প্রকাশ : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
দৃষ্টিভঙ্গির দৃষ্টিকোণ
‘একটি দৃষ্টিভঙ্গিই পারে সমাজকে বদলে দিতে’ অথবা ‘দৃষ্টিভঙ্গি বদলান, নিজে বদলে যান’--এমন কথা হয়তো সকলেই কমবেশি শুনে থাকবো। আমাদের জন্য এমন উক্তি তেমন অজানা বা নতুন কিছু নয়। তবে কেন এটা নিয়ে কথা বলা? না, আজ এটা কি, কেন প্রয়োজন এটি কিংবা এটির কাজ কি? কোনোটা নিয়েই কথা বলবো না। আজকে বলবো আসলে দৃষ্টিভঙ্গির দৃষ্টিভঙ্গি বা আরেকটু গুছিয়ে বললে দৃষ্টিভঙ্গির দৃষ্টিকোণ নিয়েই কিছু বলবো।
আমাদের জন্য দৃষ্টিভঙ্গি আসলে কি? হ্যাঁ, জানি এটা অদ্ভুত প্রশ্ন। কিন্তু এটা ভাববার বিষয়ও বটে, কারণ আমরা দৃষ্টিভঙ্গিকেই অন্য আঙ্গিকে দেখি। সোজা বাংলায় যাকে ‘বিকৃত’ বলা চলে। দৃষ্টিভঙ্গিকে যদি দু ভাগ করি তবে আসে ‘দৃষ্টি’ আর ‘ভঙ্গি’ এই দুটি শব্দ। মাঝে কিন্তু একটা র আছে। তো এই শব্দটির তাৎপর্য এই যে একজন ব্যক্তি কোনো একটি বিষয় অন্যজনের তুলনায় কিভাবে দেখবে তার একটা ধারনা দেবার মাধ্যমই হলো-- দৃষ্টিভঙ্গি। বেশ সহজ একটা বিষয়। হুম, এবার আমরা একটু ভেবে দেখি যে কেন দুজনের মাঝে সংযোগ স্থাপন করতে মাধ্যমের প্রয়োজন পড়লো? একটা গল্প হয়তো সকলেরই জানা--এক ভদ্রলোক তার চাকরকে বললো পোষা কুকুরটাকে দেখে আসতে। চাকর দেখে আসলো, অতঃপর ভদ্রলোক কুকুর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে চাকর বললো, কুকুরটার বাচ্চা হয়েছে কয়েকটা। কিন্তু ভদ্রলোক বাচ্চাগুলোর সংখ্যা আর তাদের রং জিজ্ঞেস করলে সে কিছুই বলতে পারেনি। অন্যদিকে নিজের ছেলেকে একইভাবে পাঠিয়ে জিগ্যেস করলে সে সব প্রশ্নেরই সঠিক উত্তর দিতে পারলো। এই যে দুটি ভিন্ন মানসপট--এর ভিন্নতার উপলব্ধির জন্যেই ‘দৃষ্টিভঙ্গি’ শব্দটা। এতটুকু পরিষ্কার। এবার আসি পরের অংশে। দৃষ্টিভঙ্গি নিজেই কয়েকজনের মাঝের তুলনায় সহায়ক বা সেতু। এটির দৃষ্টিকোণ আবার কি? এটা হচ্ছে সম্পূর্ণ ইনডিভিজুয়াল তুলনা, আরেকটু গুছিয়ে বললে--নিজের মধ্যে কয়েকটি কোণের ভঙ্গি বা দৃষ্টিভঙ্গির দৃষ্টিকোণ। চ্যাটজিপিটির কথা অনেকেই ইতিমধ্যে শুনেছে। কিন্তু এটা হয়তো অনেকেই জানে না যে, চ্যাটজিপিটিকে ট্রেইন করে ইউজ করলে আউটপুট ভালো পাওয়া যায়। বিষয়টা এমন, যদি আমি একটা ডকস ফাইল দিয়ে তা থেকে নির্দিষ্ট কিছু তথ্যকে এক্সেল সিটে সাবমিট করতে বলি তবে সে খুব সুন্দরভাবে তা সম্পন্ন করবে। কিন্তু একই বিষয় যদি তথ্যকে নির্দিষ্ট না করে আউটপুট দিতে বলি তাহলে সে তা করতে পারবে না সঠিকভাবে বা প্রথমেই অক্ষমতার কথাটি বলবে। এখানেই মূল পয়েন্টটা।
আমরা যখন একটা অঙ্ক ভুলভাবে শেখবো তখন ভুলটাই সঠিক মনে হবে কিন্তু যদি সঠিকভাবেই শিখে থাকি তবে ভুল করলেও কখনোই তা নিঃসন্দেহপূর্ণ হবে না। যাকে দৃষ্টিভঙ্গির দৃষ্টিকোণ বলে আখ্যায়িত করা গেছে। কারণ একই ব্যক্তির ভেতর একাধিক দৃষ্টিকোণের উৎপন্ন হয়েছে কিন্তু দৃষ্টিভঙ্গিটা একই আছে। তো একটা কথা স্পষ্ট যে, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিটা তখনই ভিন্ন মাত্রায় পৌঁছে যখন দৃষ্টিকোণটা ভিন্ন আঙ্গিকে হয়। এতো আলোচনার একটাই লক্ষ্য, আর তা হলো--আমরা যতক্ষণ না সঠিকটাকে সঠিকভাবে অনুধাবন করতে না পারব, ততক্ষণ ভুলটাকে সঠিক মনে হওয়াই স্বাভাবিক। নিজের প্রয়োজন কি? যদি তা ঠিকভাবে চিহ্নিত না করতে পারবো, ততক্ষণ পর্যন্ত প্রয়োজন পূরণ সাধ্যাতীতই শুধু নয় স্বপ্ন সদৃশও বটে। সমস্যা সম্পর্কে না জানলে কখনোই সমাধান পাওয়া যাবে না। আর সবশেষে আমরা যদি নিজ সম্পর্কেই না জানতে পারি, তবে কি করে সফল ব্যক্তিত্ব হতে পারবো? আমরা অন্যদেরকে কিছু ভালো করতে দেখলে ঈর্ষাপরায়ণ হতে পারি, কিন্তু দৃষ্টিভঙ্গির দৃষ্টিকোণটাকে ভিন্ন আঙ্গিকে নিয়ে কখনো কি তাদের ভালো কিংবা সফল কাজের অতীত অংশটা ভালোভাবে দেখতে পেরেছি? এটাই আমাদের জন্য প্রয়োজনীয় দিক হয়ে পড়েছে। আরেকটা উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। বর্তমানে এআই টুলের ছড়াছড়ি সর্বত্র। তবু লক্ষ্যণীয় বিষয় যে, অনেকের অনুমান--এআই মানুষকে রিপ্লেস করে দেবে। একে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে উল্টোটা ঘটেছে। এআইকে ব্যবহার করতে পারে এমন মানুষের কদর বেড়েছে। এর উত্তর বের করতে গিয়ে দেখা গেলো ‘এআইকে কমান্ড দেবার দক্ষতাই আলাদা একটা যোগ্যতা। কেননা ভালো প্রোমট ইউজ করে তথা ভালো ইনপুট দিয়েই কেবল ভালো আউটপুট পাওয়া সম্ভব, যার জন্যে দক্ষ মানুষের প্রয়োজন। দক্ষ মানুষ বিনা তা করা সম্ভব নয়। এমনিভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে বাহ্যিক অংশটি বাহ্যিকভাবেই বারবার দৃষ্টিভঙ্গি একটু বদলিয়ে দেখলেও যতক্ষণ সঠিকটাকে উপলব্ধি করা যাবে না তথা দৃষ্টিকোণ বদলানো হবে না, ততক্ষণ আমরা কোনোই সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবো না।