরণের অধিকারী হতে হয়। যে সকল পরিবারের সদস্যরা সুশিক্ষায় শিক্ষিত এবং নৈতিক আচরণে সর্বোত্তম তাদের শিশুদের সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে।

পরিবারের সদস্যদের মাঝে শক্তিশালী পারিবারিক বন্ধন শিশুর বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। শক্তিশালী পারিবারিক বন্ধন শিশুকে শক্তিশালী চরিত্র লাভে সমর্থ করে তোলে। পারিবারিক বন্ধন শক্তিশালী হলে শিশু নিজেকে নিরাপদ মনে করে। আমরা সাধারণত দেখতে পাই যে সকল পরিবারে বন্ধন দৃঢ় এবং পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মধুর সম্পর্ক বিরাজ করে এ সকল পরিবারের সন্তানরা তাদের বাস্তব জীবনে অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকে। তারা দুর্বল পারিবারিক বন্ধনের পরিবারের সন্তানদের তুলনায় অধিক আত্মবিশ্বাসী ও আত্মমর্যাদাবান হয়ে বেড়ে ওঠে।

পারিবারিক অর্থনৈতিক নিরাপত্তা শিশুর বিকাশে ভূমিকা পালন করে থাকে। স্বাবলম্বী পরিবারের সন্তানেরা আত্মনির্ভরশীল ও আত্মমর্যাদাবান হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারে। যা তার ব্যক্তিত্ব গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সাধারণত শিশুদের জন্য অত্যাধিক ব্যয়বহুল জীবন যেমন ক্ষতিকর তেমনি মৌলিক চাহিদা পূরণ না হওয়াটাও অনেক বেশি ক্ষতিকর। শিশুদেরকে ছোট থেকেই অপচয় ও অপব্যয়ের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে স্বাবলম্বী হাওয়া এবং ব্যয়ের ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থী হওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

পারিবারিকভাবে ধর্মীয় নৈতিকতা চর্চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নৈতিকতার নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে আমরা ধর্মকেই জেনে থাকি। প্রত্যেক ধর্মই মানুষকে নৈতিকতার ও শালীনতার শিক্ষা দিয়ে থাকে। যে সকল পরিবারের সদস্যরা ধার্মিক হয় তাদের পরবর্তী প্রজন্ম ধর্মীয় নৈতিকতাকে নিজেদের মধ্যে লালন করে থাকে। বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর জন্য ধর্মীয় নৈতিকতা চর্চা একটি অপরিহার্য বিষয় যেখানে আইনের শাসন খুব বেশি শক্তিশালী নয়। এক্ষেত্রে ধর্মীয় মূল্যবোধ চর্চা ব্যক্তিকে অন্যায় অবিচার থেকে দূরে রাখা ও ব্যক্তির ভালো থাকার জন্য প্রয়োজনীয়। পরিবারের বড়রা নিজেরা ধার্মিক হওয়ার পাশাপাশি ছোটদেরকে ধর্মীয় নৈতিকতা ও মূল্যবোধের শিক্ষা দিবে এবং বাস্তবিক জীবনে তা মেনে চলার নির্দেশ দিবে।

শিশুদের সুস্থভাবে বেড়ে ওঠায় শিশুর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। শিশুরা সমাজে চলাচল করতে গিয়ে ভালো-মন্দ বিভিন্ন বিষয়ের সম্মুখীন হয়ে থাকে। এসব ক্ষেত্রে পারিবারিক সতর্ক অবস্থান থাকলে শিশুরা নিরাপদ হবে। সমাজের মানুষদের সাথে চলাফেরা করতে পারবে নির্ভয়ে। পারিবারিক সতর্ক অবস্থান শিশুকে অন্যের খারাপ কাজ থেকে যেমন বাঁচিয়ে রাখবে তেমনি তাকেও খারাপ পথে পা বাড়ানো থেকে রক্ষা করবে। বর্তমান সময়ে শিশুর দৈনন্দিন কার্যকলাপের নিয়মিত খোঁজ খবর রাখা এবং তার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা অপরিহার্য। সে যেকোনো খারাপ পরিস্থিতিতে পড়লে তা যেন সবার আগে বাবা-মা জানতে পারে তেমন পরিবেশ পরিবারের মধ্যে বজায় রাখতে হবে। শিশুদের নিয়মিত বিভিন্ন বিষয়ে জানার ও পরামর্শের প্রয়োজন হয়ে থাকে যা তাদের বাবা মার কাছ থেকে পাওয়া উচিত। পরামর্শ গুলো বাবা মায়ের কাছ থেকে না এসে যদি তার বন্ধুদের কাছ থেকে আসে তাহলে সে পথভ্রষ্ট হতে পারে। তাই বাবা মার আচরণ এতটা বন্ধুসুলভ হওয়া উচিত যাতে করে তার সন্তান যে কোন বিষয়ে তার কাছে পরামর্শ চায় এবং স্বাচ্ছন্দে সকল সুখ দুঃখ ভাগাভাগি করতে পারে। তাহলে সঠিক পরামর্শ পেয়ে সন্তান সঠিক পথ বাছাই করতে সমর্থ্য হবে।

চলমান বিশ্বের আধুনিকায়ন ও এর কর্ম পন্থা সম্পর্কে বাবা মাকে অবগত থাকতে হবে। বিশ্বের সর্বাধুনিক তথ্যও প্রযুক্তিগুলো বাবা মাকে আয়ত্তে আনার চেষ্টা করতে হবে। অন্ততপক্ষে আধুনিক বিশ্বের চলমান ঘটনাক্রম সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে যাতে তার সন্তানরা এ সকল বিষয়ে বাবা মার সাথে আলোচনা করতে হীনমন্যতায় না ভোগে। বর্তমান সময়ে বাবা মায়েদের উচিত আধুনিক বিশ্বের প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া এবং তার সন্তানকে এর সঠিক ব্যবহার করার ক্ষেত্রে নির্দেশনা প্রদান করা। প্রয়োজনে এসকল আধুনিক প্রযুক্তিগত বিষয়ে কঠোরতা অবলম্বন করতে হবে যা তাকে আসক্তি থেকে দূরে রাখবে। সন্তান যাতে তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার না করতে পারে সেজন্য যথা সম্ভব সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করতে হবে।

সর্বোপরি বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যদের সার্বিক বিষয়ে সচেতনতা থাকলে অনেক হতদরিদ্র পরিবারের সন্তানেরাও শিক্ষা দীক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারে। শিশুরা যাতে একজন ভালো মানুষ হয়ে ওঠে এটা নিশ্চিত করা একান্তই বাবা-মা ও পরিবারের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এক্ষেত্রে সমাজের অন্য সকল উপাদান সহায়ক ভূমিকা পালন করবে কিন্তু মুখ্য ভূমিকায় থাকবে পরিবার। ছোট থেকেই পরিবারে সন্তানদেরকে ভালো মানুষ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা, সুশিক্ষা ও ধর্মীয় নৈতিকতার গুরুত্ব উপলব্ধি করাতে পারলে আশা করা যায় প্রতিটি শিশু একদিন দেশ, জাতির এবং বিশ্ব মানবতার জন্য একজন উপকারী মানুষ হয়ে বেড়ে উঠবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়